নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শবে কদর এসেছে জেগে উঠুন প্রাণের আনন্দে

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

শবে কদর এসেছে জেগে উঠুন প্রাণের আনন্দে
-আবছার তৈয়বী, (আবুধাবি থেকে):

আল্লাহ জাাল্লা শানুহ সারা বছরের মধ্যে কিছু দিন এবং কিছু রাতকে অনন্য ফজিলত ও মর্যাদা দানে ধন্য করেছেন। তিনি যে রাতটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা দিয়েছেন, কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তার নাম ‘লায়লাতুল কদর’ (ভাগ্য নির্ধারণী মর্যাদাবান রাত্রি), যা আমরা ‘শবে কদর’ বলে জানি। এ রাত মুসলিম জীবনে এক অদ্বিতীয় ও অবিস্মরণীয় রাত। এ রাতে মুমিন-মুসলমানদের অন্তরাত্মা আনন্দে উদ্বেলিত হবে শবে কদরের প্রাপ্তির খুশিতে। একদিকে মাহে রমজানের বিদায়ের করুণ সূর, অন্যদিকে কদর রাতের প্রাপ্তি- সত্যি বলতে কি একই সাথে আনন্দ-বেদনার অনুভুতি জাগানিয়া এ রকম মোক্ষম সুযোগ মুমিন-মুসলমানদের জীবনে খুব কমই আসে। যেহেতু শবে কদরে জগৎজুড়ে বইবে মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহুর রহমতের অনিশেষ প্রস্রবণ।
প্রিয় পাঠক! মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ও আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লামের উসিলায় গুনাহ্গার বান্দাদের পরিশুদ্ধ, পবিত্র এবং পাপমুক্ত করার যে সব দিনক্ষণ, শুভ সময় বিশেষ মুহূর্ত স্থির করে দিয়েছেন, শবে কদরের স্থান সবার ওপরে। আমাদের প্রিয়নবী শফিউল মুজনেবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বছরের যে পাঁচটি রাতকে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী বলে ঘোষনা করেছেন, তম্মধ্যে ‘লায়লাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ অন্যতম। এ মহান রাতটির অবস্থান সম্পর্কে হাদিস শরীফে বিভিন্ন বর্ণনা দেখা যায়। অধিকাংশ বর্ণনা মোতাবেক মাহে রমজানের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাতে ‘লায়লাতুল কদর’ লুকায়িত আছে। ইমামুল আয়িম্মা, সিরাজুল উম্মত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফকিহ্ ও মুজতাহিদ, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমামে আজম হযরত ইমাম আবূ হানিফা (রা.), সাহাবী হযরত উবাই কা’ব (রা.) প্রমূখের মতে মাহে রমজানের ২৭ তম রাতই হলো ‘লায়লাতুল কদর’। অধিকাংশ আউলিয়ায়ে কিরাম ও সালফে সালেহীন এ রাতকেই ‘লায়লাতুল কদর’ রূপে পালন করেছেন। তবুও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী মাহে রমজানের শেষ দশকে এর তালাশে ইবাদত করা উচিত। পবিত্র কোরআনে এ রাতের গুরুত্ব বর্ণনা করে পুরো একটি সূরা অবতীর্ণ করা হয়েছে। মুহাদ্দিস ইবনে আবি হাতেম (রহঃ) তাফসীরের ইমাম মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন সাহাবায়ে কিরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) -দের বৈঠকে বনি ইসরাইলের এক মুজাদিদের কথা উল্লেখ করেন। যিনি এক হাজার মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর সাধনায় লিপ্ত ছিলেন এবং আল্লাহর পথে জিহাদে কাটিয়েছেন। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কিরামের আফসোস হয় যে, এক হাজার মাস অর্থাৎ তিরাশি বছর চার মাস তো এ যুগের অনেকে জীবনও পায় না। তাই হযরত মূসা (আঃ)-এর উম্মত বনি ইসরাইলের মতো এতো অধিক সাওয়াব লাভের অবকাশও উম্মতে মুহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নেই। সাহাবায়ে কিরামের এ আফসোস-অনুশোচনাকালে হযরত জিবরাইল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআন মজিদের সূরা ক্বদর নিয়ে হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমন করেন। আল্লাহ পাক ছোট্ট একটি সুরায় অতি সংক্ষেপে ক্বদর রজনীর মহত্ত বর্ণনা করেন এবং রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খাতিরে উম্মতে মুহাম্মাদিকে মর্যাদাপূর্ণ এ রজনী উপহার দেন। উপরোক্ত ঘটনাটি তাফসীরে মাজহারিতেও অন্য সূত্রে স্থান পেয়েছে।

এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্বদরে নামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”[সহীহ বুখারীঃ ১৯০১; মুসলিমঃ ৭৬০] ‘শবে কদর’ রাতে নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, মোরাকাবা, দোয়া-দুরূদ, মিলাদ-কিয়াম, ইস্তেগফার, কবর জিয়ারত, দান-খয়রাত ইত্যাদি নফল ইবাদতে সারারাত অর্থাৎ মাগরিবের পর থেকে ফজর পর্যন্ত লিপ্ত থাকলে এক হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যায়। এ রাতে বান্দার আগত এক বছরের হায়াত-মউত, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, আয়-ব্যয়, জীবন-জীবিকা ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের হাতে সোপর্দ করা হয়। এ রাতে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম অন্যান্য ফেরেশতাদের নিয়ে জমিনে অবতরণ করেন। পবিত্র কোরআন শরীফের অবতরণ এ রাতেই হয়েছিল বিধায় এ রাতকে ‘লায়লাতুল কদর’ বা ‘মহিমান্বিত রজনী’ বলা হয়। লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সাওয়াব বা পুণ্যের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার পেছনের সব পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় ‘লাইলাতুল কদরে’ রাত জেগে ইবাদত করবে, তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারি শরিফ)

তবে পবিত্র হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এ রাতেও কিছু লোককে ক্ষমা করা হবে না। তম্মধ্যে ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, সুদখোর, ঘুষখোর, গণক, অপরের কুৎসা রটনাকারী, হিংসুক, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান ইত্যাদি লোকদের দোয়া কবুল হবে না। এ জন্যে যাদের কাছে এসব দোষ রয়েছে, তারা এ রাত আসার পূর্বেই এ সমস্ত গর্হিত কাজ থেকে খালিস অন্তরে তওবা করা দরকার। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘শবে কদরে জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) একদল ফেেেরশতাসহ এ ধরণীতে অবতীর্ণ হন এবং ইবাদাতে লিপ্ত বান্দাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করেন’ (বায়হাকি)। ‘দুররে মনসুর’ নামক প্রসিদ্ধ কিতাবে প্রিয়নবীর প্রিয় সাহাবি খাদিমুর রাসূল হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতদের ওপর ‘লায়লাতুল কদর’ দান করেছেন। অন্যান্য নবীদের উম্মতকে এ দান দেওয়া হয়নি ’। প্রিয় পাঠক! আমরা উম্মতে মোহাম্মদীরা বড়ই খোশনসিব। কেননা আমরা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উসিলায় শবে কদরের মতো মহা মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত রাত পেয়েছি। তাই প্রিয় পাঠকদের খেদমতে আরজ থাকবে- এ মহান রাত আসার আগেই প্রস্তুতি নিন, অলসতা ছেড়ে জেগে উঠুন প্রাণের আনন্দে, ইবাদত কর্মে। শুধু একার জন্য নয়, বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের মুক্তির জন্য দোয়া করুন। দু’হাত প্রসারিত করে মহান আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর দরবারে ফরিয়াদ করুন- নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, পাড়া-প্রতিবেশী ও সমগ্র দেশবাসী এবং মুসলিম মিল্লাতের জন্য। কায়মনোবাক্যে দোয়া করুন- আপনার আমার সকলেরই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, পালনকর্তা মহান আল্লাহ্র দরবারে। হাদিসে পাকে আছে, অন্যের জন্য খালিস নিয়তে দোয়া করলে আপনার নিজের দোয়াও কবুল হবে। আল্লাহ্ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন! বেহুরমাতি রাহমাতাল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম

মুহাম্মদ নূরুল আবছার তৈয়বীঃ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউএই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.