![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘আসুন! ফারুকীর চেতনায় দ্বীন বুঝি’
-আবছার তৈয়বী
বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ও আচরিত অন্য ধর্মগুলোর মতো ‘ইসলাম’ নিছক কোন ‘ধর্ম'’ নয়, ইসলাম একটি ‘দ্বীন’- সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ‘কমপ্লিট কোড অব লাইফ’। যেখানে জীবন আছে- সেখানে ‘ইসলাম’ আছে। জীবনের যতোগুলি সমস্যা আছে, সবগুলোর সুষ্ঠু, সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানও ইসলামে আছে। এমনকি জীবনের আগেও ইসলাম আছে, জীবনের পরেও ‘ইসলাম’ আছে। কোন কিছুরই কমতি নেই ইসলামে। কমতি আমাদের চিন্তায়, কমতি আমাদের আচরণে। সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি সবকিছুই ইসলামে রয়েছে। একজন মানুষের বেডরুম থেকে শুরু করে ফসলের মাঠে, পুকুরের ঘাটে, বিদ্যালয়ের আঙিনায়, মসজিদের বারন্দায়, ব্যবসার দ্রব্যে, হাটের থলিতে, বাজারের গলিতে, গ্রামের পথে, শহরের সড়কে, গাছের ছায়ায়, চাঁদের মায়ায়, সুর্যের তাপে, উনুনের ভাঁপে, বাবার বুকে, মায়ের দুধে, মায়ের পদতলে, প্রিয়ার আলিঙ্গনে, অর্ধাঙ্গীনির সাথে সংগোপনে, ভায়ের আশায়, বোনের ভরসায়, সন্তানের প্রতিপালনে, মা-বাবার সেবায়, মালিকের পূঁজিতে, শ্রমিকের ঘামে, মজুরের দামে, দুস্থের সেবায়, মানুষের ভালবাসায়, প্রতিটি মানুষের পোষাকে ও আচার-ব্যবহারে, জীবনের শুরুতে, জীবন সায়াহ্নে, শিক্ষকের শিক্ষায়, ছাত্রের অধ্যয়নে, নেতার রাজনীতিতে, সেনানিবাসের ছাউনিতে, যুদ্ধের ময়দানে, অফিসের ফাইলে, জমিনের আইলে, কৃষকের কোদালে, চাষীর চাষে, বছরের প্রতিটি মাসে, দিনের প্রতি ঘন্টায়, পাষান মানুষের মনটায়, ঊষার আলোতে, সাঁঝের অন্ধকারে, নদীর বাঁকে, মৌমাছির চাকে, খালের স্রোতে, সাগরের উর্মীমালায়, পাখির কলতানে, পশুর ডাকে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি কল-কব্জায়, কবরে, হাশরে, ফুলসিরাতে ইসলাম আলো ছড়ায়। কোথায় নেই ‘ইসলাম’!? বলুন- কোথায় নেই??? ফকিরে ঝুলিতে, দাতার থলিতে, রাস্ট্রের চাবুকে, জ্ঞানীর কলমে, বুদ্ধিজীবির মেধায় ইসলাম দ্যুতি ছড়াতে পারে। আমরা মানবিকতা, প্রেম-ভালোবাসা, উদারতা, পরমত সহিঞ্চুতা ইত্যাদির মাধ্যমে সে ইসলামকে চর্চা করতে পারি, অনুসরণ করতে পারি, প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
আপনি কীভাবে খাবেন, কীভাবে শোবেন, কীভাবে স্ত্রী সহবাস করবেন, কীভাবে মল-মূত্র ত্যাগ করবেন- জীবনের এসব খুঁটিনাটি বিষয় যদি ইসলাম বলতে পারে- তো সেই ইসলাম ‘রাজনীতি’র মতো বৃহত্তর পর্যায়ে ‘অচল পয়সা’ হবে কেন? আমরা গণতন্ত্রের জন্য ম্যকিয়াভেলি বা জর্জ ওয়াশিংটনের মুখাপেক্ষী না হয়ে খোলাফায়ে রাশেদীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারি। সমাজতন্ত্রের জন্য মাও সে তুং বা কার্ল মার্কসের অনুসরণ না করে হযরত আবু যর গিফারীর (রা.) জীবনটা অধ্যয়ন করতে পারি। ধর্ম নিরপেক্ষতা জন্য মহাত্মা গান্ধী ও পন্ডিত জওহর লাল নেহেরুকে বাদ দিয়ে মদীনার সনদের আলোকে প্রতিষ্ঠিত সেই কল্যাণ রাস্ট্রের অনুসরণ করতে পারি। জাতীয়তাবাদের জন্য যদি বেশি লালায়িত হই- তো হিজরতে নবুবী ও আল্লামা ইকবালের কথাগুলো অনুধাবন করতে পারি। পৃথিবীর অন্য কারো কিছুর আমাদের দরকার নেই; বরং পৃথিবীর যিনি স্রষ্টা, যিনি এই রঙিন পৃথিবীটা নিজ কুদরতি হাতে সাজিয়েছেন, যিনি আমার আপনার খালিক-মালিক তিনিই তো বলে দিয়েছেন- 'ইন্নাদ্ দীনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম'। আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই ইসলামের অনুসরণ করতে পারি। হেফাজতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম বা জামাতে ইসলামের অনুসরণ করার দরকার কী?
আপনি অধিকার নিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন- কোন অধিকারের কথা বলবেন? আরে ভাই! কার অধিকার নিশ্চিত করেনি ইসলাম- সেইটা আগে বলেন! মানুষের অধিকার, শিশুর অধিকার, নারীর অধিকার, মা-বাবার অধিকার, সন্তানের অধিকার, ছাত্র-ছাত্রীর অধিকার, শিক্ষকের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, মালিকের অধিকার, কর্মীর অধিকার, নেতার অধিকার, জনগণের অধিকার, রাস্ট্রের অধিকার, অমুসলিমদের অধিকার, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের অধিকার, এমনকি পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গের অধিকার যিনি নিশ্চিত করেছেন- তিনি ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লাম। আমার আপনার খালিক-মালিক আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের মনোনীত, গ্যারন্টিযুক্ত, বিশ্বপ্রশংসিত সেই নিষ্কলুষ আদর্শ বাদ দিয়ে আর কার আদর্শ অনুসরণ করতে বলেন- আপনি? কোন গণতন্ত্র, কোন সমাজতন্ত্র, কোন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, কোন জাতীয়তাবাদ ‘দ্বীন আল ইসলাম’ এর মোকাবিলা করতে পারে? দেখি দেখান তো! পারবেন না! হ্যাঁ, আপনি পারবেন না। আমার কোন আচরণের জন্য আমার দ্বীনকে আপনি গালি দিতে পারেন না, কটাক্ষ করতে পারেন না, হেয় করতে পারেন না, ছোট করতে পারেন না। কারণ আপনার সে ‘অধিকার’টা নেই- মশায়!
এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ‘দ্বীন’ বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের ‘আলেম সমাজ’ হতে পারে একটি বড়ো অবলম্বন। কিন্তু যাবেন কোথায়? ভেজাল ওখানেও আছে। শুধু ভেজাল নয়, বরং ভেজাল কতো প্রকার ও কী কী তার বাস্তব উদাহরণ যদি দেখতে চান- তো আলেমের শরণাপন্ন হতে পারেন। জানি- ধানের সাথে যেমন চিটা থাকে, আলেমদের মাঝেও চিটা আছে। বরং অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি- আলেম সমাজে ধান একটু কম, চিটাটা একটু বেশিই। এই চিটা দেখে সমাজের আঁতেল টাইপের মানুষগুলো, বুদ্ধিজীবি কিসিমের মানুষগুলো পুরো ইসলামকেই খন্ডিত চর্চার জন্য লোকদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন। আরে বাবা! তুমি ‘শয়তানী তেলেসমাতি’ যাদুঘরের দক্ষিণ দুয়ারে যেতে চাও তো যাও, অন্য দশ জনকে কেন আহ্বান করো? তোমার আদৃত গণতন্ত্রের ভীবৎস রূপ, তোমার কাঙ্ক্ষিত সমাজতন্ত্রের ফাঁকাবুলি, তোমার আচরিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের নাস্তিকতা ও অমানবিকতা, তোমার আহলাদিত জাতীয়তাবাদের বেহায়াপনা ও সংকীর্ণতা- আমরা কি দেখিনি? যত দোষ ওই নন্দঘোষের মতো ধর্মীয় রাজনীতির ওপর উগড়ে দাও কেন? কোন আলেমের পান থেকে চুন খসলেই ‘হাম্বা রব’ করার মানে কী? হাদীসেই তো বলা আছে- ‘খায়রুল খিয়ারি খিয়ারুল উলামা/ শাররুশ শারারি শারারুল উলামা।’ প্রকৃত আলেম যারা- তাঁরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। আর ওলামায়ে ছু’ যারা- তারা পৃথিবীর নিকৃষ্টতম প্রাণী। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য হলো- আকিদা।
‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ছাড়া (হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী এবং খোদ মুজতাহিদগণ ছাড়া) অন্য আকিদার অনুসারী আলেমরা এক কথায় 'ওলামায়ে ছু’। (ওহাবী, খারেজী, মওদূদী, সালাফী, লা মাযহাবী, শিয়া ও কাদিয়ানীপন্থী আলেমগণ) পৃথিবীতে যতো ধর্মীয় ফ্যাসাদ হয়েছে- ওই নিকৃষ্ট জীবগুলো এতে ইন্ধন দিয়েছে, বুদ্ধি দিয়েছে, মন্ত্রণা দিয়েছে। পক্ষান্তরে সুন্নী আলেমদের মাঝেও মতান্তর পরিলক্ষিত হয়। সেটা যদি দ্বীনের জন্য এবং দ্বীনের খাতিরে হয়, তাহলে তা বিশ্ববাসীর জন্য 'আশীর্বাদ'। কারণ- ‘ইখতিলাফুল উলামায়ি রাহমাতুন'। যেমন- মাযহাবগুলোর মতপার্থক্য। আর যদি চারিত্রিক ত্রুটির কারণে হয়, তাহলে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। এক্ষেত্রে একজন ‘কামিল মুর্শিদ’ই পারে- মানুষের স্বভাব-চরিত্র বদলে দিতে। কিন্তু যততত্র ব্যঙের ছাতার মতো যে হারে 'পীর ও মাজার' গজিয়ে ওঠছে- সাধারণ সরলমনা মুসলমানরা প্রতিনিয়ত ধোঁকা খাচ্ছে।
তাছাড়া কিছু ব্যাপার আছে- যেটা ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা’র মাধ্যমেই বদলাতে পারে। এক্ষেত্রে ‘পীরের দোয়া’ আর ‘হজুরের পানি পড়া’ কাজে আসে না। তাই একজন প্রকৃত মুসলমানকে সবকিছু বুঝে-শুনে নিজ দায়িত্বে চলতে হবে। আমাদের হয়েছে কী- আমরা দুনিয়ার অন্য সব বিষয়ে ‘পাক্কা ষোলআনা’ বুঝি। ভেজালের সয়লাবে ‘আসল’ জিনিসটি খুঁজে নিতে চেষ্টা করি। কিন্তু ‘দ্বীন’ বুঝার ক্ষেত্রে সবকিছু ‘মোল্লা’র ওপর ছেড়ে দেই। এবং এতে করে সমাজে ‘মোল্লাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়; ‘দ্বীন’ নয়।
আর ইসলাম যেহেতু পরিপূর্ণ ‘দ্বীন’, সেহেতু ইসলামে সবকিছুই আছে। একজন প্রকৃত মুসলমান- নামায, রোজা তথা ইবাদাতের জন্য ইসলামের অনুবর্তী এবং সমাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির তথা মোয়ামেলাতের জন্য বিজাতীয় চিন্তাধারা ও ভিন ধর্মের অনুবর্তী হতে পারে না। প্রকৃত কোন মুসলমান, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ, নাস্তিক্যবাদী ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষী সমাজতন্ত্রের অনুসারী হতে পারে না। ইসলামকে বুঝতে হলে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লাম- এর আদর্শে, তাঁর পূত-পবিত্র পরিজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ ও প্রেম বুকে ধারণ করে, সাহাবায়ে কেরামদের মুহাব্বত ও জীবনাদর্শের আলোকে চলতে হবে। যাঁরা এই তিন কষ্টিপাথরে পরিক্ষিত ও উত্তীর্ণ- বিনা বাক্য ব্যয়ে তাঁদের অনুসরণ করতে হবে। আর যাঁরা এই তিন কষ্টিপাথরে ঠিকবে না, সে যতো বড় জুব্বাধারী ও গদীধারী হোক, কিংবা ঝটাধারী, পেটমোটা ও বুদ্ধিজীবি হোক না কেন- তাঁদেরকে ‘ডাস্টবিনে’ ছুঁড়ে ফেলতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ওরা এই ‘সমাজের ভাইরাস’। আর এই ‘ভাইরাস’ থেকে নিজে যেমন বাঁচতে হবে; ঠিক তেমনি সমাজের আর দশ জনকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। সুন্নী নামধারী দেওয়ানবাগী, রাজারবাগী ও কতুববাগী আর পীর নামধারী বিড়ি বাবা, ছালা বাবা, লেংটা বাবা ইত্যাদি ‘জারজ’ বাবাসমূহকে সমূলে বিনাশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে- ওরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের 'প্রধান শত্রু'। তাদের কারণে ওহাবী, খারেজী, মওদূদী, সালাফী, লা মাযহাবী, শিয়া ও কাদিয়ানীপন্থীরা প্রতিনিয়ত সুন্নীদের কটাক্ষ ও বদনামী করার সুযোগ পায়।
এ জন্য মনে রাখতে হবে যে, আমলের ক্ষেত্রে শত চেষ্টা করেও কেউ-ই ‘আলে রাসূল’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লাম) ও ‘আসহাবে রাসূল’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লাম) এর সমকক্ষ হতে পারবে না। কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে তাঁদের আকিদা থেকে একচুলও এদিক-ওদিক হতে পারবে না। বিষয়টি যে যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন, সে ততোই কামিয়াবীর পথে এগিয়ে যাবেন।
এ ক্ষেত্রে শহীদে মিল্লাত আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী আমাদের আমাদের প্রেরণার উৎস হতে পারে। ‘দ্বীন’ বুঝতে হলে তাঁর ও তাঁর পূর্বসূরী ইমাম শেরেবাংলা (রহ.)সহ আল্লাহর প্রকৃত ওলীদের চেতনায় বুঝতে হবে বলে আমি মনে করি। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ও প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লাম আমাদের সহায় হোন। আমীন।
আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।
আবুধাবি, ইউ.এ.ই
তারিখ: ২৪ আগস্ট ২০১৫
©somewhere in net ltd.