![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোকের আগস্ট চেতনার আগস্ট
-আবছার তৈয়বী
আগস্ট এসেছে-অলক্ষুণে আগস্ট। আগস্ট এসেছে- এক সাগর কান্না নিয়ে। আগস্ট এসেছে- এক পাহাড় শোক নিয়ে। আগষ্ট এসেছে- অশ্রুবন্যায় হৃদয় রাজ্যের পুরোটা প্লাবিত করে। আগস্ট এলেই বাঙালি শোকে মুহ্যমান হয়, দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খায, কষ্টে নীল হয়, দ্রোহে জাগরিত হয়। এ দেশের সুন্নি মুসলমানের হৃদয় রাজ্যের রাজা, বোবা সুন্নীদের স্পীকার, শতধা বিভক্ত সুন্নীদের ঐক্যের স্বপ্নদ্রষ্টা, মদীনার পানে ছুটে চলা নবীপ্রেমিকদের হৃদ-সাগরের পাল তোলা নৌকার মাঝি, আল্লামা শায়খ নূরুল ইসলাম ফারুকী (রহ.) কে নিজ ঘরেই পশু জবাইয়ের মতো নির্মমভাবে জবাই করে শহীদ করা হযেছে- এই আগস্ট মাসেই। তাই দেশপ্রেমিক সুন্নী মুসলমানদের শোকের মাত্রা অন্যদের চাইতে দ্বিগুণ। দেখতে দেখতে দুই বছর চলে গেল। ফারুকী হত্যার বিচার আজও হয়নি। এই সরকারের আমলে আদৌ বিচার হবে কি-না, তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। বিচার হওয়া দূরে থাক- আসামীদের গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়নি। গ্রেফতার করা দূরে থাক, আসামীদের চিহ্নিতই করা হয়নি। চিহ্নিত করা দূরে থাক, এজাহারভুক্ত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। ভাবা যায়!
গত বছর এক ফারুকীকে নিয়েই আমি ১০টি কবিতা লিখেছি। এক বুক আশা নিয়ে বাংলদেশ সরকারের প্রধান নির্বাহী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে করুণ ভাষায় চিঠি লিখেছি। তিনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন, কিন্তু নেননি। চিঠি লিখেছি- ফারুকী যেই মসজিদে খোতবা দিতেন এবং নামায পড়াতেন সেই মসজিদের মুসল্লি, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোটের মাননীয় বিচারপতিদের কাছেও। তাঁরা 'সরকারের এই গড়িমসি কেন'- তা জানতে চেয়ে নিজ উদ্যোগে সুয়োমোটো রুল জারি করতে পারতেন, কিন্ত করেননি। চিঠি লিখেছি- ফারুকী যেই চ্যানেলে অনুষ্ঠান করতেন, সেই 'চ্যানেল আই'এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শায়খ সিরাজকে, তিনি ধারাবাহিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রচার করতে পারতেন, কিন্ত করেননি। চিঠি লিখেছি- সুন্নী অঙ্গনে সাংবাদিকতার পথিকৃত, গেদুচাচা খ্যাত প্রতিথযশা সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক সাহেবকে। তিনি ফারুকী হত্যার আসামীদের গ্রেফতারে বাঁধাটা কোথায়? কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? এর আনুপূর্বিক বর্ণনা দিয়ে তাঁর পত্রিকায় কভার স্টোরি করতে পারতেন, করেনি। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বলতে পারতেন, কিন্তু বলেননি। চিঠি লিখেছি- বাংলাদেশের সকল দরবারের মাননীয় গদিনশীন্ ও সাজ্জাদানশীন পীর সাহেবানদের প্রতি, তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে পারতেন, অন্ততঃ প্রধানমন্ত্রীকে কাছে যেতে পারতেন। নাহ্, তারাও কিছুই করেন, কিছুই বলেন নি। তবে তাঁরা সবাই আমার চিঠিগুলো পেয়েছেন। কিন্তু কেউই আমার এই দরদমাখা চিঠিগুলো পড়ে কোন ব্যবস্থা নেননি। ফারুকী হত্যার বিচারের জন্য কেউই এক মিনিটও সময় ব্যয় করেননি। এ লক্ষ্যে কেউই নড়াচড়া পর্যন্ত করেননি। আমার সেই চিঠিগুলি সারা বছর ওয়ালে ওয়ালে ঘুরেছে। শত শতবার শেয়ার হয়েছে। শত শত কমেন্ট পড়েছে। সেই চিঠিগুলো পড়ে এদেশের ইসলাম প্রিয়, শান্তিপ্রিয়, নবীপাগল মানুষগুলো ডুকরে কেঁদেছে। কিন্ত হায়- পাষাণদের মন গলেনি! কমেন্টের জবাব দিতে দিতে আমার হাজার ঘন্টা ব্যয় হয়েছে। হাত ব্যাথা করেছে। কাজ নস্ট হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
আমার শ্রম বৃথা গেছে- যাক। আমার সময় নষ্ট হয়েছে- হোক। আমার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে- হোক। কিন্তু আমার এই চিঠিগুলো পড়ে যেসব মানুষের অশ্রু ঝড়েছে- তা বৃথা যেতে পারে না। একদিন সে অশ্রুগুলি অভিশাপের প্লাবন হয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। কারণ, যারা কেঁদেছেন, তাঁরা কেউই ফারুকীর রক্তের সম্পর্কের নন। তাঁরা যে সবাই ফারুকীর রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী- তাও নন। তাঁরা নবীপ্রেমিক ঈমানদার মুসলমান। আর নবী প্রেমিকদের চোখের পানি কখনো বৃথা যায় না- যেতে পারে না। এ আমার বিশ্বাস। আজ আগস্ট এসেছে হৃদয়াকাশে জমে থাকা মেঘমালা থেকে আবারও অঝোর ধারায় বর্ষন হচ্ছে। আজ আগস্ট এসেছে- মনের গহীনে লুকায়িত কষ্টগুলো আবারও ধীরে ধীরে গ্রাস করছে সমস্ত দেহ-মন। আজ আগস্ট এসেছে- ক্ষত-বিক্ষত কলিজা থেকে আবারো তাজা খুন ঝড়ছে বিন্দু বিন্দু হয়ে আর সমগ্র দেহে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। আজ আগস্ট এসেছে- মস্তিষ্কের নিউরণে ঠনঠনে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। রাসূল (দরুদ) প্রেমে দীপ্ত অবিচারে অতৃপ্ত ফারুকীর আত্মা আজ পুরো জাতিকে অভিশাপ দিচ্ছে।
এদেশে দেরীতে হলেও রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার হয়। এদেশে সাধারণ হত্যাকান্ডের বিচারও হয়। এদেশে নাস্তিকদের হত্যাকান্ডের দ্রুত আইনে বিচার হয়। কিন্তু ফারুকীর হত্যাকান্ডের বিচার হয় না। কেন হয় না? আমার তো মনে হয়- ফারুকীর হত্যাকান্ডের সাথে সরকারের কেউ না কেউ জড়িত আছে। যে বা যারা জড়িত থাকুক- তারা সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে- এই হত্যাকান্ডে সৌদি দূতাবাসেরও হাত থাকতে পারে। কারণ, ফারুকীর শাহাদাতের আগে তাঁকে সৌদি দূতাবাসে বারবার ডেকে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে শাসানো হয়েছে। না হয়, এ রকম একটি আলোচিত হত্যাকান্ডের কোন কূল কিনারা করতে পারবে না- আমাদের পুলিশ প্রশাসন? নাহ, এতটুকু অথর্ব আমাদের পুলিশ প্রশাসন নয়। উপরে বসে কেউ না কেউ কলকাঠি ঠিকই নাড়ছে। এই বিচার না হওয়ার জন্য কেউ না কেউ টাকা ছড়িয়েছে। কেউ না কেউ প্রভাব বিস্তার করেছে। কেউ না কেউ খুনিদের প্রটেকশন দিয়েছে এবং বর্তমানে কেউ না কেউ খুনিদের আড়াল করছে। আর কিছু হোক বা না হোক, খবিস তারেক মনোয়ারের নেতৃত্বে বাতিল মতবাদের অনুসারী যে সব মোল্লারা ফারুকীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যে মুজাফফর বিন মহসিন নামের খবিসটি মসজিদের মেহরাবে দাঁড়িয়ে ফারুকীকে শিরকের ধোঁয়া তুলে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে- তাদের তো অন্তত গ্রেফতার করতে যেতো। আমি মনে করি- ফারুকী হত্যার বিচার হলে জঙ্গি উস্কানীদাতা এই মোল্লাগুলি ফেঁসে যেতো এবং দেশে জঙ্গি হামলা হতো না।
ভাগ্যিস! ফারুকী তার জীবনের শেষপ্রান্তে এসে সুন্নীয়ত ভিত্তিক ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভাগ্যিস! দেশে ছাত্রসেনা ছিল। না হয়, ফারুকীর কথা আমরা সু্ন্নীরা হয়তো কবেই ভুলে যেতাম। যেভাবে এদেশের পীরেরা ফারুকীকে ভুলে গিয়েছেন। যেভাবে এদেশের দরবারের গদিনশীনরা ফারুকীকে ভুলে গিয়েছেন। যেভাবে অন্য সুন্নী নামধারীরা ফারুকীকে ভুলে গিয়েছেন। বাঙালি এমনই এক ভুলোমনা জাতি। সুন্নী হলে তো আর কথায়ই নেই। ভুলতে উস্তাদ। কিন্তু সুন্নীয়ত বিক্রি করে খানেওয়ালা প্রাণীদের আমি জিজ্ঞেস করি- ফারুকীকে কেন শাহাদাত বরণ করতে হলো? কেন আপনারা গর্জে উঠতে পারেন না? কেন আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন না? আপনাদের কিসের এতো লাজ? অাপনাদের কিসের এতো ভয়? আচ্ছা আমাকে বলুন- ফারুকীর দোষটা কী? তিনি নবী (দরুদ) প্রেমের কথা বলতেন- এই তো? তিনি নবীর (দরুদ) প্রতি ভালোবাসা, আহলে বায়তের মুহাব্বত, সাহাবীদের সম্মান, এবং আউলিয়ায়ে কেরামের প্রতি ভক্তির কথা বলতেন- এই তো? তিনি ওরস ফাতেহা ও আউলিয়াদের শানে কথা বলতেন- এইতো? তিনি নানা দেশ ঘুরে ঘুরে বিলুপ্তপ্রায় ইসলামী ঐতিহ্য, ঈমান-আকিদার স্মারকগুলো জনমানুষের সামনে তুলে ধরতেন- এই তো? তাঁর আর তো কোন দোষ আমি দেখি না। ফারুকীর আর কোন অপরাধের কথা- তাকে খুন করতে যাওয়া জালিমরাও বলেনি। তো ফারুকী আর আপনার আকিদা ও বোধ-বিশ্বাসের মাঝে কি কোন তফাৎ আছে কি? ফারুকী যাওয়ার চলে গেছেন। এখন আমার আর আপনার পালা। তাই আসুন, অন্ততঃ নিজেদের ঈমান-আকিদা রক্ষা ও নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে ফারুকী হত্যার বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হই এবং ছাত্রসেনা ঘোষিত আন্দোলনে শামিল হই। দুনিয়াতে হয়তে গা বাঁচিয়ে চলতে পারবেন। কিন্তু মনে রাখুন- অাখেরাতে ঠিকই ধরা খাবেন।
তারিখ: ০১ আগস্ট, ২০১৬ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই
©somewhere in net ltd.