নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আইন মানুষের জন্যে,মানুষ আইনের জন্যে নয়

আশরাফুল সুমন

আশরাফুল সুমন

লেখালেখি আমার পেশান। এটা ছাড়া আমার বেঁচে থাকা হয়তো সম্ভব নয়। স্বপ্ন দেখি এমন এক দিনের যেদিন বিশেষ কিছু বই বের হলে মানুষ পাবলিশারের সামনে ভীড় করবে, লাইন ধরে, উৎসব করতে করতে বই কিনবে। প্রথম দিনেই বিক্রি হবে এক লাখের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় সেই বইগুলো অনুবাদ করা হবে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বইগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে। হয়তো আজ হবে না। কিন্তু, আজ থেকে ১০ বছর পরে হয়তো তেমনই একটা দিন আসবে। সেই দিনের প্রতিক্ষায় আছি।

আশরাফুল সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিতীয় জীবন

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০১

আজ ভরা পূর্ণিমা।চাঁদের আলো এসে পড়ছে আমার মুখে।সেই আলোতে আমার রাত জাগা উত্তেজিত চোখগুলো দেখা যাচ্ছে।টিপ টিপ পায়ে সোজা বাড়ির পেছনে চলে আসলাম।ঐ তো বাড়ির পেছনে দেখা যাচ্ছে পুকুরটা।চাঁদের আলোয় কি সুন্দর ঝিকমিক করছে।আমি যা করতে যাচ্ছি তার জন্যে এর চেয়ে অসাধারণ আর কোন পরিবেশ কেউ চাইতে পারে না।পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আশে পাশের পরিবেশটা শেষ বারের মত দেখে নিচ্ছি আমি।

হ্যাঁ,শেষ বারের মতই।কারণ একটু পর আমি ওই পুকুরের জলে ঝাঁপ দেবো।গোসল করার জন্যে না।মাঝ পুকুরে গলা পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জোছনা দেখার জন্যে না।আত্মহত্যা করার জন্যে।পুকুরটা যথেষ্ট গভীর।একবার সেই পুকুরের তলদেশে যেতে পারলেই হয়েছে।আর ফিরে আসতে হবে না।

মৌ এর সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় সাড়ে তিন বছরের।এই দীর্ঘ সম্পর্কে কখনো তাকে কোন ব্যাপারে বকা দিয়েছি বলে মনে পড়ে না।সবসময় ওর ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করতাম,ও যাই চাইতো,হাসি মুখে দেয়ার চেষ্টা করতাম।কিন্তু সেই মৌ যখন বলল,"একটা চাকরি জোগাড় করতে পারো না,আবার আমাকে বিয়ে করতে চাও কোন সাহসে,"তখন মনে হচ্ছিলো পায়ের তলায় বুঝি আর মাটি নেই।প্রচণ্ড অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে।

চাকরি না পাওয়ায় মা বাবা যখন ভাত পাতে বসার সময় বলল,"বাপের টাকায় কেনা ভাত খাচ্ছিস,নিজের তো দু পয়সার মুরোদ নেই,এমন সন্তান কেন জন্ম দিলাম,আফসোস হয়,"তখন আমি আর দুনিয়াতে ছিলাম না।সিদ্ধান্ত নিলাম এ অপয়া জীবন আর রাখবো না।নিজের আপন মানুষগুলোর কাছেই যখন আমার মূল্য নেই তখন আর আমার থাকা না থাকায় তাদের জীবনে কি পার্থক্য হবে?

হয়তো মা বাবা ভাববে,যাক,নিষ্কর্মাটা গেলো।বেঁচে থাকলে নিজেও জ্বলত,আমাদেরকেও জ্বালাত।মরে গিয়ে নিজেও বেঁচেছে,আমাদেরকেও বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে।আর মৌ?সে কি ভাববে আমি জানি।সে সব শোনার পর বলবে,যাক,আপদ বিদায় হয়েছে,ওকে অনেকদিন ধরেই বলতে চাচ্ছিলাম যে ওর সাথে আর রিলেশান রাখবো না।কিন্তু চক্ষু লজ্জায় বলতে পারছিলাম না।এতদিনের রিলেশান...তাই।এখন আমি নিশ্চিন্তে ওই বড় ভাইয়ার সাথে প্রেম করতে পারি।ভাইয়ার ফিউচার খুব ব্রাইট।খুব ভালো একটা জব করেন।

নাহ,অযথাই সময় নষ্ট হচ্ছে।এত কথা চিন্তা করলে নিজের প্রবৃত্তি আমাকে পিছু ডাক দেবে।তখন আমি ফিরতে বাধ্য।যদিও আমি ফেরার কোন কারণ পাই না।বেঁচে থাকার কোন মানে পাই না।চিন্তাটাকে বাড়তে না দিয়ে নিঃশব্দে পুকুরে নেমে গেলাম।ঠান্ডা জল আমার কোমর ভিজিয়ে দিলো।ধীরে ধীরে আরও মাঝখানে যেতে লাগলাম।এরপর মাঝখানে গিয়ে শেষ বারের মত আশ-পাশটা দেখে নিলাম।ঐ তো সেই পুকুর ঘাট,যেখানে মা আমাকে খুব ছোটবেলায় গোসল করিয়ে দিতেন।একবার খেলতে খেলতে ডুবেই যাচ্ছিলাম।মা কোথা থেকে এসে যেন ধরে ফেললেন।কিভাবে টের পেয়েছিলেন কে জানে?এরপর বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে সে কি কান্না......

নাহ,বেশি মায়া বাড়িয়ে ফেলছি।আর তাকানো ঠিক হবে না।শেষবারের মত আমার ছেলেবেলার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটাকে দেখে নিয়ে খুব বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ডুব দিলাম।এরপর ইচ্ছা করেই একদম নিচের দিকে যেতে লাগলাম।উঠার কোন চেষ্টাই করলাম না আর।আমার লক্ষ্য ওই তলানিটা।একবার ঐখানে যেতে পারলেই হয়...আর চাইলেও উঠতে পারবো না।

পৌঁছে গেছি...সেই তলানিতে পৌঁছে গেছি।এবার যে নিঃশ্বাসটা এতক্ষণ ধরে রেখেছিলাম,খুব ধীরে ধীরে সেটা ছেড়ে দিলাম।গলায় পানি ঢুকে যাচ্ছে,নাকে পানি ঢুকছে...এতক্ষণে বোধহয় ফুসফুসেও পানি ঢুকে গেছে।পড়ে যাচ্ছি...পড়ে যাচ্ছি...একদম নিচে পড়ে যাচ্ছি......

এরপর হঠাত সমস্ত কষ্ট বন্ধ হয়ে গেলো।সমস্ত কিছু স্তব্ধ হয়ে গেলো।আর আমি?

আমি আবার ফিরে আসলাম।

প্রচণ্ড এক হতাশা আমাকে ঘিরে ধরল সাথে সাথে।আমি নেই।আমি ধ্বংস হয়ে গেছি।আমি আর কখনো জীবিতদের মাঝে ফিরে আসবো না।ইশ......আর যদি ২টা মিনিট সময় পেতাম।আর যদি ২টা মিনিট বন্ধুদের সাথে মজার আড্ডা দিতে পারতাম.........প্রেয়সীর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম,মায়ের হাতে বকুনি খেতে পারতাম...কিন্তু নেই...সব শেষ...

বৃষ্টি শুরু হল,প্রচণ্ড বৃষ্টি।কিন্তু আমাকে ভেজাতে পারছে না।আমার ঠান্ডা লাগছে না,বৃষ্টি দেখলে যেমন আনন্দ হয় মনে,সেটা কাজ করছে না।আমার খিদা লাগছে না।কোন অনুভূতিই নেই।শুধু একটি ছাড়া।হতাশা।তীব্র থেকে তীব্রতর হতাশা।আর ২টা মিনিট বেঁচে না থাকার হতাশা।

আমি সারারাত বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম,নড়লাম না।লাশটার পানিতে ভেসে উঠা দেখলাম।এরপর ওদিকে আর তাকালাম না।আচ্ছা আমি তো আছি,সবই দেখছি।কিন্তু আমি এরপরও নেই কেন?ভেবে দেখলাম,আমি আছি,তবে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নয়।পুরো প্রকৃতি জুড়েই আছি।সব দেখছি।সব শুনছি।কিন্তু কিছু বলতে পারছি না।কিছু করতে পারছি না।আমি প্রকৃতির অংশ হয়ে গেছি।কিংবা অন্যভাবে বললে বলা যায়,আমি নিজেই প্রকৃতি হয়ে গেছি।

সকালে আমার নিথর দেহটা পুকুর থেকে বের করা হল।প্রচণ্ড অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম,অতি সাধারণ এবং ভয়াবহ রকম মূল্যহীন এই আমাকে এক নজর দেখতে চারপাশে ভিড় জমে গেছে।তারচেয়েও বেশি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বাবা আর মায়ের কান ফাটানো আর্ত চিৎকার।

আর...আর...ঐ তো,যাকে খুঁজছিলাম।এক কোণে দেয়ালে হেলান দিয়ে শূন্য চোখে উদাস ভাবে তাকিয়ে আছে।কাঁদারও শক্তি নেই ওর।মৌকে দেখে মনে হচ্ছে,ওর সব শেষ হয়ে গেছে।

আর পারছি না,আমি ফিরে যেতে চাই,আরেকবার...একটু সময়ের জন্যে হলেও,দুই মিনিটের জন্যে হলেও...আমি চিৎকার করতে চাইছি...কিন্তু পারছি না...কারণ আমার কোন মুখ নেই...হাত দিয়ে ওদের ছুঁয়ে দিতে চাইছি...কিন্তু পারছি না...কারণ আমার হাত নেই......শুধু চোখ আছে,যা দিয়ে আমাকে অনন্তকাল এই কষ্টগুলো দেখে যেতে হবে............

ধড়মড় করে জেগে উঠলাম আমি।ঘামে ভিজে গেছি।নিজের গায়ের উপর হাত বুলিয়ে শিওর হয়ে নিলাম,নাহ,মরিনি।আমি বেঁচে আছি।প্রচণ্ড খুশিতে মন ভরে গেলো।বেঁচে থাকা ব্যাপারটা যে কতটা মধুর সেটা ঐ মুহূর্তে গোটা পৃথিবীতে আমার চেয়ে বেশি মনে হয় আর কেউ বুঝতে পারছিলো না।বিকট চিৎকার দিয়ে উঠলাম মনের আনন্দে...আমার চিৎকার শুনে মা ছুটে এলেন।বললেন,"বদ ছেলে,এত রাতে চিল্লা পাল্লা করিস,মা বাপ কে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবি না???"আমি কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলাম,"মা আমি বেঁচে আছি।"

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম,রাত ৩টা।আমি নিজেই গতকাল প্ল্যান করেছিলাম বাড়ির পাশের ওই পুকুরে আজ রাত ৩টায় শেষ ডুব দেবো।জীবনটা অসহ্য লাগছিলো।কিন্তু ওই স্বপ্ন...কিভাবে হল এটা?কিভাবে............

হয়তো আমাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া হয়েছে।দ্বিতীয় জীবন দেয়া হয়েছে।বা হয়তো পুরোটাই একটা দুঃস্বপ্ন।তবে যাই হোক,যেভাবেই হোক,আমার সেটা দিয়ে কাজ নেই।প্রকৃতিতে অনেক ঘটনাই ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা নেই।এটাও তেমন কোন অমীমাংসিত রহস্য হয়েই থাক না।ক্ষতি নেই তো।

আমি ফিস ফিস করে মাকে আবার বললাম,"মা,আমি তোমাদের ছেড়ে আর যাবো না।কক্ষনো না।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.