নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কল্প-গল্প : অনন্ত নীহারিকার মাঝে (পর্ব দুই এবং শেষ)

২১ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৫২


অনন্ত নীহারিকার মাঝে (১ম পর্ব )
১।
"আমি কোথায়?" অর্ধঘুমন্ত অবস্থায় বলে ওঠে অর্পিতা।

"আমরা তোমাকে আবার ধরে এনেছি!"

অর্পিতা চোখ মেলে দেখে, সেই ঝলমলে আলোর দুনিয়ায় ফিরে এসেছে। এবার শূন্যে ভাসছে না, একটি নীলাভ কক্ষে দাঁড়িয়ে, যার দেয়ালগুলো জীবন্তের মতো স্পন্দিত হচ্ছে। সামনে সেই অদ্ভুত প্রাণীটি, তার দেহে আলোর ঝিলিক।

কিছুটা ধাক্কা খায় অর্পিতা। মাথায় ভোঁতা এক ধরনের যন্ত্রণা হচ্ছে। ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নেয়।

"আমরা তোমাকে আবার ধরে এনেছি!" মস্তিষ্কে ভেসে ওঠে বার্তা।

"কেন? আমার স্মৃতি তো মুছে দিয়েছিলেন!" অর্পিতা গলা চড়ায়।

প্রাণীটি নড়েচড়ে ওঠে। "তুমি বিশেষ। তোমার আবেগ আমাদের সেন্ট্রাল ডেটাকে বিকৃত করেছে।"

"ডেটা?"

"হ্যাঁ। আমরা ১২,৩০৪ জন মানুষের অনুভূতি বিশ্লেষণ করেছি। কিন্তু তুমিই একমাত্র যার স্মৃতি মুছতে পারিনি। তোমার ভালোবাসার সিগন্যাল আমাদের সিস্টেমে প্রবেশ করেছে।"

"বুঝলাম না! যখন আমি পৃথিবীতে ফিরে গিয়েছিলাম, তখন তো সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম!" দ্বিধান্বিত গলায় বলে অর্পিতা।

"হ্যাঁ, আমরা জানি। কিন্তু তোমার মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করে পেয়েছি, তোমার স্মৃতিগুলো সুপ্ত অবস্থায় ছিল, আগ্নেয়গিরির মতো যে কোনো সময় জেগে উঠতে পারে!"

"তাতে আপনাদের সমস্যা কী?" আরও কিছু বলতে যায় অর্পিতা।

প্রাণীটি তাকে থামিয়ে দেয়। "এটা বড় সমস্যা, অর্পিতা। তোমার মস্তিষ্ক কীভাবে আমাদের প্রযুক্তিকে পাশ কাটিয়ে গেল, সেটা আমাদের জানতে হবে!"

অর্পিতার হৃদয় ধক করে। "আমার বাবা আরিয়ান। তিনি এখনও এখানে আছেন?"

আলোর ঝিলিক থেমে যায়। "না। তিনি পালিয়েছেন।"

২।
"পালিয়েছেন? কোথায়?"

প্রাণীটি নিশ্চুপ। হঠাৎ কক্ষের একপাশে আলোর দরজা খোলে। ভেতর থেকে চেনা গলা—

"অর্পিতা!"

চমকে ঘুরে দাঁড়ায় সে। আরিয়ান দৌড়ে আসছে, কিন্তু তার শরীর অর্ধেক স্বচ্ছ, যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে!

"বাবা!" অর্পিতা ছুটে যায়, হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু আরিয়ানের দেহে হাত ঢুকে যায় আলোর মাঝে।

"ওরা আমাদের শক্তি খাচ্ছে, অর্পিতা," হাঁপাতে হাঁপাতে বলে আরিয়ান। "ওরা আবেগ শোষণ করে! এরা পঞ্চম মাত্রার পরজীবী!"

প্রাণীটি বিকট শব্দ করে। "তুমি নিষিদ্ধ তথ্য প্রকাশ করেছ!"

আরিয়ানের দেহে বিদ্যুৎ খেলে যায়। সে চিৎকার করে। "ওদের দুর্বলতা আছে... এরা—"

বাকিটি কাটা পড়ে। আরিয়ান অদৃশ্য হয়ে যায়।

অর্পিতা ফুঁপিয়ে ওঠে। "তাকে ফেরত দাও!"

প্রাণীটি নড়ে। "তুমি তাকে দেখতে চাও? তাহলে আমাদের সাথে আসো।"

৩।

"এটা কী...?"

অর্পিতাকে নিয়ে আসা হয় এক বিশাল হলঘরে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ, কেউ প্রাচীন যুগের পোশাকে, কেউ ভবিষ্যতের ইউনিফর্মে, সবাই দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের মাথায় আলোর নল লাগানো, যেখান থেকে রঙিন তরঙ্গ বেরিয়ে উপরের দিকে উঠছে। কিছুক্ষণ পরপর তরঙ্গগুলো ঝলকানি দিয়ে ওঠে, আর মানুষগুলো ক্রমশ আবেগহীন জড়বস্তুর মতো হয়ে যাচ্ছে!

"আমরা শক্তি সংগ্রহ করি," বলে প্রাণীটি। "মানুষের সুখ, দুঃখ, ক্রোধ, এই আবেগগুলো আমাদের শক্তি দেয়। তোমার বাবা আমাদের সিস্টেমে ফাটল ধরিয়েছে। সে এখন হারিয়ে গেছে।"

অর্পিতা গর্জে ওঠে। "তোমরা মনস্তাত্ত্বিক ভ্যাম্পায়ার! তাকে ফেরত চাই!"

হঠাৎ হলঘরের আলো নিভে যায়। দূর থেকে ভেসে আসে আরিয়ানের কণ্ঠ—

"অর্পিতা, ওদের ভয় পেয়ো না! এরা আমাদের মাত্রা বুঝতে পারে না কারণ এদের নিজেদের আবেগ নেই!"

"বুঝলাম না!" বুক ধুকধুক করে ওঠে অর্পিতার।

"এরা উচ্চমাত্রার প্রাণী। আমাদের থেকে উন্নত, কিন্তু উন্নতির সাথে সাথে এরা আবেগ ও ভালোবাসার ক্ষমতা হারিয়েছে!"

প্রাণীটি আতঙ্কিত হয়। "স্টপ হিম!"

অর্পিতা বুঝতে পারে, তার বাবা তাদের সিস্টেম হ্যাক করছে! সে ছুটে যায় নলগুলোর দিকে, যেগুলো মানুষের আবেগ শুষে নিচ্ছে।

"বাবা, কী করতে হবে?" চিৎকার করে অর্পিতা।

আরিয়ানের গলার স্বর কাঁপে। "এদের মেশিনে বিপরীত সিগন্যাল পাঠাও! আমি সিস্টেম হ্যাক করেছি, এরা এখন কিছুক্ষণের জন্য প্রতিরোধ করতে পারবে না!"

"কিভাবে?" কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে অর্পিতা।

"সময় কম। পরে বলব, নলগুলো ছিঁড়ে ফেল!"

অর্পিতা একটি নল ছিঁড়ে ফেলে। বিদ্যুৎ-ঝলকানি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে!

৪।
"তুমি পারবে না—" মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায় প্রাণীটি।

অর্পিতা উপেক্ষা করে। "বাবা, বলো কী করতে হবে!"

"আমাদের অনুভূতির তরঙ্গগুলো এখানে ডিজিটাল সংখ্যায় রূপান্তরিত হয়," জরুরি গলায় বলে আরিয়ান।

থেমে আবার বলে "এই পঞ্চম মাত্রায় সবকিছু শক্তি। আমাদের আবেগগুলো এখানে অস্ত্র!"

একটি দ্বীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে "তোমার নেতিবাচক আবেগগুলো জাগিয়ে তোল!"

প্রাণীটি আর্তনাদ করে। "স্টপ ইট!"

অর্পিতা নিজের বুকে নল গেঁথে দেয়! "তোমরা আমাদের অনুভূতি চাও? নাও!"

সে তার সমস্ত স্মৃতি, বাবার জন্য ক্ষোভ, মায়ের মৃত্যুর বেদনা, একাকীত্বের যন্ত্রণা, মেশিনে ঢেলে দেয়।

সিস্টেম বিস্ফোরিত হয়!

প্রাণীগুলোর দেহ বিকৃত হতে থাকে। "এটা অসম্ভব! আমাদের মডেলে এই ডেটা—"

আরিয়ানের কণ্ঠ গর্জে ওঠে। "এটাই মানুষের শক্তি, তোমরা কখনোই বুঝবে না!"

অর্পিতা ঝাঁকুনি দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। চারপাশের মানুষগুলো একে একে জেগে ওঠে।

তারপর—

অন্ধকার।

৫।

"অর্পিতা?"

চোখ মেলে সে দেখে নিজের বিছানায় শুয়েছে। জানালা দিয়ে সকালের আলো আসছে।

কিন্তু এবার কিছুই মুছে যায়নি। বুকের মাঝে হাত দিয়ে দেখে, কিছুই হয়নি তার, কি আশ্চর্য!

হাতে একটি নোট—

"তুমি জিতেছ, মেয়ে। ওরা আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সাবধান ওরা শক্তি। শক্তির মৃত্যু নেই! তবে আমি তাদের এখানে আছি তোমার শক্তি হয়ে। —বাবা"

অর্পিতা আকাশের দিকে তাকায়। অনন্ত নীহারিকার মাঝে কোথাও যেন তার বাবা তাকে দেখছে!

"আমি প্রস্তুত," ফিসফিস করে বলে অর্পিতা।

(শেষ বা শুরু?)

বিঃদ্রঃ আজ শুক্রবার রাত, আমার এখানে! প্রথম পর্ব যখন লেখছিলাম, তখন কোনো ইচ্ছেই ছিল না দ্বিতীয় পর্ব লেখব। কথায় আছে—'নেই কাজ তো খই ভাজ'! তাই লিখেই ফেললাম!"

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ২:০৯

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভাই থামবেন না চালিয়ে যান। অনেক ভালো লাগছে।

২১ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ২:১৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। চালিয়ে যাব হয়তো, না-ও হতে পারে। তবে আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম! ভালো থাকুন অনেক।

২| ২১ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

শায়মা বলেছেন: অনেক ভালো লাগা ভাইয়া! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.