![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[দৈনিক নিউজের উদ্যোগে সত্যই সুন্দর স্লোগানের প্রতিপাদ্য বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুল ইসলাম সহকারী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান মোঃ নুরুল আবছার সোহাগকে একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল]
সাংবাদিক: আপনি এই এলাকার দায়িত্ব পাওয়ার পর উল্লেখযোগ্য কিছু অবদান/পদক্ষেপের কথা বলবেন কি?
শহিদুল ইসলাম: আপনারা জেলা প্রশাসক এর দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন, জেলা প্রশাসক মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রনালয় এবং বিভাগের মধ্যে এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় করে। এমন কি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও আমরা সমন্বয় করে থাকি। এখানে আমাদের এখনো অনেকগুলো অফিস হয়নি। এই অফিসগুলো করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাছে জামি অধিগ্রহণ করার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন। তো অর্থবৎসরের শেষ দিকে এসে প্রথমে আমি দেখলাম যে, এল,এ ক্যাস গুলো অনেকাংশে পেনডিং আছে। এল,এ ক্যাসের প্রতিকটির সাথে কিন্তু উন্নয়ন কাজ জড়িত আছে। বিশেষ করে সুরমা নদীর উপর কাজির বাজার ব্রিজ, এটাতেও জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা ছিলো। আমি এসেই অল্পদিনের মধ্যেই এগুলো পাঠিয়ে দিয়েছি। তারপর গোলাপগঞ্জের চন্দরপুর ব্রিজের এপ্রোচ রোডের জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি, মূল ব্রিজের কিছু কাজ কোরে রাখা হয়েছিলো, আমরা অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেছি। সিলেটে নতুন ক্যান্টনমেন্টের জন্য প্রায় ১৫০০ একর জমি প্রয়োজন। সেটার অধিগ্রহণকাজ ও এগিয়ে চলছে, আবার একটা মেরিন একাডেমী হবে সেটার জন্যও অধিগ্রহন কাজ চলছে। এগুলো হলো বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করার জন্য। আমি জেলা প্রশাসক যতই ব্যস্ত থাকিনা কেন, আমার কাছে কোন কিছু প্যান্ডিং থাকেনা। আমি চেষ্টা করি নিরপেক্ষভাবে কাজ কোরতে। আমি এসে পঁচিশ দিনের মাথায় ৪র্থ শ্রেনীর ৩৮ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি। সেই নিয়োগ নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারে নাই, এটা আপনারা জানেন। শুধু আমার অফিসেই নয়, উপজেলাগুলোতেও মানুষ যেন সাফার না করে সে জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। আমি এখানে এসেই ১ মাসের মধ্যে ১২ টি উপজেলা ভিজিট কোরেছি। বিভিন্ন সেক্টরের মানুষদের সাথে মত বিনিময় করেছি। আপনারা জানেন আমি মে মাসে এসে ১৫ জুন একটা সফল নির্বাচন করেছি। এই নির্বাচন নিয়েও কেউ কোন কথা বোলতে পারে নাই। আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিলো। আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। গত রমযান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রনে ব্যবসায়ী, মিডিয়া, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং সুশিল সমাজের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তাই ঈদের বাজারটা সিলেটে ভালো ছিলো। এখানে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য এস.এম.পি, জেলা পুলিশ এবং র্যাব এর মধ্যে আমরা সমন্বয় করেছি। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও সুন্দর ভাবে চোলছে।
সাংবাদিক: পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে এবং বাস্তবেও আমরা দেখছি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় সকল অঙ্গনেই আজ মিথ্যার জয় জয়কার চোলছে। রাজনৈতিক সত্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ সাধন করা আর মিথ্যা হচ্ছে জনগনের অকল্যাণ করে নিজের কল্যাণ করা। ধর্মের সত্য হচ্ছে মানবতার কল্যাণে সকল সত্য তুলে ধরা আর মিথ্যা হচ্ছে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা, রাজনীতি করা, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নামে মিথ্যা ফতোয়া জারি করা। আপনি কি মনে করেন না এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত?
শহিদুল ইসলাম: ধন্যবাদ, আপনি ভাল প্রশ্ন করেছেন। আমি বিশেষ করে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ছোট বেলা থেকেই অপছন্দ করি। আমি এখানে যোগদান করার পর প্রথম দিনেই মিটিং করেছিলাম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে, এখানকার সমস্থ এম.পি.ওভুক্ত মাদ্রাসা গুলোর প্রধান শিক্ষকদের সাথে। তাদের সাথে বসে আমি একথাটিই বুঝাবার চেষ্টা করেছি যে, আপনারা আলেম সমাজ আপনাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক, জাতি আপনাদের কাছে পবিত্র কোরআন বা হাদিসের অপব্যাখ্যা আশা করে না। কোরআন কিন্তু অত্যন্ত পরিষ্কার এবং সন্দেহমুক্ত এক মহাগ্রন্থ, এতে কোন গোজামিল নেই। এটা একশত ভাগ প্রমাণীত ও বিজ্ঞান সম্মত। আমি বিভিন্ন সময়ে ইমামদের সম্মেলনে একথাগুলো বারবার বলেছি এবং তাদের কে বোলেছি আপনারা একথাগুলো মসজিদে বলবেন। আমি এই প্রচারণারও চেষ্টা করেছি যে, আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করা উচিত নয়। ইসলাম ভাঙচুর সার্পোট করে না। মানুষ হত্যা সব চেয়ে বড় অপরাধ। এ অপরাধ যারা করে তারা কিসের মুসলমান! ইসলাম এর নামে যদি আমরা রাস্তায় নেমে মানুষ হত্যা করি, আমরা যদি অন্যের সম্পদ ভাংচুর বা নষ্ট করি, তাহলে এটাতো ইসলাম সমর্থন করে না। আশা করি আমাদের মানুষজন আরো বেশি সচেতন ও শিক্ষিত হলে এ সমস্থ কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এদের ধূ¤্র জালে মানুষ বেশি দিন আটকা থাকবে না।
সাংবাদিক: আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে দেখতে পাই কোন নবী রসুল এবং তাদের সাহাবীরা ধর্ম প্রচার করে এর বিনিময় নেন নাই। কিন্তু স্বার্থান্বেসী ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের নামে বিনিময় নেয়ার একটা সিস্টেম হিসেবে চালু করে দিয়েছেন। এই সিস্টেম বন্ধ করার জন্য, বদলানোর জন্য জনগণকে কি সচেতন করে তোলা উচিত না? আপনি এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বোলে মনে করেন?
শহিদুল ইসলাম: কোন কিছুর বিনিময়ে যারা ধর্ম প্রচার করে তারাতো প্রকৃত অর্থে ধর্ম প্রচার করে না, এটাতো সিম্প্লি বিজনেস। সুতরাং যদি কেউ বিনিময় নেয় তবে এটা কিন্তু ধর্ম প্রচার না, ওটা তার ব্যক্তিগত ব্যবসা।
সাংবাদিক: ধর্মের নামে সন্ত্রাসও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আল্লাহর রাসুল (দ মক্কার জীবনে একজন সাধারন নাগরিক ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি বিরোধীদের অনেক অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করেছেন। কিন্তু কোন প্রতিঘাত করেন নাই। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যও অস্ত্র ব্যবহার করেন নাই। অন্যদিকে মদিনার জনগণ যখন তাঁকে মেনে নিলো তখন তিনি রাস্ট্র প্রধান হোলেন। রসুল অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের মত তিনিও তখন জনগনের জান মাল ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ শুরু করেন। অর্থাৎ রাস্ট্রীয় পর্যায়ে রাস্ট্রের অধীনে সেনাবাহিনী থাকবে, পুলিশ থাকবে, অস্ত্র থাকবে এবং প্রয়োজন মত রাস্ট্র সেগুলি ব্যবহার কোরবে। এটা বৈধ। কিন্তু ব্যক্তি বা সংগঠন নিজের প্রয়োজনে অস্ত্র রাখতে এবং ব্যবহার করতে পারবে না। এটা অবৈধ। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
শহিদুল ইসলাম: দেখুন, আমাদের কিন্তু অনেক ভালো আলেম সমাজ আছে, আমাদের অনেক মিডিয়া আছে। মিডিয়ায় যদি সঠিকভাবে আমাদের নবী করিম (সঃ) এর জীবন দর্শন প্রচার করে তাহলে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে তারা এমনিতেই পিছু হটে যাবে। আর সন্ত্রাসের কথা যেটা বললেন, সন্ত্রাসীরা কিন্তু টিকতে পারে নাই। বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়ও যারা সন্ত্রাস করেছে তারা কেউই সফল হতে পারে নাই। সাময়িকভাবে তারা হয়তো কিছু দিন টিকতে পারবে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কখনোই সফলকাম হতে পারবে না, কারণ তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তাদের উদ্দেশ্য কল্যাণকর নয়, অথচ ধর্ম সব সময়ই কল্যাণকর।
সাংবাদিক: ধর্ম সম্পূর্ন মোল্লা, মৌলবাদীদের ব্যাপার এই মনে কোরে শিক্ষিতমহল ধর্ম থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার কারণে অর্ধশিক্ষিত একটি নির্দিষ্ট ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীর হাতে আমাদের ধর্ম জিম্মি হোয়ে পোড়েছে বোলে অনেকেই মনে করেন। এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
শহিদুল ইসলাম: হ্যাঁ, এটা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ আমরা যারা শিক্ষিত এবং সচেতন, ধর্ম নিয়ে আমরাও কথা বলতে পারি। এটা এ রকম না যে, যারা দাঁড়ি- টুপিওয়ালা অর্থাৎ মোল্লা নামধারীরাই ধর্ম প্রচার করে যাবে। মুসলিম হিসেবে ধর্ম নিয়ে আমাদেরও কথা বলা উচিত, আমাদের শিক্ষিত সমাজের মধ্যে প্রচুর আলেম আছে, অনেক বড় বড় প-িত আছেন, তারা অনেকেই কথা বলতে চায় না। আমরা আশা করবো তারা কথা বলবেন, দেশকে এই অরাজকতা থেকে রক্ষা করতে তারা এক সময় ঠিকই বেরিয়ে আসবেন।
সাংবাদিক: আজকে সমাজের সর্ব অঙ্গনে অর্থাৎ ব্যবসা, বানিজ্য, শিক্ষা, রাজনীতি, ধর্ম, খাদ্য, স্বাস্থ্য সব দিক থেকে জাতিগতভাবে আমরা ভেজাল এবং দূর্নিতীর এক চরম দূর অবস্থার মধ্যে আছি। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের উপায় কি?
শহিদুল ইসলাম: এ ক্ষেত্রেও আমাদের যেটা সমস্যা সেটা হল আমরা সামাজিকভাবে অত্যন্ত স্বার্থপর হয়ে গেছি । সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে যে ন্যুনতম মানবতাবোধ থাকা উচিত সেটুকুরও অভাব দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা যে খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল মিশ্রন করে এগুলোর বেশির ভাগই সম্পূর্ণ বিষ। এগুলো খেয়ে মানুষ মারাও যেতে পারে। আমরা সেই বিষাক্ত জিনিষই মানুষকে খাওয়াই ব্যবসা করার জন্য। এটা মুসলিম কোন মুসলিম তো দূরে থাক, কোন মানুষেরই কাজ হতে পারে না। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সমস্ত সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে কথা বলে থাকি। আমি গতকাল বিয়ানিবাজারে একটি স্কুল ভিজিট করেছি, সেখানে একটি ছাত্রী সমাবেশ হয়েছিলো। সেখানে আগেই বলে রেখেছিলাম যে, আমি ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলবো। আমি ওদের সাথে যৌতুক প্রথা, মাদক সেবন, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এই যে যারা ভেজাল করে মুসলিম হিসেবে এটা তাদের করার কথা না। তারপর এই যে যারা ব্যবসা করে, ব্যবসা অত্যন্ত পবিত্র পেশা। আমাদের নবী করিম (সঃ) ও ব্যবসা করেছেন। সেই পবিত্র ব্যবসা করতে গিয়ে আমরা কিন্তু এক বারেই বেশি ধনী হয়ে যেতে চাই। আমরা কিন্তু আইনগতভাবে এ সমস্ত ভেজাল প্রতিরোধে অত্যন্ত তৎপর। এ লক্ষ্যে আমাদের বিভিন্ন মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
সাংবাদিক: প্রকৃতি একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে। সেখানে কোন বিশংখলা নাই, বিশৃংখলা যা আছে মানব সৃষ্ট। প্রকৃতির যিনি ¯্রষ্টা তিনি মানবজাতীরও ¯্রষ্টা। আপনি কি মনে করেন ¯্রষ্টার দেওয়া বিধান যা তিনি মানবজাতীর জন্য দিয়েছেন তা প্রয়োগ করলে মানুষ শৃংখলিত বা শান্তিতে থাকবে?
শহিদুল ইসলাম: তা তো অবশ্যই, প্রাকৃতিক যে নিয়ম-কানুন তা মানা ছাড়া আর কোন সুযোগ নেই। তা মানতে হবে, আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন তা সমস্তই চিন্তা ভাবনা করেই করেছেন। ঊাবৎু ঃযরহম রং ঢ়ৎবঢ়ষধহহবফ. কোথায় পাহাড় হবে, কোথায় নদী হবে, কোথায় সমুদ্র হবে, সমস্ত কিছুই সুপরিকল্পিতভাবে আল্লাহ্র করা। আমরা সেদিন সুনামগঞ্জের পাশে যে বড় হাওরে গেলাম সেই হাওরের পাশেই ভারতের উচু উচু পাহাড়। আমি সেদিন বলে ছিলাম যে, এই হাওরের মাটি গুলো নিশ্চই ওই পাহাড়ের। তো আল্লার কিন্তু সব কিছুই ভারসাম্যপূর্ণ। আমরা কিন্তু প্রকৃতির উপর অত্যাচার করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছি। সুতরাং আল্লাহ্ যে প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়েছে সেগুলো মানলে আমরা ভালো থাকবো।
সাংবাদিক: দৈনিক নিউজের পাঠকের জন্য কিছু বলুন।
শহিদুল ইসলাম: এ পত্রিকার পাঠকদের বলব, আপনারা অবশ্যই এই পত্রিকা পড়বেন। এই পত্রিকার ভাল বিষয়গুলো নিজে জানবেন ও অন্যদেরকেও জানাবেন। অনেক গুণীজনেরা এতে লিখে থাকেন, এগুলোর ভালো ভালো বিষয়গুলো আমরা অবশ্যই নিতে পারি।
©somewhere in net ltd.