নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘খুনরাঙা’ দেশে তুমি ‘মাছরাঙা’ হও

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

‘খুনরাঙা’ দেশে তুমি ‘মাছরাঙা’ হও (এক)
-আবছার তৈয়বী

বাংলাদেশ। আমার প্রিয় বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এই দেশটা বড়ই অদ্ভুত! এ দেশের মানুষগুলো তাঁর চেয়েও বড়ো অদ্ভুত! এদেশে দশচক্রে ‘ভুত’ ভগবান হয়, আবার সেই চক্রের তালে পড়ে ভগবানও ‘ভুত’ হয়। এদেশের মানুষগুলোর মন দোঁয়াশ মাটির মতো উর্বর, আবার কখনো শক্ত এটেল মাঠির মতো ‘সংঙে মর্মর’। আল্লাহ্ তাঁর সব রকম নিয়ামত দিয়ে, গাছপালা-তরুলতা দিয়ে, ফুল-ফল দিয়ে, পাখ-পাখালি দিয়ে, পাহাড়-নদী-সাগর দিয়ে এই দেশটাকে অতি মনোরমও সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। কিন্তু এই সুন্দর দেশটাকে আমরা অসুন্দর মানুষগুলো নিজেদের লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ ও বিদ্বেষ দিয়ে দিনদিন কুৎসিত করে তুলছি। আবহমান বাংলার সেই দয়া-মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, উদারতা ইত্যাদির কিছুই আজ আমাদের মাঝে অবশিষ্ট নেই। এই শস্য-শ্যমলা সুজলা-সুফলা অনিন্দ্য সুন্দর দেশটা হতে পারতো- পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ। হয়নি। এদেশের মানুষগুলো হতে পারতো- পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছে অনুকরণীয় আদর্শ। হয়নি। কেন হয়নি- সে এক লম্বা ইতিহাস।

এদেশের মানুষ ধর্ম-নিরপেক্ষতার নামে একটি বিশেষ ধর্মগোষ্ঠির প্রতি অনুরাগ দেখেছে। সমাজতন্ত্রের নামে কিছু আদর্শহীন নাস্তিক মানুষকে গলাবাজি করতে দেখেছে। এদেশের মানুষ জাতীয়তাবাদের নামে-সংকীর্ণতা দেখেছে। সুশাসনের নামে স্বৈরশাসন দেখেছে। গণতন্ত্রের নামে জোর-জুলুম দেখেছে। ইসলামের নামে ঘৃণ্য ওহাবীবাদ ও মওদূদীবাদের চর্চা দেখেছে। কাক্সিক্ষত মুক্তির লক্ষ্যে মানুষ দলে দলে এসব দলে যোগ দিয়েছে, আবার মুক্তি না মেলায় জনে জনে প্রতারিত হয়েছে। হন্যে হয়ে মানুষ মুক্তি খুঁজেছে। পায়নি। কখনো তুরাগের তীরে, কখনো ওরসের ভীড়ে, কখনো প্যারডের ময়দানে, কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে- কোথায় যায়নি মানুষ? কখনো আউটার স্টেডিয়ামের মেলায়, কখনো শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের খেলায়, ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের প্রতিটি জেলায় মানুষ মুক্তি খুঁজেছে, শান্তি খুঁজেছে, স্বস্থি খুঁজেছে, আনন্দ খুঁজেছে। পেয়েছে কি? না, পায়নি। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় প্রতারিত, অবহেলিত, ক্লান্ত- শ্রান্ত মানুষগুলো তোমাদেরও খুঁজেছে। এমনকি এখনও খুঁজে চলেছে। নাহ্, তোমাদেরও দেখা মেলেনি কোথাও। একসময় বাংলাদেশের নির্যাতিত জনতা বোবা কান্নায় মওলার দরবারে ফরিয়াদ করেছে- ঠিক এভাবে (কোরআনের ভাষায়) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই অঞ্চল থেকে বের করে নিয়ে যাও- যার অধিবাসীরা ‘জালিম’। আর কাউকে তুমি নিজের পক্ষ থেকে আমাদের অবিভাবক বানিয়ে দাও, আর কাউকে তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী করো’। (সূরা নিসা- ৭৫)।

তোমরা এসেছো- ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা’ নাম নিয়ে। ১৯৮০ সালের একুশে জানুয়ারির পর দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, যুগ যায়। এমনি করে কেটেছে বছরের পর বছর। দীর্ঘ ৩৫ বছর। ৩ যুগের দ্বারপ্রান্তে তোমরা দাঁড়িয়ে আছো। এ দীর্ঘ সময়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে তোমরা ধীরে ধীরে সারা বাংলাদেশে যাচ্ছো। আজকের এ দিনে আমি তোমাদের অভিবাদন জানাই। তোমাদের ব্যপ্তিতে, তোমাদের শক্তিতে, তোমাদের ভক্তিতে আমি আমার তনু-মন উজাড় করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি- ‘ছাত্রসেনা! আমি তোমায় ভালবাসি’। হ্যাঁ ভালবাসি- বড় ভালবাসি বলেই তোমাদের সামান্য ভুলও আমার কাছে অসহ্য। তোমাদের একটু অসচতেনতাও আমায় পীড়া দেয়। তোমাদের সামান্য অদূরদর্শিতায় আমি ক্ষেপে যাই। কিন্তু বিশ্বাস করো- তোমাদের নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই। আশার অন্ত নেই। উজ্জীবন আর উদ্দীপনার কমতি নেই। আমি তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি- ঘুমে নয়, জাগরণে। চোখ মুদে নয়, চোখ উম্মীলিত করে। আমি বিশ্বাস করি- তোমরাই পারবে এদেশের সহজ-সরল দুঃখী মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে। সুন্নিয়ত ভিত্তিক ইসলামী সমাজও রাষ্ট্র কায়েম করতে। এ জন্য ‘খুনরাঙা’ এই দেশটাতে তোমাদেরকে ‘মাছরাঙা’র মতো লক্ষ্য পানে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যেতে হবে এবং শুধু ডাঙায় নয়, প্রয়োজনে পানির তলদেশ থেকেও তোমাদের আরাধ্য বস্তুটি তুলে আনতে হবে। ঠিক মাছরাঙার মতো। তোমরা কোন খাল-বিল, নদ-নদী বা পুকুর-ডোবায় মাছরাঙা কর্তৃক মাছ শিকার করতে দেখো নি? না দেখলে আজই একবার দেখে আসো। দেখবে- মাছ কিন্তু পানির ওপরে থাকে না। হয়তো ১০/২০ হাত পানির নীচেই মাছটি আপনমনে খেলা করছে। ‘মাছরাঙা’ পানির ২০/৩০ হাত ওপর থেকে প্রথমে লক্ষ স্থির করে। তারপর ক্ষিপ্রগতিতে সেই লক্ষ্য পানে ছুটে চলে। 'ঝুপ' করে একটা শব্দ হতে দেরি- কিন্তু শিকার ধরতে তার দেরি হয় না। অনেক সময় একসাথে ৩ টা মাছ ধরতেও আমি দেখেছি। কিন্তু কোন সময় খালি হাতে (ঠোঁটে) তাকে ফেরত আসতে দেখিনি।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশটা রক্তের বন্যায় ভেসে চলেছে। সত্তুরের আগের কথা বাদ দিলাম। একাত্তরের যুদ্ধে এদেশের মানুষের যে রক্ত ঝরেছে- তুমি হিসাব করে বলো রক্ত দিয়ে ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের এই দেশটাকে কয়বার রাঙানো যেতো? স্বাধীনতার পরবর্তীতে শাসকদল রক্ত ঝরালো, জাসদ রক্ত ঝরালো, সামরিক জান্তারা রক্ত ঝরালো, জাতীয়তাবাদীরা রক্ত ঝরালো, তথাকথিত গণতন্ত্রীরা রক্ত ঝরালো, ধর্মীয় আলখেল্লা পড়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা রক্ত ঝরালো, ঘৃণিত ওহাবী-মওদূদীরা রক্ত ঝরালো। সবারই হাত এদেশের মানুষের রক্তে রঞ্জিত। ওরা সব রক্তচোষা। স্বাধীনতার পর এদেশের মানুষের যতো রক্ত ঝরেছে, সব রক্ত একত্র করলে পদ্মা, মেঘনা যমুনা, কর্ণফুলি, সুরমা, ধলেশ্বরী, গোমতি ইছামতি- সব, হ্যাঁ সব নদী রক্তে ভরে যাবে। এ ক্ষেত্রে তোমরাই একমাত্র ব্যতিক্রম। তোমাদের হাতে রক্তের কোন দাগ নেই। আমি মনে করি- এটাই তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব ও প্রধান বৈশিষ্ট্য। তোমরা বাংলাদেশের যে কোন ছাত্রদের এবং ছাত্র সংগঠনের অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারো।

তোমাদের কথা কী বলবো- তোমরা তো দ্বীনের পথের সেই নকীব- যারা মানুষকে তাগুতী সব মতবাদ বাদ দিয়ে আল্লাহর পথে নবীর (দ.) পথে, সাহাবীদের পথে (রা.) ও আউলিয়াদের পথে মানুষকে অহর্নিশ ডাকছো। তোমরা তো সেই অতুল বীজ- নিজেদের ত্যাগের বুক ছিঁড়ে দিয়ে এদেশে সুন্নী রাজনীতির চারাটার জম্ম দিয়েছো। তোমরা স্রোতের উল্টো দিকে চলে ছাত্র সংগঠন থেকে রাজনৈতিক দলের জম্ম দিয়েছো। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তোমরা ব্যতিক্রম। তোমরাই একমাত্র সংগঠন- যারা এদেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করে। আবার দ্বীন আল ইসলামের জন্য অকাতরে নিজেদের প্রাণ কোরবান করতে পারে। ইসলামের পথে অবিচল থেকেও স্বাধীনতা ও মুক্তিযদ্ধের প্রতি যে যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো যায়- তা তোমাদের না দেখলে লোকেরা বিশ্বাসই করতো না। এ জন্য তাগুতের অনুসারীরা, জুলখোইয়াছারার বাচ্চারা, ‘শয়তানের শিং’ ধারীরা, ঘৃণ্য মওদূদীবাদের অনুসারীরা তোমাদের সহ্য করতে পারে না। কারণ, ‘তোমাদের অস্তিত্বই তাদের মৃত্যু ডেকে আনবে’। ভয় কীসের?- তোমরা হোসাইনী (আ.) আদর্শের সৈনিক। শহীদ ফারুকী, হালিম, লিয়াকত, রফিক, জাফর, জিতু মিয়া, সাইফুল ও নঈম উদ্দীন তোমাদের প্রেরণার উৎস। তাঁরা শিখিয়ে গেছেন- বাতিলের সাথে কোন আপোষ নেই, হতে পারে না। দ্বীনের খাতিরে সুন্নীয়তের জন্য প্রয়োজনে ‘ছের দে-গা নেহি দে-গা আমামা’। দেখো, আল্লাহ্ কোরআনে তোমাদের কথা কতো সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন- ‘অর্থাৎ তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানুষের কল্যাণে তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দেবে আর অসৎ কাজে নিষেধ করবে’ (সূরা আলে ইমরান-১১০)

হৃদয়ে নবী (দ.) প্রেমের ঢেউ তুলে, সব ভেদা-ভেদ ভুলে, কূপমন্ডুকতা ও আঞ্চলিকতাকে পায়ে দলে, বিনয়-ভুষণ গায়ে জড়িয়ে, সারা মুখমন্ডলে হাসি ছড়িয়ে বাংলাদেশের প্রতি জেলায়, প্রতি উপজেলায়, প্রতি থানায়, প্রতি গ্রামে, প্রতি জনপদে তোমরা ছড়িয়ে পড়ো। আল্লাহর দ্বীনকে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লামের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমার শরীরের প্রতি ফোঁটা রক্ত হাসি মুখে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত হও। মনে রাখবে- তোমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তোমাদের পদধুলিতে ধন্য হতে এদেশের প্রতি ইঞ্চি জমি উম্মুখ হয়ে তোমাদের দিকে চেয়ে আছে।

আবছার তৈয়বী: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)- দুবাই, ইউ.এ.ই।
প্রতিষ্ঠাতা: আদর্শ লিখক ফোরাম (আলিফ), চট্টগ্রাম।
নির্বাহী সদস্য: আনজুমানে খোদ্দামুল মুসলেমীন, ইউ.এ.ই কেন্দ্রীয় পরিষদ, আবুধাবি।

তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.