নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনুন’

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৯

চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সাহেবের সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুভাগমন উপলক্ষে ‘খোলা চিঠি’
‘প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনুন’
-আবছার তৈয়বী

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,
মাননীয় মেয়র!
শুরুতেই আমার সালাম গ্রহণ করুন। প্রাচ্যের রাণী বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আপনার আগমনে আমরা আপামর প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীরা খুবই আনন্দিত, খুশিতে উদ্বেলিত। এ উপলক্ষে আপনি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ফুলেল অভিবাদন গ্রহণ করুন। আপনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হলেও নির্বাচনের পর আপনি কোন একক দলের মেয়র নন; বরং আপনি সকল চট্টগ্রামবাসীর ‘মেয়র’ হিসেবে পরিগণিত। সে হিসেবে আমি চট্টগ্রামের একজন বাসিন্দা হিসেবে সমস্যা-সংঙ্কুল চট্টগ্রামের কিছু বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আশা করছি- আপনি এসব বিষয়ে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপনার সুনাম অক্ষুন্ন রাখবেন।

মাননীয় মেয়র!
আপনি জানেন- চট্টগ্রাম একটি ঐতিহ্যবাহী নগরী। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ও কর্ণফুলির তীরবর্তী এ নগরীর ইতিহাস-ঐতিহ্য অনেক পুরনো। এমনকি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে বর্তমানে যে ৯২% মুসলমান বসবাস করছে সেই ইসলামের আলো এসেছে এই চট্টগ্রামের মধ্য দিয়েই। সে হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাব, বিকাশ ও স্থিতি নিয়ে আলোচনা করলেই যে নামটি অবধারিত ভাবে এসে পড়ে- তার নাম ‘চট্টগ্রাম’। এ জন্য আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামের অপর নাম ‘ইসলামাবাদ’। এমনকি পৃথিবী খ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতাসহ নানা ঐতিহাসিক ও পর্যটকদের বর্ণনায় আমাদের চট্টগ্রামের ঈর্ষণীয় বর্ণনা পরিলক্ষিত হয়। এই চট্টগ্রামকে তাঁরা শাতগাও, শাতগাম, শিতাগাও এবং পরবর্তীতে চিটাগংঙ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ঐতিহাসিক বর্ণনায় পরিলক্ষিত হয় যে, বাংলাদেশের পূর্বের দেশগুলোতে বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিংঙ্গাপুর ও চীনে ইসলামের আলো পৌঁছেছে এই চট্টগ্রামের মধ্যদিয়েই। আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবী হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাদ্বি আল্লাহু আলহু) এই চট্টগ্রাম দিয়েই সদূর চীন দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য গমন করেন। সে হিসেবে আমি চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে আপনার কাছে আবেদন করবো- আপনি সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রামের একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা ও প্রকাশে একটি প্রকল্প হাতে নিন। এজন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রামের লেখক, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিতে পারেন। আমি নিশ্চিত বলতে পারি- এই মহৎ কাজটি করতে পারলে আপনি ইতিহাসে ‘অমর’ হয়ে থাকবেন।

মাননীয় মেয়র!
আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামকে বলা হয় ‘মদীনাতুল আউলিয়া’ বা ‘আওলিয়াদের শহর’। আল্লাহর এসব প্রিয় বান্দাগণ অসীম ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেছেন। তাই তাঁদের এই ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁদের স্মৃতি চিহ্নগুলির যথাযথ সংরক্ষণ, অনুশাসন ও উন্নয়ণ একান্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর পূর্ব গেইটে রাস্তার অপর পাশে আল্লাহর একজন ওলীর মাজার শরীফ কুখ্যাত মওদূদীবাদী স্বাধীনতা বিরোধীচক্র মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামের খ্যাতনামা আলেম ও ইতিহাসবিদ এবং স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বীদের কাছে বিষয়টি যাচাই করুন। সত্যতা পেলে মাজারটি পূণ-নির্মান না হোক, অন্ততঃ তাঁর কবর শরীফটি চিহ্নিত করে সুরক্ষা করুন। কোতোয়ালী থেকে শুরু করে কদমতলী পর্যন্ত রাস্তার মধ্যখানে কিছু মাজার দেখতে পাবেন। সেখানে এবং স্টেশন রোডের চৈতন্যগলির কবরস্থানে রাতের বেলা মদখোর, গাঁজাটি, হাইজ্যাকার ও নিশিকণ্যাদের উৎপাত চলছে। স্থানীয় জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা এতে অতিষ্ঠ। দয়া করে আপনি ইসলাম বিরোধী ও সমাজবিরোধী এসব লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আপনি একবার গোলপাহাড়ের পাদদেশে যে ‘ওয়ার সেমিট্রি’ আছে সেখান থেকে ঘুরে আসুন- দেখবেন ওই সেমিট্রির ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দেখে এক অনির্বচনীয় আনন্দে আপনার দেহ-মন ভরে যাবে। আর চৈতন্যগলির কবরস্থানেও একবার যান- আপনার দেহ-মন বিষাদে ভরে যাবে। রাতের বেলায় গেলে মনে হবে ভুতে কামড় দেবে। মুসলমানের শেষ ঠিকানা ‘কবরস্থান’ কেন এমন হবে? আপনি একটি সুন্দর ও পরিপাটি কবরস্থান নির্মান করুন। যা দেখে মানুষ পরকালের কথা স্মরণ করবে এবং যাবতীয় অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকবে।

মাননীয় মেয়র!
চট্টগ্রামের অধিকাংশ মাজার শরীফগুলোতে ভালো ও পর্যাপ্ত অজুখানা এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। অলিভক্ত মানুষজন সেখানে গিয়ে খুবই বেকায়দায় পড়েন। পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ ও সুচারুরূপে না হলে নামাজ-কালাম, তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদাতগুলো হয়ই না। তাই আপনার কাছে আবেদন করবো- দয়া করে প্রত্যেক অলির মাজার শরীফে প্রয়োজনীয় শৌচাগার ও অজুখানা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করুন। সিটি কর্পোরেশনের ‘সেবক’ দিয়ে নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করুন। এটা ‘সদকায়ে জারিয়া’ হিসেবে আপনার দুনিয়া-আখিরাতে কাজ দেবে।

প্রিয় নগর পিতা!
আপনি দায়িত্বভার নেয়ার পরপরই যে সমস্যাটি চট্টগ্রাম নগরবাসীর প্রকট ও প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে- তা হলো ‘জলাবদ্ধতা’। আমি জানি- সে জন্য আপনি মোটেও দায়ী নন। দায়ী- আপনার পূর্বের চার মেয়র মহোদয়গণ। তাঁরা যদি তাঁদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতেন- তাহলে আপনাকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। কিন্তু যেহেতু তাঁরা সমস্যাটি সমাধান করতে পারেননি, সেহেতু আপনাকেই এই সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ভৌগলিক ও প্রকৃতিগতভাবে চট্টগ্রাম নগরীর যে অবস্থান- তাতে যতো বৃষ্টিই হোক চট্টগ্রাম শহরে ‘জলাবদ্ধতা’ দূরের কথা- একফোঁটা পানিও দাঁড়ানোর কথা না। কিন্তু চট্টগ্রামের কিছু রাঘব-বোয়ালরা চট্টগ্রামের যেভাবে শ্লীলতাহানি করে আসছে- তাতে নগরবাসীকে যে বন্যার পানিতে দিনের পর দিন সাঁতার কাটতে হচ্ছে না- সেটা তাঁদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। আপনি এই রাঘব-বোয়াল সৃষ্ট ‘জলাবদ্ধতা’ নামক চট্টগ্রাম নগরবাসীর ‘গলার ফাঁস’টি খোলার কার্যকরী ও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন- প্লীজ! এ জন্য আপনাকে সর্বাগ্রে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি পুরনো ম্যাপ হাতে নিতে হবে। নগরীতে আগে যে ২২ টি খাল ছিল, কোন পথে সেই খালগুলো গেছে- সেই অবস্থানটি আগে নির্ণয় করতে হবে। তারপর সেই খালগুলো পুণরুদ্ধার ও খনন করতে হবে। সেই খালগুলোর ওপর নির্মিত সমস্ত স্থাপনা ভেঙে ফেলতে হবে। যতো বড় রাঘব-বোয়ালই হোক না কেন, তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে- ‘আইনের হাতটি কতোটা লম্বা হতে পারে এবং তা ওই রাঘব-বোয়ালদের গলা পর্যন্ত অনায়াসেই পৌঁছুতে পারে’। এ জন্য আপনি বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্লোভ, সাহসী, অকুতোভয়, নিরপেক্ষ, বিনয়ী ও বুদ্ধিমান মানুষটির সহায়তা নিতে পারেন। তিনি আর কেউ নন- আপনারই মামাতো ভাই, চট্টগ্রামের গর্বের ধন, বাংলাদেশের সুর্য-সন্তান ‘ম্যজিষ্ট্রেট মুনীর চৌধুরী’। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি- যিনি অসম্ভব ক্ষমতাধর এসব রাঘব-বোয়ালদের কোমরে ‘আইনের দড়ি’ বেঁধে, হাতে ‘আইনের হাতকড়া’ পরিয়ে আদালতের কাটগড়ায় দাঁড় করাতে পারেন। তাঁকে তাঁর বর্তমান অবস্থানের মর্যাদা দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের নির্বাহী আদেশ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নিয়ে আসতে পারেন। প্রয়োজনীয় ফোর্স ও সরঞ্জাম দিলে তিনি মাত্র একমাসের মধ্যে আপনাকে রাঘব-বোয়ালদের অট্টালিকার পেটে হজম হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে দিতে পারবেন বলে আমি মনে করি। আমার জানামতে- বাংলাদেশে দ্বিতীয় আর কেউই এই ‘দুরূহ’ ও ‘অতি জটিল’ কাজটি করতে পারবেন না। এর আগে আপনি নগর পরিকল্পনাবিদ ‘ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ’ সাহেবকে প্রধান করে একটি শক্তিশালী কমিটি করে দিন। তাঁর কাছে নগরীর একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ আছে। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর ‘জলাবদ্ধতা’ নিয়ে আমি চট্টগ্রামে একটি সেমিনারের আয়োজন করি। সেখানে তিনি এই সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। যা স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। আপনি তাঁর এই মেধাকে মূল্যায়ন করুন। দেখবেন- চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা দূরে থাক, বন্যার পানির টিকিটিও কেউ দেখতে পাবে না। শুধু এই একটিমাত্র কাজ করলে আগামী নির্বাচনে আপনাকে ভোট চাইতে কারো দোরে যেতে হবে না, দল-মত নির্বিশেষে নগরবাসীরা আপনার ঘরে এসেই তাদের ‘সব ভোট’ আপনাকে দিয়ে যাবে এবং আজীবনের জন্য আপনাকে মেয়র বানিয়ে মাথায় তুলে রাখবে।

মাননীয় নগর পিতা!
চট্টগ্রাম শহরের সমস্যা অনেক। কয়টি আর আপনাকে বলতে পারবো? এ যেন ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা’ অবস্থা। পুরো চট্টগ্রামটাই যেন আজ 'আবর্জনার ভাগাড়'। এজন্য আমরা নগরবাসীরাই দায়ী। আমাদের কারো নাগরিক দায়িত্ববোধ নেই। যে যেখানে যেমনে পারছি- আবর্জনা ফেলছি। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন- অনেক সময় সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনটি খালি পড়ে আছে। আর রাস্তার এক বিশাল অংশ জুড়ে ডাস্টবিনটির চারিপাশে ‘আবর্জনার স্তুপ’। সেই আবর্জনার স্তুপগুলো যেন মশা-মাছি উৎপাদনের একেকটি বিশাল কারখানা। এ ছাড়া এগুলি নানা রকম রোগ-জীবানু তৈরীর বিশাল ফ্যাক্টরি। যার ফলে নগরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। বেশিদূর যেতে হবে না- আপনি চকবাজারের ধুনির পুলের আশপাশের অবস্থাটা একবার স্বচক্ষে দেখুন। ১২ মাসের ৩৬৫ দিন কীভাবে একটা বিশাল জায়গা এরকম থাকে- তাও শহরের প্রাণকেন্দ্রে, আমার বুঝে আসে না। এ রকম পরিবেশ নগরীর বিভিন্ন স্পটে হাজারটা আছে। আপনার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ‘হেডম্যান’কে অফিসে ডেকে একটি কড়া নির্দেশ দিন- একসপ্তাহের মধ্যে যেন নগরীর কোথাও কোন ময়লা-আবর্জনা না থাকে। বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করুন। দেখবেন- মশা মারতে আর কামান দাগাতে হবে না। মশারা সব দলবেঁধে ‘আত্মহত্যা’ করবে। নগরবাসী স্বস্থি পাবে। এক্ষেত্রে আপনাকে দুবাই, শারজাহ ও আবুধাবি শহর এবং শহরগুলোর আভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর পরিচ্ছন্নতা অভিযান দেখার জন্য সবিনয় অনুরোধ করবো। খুব সকালে উঠলে আপনি এই শহরগুলোর মিউনিসিপ্যালিটির ‘কর্মযজ্ঞ’ দেখতে পাবেন। এই অভিজ্ঞতাটি আপনি আপনার প্রিয় নগরীতে কাজে লাগাতে পাারেন। তাছাড়া এ বিষয়ে নগরবাসীদের সচেতন করতে আপনি নগরীর প্রতি ওয়ার্ডে প্রচারণা র‌্যালি করতে পারেন, মাইকিং করাতে পারেন, হকার ও ইলেকট্রিসিটি বিল ডিস্ট্রিবিউটর দিয়ে নগরীর প্রতিটি ঘরে প্রচারপত্র বিলি করাতে পারেন। আশা করা যায়- এতে সুফল পাওয়া যাবে।

প্রিয় নগর পিতা!
প্রতিদিন নগরীর কোথাও না কোথাও চাঁদাবাজি ও ছিনতাই হচ্ছে। নগরবাসীর জন্য এ এক মহা জ্বালা। যারা চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের শিকার হন- তারা প্রাণের ভয়ে উচ্চবাচ্যও করতে পারেন না। এই নির্মম অত্যাচারের কথা প্রশাসনসহ কাউকে বলতেও পারেন না। পাছে না আরো বিপদ বাড়ে- সে ভয়ে। এসবের শিকার হতভাগা মানুষগুলো নীরবে ‘চোখের পানি’ ফেলে আর কর্তাদের অভিশাপ দিতে থাকে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা নীরব চাঁদাবাজির শিকার হন। আবার কখনো কখনো প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে দোকান-পাট ভাংচুর করা হয়। ঈদ, কোরবানী ও বিভিন্ন পূঁজা-পার্বনে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। ওই চিহ্নিত চাঁদাবাজরা অনেক সময় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে আপনার ও আপনার দলের নাম বিক্রি করে। এতে করে আপনার ও আপনার দলের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। তাই বিষয়টির প্রতি একটু ‘কড়া নজর’ দেয়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো।

প্রিয় নগর পিতা!
আমরা জানি- প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামকে ঘিরে আপনার স্বপ্ন আছে। আছে মহাপরিকল্পনা। আপনি বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ও কাছের ‘আস্থাভাজন নেতা’ হিসেবে আমরা আশা করবো- আপনার পরিকল্পনাগুলো খুব দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামকে ঘিরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘উন্নয়নের মহোৎসব’ চলছে। এ ক্ষেত্রে আমি আপনাকে একটি আইডিয়া দিতে পারি। আপনি মেয়র হওয়ার পর থেকে এই বিষয়টি নিয়ে আপনাকে লিখবো বলে ভেবেছি। তা হলো- আপনি সময় করে একবার ‘দুবাই ক্রিক’ এবং ‘আবুধাবি করনিশে’ ঘুরে আসবেন। দেখবেন- এখানকার দেশপ্রেমিক শাসকবর্গ মরুভুমির মাঝে কিভাবে নদী বানিয়েছে, আর নদীর দু’ধার মানুষের হাঁটা-হাঁটির জন্য, বিনোদনের জন্য কতো সুন্দরভাবে সাজিয়েছে! সাগর পাড়ে কী সুন্দর ও মনোরম পার্ক ও ফুলবাগান এবং চলাচলের রাস্তা তৈরী করেছে। প্রিয় নাছির ভাই! আপনার মনে কি সাধ জাগে না- প্রাচ্যের রাণীকে সেভাবে সাজাবার? চট্টগ্রমের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা চট্টগ্রামবাসীর জন্য আল্লাহর সেরা দান ‘কর্ণফুলি’র দু’ধারে আপনি সেরকম পার্ক তৈরী করুন। ওখানে গিয়ে নগরবাসী খানিক জিরাক। আমাদের সন্তানরা দৌঁড়া-দৌঁড়ি করুক। মানুষজন নদীর ধারে গিয়ে বসে কিছুক্ষণ প্রাণখুলে হাসুক। মানুষের মনে বিনোদন বাড়ুক। মানুষ ব্যথা-বেদনা ভুলে যাক। পর্যটক আসুক। প্রাচ্যের রাণী তার হৃত গৌরব ফিরে পাক। কর্ণফুলির তীর ঘেঁষে আপনার ‘স্বপ্নের শহর’ গড়ে উঠুক।

প্রিয় মেয়র মহোদয়!
আপনার স্বপ্নের শহর বাস্তবায়ণের ক্ষেত্রে দু’টি জিনিস অন্তরায় ও বেশ দৃষ্টিকটু বলে আমি মনে করি। যা- প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামের সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে। একটি ‘বিলবোর্ড’ অপরটি ‘ভিক্ষুক’। এ দু’টি যত তাড়াতাড়ি পারেন- সরিয়ে ফেলুন। প্রাচ্যের রাণীর চোখে-মুখে এমনকি সারাদেহে এরা প্রতিনিয়ত কাঁদা ছুড়ছে। ‘বিলবোর্ড’ রাণীর অনিন্দ্য সুন্দর মুখটি ঢেকে দিচ্ছে আর ভিক্ষুকরা তো রাণীর ‘আব্রু’ নিয়েই টানাটানি করছে। বিলবোর্ডের জন্য চট্টগ্রামের অন্যতম আকর্ষণ- ‘সবুজাভ পাহাড়’গুলো দেখা যায় না। চট্টগ্রামের আকাশ দেখা যায় না, চট্টগ্রামের বাতাস বইতে পারে না। গাড়িতে চড়ে চট্টগ্রামের আশ-পাশ দেখ যায় না। আর ভিক্ষুকের জন্য কত পথচারী আহত হয়, ওদের টানাটানিতে কত মানুষের কাপড় ছিঁড়েছে- তার কি কোন হিসাব আছে? এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ওদের রাজত্ব। শহরের কোথায় নেই বলুন- সেই ভিক্ষুক? মাজারে যে ভিক্ষুকগুলো আছে- ওরা তো একেকটা সন্ত্রাসী। কেউ দয়াপরবশ হয়ে ওদের একজনকে টাকা দিলে অন্যরা দৌঁড়ে এসে দাতার চারিদিকে ঘিরে ধরে। এরকম পরিস্থিতিতে যে পড়েছে- সে জানে ওরা কতোটা ‘খতরনাক’। ওদের জন্য একটা ‘পুনর্বাসন কেন্দ্র’ করুন। বিদেশীদের সামনে ওরা প্রতিদিন- প্রতিক্ষণ চট্টগ্রামবাসীর ইজ্জতের শ্লীলতাহানি করছে।

প্রিয় নাছির ভাই!
আমি আপনার নানার দেশের মানুষ। আপনার নানার বাড়ি থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৫০০ গজ। আপনার মামা ‘কাদের চেয়ারম্যান’ (মরহুম আবদুল কাদের চেয়ারম্যান)কে আমিও ‘মামা’ ডাকতাম। তিনিও আমাকে স্নেহ করতেন। আপনার সাথে আমার মাত্র একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল- দুবাই শেরাটন হোটেলের কনফারেন্স হলে। তখন আপনি দুবাই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সম্মেলনে এসেছিলেন- আজ থেকে একযুগ আগে। তখনকার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সফল সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য জনাব সেলিম উদ্দীন আমাকে প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস) এর সভাপতি হিসেবে আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আপনার পরিচয় দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের ‘ভবিষ্যৎ মেয়র’ হিসেবে। তখন আপনি মুচকি মুচকি হাসছিলেন। যে হাসির কোন শব্দ ছিলো না- ছিলো মানুষের মন কেড়ে নেয়ার অসম্ভব ক্ষমতা। নাছির ভাই! আপনার কি মনে পড়ে সে কথা? তখন আপনার প্রচন্ড ‘আত্মবিশ্বাস’ আর ‘নির্মল হাসি’ বলে দিচ্ছিল- ‘চট্টগ্রামবাসী রেডি হও- আ.জ.ম. নাছির চট্টগ্রামের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আসছে’। কথাটি আমি খোদ সেলিম ভাইসহ অনেককেই বলেছি। আজ আপনি ঠিকই এসে গেলেন- চট্টগ্রামবাসীর ‘নগরপিতা’ হয়ে। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় আজ চট্টগ্রামের এক নগণ্য অধিবাসী ‘আবছার তৈয়বী’ আপনাকে স্বাগত জানাই।

চিঠির শেষ দিকে এসে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি দাবি অবশ্যই করবো। তা হচ্ছে- আপনি জানেন যে, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদ্রাসা আপনার নগরীর দু’টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আট সহস্রাধিক। তাছাড়া জামেয়ার পাশেই ‘আলমগীর খানকাহ্ শরীফ’ অবস্থিত। আপনি মাত্র কয়েকদিন আগে জামেয়ায় গিয়েছেন। কোন পথে গিয়েছেন আপনি? পথের 'ছিরি' দেখেছেন? আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো- কালবিলম্ব না করে বিবিরহাট থেকে জামেয়া, বহদ্দার হাট থেকে জামেয়া এবং মুরাদপূর পূর্ববর্তী এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ফ্যক্টরির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি জামেয়া পর্যন্ত গিয়েছে- সেই রাস্তাগুলি আশু সংস্কার করে দিন। সেই তিনটি রাস্তা একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী। কোথাও কোথাও শুষ্ক মওসুমেও ড্রেনের পানিতে রাস্তায় হাঁটা-চলা করা যায় না। গর্তের মধ্যে কয়েকখানা ইট-সুরকি না দিয়ে এই রাস্তা তিনটি প্রশস্ত ও এক হাত উঁচু করে স্থায়ীভাবে মজবুত করে বেঁধে দিন। এই রাস্তা দিয়ে উক্ত দুই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অভিভাবক ছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। পুণ্যবান লোকেরা বেশিরভাগ সময় এই রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল করেন। জামেয়ার খেদমতের নিয়তে দয়া করে এই কাজটি করুন। দুনিয়া-আখিরাতে আপনার কল্যাণ হবে।

আপনার মূল্যবান সময় খরচ করে আমার এই লম্বা চিঠিখানা পড়ার জন্য আপানাকে ধন্যবাদ। সারারাত জেগে আপনাকে এই চিঠিখানা লিখেছি। আমার জ্ঞানের দৈন্যতা ও ভাষাগত দূর্বলতার কারণে আপনার বিরক্তির উদ্রেক হলে তার জন্য করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো বিদায় নিলাম। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন ও আনন্দে থাকুন- সারাক্ষণ, সবসময়। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
আল্লাহ মোহাফেজ,

আপনার গুণমুগ্ধ
আবছার তৈয়বী
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
তারিখ: ০৪ আগস্ট, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

বি.দ্র.: দাওয়াত না পাওয়ায় আমি মাননীয় মেয়র মহোদয়ের অনুষ্ঠানে যেতে পারছি না। আয়োজকদের কেউ যদি আমার চিঠিখানা মাননীয় মেয়র মহোদয়কে পড়ে শোনান বা প্রিন্ট করে তাঁর হাতে তুলে দেন- তো কৃতার্থ হবো। দয়া করে কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না; বরং চট্টগ্রামকে ঘিরে আপনার চাওয়া-পাওয়ার কথা সুন্দর ভাষায় কমেন্ট করে জানান। এই চিঠিখানার সাথে আপনার কথাগুলোও মাননীয় মেয়র মহোদয়ের হাতে অবশ্যই পৌঁছবে। সবাইকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.