![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৈয়দ আহমদ বেরেলভী কে ছিলেন কী ছিলেন?
- আবছার তৈয়বী
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় আকিদা ও তরীকত চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত নাম কোনটি? আমার বিজ্ঞ পাঠক/পাঠিকা ও বন্ধুগণ কী বলবেন- তা আমি জানি না। তবে আমার মনে হয় সে নামটি সৈয়দ আহমদ বেরেলভী সাহেবের দখলে। তাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অঙ্গনে গড়ে ওঠেছে বিরাট মতানৈক্য। আকিদার ব্যাপার কেউ কাউরে ছেড়ে দিতে রাজি না। তার অনুসারীদের মধ্যে অনেক পীর-ফকির, দরবার ও সিলসিলা রয়েছে- যাঁরা গর্বভরে শুধু তার নামটিই উচ্চারণ করেন না- বরং তাকে ‘আমিরুল মুমিনীন’ খেতাবে ভুষিত করেন। ‘আমিরুল মুমিনীন’ যেন তেন কোন খেতাব নয়; বরং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান ও ইসলামী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক তথা ‘খলিফা’র খেতাব। আপনারা বর্তমানে বিভিন্ন আঁতেল পীরের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন মাইল লম্বা যে খেতাবগুলো দেখছেন- তার একটিও এই ‘আমিরুল মু’মিনীন’ খেতাবটিকে ডিঙাতে পারে না।
বর্তমান বাংলাদেশে জনাব সৈয়দ আহমদ বেরলভীর অনুসারীরা দু’ধারা বিভক্ত। ১. ওহাবী ও ২. সুন্নী। আবার অনেক ওহাবী- যারা তরিকত মানেন, তাদের কিছু কিছু সিলসিলায় ‘সৈয়দ’ সাহেবের অস্তিত্ব নেই। কিছু কিছু সুন্নী সিলসিলায় আবার সৈয়দ সাহেবের শুধু অস্তিত্ব নয়, বরং তার নামটি তাঁদের সিলসিলায় ‘চন্দ্র সূর্যের মতো প্রোজ্জল’। তাঁরা সৈয়দ সাহেবের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধায় এতোই নিমগ্ন যে, দুনিয়ার সকল কিছু ছাড়তে পারে, মাগার সৈয়দ সাহেবের ‘রশি’ ছেড়ে দিতে রাজি না।
আমার সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদের বলে রাখি- ‘সৈয়দ সাহেব’ নিজে ‘গণ্ডমুর্খ’ হলেও সৈয়দ সাহেবের সিলসিলাভুক্ত লোকদের ‘গণ্ডমুর্খ’ ভাবার কোনই অবকাশ নেই। তাই সৈয়দ সাহেবের বিপক্ষে বলার ক্ষেত্রে দালিলিক প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলবেন না। আমার জানা মতে- তাঁর সিলসিলাভুক্ত লোকদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী-গুণী লোক আছেন। সে রকম একজন হলেন দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মুহতারাম কবি রূহুল আমিন খান। তাঁকে এ ব্যাপারে একবার জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাব দিয়েছিলেন- ‘সৈয়দ’ সাহেবের ব্যাপারে কেউ কিছু বললে আমরা ‘খড়গ’ নিয়ে বসে আছি। একজন সজ্জন, বোদ্ধা, জ্ঞানী ও আশেকে রাসূল (দরুদ) এর মুখে ‘খড়গ’ শব্দ শুনাটা ভড়কে যাবার মতো। ডরনে কা কো-ই বা-ত নেহী ইয়ারোঁ। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি- কবির সাথে কোন সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গি গ্রুপের সম্পর্ক নেই- এটা আমার বিশ্বাস। কারণ তিনি তরিকতপন্থী মানুষ। হোক না ‘সৈয়দ’ সাহেবের সিলসিলাভুক্ত, তাতে কী? আমার মনে হয় তিনি যে ‘খড়গ’ শব্দটি বলছেন- তা হলো ‘জ্ঞানের খড়গ’। আর জ্ঞানের খড়গের মোকাবিলায় চাই- সমপর্যায়ের অস্ত্র। সে অস্ত্র আপনাদের আছে কী?
আমি ফুলতলী দরবারেও গিয়েছি। ছাহেব কিবলা আল্লামা ফুলতলী (রহ.) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ হয়নি। ওনার সন্তান মাওলানা হুচ্ছামুদ্দীন সাহেবের সাথেও আমার ভালো পরিচয় আছে। পরিচয় আছে- বিখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুর রহমান, অধ্যক্ষ আবদুন নূর, মাওলানা আহমদ হাসান শাহান, মাওলানা ফরিদসহ সেই সিলসিলাভুক্ত অনেকের সাথে। সুসম্পর্ক আছে- আমেরিকা প্রবাসী অনলাইন ‘আল মদিনা’ পত্রিকার সম্পাদক আমার শ্রদ্ধাভাজন বন্ধু মাওলানা হাফিজ ক্বারী আইনুল হুদা সাহেবের সাথেও। তাঁদের সাথে মিশে দেখেছি- তাঁরা সকলেই সুন্নী। মাসিক শাহজালালে লেখার সুবাদে তাঁদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁদের মেহমানদারি আমার ক্ষুদ্র জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে অনন্তকাল। তাঁদের সাথে আলাপ করে দেখেছি- তাঁরা সব দোষ খবিস ‘ইসমাঈল দেহলভী’কে দিতে চান। তাঁদের মতে- কুখ্যাত ‘তাকভিয়াতুল ঈমান’ একান্তই ইসমাইল দেহলভীর। সে কায়দা করে তার বইতে তার পীর সাহেবের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাঁদের এই কথাতেও অনেক কথা আছে। মাওলানা কারামাত আলী জৌনপুরীর ‘জখিরায়ে কারামাত’ কিন্তু তাঁদের কথার স্বপক্ষে কথা বলে না। ‘আমি আর খিতা কইরতাম...’?
আমাদের চট্টগ্রামেও অনেক সিলসিলায় ‘সৈয়দ’ সাহেবের অবস্থান পোক্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ‘সৈয়দ’ সাহেবের নাম নিয়ে ‘লুকোচুরি’ খেলেন। এক সিলসিলার কর্তা ব্যক্তির কাছে আমি বিষয়টি উত্থাপন করার পর তাদের বইতে পরবর্তী সংস্করণে শাজরা তালিকায় ‘সৈয়দ’ সাহেবের নামটি উধাও হয়ে যায়। বুঝতে পারলাম ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। আপনারা ঘাঁটলে ‘আধ্যাইন্না শাজরা’ অনেক ছিলছিলায় দেখতে পাবেন। 'লাড্ডুম' গ্রপের শাজরাটি দেখার জন্য আমি আমার সম্মানিত পাঠদের অনুরোধ করবো। আবার কিছু কিছু সিলসিলায় সেই ‘সৈয়দ’ সাহেব থাকলেও ‘সৈয়দ’ সাহেবকে ‘তালাক’ দিয়ে সেই সিলসিলার সম্মানিত পীর সাহেবগণকে অন্য তরিকায় ‘বায়াত’ করাতেও দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেকদিন থেকে ভাবলেও ‘বোলতার চাকে’ ঢিল মারার সাহস করিনি। কারণ এ বিষয়ে আমার গবেষণা নেই। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে আমার কিছু পাঠক/পাঠিকা এ বিষয়ে আমাকে কলম ধরার জন্য বারবার অনুরোধ করে আসছিলেন। তাঁরা তো আর আমার জ্ঞানের দৈন্যতার বিষয়ে জানেন না। আমি যে ‘খালি কলসি ঢং ঢং’- তা জানলে তাঁরা নিজেরাও লজ্জা পেতেন।
গতকাল ‘ফারিহা নাজনীন সায়মা’ নামক এক ঈমানী বোন আমার ‘খুনরাঙা দেশে তুমি মাছরাঙা হও’ লেখায় প্রকাশ্যে কমেন্ট করে বসলেন- এই বিষয়ে লিখতে। কিন্তু বিশ্বাস করুন- এ বিষয়ে আমার পড়াশোনা তেমন একটা নেই। ছাত্র অবস্থায় এ বিষয়টি মাথায় ঢুকলেও নতুন করে ‘কাইজ্জা’ শুরু হবে বিধায় চুপ থেকে ছিলাম। বাংলা ভাষায় এক ‘সৈয়দ আহমদ বেরলভী’ সম্পর্কে যতো বই বেরিয়েছে, আর কোন ব্যক্তিকে নিয়ে এতো অধিক সংখ্যক বই বেরোয় নি। ইসলামী বিশ্বকোষসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ‘ইয়া মোটা’ বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইগুলোতে গবেষকরা শুধু হাওয়া থেকে তথ্য খুঁজে আনেন নি; বরং পাতাল খুঁড়েও অনেক আজগুবি আজগুবি তথ্য বের করে এনেছেন ‘সৈয়দ’ সাহেব সম্পর্কে। কিন্তু সৈয়দ সাহেবের বিপক্ষে তখন একটি বইও আমি কোথাও খুঁজে পাইনি।
বাংলা ভাষায় সৈয়দ আহমদ বেরলভী সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে- সবই ইতিবাচক লেখা। সেই বইগুলো পড়ে বুঝতে পারলাম- সৈয়দ সাহেবের মতো ‘দ্বীনের খেদমতগার’ দ্বিতীয়টি এই ভারতীয় উপমহাদেশে ছিলো না। কিন্তু ইসলামী বিশ্বকোষ থেকে শুরু করে তার প্রায় সব জীবনী গ্রন্থে একটি কথা পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, ‘ আমিরুল মোমেনীন’ সাহেব উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ‘শিরক-বিদআত’ বিলুপ্তকরণে জিহাদ করেছিলেন। তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে- সেই ‘শিরক আর বিদআত’ গুলো কী কী? মিলাদ-কিয়াম, দরুদ সালাম, ওরস-ফাতেহা, জিয়ারতে আওলিয়া, তাওয়াসসুল, প্রিয় রাসূল (দরুদ) ইলমে গায়ব ও হাযির-নাযির এর মাসআলাগুলো নয় তো? জনাব 'সৈয়দ' সাহেবের মুরিদীন, মুতায়াল্লেকীন ও মুহিব্বীনরা আশাকরি বিষয়টি খোলাসা করবেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ‘সৈয়দ’ সাহেবের আকাশচুম্বী বেলুনটাকে একেবারে ফুঁটো করে দিয়েছেন- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ও মোহাম্মদপূর কাদেরিয়া তৈয়বীয়া আলিয়া মাদ্রাসার দীর্ঘকালীন অধ্যক্ষ, মাসিক সুন্নিবার্তার প্রতিষ্ঠাতা হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল জলিল (রহ)। তিনিও আমার উস্তাদ- রূহানী উস্তাদ। আর বাহ্যিকভাবে আমার দাদা উস্তাদ। তাঁকে আমি দাওয়াত দিয়ে আমিরাতে নিয়ে এসেছিলাম। দীর্ঘ একসপ্তাহ তাঁর সাথে নিবিড় ভাবে মিশেছি। তিনিই বলেছেন- সৈয়দ সাহেব ‘আমিরুল মুমেনীন’ পদবী ধারণ করার পর পাঠানদের যুবতী মহিলাদের দিকে তার দৃষ্টি যায়। তিনি নিজেই এক পাঠান মহিলাকে জোর করে বিয়ে করেন এবং পাঠানদের বাধ্য করেন তাদের মেয়েদের ওই তথাকথিত মুজাহিদদের বিয়ে দিতে। এতে করে এক বিরাট হাইকাউ হয়। এবং পাঠানদের সাথে সৈয়দ সাহেব ও তার গঠিত মুজাহিদ বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এবং সেই যুদ্ধে সৈয়দ সাহেবের ভবলীলা সাঙ্গ হয়। পরবর্তীতে এম. এ জলিল (রহ.) ‘বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত’ নাম দিয়ে একটি বইও অনুবাদ করেন। ওই একটি বই-ই আছে- যেখানে ‘সৈয়দ’ সাহেবের জারিজুড়ি সব ফাঁস করা হয়েছে। পড়তে পারেন সেটিও।
কিন্তু ‘সৈয়দ সাহেব’ যে ঘৃণ্য ওহাবীবাদের ‘দালাল’ ছিলেন- তা দিবালোকের মতো স্পস্ট। খবিস ইবনে আবদুল ওহাব নজদী রচিত কিতাবুত তাওহীদের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থের ভুমিকায় তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। বর্তমানে কিতাবটি আমার হাতে নেই। তাছাড়া ওই খবিস ‘ইবনে আবদুল ওহাব নজদী’র জীবনী গ্রন্থেও বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে গর্ব ভরে উল্লেখ আছে যে, তারা ‘সৈয়দ’ সাহেবকে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ঘৃণ্য ‘ওহাবীবাদ’ প্রচারের জন্য নিয়োগ করেছিলেন। বাকি- আল্লাহু ওয়া রাসূলুহু আলামু। আমি আর কিচ্ছু জানি না। আমার আইডিতে সৈয়দ আহমদ বেরলভীপন্থী ও বিরোধী উভয় পক্ষের অনেক বন্ধু আছেন। আপনার দালিলিকভাবে ‘সৈয়দ’ সাহেবের কীর্তিগুলো তুলে ধরুন। অন্য কারো সম্পর্কে বা অন্য কিছু নিয়ে ‘হাউকাউ’ করার কোন প্রয়োজন নেই।
তারিখ: ১০ অক্টোবর, ২০১৫
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.