নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়’

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৭


গতকাল ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ইং সংযুক্ত আরব আমিরাতের 'ক্রিকেট নগরী' শারজাহতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র জনাব আলহাজ্ব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন সাহেবের 'নাগরিক সংবর্ধনা' অনুষ্ঠানের কথা ছিল। এ জন্য তিনি ৩ তারিখ ৩০ জনের এক বিরাট বহর নিয়ে আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী- দুবাইতে এসেছেন। বর্তমানে তিনি ৩ দিন ধরে প্রসিদ্ধ হায়াত রিজেন্সী হোটেলে অবস্থান করছেন। অনুষ্ঠানটি হয়নি। কেন হয়নি? অফিসিয়াল ভাষ্য- ‘ইভেন্ট টেইলর’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটি ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট এর দায়িত্বে ছিলো- তারা সিকিউরিটি পাস পায়নি। কেন পায়নি? সাংবাদিক শিবলী সাদিকের মতে- ‘ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট এর অযোগ্যতার কারণে’। এ রকম অযোগ্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দিল কারা? কোন জবাব নাই। আমার নিজস্ব সোর্স খোঁজ নিয়ে জানাল- অন্যকথা। সেখানেও নাকি নেতৃত্ব নিয়ে, মঞ্চে বসা নিয়ে, ফুলের মালা দেয়া নিয়ে উত্তর জেলা আর দক্ষিণ জেলায় ‘ঘাপলা’ ছিল। তার কথা আমি তেমন গুরুত্ব দেইনি। কারণ সেটা ‘অফিসিয়াল’ কথা না। আমি বরং ‘অফিসিয়াল’ কথা নিয়ে ‘আনঅফিসিয়াল’ আলোচনা করি।

আমাদের মেয়রকে আমরা সংবর্ধনা দেবো- এতে আবার ‘ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট’কে দায়িত্ব দেয়ার দরকার কী? দরকার আছে। কেন দরকার? আপনি ‘মোল্লা মানুষ’ এত কিছু জানার কী দরকার? মানে কী? মানে আর কিছুই না- ওখানে আন্তরিকতা নেই, আছে ধান্ধা। ব্যাপারটা তাহলে খুইল্লাই বলি। আসল অনুষ্ঠান মেয়রের ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ হলেও সেই সংবর্ধনা চাপা পড়ে যায় ‘মিউজিক্যাল কনসার্টে’। পোস্টারগুলোর দিকে তাকান। (সঙ্গতঃ কারণেই আমি পোস্টারগুলোর ছবি লেখার সাথে দিতে পারছি না বলে দুঃখিত)। মেয়রের ছবি উপরে দিলেও সেই ছোট ছবিটি ‘শব্দতারে’ ঘেরা। পক্ষান্তরে মিউজিক্যাল কনসার্টের 'মিউঁ'দের ছবি আনকভারড ও আনসেন্সরড। 'মিউজিক্যাল কনসার্ট' আগে, 'সংবর্ধনা' শব্দটি পরে। সংবর্ধনার কথা যতো জোরে প্রচার করা হয়েছে- তারচেয়ে শতগুণ বেশি প্রচার করা হয়েছে মিউজিক্যাল কনসার্টের কথা। মিউজিক্যাল কনসার্টের প্রধান আকর্ষন- ‘ফাইট্টা যায়’ খ্যাত শিল্পী মমতাজ। হ্যাঁ, মাননীয় সংসদ সদস্য মিসেস মমতাজ বেগম। কিছুদিন আগে লেবাননে তাঁকে নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে এক বাঙালি নিহত হয়। হায়রে বাঙালি! মানুষ হবি কবে? আজ খ্যাতনামা শিল্পী মমতাজের ‘গোমরা মুখ’ দেখে অন্যের কথা কী আর বলবো- আমার নিজেরই বুকটা ‘ফাইট্টা’ যাবার যোগাড়। সদা হাস্যময়ী, সদা লাস্যময়ী, মঞ্চ কাঁপানো এবং একশ্রেণীর মানুষের ‘হৃদয়ে সাড়া জাগানো’ গায়িকা কাম নায়িকা দুবাইর হোটেল লবিতে ‘মুখ কালো’ করে বসে থাকলে বুকটা না ফেটে থাকে কী করে বলুন? তাঁর অনুষ্ঠান হয়নি- সেজন্য তাঁর মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ধান্ধাবাজদের মনের অবস্থা কী? খ্যাতনামা শিল্পী মান্না দে’র কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বলি- ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’। হ্যাঁ, আমার বড়ই জানতে ইচ্ছে করে।

কথা সেটা না। কথা হলো- জনাব আলহাজ্ব আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন সাহেব একজন দলীয় নেতা হলেও ‘মেয়র’ হিসেবে তিনি পুরো চট্টগ্রামবাসীর নেতা। দল-মত নির্বিশেষে তিনি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষের ‘মেয়র'। সে হিসেবে তিনি আমারও মেয়র। তো আমার ‘মেয়র’, আমাদের ‘মেয়র’ প্রতিমন্ত্রীর পদ-মর্যাদা সম্পন্ন ভিআপি- এমন একজন 'সম্মানিত মানুষ'কে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে এ রকম বেইজ্জতি করল যে, সে ‘বজ্জাত’টার নামটা কি? মেয়রকে সংবর্ধনা দেবেন ভালো কথা- এই হজ্বের মওসূমে মঞ্চে মমতাজকে নাচানোর কোন মানে হয়? বলুন- কোন মানে হয়? গান গাওয়ার সময় মমতাজের দেহ-মনে যে ঢেউ আন্দোলিত হয়, তা-কি এ রকম একটি শ্লীল ও সুন্দর অনুষ্ঠানের সাথে যায়? বলুন-যায়?

এখন দেখছি- যে যেমনে পারে দাঁড়িয়ে, বসে, কাত হয়ে, হেলান দিয়ে মাননীয় মেয়রের সাথে ছবি তুলে তা ‘ফেইসবুকে’ আপলোড করছেন। বুঝতে পারছি- আমাদের মেয়র একজন ‘সজ্জন মানুষ’ হিসেবে কাউকেই নিরাশ করছেন না। কিন্তু ওপাড়ার ‘ছমদ আলী’ এপাড়ার ‘আবুইল্লা’ মধ্যপাড়ার হরিপদ’র সাথে ‘ছবি তোলার’ জন্যই কি তিনি শত কাজ ছেড়ে দুবাইতে এসেছেন? আপনাদেরকে কে বলেছে- সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সাথে মিউজিক্যাল কনসার্ট ও 'আটার বস্তা'র নাচানুষ্ঠান করতে? ‘একের ভেতর তিন’ যে সব সময় ভালো হয় না- সেটা কি আপনারা জানেন না? এই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক যিনি, তাঁকে আমি ভালো করেই চিনি। তিনি তো কাঁচা লোক নন। তাহলে তাঁকে সামনে রেখে যে সব সন্নাসীরা 'গাঁজন' নষ্ট করল- তার বিচার করবে কে?

চট্টগ্রামবাসীর মান-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ‘পারমিশন’ আপনারা কোথায় পেলেন? নাছির ভাইয়ের মন মাতানো, প্রাণ জুড়ানো হাসিটা যে বা যারা কেড়ে নিল- আমাদের প্রাণোচ্ছল, সদা হাস্যোজ্জল, 'আলো ছড়ানো' মানুষটা যে 'নিষ্প্রভ' হয়ে বসে থাকলেন- তার দায়ভার কে নেবে? এর আগে কত মন্ত্রী-মিনিষ্টার দুবাইতে এসেছেন, কত ‘প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছে- সেখানে কি লোক সমাগম কম হয়েছিলো? আমরা আগে পাঁচ তারকা হোটেলের বিশাল বিশাল হলরুমে শত মতের শত দলের প্রবাসীরা একত্রে বসিনি? ভিভিআইপি সেলিব্রিটিদের সাথে আমরা কি খোশ-গল্পে মেতে উঠিনি? তাহলে প্রবাসী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কেন এ প্রবঞ্চনা?

সবচাইতে বড়ো কথা- যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ‘পারমিশন’ না নিয়ে যে বেকুবগুলো ‘মাননীয় মেয়র’ মহোদয়কে দুবাইতে টেনে নিয়ে আসলেন, সেই বেকুবদের নামগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। আরে বেকুব সর্দারগণ! কীসের মোহে আপনারা আমাদের ‘মাননীয় মেয়র’কে নিয়ে এমন ‘ছেলে খেলা’ খেললেন! এটা কি বাংলাদেশ পেয়েছেন? আপনাদের ‘জোর যার মুল্লুক তার’ থিউরীর যে এখানে ‘কানাকড়ি’ দাম নেই- সেটা বুঝতে কি গাদা গাদা বই পড়তে হয়? যেখানে ঘরোয়া অনুষ্ঠান করতে মানুষের ‘টাট্টি পাতলা’ হয়, সেখানে খোলা ময়দানে এতোবড়ো অনুষ্ঠান আপনারা বিনা অনুমতিতে করবেন- তা ভাবলেন কী করে? বেকুবীরও তো একটা সীমা থাকা দরকার। আহাম্মকিরও একটা শেষ থাকা দরকার। চট্টগ্রাম শহর যখন পানির নিচে ডুবছে- তো সেই শহরের মূল মাঝিটাকেই আপনারা পানি থেকে তুলে এনে ডাঙায় রাখার কোন মানে হয়? বলুন- মানে হয়? হাজারো সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসীর শত দায়িত্ব যিনি নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন- সেই ‘করিৎকর্মা কর্তা' ব্যক্তিটিকেই আপনারা হোটেলের বদ্ধ রুমে আটকে রেখেছেন- ভাবতেও আপনাদের প্রতি ঘৃণায় আমার ঘা রি রি করে উঠছে! দুঃখে-ক্ষোভে আমাদের পুরো অন্তরটা জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে! আমাদের কথা বাদ দিন- যাঁকে কেন্দ্র করে আপনারা দীর্ঘদিন থেকে ম্যারাথন বৈঠক করলেন, সভা করলেন, লাল ভাত খেয়ে উদরপূর্তি করলেন- সেই ‘মেহমানে আ’লার’ মান-সম্মানের দিকে একবার খেয়াল করাটা কি আপনাদের উচিত ছিলো না? এখন ‘যতো দোষ নন্দ ঘোষ’ এর মতো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আপনারা পার পাবেন- বলে মনে করেন?

বলি- আপনারা ভেবেছেনটা কী? একটি কথা মনে রাখবেন- আপনাদের ‘মান-সম্মান’ না থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের গর্ব ‘চট্টগ্রাম’র প্রবাসী মানুষগুলোর ‘মান-সম্মান’ আছে। আপনাদের এই ‘ছেলে-খেলা’য় শুধু এক মেয়রের সম্মানহানি হয়নি, পুরো চট্টগ্রামবাসীরই সম্মানহানি করেছেন আপনারা। এই জনপদের সুখ্যাত ও গর্বিত মানুষগুলোর মাথাটা হেঁট করে আপনারা কি পার পাবেন বলে মনে করেন? মাননীয় মেয়র মহোদয় নিজ গুণে তার ‘সিংহ হৃদয়ের’ কারণে আপনাদের ক্ষমা করলেও চট্টগ্রামের প্রবাসীরা আপনাদের কখনো ক্ষমা করবে না- বিষয়টি মনে রাখবেন। আমি নিজে থেকেই স্বউদ্যোগে আপনাদের একটি বুদ্ধি দেই- আপনারা দলমত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের গণ্যমান্য প্রবাসীদের জড়ো করে আমিরাতের সকল সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত ‘ক্ষমা’ চাইতে পারেন। চট্টগ্রামের দয়ালু মানুষগুলো আপনাদের 'অবিবেচনাপ্রসূত এ মারাত্মক অপরাধ'টি ক্ষমা করলেও করতে পারেন। কিন্তু প্রচন্ড শক্তি-মদমত্ততায় মত্ত আপনাদের আদিখ্যেতা ‘গোঁড়া মনে’ আমার এ বুদ্ধি গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে কি-না- সেটাও এক মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! মনে রাখবেন- আপনারা প্রবাসীদের যে ‘ঘৃণার গ্যাঁড়াকলে’ আটকে আছেন- তা থেকে মুক্তি পেতে এ ছাড়া আর কোন উপায় আছে বলে আমার জানা নেই। এবং যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, তা করাই আপনাদের জন্য মঙ্গলজনক বলে আমি মনে করি।

আমি সারারাত জেগে থেকে মাননীয় মেয়রকে চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে একটি ‘খোলা চিঠি’ লিখেছি। সেটি আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। তাও হয়নি আপনাদের অনুষ্ঠান ‘সুপার ফ্লপ’ হওয়ার কারণে। এই অনুষ্ঠানে আপনারা ‘মমতাজ’কে পেয়ে এতোটাই আহ্লাদিত ও আত্মম্ভরিত হয়েছিলেন যে, আপনারা আমার সাংবাদিক ভাইদের পর্যন্ত দাওয়াত দিতে ভুলে গিয়েছিলেন! কেন এমনটি হবে? যারা সাংবাদিকতার কোন নীতিমালায় না পড়লেও আপনাদের সামান্য ‘ঘরোয়া অনুষ্ঠান’গুলিকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরেছেন- এতোকাল, তাঁদের সাথে আচরণটা কি আপনারা ভালো করলেন? মনে রাখবেন- ‘এক মাঘে শীত যায় না’। এই দিন দিন নয়- আরো দিন আছে। সাংবাদিক ভাইদের সব সময় যথাযথ মূল্যায়ন করতে শিখুন। আখেরে লাভটা আপনাদেরই হবে। এখন আপনারা একটা কাজ করতে পারেন- সবাই কোর্ট-টাই পড়ে ‘ফটোসেশন’ অভিযানে নেমে পড়ুন। আমি জানি- আমি না বললেও আপনার সে কাজটিই করবেন। অসুবিধা কি? এতে করে আপনাদের ‘পোড়ামুখ’টা যদি রক্ষা পায়! ‘ফাটা বুক’ আর ‘কাটা মনে’ যদি একটু স্বস্থি পাওয়া যায়- মন্দ কি? সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ মোহাফেজ।

আবছার তৈয়বী
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।

তারিখ: ০৫ আগস্ট, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

বি.দ্র.: এই লেখাটি ফেইসবুকেপড়তে ক্লিক করুন- https://www.facebook.com/AbsarTaiyobi

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.