![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল অংশ অর্জিত হয় পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। এছাড়াও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান যুগিয়ে থাকে এই শিল্পটি। শিল্প না থাকলে দেশের এই সংখ্যাটা বেকার থাকত। বেকারত্ব থেকে বাড়ত অপরাধ। আরো বিনষ্ট হত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেই শ্রমিকরাই যখন ফুঁসে উঠছে তখন অবশ্যই তা ভাবনার বিষয়। সরকার তরফ থেকে বলা হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে বিরোধীদলের হাত রয়েছে। আবার অনেকে বলছেন পোশাক শিল্পে যারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোরও হাত রয়েছে। ঘটনা যাই হোক, যার যাই সন্দেহ হোক বা যা কিছুই অনুমান করে থাকুন, বাস্তবতা হচ্ছে হুমকির মুখে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পটি। এই শিল্পটি যদি না টিকতে পারে তখন দেশের কী অবস্থা হবে তা একবার ভেবে দেখুন। আশা করি সেই চিত্রটি আপনাদের চোখের সামনে ইতোমধ্যে ভেসে উঠেছে। তাই এখন সময় পারস্পরিক দোষারোপের নয়, সময় এখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। তবে সামাল বলতে বলপ্রয়োগ করে সমাধান নয়। লাঠিপেটা, গুলিবর্ষণ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গও নয়। বুঝতে হবে তাদের সমস্যাটা এবং তাদের এই সমস্যার সমাধানও করতে হবে শীঘ্রই। শ্রমিকদের সমস্যা জিইয়ে রেখে কখনো অসন্তোষের আগুনকে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না। পেটের জ্বালায় হয়তো শ্রমিকরা কাজে ফিরবে, কিন্তু যখনি তাদের সমস্যার কথা মনে হবে তখনি তারা মালিকদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে। বিবেচনা করে দেখা উচিত আসলেই শ্রমিকদের অবস্থাটা কোথায় পৌঁছেছে। শ্রমিকগণ বলছেন, যে হারে দ্রব্যমূল্যসহ জীবন যাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে বর্তমান তারা যে বেতন পাচ্ছে তাতে তাদের টিকে থাকার উপায় নেই। কঠোর পরিশ্রমের পরও যদি তারা খেয়ে পরে বাঁচার নিশ্চয়তা না পায় তবে এর চাইতে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! আন্তর্জাতিক শ্রম-আইনে নির্ধারিত আট ঘণ্টার চেয়ে তাদের অনেক বেশি কাজ করতে হয়। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা বিপজ্জনক পরিবেশে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করছেন। এই সব কারখানায় পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন নামকরা পোশাক তৈরি করা হয়। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের যে দীর্ঘ সময় কাজ করানো হচ্ছে, এটি গোপন করার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজের সময়ে দুইটি পৃথক হিসেব রাখেন। পশ্চিমা ক্রেতাদেরকে নকল হিসেব দেখানো হচ্ছে। এ খবরের সত্যাসত্য নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে। ঘটনা কতটা সত্য তা আমরা যারা এই শহর বা কারখানার আশপাশ দিয়ে রাতে আসা যাওয়া করি কিংবা আমাদের স্বজনদের মধ্যে যারা পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত তারা ভালই জানি। অনেক প্রতিভাবান তরুণকে দেখেছি তারা খুব দক্ষ এবং উদ্যমী হলেও এই শিল্পে চাকুরি নেননা শুধু অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হবে এই ভয়ে। কিন্তু এত পরিশ্রমের পরেও তারা যতসামান্য যা বেতন পান তা অবশ্যই তাদের প্রতি অবিচার। অন্যদিকে শ্রমিকদের স্বার্থ দেখেন এমন কিছু সংস্থার মত হচ্ছে-মালিকরা নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে শ্রমিকদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবছেন না। কারখানা মালিকরা দেশের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করেন। তারা সবচেয়ে কম কর দেন। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দেন সবচেয়ে কম। চার হাজার টাকার বেশি মজুরি দিলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে- মালিকদের এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। মালিকদের সদিচ্ছা থাকলে ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকদের প্রত্যাশিত মাত্রায়ই দেওয়া সম্ভব। রপ্তানিকৃত একটি পণ্য থেকে আয়কৃত অর্থের পাঁচ থেকে সাত শতাংশ শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় করেন মালিকরা। অন্যান্য খরচ বাদ দিলেও প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই মালিকদের মুনাফা থাকে। পোশাক শিল্প থেকে প্রতি বছর ৩২ হাজার কোটি টাকা রফতানি করা হয়। এর মধ্যে যদি ১৬০ হাজার কোটি টাকাও মুনাফা হয় তার মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হলে মালিকদের এমন কিছুই হবে না। তাতেও মালিকদের ৭৫ শতাংশ মুনাফা থাকবে। তবে এর বিপরীতে মালিকদেরও কথা রয়েছে। তারা মনে করেন দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, ঘন ঘন হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির কারণে প্রতাশিত ব্যবসা কখনো হয় না। তাদের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দুটি পক্ষেরই স্বার্থ রক্ষা করে মধ্যস্থতার ভূমিকায় সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। সেটা যেন কখনোই আবার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে না হয় সেদিকেও তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে যে করেই হোক এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই শিল্প না থাকার ভয়াবহ দৃশ্য আশা করি আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।
©somewhere in net ltd.