![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিদ্দীকে আকবরের (রা.) বিরুদ্ধে শিয়াদের শত্রুতা: বনাম ফাদাকের ফাঁদ (এক)
-আবছার তৈয়বী
ইসলামের অবিকৃত রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে- হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর আস সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আরদ্বাহু) 'আফজালুন নাসি বা’দাল আম্বিয়া’ অর্থাৎ ‘নবীদের পর সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ’। তিনি এতোই সুমহান মর্যাদার অধিকারী যে, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়াসাল্লামের সাথী ছিলেন এবং ইসলামের আর্বিভাবের পরেও তিনি তাঁর (দরুদ) সাথী হলেন। শুধু তাই নয়, প্রিয়নবীর সফরে ও স্থিতিতে, জিহাদে ও ইবাদাতে তিনি তাঁর (দরুদ) সাথেই থাকতেন। আল্লাহর রাসূল (দরুদ) তাঁকে এতোই পছন্দ করতেন যে, তিনি তাঁকে হিজরতের সময় তাঁর (দরুদ) সাথে নিয়ে যান। হিজরতের প্রাক্কালে আবু বকর আস সিদ্দীক (রা.)'র ত্যাগ আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয় রাসূলের (দরুদ) দরবারে এতোই গ্রহণীয় হয়েছে যে, সিদ্দীকে আকবরের (রা.) উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাও আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন। এবং তাঁঁর সাথীত্ব (সাহাবিয়্যত)কে কোরআনের আয়াত দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত হিফাজত করে করেছেন। পৃথিবীতে আর কোন সাহাবীর বেলায় এমনটি ঘটেনি। সুবহানাল্লাহ্! এটি সিদ্দীকে আকবরের ‘ইউনিক কোয়ালিটি’। (কোন দূরাচার তাঁর 'সাহাবিয়্যত'কে ইনকার করলে কোরঅানের আয়াত অস্বীকারের কারণে সাথে সাথে সে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যাবে।)
এ রকম বেশ কয়েকটি 'ইউনিক কোয়ালিটি' সিদ্দীকে আকবরের (রা.) কপালে জুটেছিল। যা পৃথিবীতে আর কারো কপালে জুটেনি এবং ভবিষ্যতেও জুটবে না। তম্মধ্যে ২. ‘সিদ্দীকিয়্যত’- কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী যার স্থান নবীদের পরে। ৩. গারে সূরের সেই বিভীষিকাময় সময়ে তাঁর মর্যাদাকর সাথীত্ব ও নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রিয় রাসূলের (দরুদ) সঙ্গলাভ ৪. ‘খলিফাতু রাসূলিল্লাহ্’ উপাধী লাভ (পৃথিবীর কেউই এমনকি খোলাফায়ে রাশেদার অন্য মহান খলিফাগণও এই উপাধীটি ব্যবহার না করলেও ঢাকার এক ভণ্ড কর্তৃক এই উপাধীটি ব্যবহার করতে দেখা যায়) ৫. প্রিয় রাসূল (দরুদ) কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে তাঁর (দরুদ) প্রতিনিধি হিসেবে ‘আমীরুল হুজ্জাজ’ হিসেবে দায়িত্বপালন। ৬. প্রিয় রাসূলের (দরুদ) খিদমতে জীবনের সর্বস্ব লুটিয়ে দেবার বিরল সৌভাগ্য ৭. প্রিয় রাসূলের (দরুদ) শেষ ইচ্ছানুযায়ী 'মুসল্লায়ে নবুবী'তে ইমামতির সৌভাগ্য ৮. প্রিয় রাসূল (দরুদ)’র সর্বাধিক প্রিয় স্ত্রীর গর্বিত পিতা হওয়ার মর্যাদা ৯. জনগণ কর্তৃক সরাসরি নির্বাচনে মুসলিম জাহানের 'প্রথম খলিফা' হবার মর্যাদা এবং ১০. ইন্তেকালের পর কিয়ামত পর্যন্ত প্রিয়নবীর (দরুদ) পবিত্র কদম শরীফ বুকে নিয়ে পাশে থাকার সৌভাগ্য লাভ। হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.) এর এইসব মর্যাদা একান্তই তাঁর নিজের। কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর কেউই এইসব মর্যাদা ও গুণাবলীর অধিকারী হতে পারবে না। এক্ষেত্রে সিদ্দীকে আকবর অন্য সবার চেয়ে আলাদা, অন্য সবার চেয়ে সেরা।
হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর (রা.) সব বিষয়ে সব সময়েই 'প্রথম'। সিদ্দীকে আকবরের (রা.) জীবনে 'দ্বিতীয়' বলতে কোন শব্দ নেই। উম্মতের মধ্যে তিনিই সর্বোত্তম। উম্মতের মধ্যে কেউই তাঁকে কোন প্রকারেই কোথাও ডিঙাতে পারেনি। ইসলাম গ্রহণে পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ হিসেবে তিনিই প্রথম। নবীর (দরুদ) সাহচর্যে তিনিই প্রথম। নবীর (দরুদ) ভালোবাসায় তিনিই প্রথম। নবীর (দরুদ) আনুগত্যে তিনিই প্রথম। হিজরতে (নবীর সাথে) তিনিই প্রথম। গারে সূরে তিনিই প্রথম। ইবাদাতে তিনিই প্রথম। ইমামতিতে তিনিই প্রথম। ত্যাগে তিনিই প্রথম। বিচক্ষণতায় তিনিই প্রথম। খিলাফতে তিনিই প্রথম। নবীর (দরুদ) কদমতলে তিনিই প্রথম। সবুজ গম্বুজের ছায়তলে তিনিই প্রথম। ইসলামপূর্ব জীবনে যিনি এক মুহূর্তের জন্যও মূর্তিপূজা বা শিরক করেননি। তিনি একাধারে- সাহিবে গার, নবী মুস্তাফা (দরুদ)’র ইয়ার, সাহাবীয়ে মাহবূবে পরওয়ারদেগার, মুহাজিরে জলীল, প্রিয় রাসূলের (দরুদ) খলীল, আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম সদস্য, খলিফাতু রাসূলিল্লাহ্, আমিরুল মু'মিনীন, খলিফাতুল মুসলেমীন, ‘স্যাভিয়র অব ইসলাম’ হযরত সা্য়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিঅাল্লাহু তায়ালা আনহু। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী! উহিব্বুকা আইয়্যুহাস্ সিদ্দীক (রা.)! আমার পিতা-মাতা তোমার কদমে কোরবান হোক- হে সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনকা।
হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবরের (রা.) এই সব অনন্য মর্যাদা তাঁর ওপর আল্লাহ জাল্লা শানুহু ও প্রিয় রাসূল (দরুদ)'র অনুগ্রহেরই নামান্তর। তাঁর এই অনন্য মর্যাদা দেখে আহলে বায়তে রাসূল (দরুদ) ভালোবাসার 'কপট দাবিদার' বাংলাদেশের সুন্নী নামধারি কিছু ভণ্ড ‘শিয়াদের’ গা জ্বলনি শুরু হয়েছে। অবশ্য তাদের এই গা জ্বলনিটা নতুন নয়। সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবরের শান দেখে ১৪০০ বছর ধরে কুখ্যাত শিয়ারা জাহান্নামের হুতাসনে জ্বলছে। 'প্রত্যেক শিয়াই যেন ট্রাকের জ্বালানী বক্স'। যেন তাদের মন-মগজে ও সমস্ত শরীরে অমোচনীয় কালি দিয়ে লেখা- ‘জম্ম থেকে জ্বলছি’। প্রতিটি ‘শিয়া’ মহান সিদ্দীকে আকবরের (রা.) দুশমনি অন্তরে নিয়ে পৃথিবীতে পয়দা হয়। প্রতিটি শিয়া সিদ্দীকে আকবরের (রা.) 'আদাওতি' বুকে নিয়ে বড়ো হয়। প্রতিটি শিয়া সিদ্দীকে আকবরের (রা.) শত্রুতা হৃদয়ে লালন করে জীবন কাটায়। প্রতিটি শিয়া সিদ্দীকে আকবরের (রা.) 'বুগদ্ব' অন্তরে নিয়ে জ্বলতে জ্বলতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
দুনিয়াতে থাকতেই তারা নিজেদের বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। তারা নেয়- নিক। আমাদের করার কিছুই নেই। আমরা প্রতিটি সুন্নী মুসলমান আহলে বায়তে রাসূলের (দরুদ) মুহাব্বত অন্তরে ধারণ করেই সিদ্দীকে আকবরের (রা.) গুণগাণ গাইতেই থাকবো। এতে শিয়াদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলে- হোক, এতে শিয়াদের শরীরে জাহান্নামের আগুন লাগলে- লাগুক, এতে শিয়াদের মন-মগজে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটলে- ঘটুক, আমাদের করার কিছুই নেই। আমরা একনিষ্ঠ মুসলমান হিসেবে তাদেরকে 'তাজিমে সাহাবা' ও সত্যিকার অর্থে আহলে বায়তে রাসূলের (দরুদ) মুহাব্বতের দাওয়াত দিতেই থাকবো। প্রিয়নবীর (দরুদ) আদর্শ অনুযায়ী তাদের কল্যাণ কামনা করতেই থাকবো। যার নসিবে হেদায়াত থাকবে- সে 'সিরাতুল মুস্তাকীমে' ফিরে আসবে, আর যার নসিবে হেদায়াত নেই- সে জাহান্নামের পূঁঁতিগন্ধময় গর্তে নিজেদের শেষ ঠিকানা নিজ হাতেই তৈরী করে নিক- আমাদের করার কিছুই নেই।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- শিয়ারা ছলে বলে কৌশলে মুহাব্বতে আহলে বায়তে রাসূলের (দরুদ) ‘ছন্না’ ধরে সুন্নীমনা দরবারগুলোকে ঘায়েল করছে। এ ক্ষেত্রে তারা হযরত মওলা আলীর (রা.) সাথে হযরত আমিরে মুয়াবিয়ার (রা.) মধ্যকার ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলীকে সামনে রেখে অগ্রসর হয় এবং সায়্যিদায়ে কায়েনাত মা ফাতিমা যাহরা রাদ্বিআল্লাহু আনহা ও সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিআল্লাহু আনহু’র মধ্যকার সামান্য ভুল বুঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবরের (রা.) বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সরলমনা মুসলমানদের ঈমানহারা করছে। এক্ষেত্রে তারা ‘বাগে ফাদাক’ (ফেদক এবং ফদকও ব্যবহৃত হয়) কে 'ফাঁদ' হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই আমি আমার এই সিরিজ লেখাটির নাম দিয়েছি- ‘সিদ্দীকে আকবরের (রা.) বিরুদ্ধে শিয়াদের শত্রুতা: বনাম ফাদাকের ফাঁদ’। শিয়াদের এ বাড়াবাড়ির কারণে অনেকেই মনে করে যে, আহলে বায়তে রাসূলের (দরুদ) মুহাব্বতে তাদেরই একচেটিয়া অধিকার! এবং মওলা আলী (রা.) শুধু তাদেরই ইমাম। ভুল- সব ভুল হ্যায়। ঝুট- সব ঝুট হ্যায়। আমি সকল সরলমনা সুন্নীদের স্পষ্ট ভাবে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিতে চাই যে, তাজীমে সাহাবা ও মুহাব্বাতে আহলে বায়তে রাসূলের (দরুদ) নামই ‘সুন্নীয়ত’। (চলবে......ইনশাআল্লাহ্)
বি. দ্র: ভালো লাগলে এই লেখাটি কপি করে নিজেদের এবং অন্যদের ওয়ালে দিতে পারেন। কিংবা দিতে পারেন- বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে, অবিকৃতভাবে।
ছবি: ঐতিহাসিক ফাদাক বাগান, খায়বার- অাল মাদীনাতুল মুনাওওয়ারা।
তারিখ: ০৪ এপ্রিল, ২০১৬ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.