নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকার হদ্দ

আমার ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/pages/বোকার-হদ্দ/183449901736937

বোকার হদ্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক অপরাধে প্রকৃতপক্ষে দায়ী কে?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪০

শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদেরকে যৌন নির্যাতন আমাদের দেশে ইদানীং মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স¤প্রতি কুষ্টিয়ার আলোচিত পান্না মাস্টারে কুকীর্তি অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষকদের এ অনৈতিক কাজের মধ্যে ধর্ষণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের যৌন নির্যাতন রয়েছে। এ সমস্যাটি ইদানীং ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবদেরকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। অভিভাবকমহল তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষকের কাছে শিক্ষালাভ করতে পাঠাচ্ছেন, যৌনভোগের বস্তু হিসেবে নয়। আর সে শিক্ষাটা কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, নৈতিক শিক্ষাও। আমরা জানি একজন শিক্ষক হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলার কারিগর। তাই সবার আগে একজন শিক্ষককেই ভাল মানুষ হতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রায়শঃই দেখা যায় যিনি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদেরকে নৈতিকতা শিক্ষা দেবেন তিনি নিজেই নৈতিকতাহীন চরিত্রের অধিকারী। অবস্থা এমন যে অনেকটা রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার মত। একেই বোধ হয় বলা হয় ঘোর কলিকাল। একদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়া হয়েছে অন্যদিকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে অনুকরণ করা হচ্ছে ঢালাওভাবে। বাস্তবতা হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ফিকে হয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে বিয়ে প্রথা কমে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ জৈবিক প্রাণী বলে তাকে জৈবিক চাহিদা মেটাতেই হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা যখন যাকে ভাল লাগছে তার সাথে সংসার করছে, মিলিত হচ্ছে, লিভটুগেদার করছে। ফলে বিয়ের হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রাচ্যের দেশগুলোর অবস্থা তা নয়। এখানে এখনও ধর্মের ভিত্তিতে কিছুটা হলেও মানুষের নৈতিকতার মানদণ্ড বিবেচিত হওয়ায় তারা যত্রতত্র অনৈতিক সম্পর্ক গড়তে পারছে না। কিন্তু মানসিকতায় ইউরোপ আমেরিকানদের মত হওয়ায় তারা তাদের মনের অভিলাষ চরিতার্থ করতে না পারায় প্রায়ই এখানকার নীতি নৈতিকতার সমালোচনা করতে দেখা যায়। তারা স্থুল ও প্রকাশ্যভাবে বলতে চায় এদেশের মানুষের আরো আধুনিক হতে হবে, খোলামেলা হতে হবে, পাশ্চাত্যের মত স্বল্পবসন ধারণ করতে হবে। ইসলামে যে হেজাবের বিধান রয়েছে তা নিয়ে তারা প্রায়ই সমালোচনা করেন। তারা এসব দেশগুলো অবাধে পাশ্চাত্যের ন্যায় জীবন-যাপন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আলোচিত পান্না মাস্টারেরা তাদেরই সাক্ষাত প্রতিনিধি। তারা শিক্ষকের মত একটি সম্মানজনক পেশা ধারণ করে এসব অপকর্ম করে বেড়ায়। আর কমবেশি কলঙ্ক গায়ে লাগে সচ্চরিত্রবান শিক্ষকদের উপরও। কিন্তু কিছুদিন আগেও আমাদের সমাজের এ অবস্থা ছিল না। নিকট অতীতও এই কথা বলে যে, শিক্ষকরা ছিলেন একটি সমাজের আদর্শ মানুষ। একজন শিক্ষককে মানুষ সেই হিসেবেই সম্মান করত। ছাত্র-ছাত্রীরা পা ছুঁয়ে তাদেরকে সালাম করত। এখন শুনি ছাত্র-ছাত্রীরা নাকি বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে শিক্ষদেরকে তাদের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে, এমন কি চড় থাপ্পড়, কিল ঘুষি মারতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। পরীক্ষা কক্ষে নকল করতে না দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

এর কারণ সম্ভবতঃ তারা নিজেরাই তাদের সম্মান নষ্ট করেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যৌন নির্যাতনের যে সব খবর প্রকাশ পাচ্ছে তার অধিকাংশই শ্রেণীকক্ষের বাইরে, অর্থাৎ শ্রেণীকক্ষে নয়। বেশিরভাগই ঘটনা ঘটে শিক্ষকের বাসায় কিংবা কোচিং সেন্টারে। ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং করছে বিধায়ই তারা কৌশলে এসকল ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড ঘটানের সুযোগ পাচ্ছে। আর ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিংমুখী হচ্ছে কেন? কারণ শ্রেণীকক্ষে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষা দেওয়ার চাইতে অর্থ উপার্জনের দিকে বেশি আগ্রহী হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বাধ্য করছেন তাদের কাছে ‘প্রাইভেট’ পড়ার জন্য।

এই পরিস্থিতির জন্য একদিকে যেমন দায়ী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক মূল্যবোধ অন্যদিকে শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা। একটা মানুষকে সৎভাবে বাঁচতে গেলে তাকে অবশ্যই জীবন যাত্রা নির্বাহ করার জন্য আয় রোজগারের দিক থেকে নিশ্চিন্ত থাকতে হয় কিন্তু আমাদের দেশে এর যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাই এককভাবে শিক্ষকদের দোষ দিয়ে লাভ হবে না। এর জন্য দায়ী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অর্থাৎ সিস্টেম। সিস্টেমের মারপ্যাঁচে পড়ে জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের এই দূরবস্থা। শিক্ষক সমাজের উন্নতি না ঘটিয়ে জাতির উন্নয়ন ঘটানো কখনো সম্ভব নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.