![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কওমী সনদের স্বীকৃতি: লাভ কি এবং ক্ষতি কী? (পর্ব: ০৬)
-আবছার তৈয়বী
*** জঙ্গিদোসর ওহাবী-কওমীদের প্রতি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের প্রতিবাদে চাই- অহিংস, শান্তিপূর্ণ, জনসম্পৃক্ত, পরিবেশবান্ধব ও দেশ-উন্নয়নমূলক অভিনব কর্মসূচী***
আজকের লেখার শুরুতেই আমি আমার সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদেরকে পোস্টের সাথে সংযুক্ত ছবিটির দিকে একবার ভালো তাকাতে অনুরোধ করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ওহাবী-কওমীগুরু মৌং শফির চোখ-মুখের দিকে একবার ভালো করে তাকান। কী দেখলেন এবং কী বুঝলেন? প্রথমেই বলে রাখি- ওহাবী-কওমীদের 'আল্লামা শফি' আগাগোড়াই একজন মুনাজাত বিরোধী লোক। ওহাবী-কওমীদের মতে, মুনাজাত করা 'বিদআত'। তবে ইদানিং পীর সেজে মাঝে মাঝে তিনি মুনাজাত মানে 'বিদআত' কাজটি করছেন। আচ্ছা- তার এই মুনাজাত জায়েয আছে তো? বলে রাখা ভালো- হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক সকলেই কিন্তু মুনাজাত বিরোধী। একই আকিদার পটিয়া ওহাবী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক আবার মুনাজাতপন্থী। এই নিয়ে তাদের মাঝে হাউ-কাউ কিন্তু কম হয়নি। সব সময়ই মুনাজাতপন্থীরা জিতেছেন এবং 'লড্ডস ফাইভ' হাটহাজারীর মুনাজাত বিরোধীরা গো-হারা হেরেছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এককালের 'জানি দুশমন' এবং ইদানিং কারো কারো 'পেয়ারের জিগরী দোস্ত' এই 'মৌলোভী' প্রচুর বিদআত করছেন, এমনকি প্রকাশ্যে হারাম কাজও করছেন। কিন্তু চট্টগ্রামের ভাষায় একটা কথা আছে- 'পোন ফাডে যার, নাম ফাডে তার'। মৌলোভী শফি সাবের হয়েছে সেই দশা! সে যাই হোক- 'মোটের ওপর তিনি একজন মোটা দাগের মিথ্যুক এবং বড় মাপের লোভী'। সে কাঁসূন্দি না টেনেই আমি বলবো- মৌলোভী শফি সাহেবের এই লোক দেখানো মুনাজাতে কোন প্রাণ ছিল না, একাগ্রতা ছিল না, খুশু-খুদ্বু ছিল না। এমনকি মুনাজাতের পদ্ধতিও তিনি জানেন না। ভালো করে দেখুন- বাটখারার অসমান দুই তলার মতো তার হাত দুইখান ওপর নিচে। তার চোখগুলো কোথায় নিবদ্ধ তাও দেখুন- আস্তাগফিরুল্লাহ! একজন দাগী আসামীকেও আপনি দেখবেন- মুনাজাতের সময় সে নিবিষ্ট মনে আল্লাহর কাছে ভিক্ষুক হয়ে দোয়া মাগছে। মুনাজাতের আদব হলো- চোখ থাকবে হাতের তালুর দিকে। অনেক সময় আল্লাহর ভয়ে মানুষ চোখ বন্ধ করে ফেলে। পাষানের হৃদয়ও মুনাজাতে গলে যায়। চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীরও চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়। কিন্তু মৌলোভী শফির চোখের 'ইটিশ-পিটিশ' কী প্রমাণ করে- তা আপনারাই বলুন? এটি মুনাজাত নয়; বরং 'খোদার সাথে সরাসরি মশকরা'। সে হিসেবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে কমসে কম এক ডাং বেশি ধার্মিক মুসলমান- মাশাআল্লাহ!
অন্য অনেকের মতো আমার বুঝে আসে না- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোন যুক্তিতে এই 'বদের হাড্ডি' ফ্যাসাদী লোকটাকে তাঁর পাশে বসালেন? বসিয়েছেন- ভালো কথা। তাই বলে- অন্যায় ও অযৌক্তিক ভাবে এমনকি 'সংবিধান লঙ্ঘন করে' তাদের পঁচা সার্টিফিকেটকে 'মাস্টার্স' সমপর্যায়ের মান দিতে হবে কেন? দিতে চান তো দিন। কিন্তু হাস্যকর ভাবে দেবেন কেন? পুরো এশিয়ার 'লৌহ-মানবী' বলে যিনি ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করছেন- তাঁর কাছ থেকে কি এমনটি আশা করা যায়? আপনি বলবেন- "ধুর মিয়া! বুঝ না ক্যাঁ- এতে 'সিয়াসত' আছে"। আমি বলবো- সিয়াসত থাকাটা দোষের কিছু না। কিন্তু যেই সিয়াসতে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া হয়, যেই সিয়াসতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পদদলিত করা হয়, ওই সিয়াসতের কপালে 'ঝাঁটার বারি'। সেই সিয়াসত না করে বনবাসে যাওয়া ঢের ভালো। মানুষ মাত্রই বুঝে- অ আ ক খ যারা জানে, তারা বুঝে- আগে প্রাথমিক পাশ করতে হয়, তারপর মাধ্যমিক, তারপর উচ্চ মাধ্যমিক, তারপর ডিগ্রি লেবেল এবং তারপরই মাস্টার্স। একজন ছাত্রের শিক্ষা জীবন যেমন ধাপে ধাপে এগোয়, তেমনি তার পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা, স্বীকৃতি ও সম্মান ধাপে ধাপে এগোয়। মানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনি দেখবেন- মানুষ নীচ থেকে ওপরে ওঠে। কিন্তু ওহাবী-কওমীদের বেলায় ঠিক উল্টোটা! এটা কতবড় মূর্খতা- তা আর 'কহতব্য' নয়। সে হিসেবে আপনিই বলুন- 'দাওরায়ে হাদিস' সনদকে মাস্টার্স মান পেতে ইচ্ছুক সকল ওহাবী-কওমী কি মূর্খ নয়? আমাদের ডিগ্রি পাশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী বলেন? আন্ডার মেট্রিক কেউ যদি এই কাজটি করতেন- তাহলে না হয় একটা কথা ছিল।
আচ্ছা সব বাদ দিন। কিন্তু যে সব প্রতিষ্ঠানে কোনদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস- তথা জাতীয় কোন দিবসই পালিত হয় না, সে সব প্রতিষ্ঠানের তথাকথিত সনদকে সমমান দিলে কি ৩০ লাখ শহীদের আত্মার প্রতি জুলুম করা হয় না? আমরা জানি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত' জাতির জনকের কন্যা। তাঁর হাত দিয়ে দেশদ্রোহী ও জাতিদ্রোহী এই জঙ্গিদের পূনর্বাসন কি শোভা পায়? বলুন- পায়? তিনি যে 'বঙ্গবন্ধু কন্যা'- সেটি তিনি ভুলে যাবেন কেন? আমার তো মনে হয়- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোন কাজে বঙ্গবন্ধুর আত্মা যদি কষ্ট পেয়ে থাকে, তাহলে সেই কাজটি হলো- এটি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয়ে অনুরোধ করবো- আপনি যখন তাহাজ্জুদ নামায পড়তে ওঠেন, তখন আল্লাহর কাছে চাইবেন- যেন বঙ্গবন্ধু আপনাকে স্বপ্নে দেখা দেন। যদি তিনি দেখা দেন, তবে তাকে জিজ্ঞেস করবেন- আপনি ঠিক কাজটি করছেন কি-না? বঙ্গবন্ধু যদি বলেন- 'হ্যাঁ, মা! তুমি এই বিষয়ে ঠিক কাজটিই করছো'- তাহলে আর কোন কথা নেই। 'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন' হিসেবেই সেটি প্রচার করুন। কেউ টু শব্দটিও করবেন না। কিন্তু যতোদিন না বঙ্গবন্ধুর সাথে আপনার সাক্ষাৎ হচ্ছে, একজন বঙ্গবন্ধুর গুণমুগ্ধ হিসেবে আমি আপনাকে সবিনয়ে নিবেদন করবো- আপনি বিষয়টি নিয়ে আবারও ভাবুন। কারণ, দেশ ও জাতির সর্বনাশটি আপনার হাতেই হোক- তা কোন দেশপ্রেমিক জনতা চায় না।
আপনার সরকারের একথা ভুলে গেলে চলবে না- ১৯৮৫ সালে 'দাখিল'কে এসএসসি'র মান দেওয়া হয়। ১৯৮৭ সালে 'আলিম'কে এইচএসসি'র মান দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে 'ফাযিল'কে স্নাতক এবং 'কামিল'কে স্নাতকোত্তর মান দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত করা হয়। ২০১০ সালে মাদ্রাসাতে অনার্স চালু হয়। ২০১৩ সালে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৫ সালে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু হয়। এই মান দেয়ার আগে তাদেরকে সমমানের বই-পত্র পড়ানো হয়। কিন্তু ওহাবী-কওমী মাদ্রাসার প্রাথমিক, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, বিএ'র মান ছাড়া সরাসরি 'দাওরায়ে হাদিস'কে 'মাস্টার্স' মান দেয়া কি যুক্তির ধোপে টেকে? কিন্তু আপনি যদি বলেন- আমি যুক্তি-টুক্তি মানি না। জঙ্গীদোসর হেফাজত নেতারা যা চান- তাই হবে। তাহলে কিন্তু একখান কথা আছে। সেই কথাটি হলো- 'ওহাবী-কওমীদের অযৌক্তিক, অন্যায্য এবং পৃথিবীর সকল দেশের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বিরোধী দাবিটির প্রতি সায় দেয়া মানে এটি শুধু আলিয়া নেসাবের অধীভূক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্রদের প্রতি নয়, পৃথিবীর সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের গালে কষে একটা থাপ্পড় দেয়া'। যা সরাসরি জুলুমের পর্যায়ে পড়ে।
সঙ্গতঃ কারণেই সুন্নীরা এই জুলুমের প্রতিবাদে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দিয়েছে। কিন্তু এই কর্মসূচী পালন করা সুন্নীদের একার দায়িত্ব না। বরং দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীর কর্তব্য। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও কর্তব্যটি বর্তায়- মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন 'জমিয়তুল মোদাররেসীন'র ওপর। কিন্তু আশ্চর্যভাবে তারা এখনো চুপ। মাদ্রাসা শিক্ষকদের 'মাথা বেচে খাওয়া' জমিয়ত নেতা বাহাউদ্দীন সাহেবের চুপ থাকাটা বেশ রহস্যজনক বটে! জমিয়তের উচিত- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করা। মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকের ন্যায্য দাবি আদায়ে তারা যদি ব্যর্থ হন, তো মাদ্রাসা শিক্ষকদের উচিত- আলাদা জমিয়ত গড়ে তোলা। আমি বাংলাদেশের প্রতিটি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ করবো- আপনারা জমিয়তের 'জবর দখলকারী' পেটমোটা নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। তারপরও তারা যদি চুপ থাকেন, তো আপনারা স্বউদ্যোগে আন্দোলনে নামুন। কিন্তু মনে রাখবেন- আন্দোলনটি হতে হবে সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং ওহাবী-কওমীদের অন্যায্য দাবির প্রতি সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং তা অতি অবশ্যই অহিংস ও শান্তিপূর্ণ হতে হবে।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মধ্যে সভা-সমাবেশ ও মিছিল হতে পারে। মানববন্ধনও হতে পারে। রোডমার্চও হতে পারে। তবে এসব কর্মসূচী বর্তমানে সেকেলে ও ভোঁতা। এই আন্দোলনের জন্য চাই- 'অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচী'। যেমন- আন্দোলনকারী প্রতিটি ব্যক্তি এবং সারা দেশের সকল মাদ্রাসায় একই সময়ে একযোগে সকল শিক্ষার্থী ১. খাতা ও কলম মাত্র ১১ মিনিট মাটিতে ফেলে রাখা। ২. পাঠ্যবই বুকে ধারণ করে কলমটি কানের মধ্যে গুঁজে ১১ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা। ৩. কলমটি মুখে নিয়ে মাত্র ৩ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা। ৪. মাটিতে বসে কলমের নিভ মাটির সাথে ১১ মিনিট চেপে ধরে রাখা। ৫. দাঁড়িয়ে পাঠ্যবই খুলে ১১ মিনিট উল্টো করে ধরে রাখা। ৬. প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী ঝাড়ু হাতে একযোগে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশে ৩৩ মিনিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা। ৭. প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী একটি করে বৃক্ষচারা হাতে নিয়ে ১১ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা এবং পরবর্তীতে তা শিক্ষাঙ্গনে, রাস্তায় বা নিজ নিজ বাড়িতে রোপন করা। ৮. প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী ও আন্দোলনকারী এ বিষয়ে নিজের মতো করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাত্র ১১ বাক্যের একটি করে চিঠি লেখা ও তা আলাদা আলাদা খামে ভরে পোস্ট করা। এই জাতীয় কর্মসূচী কারো কাছে হাস্যকর হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন- এসবের চেয়ে শক্তিশালী ও যুগান্তকারী আর কোন কর্মসূচী হতে পারে না। যে কোন একটি কর্মসূচী একযোগে পালন করলে বাংলাদেশের সবখানেই আলোড়ন সৃষ্টি হবে। জনমানুষের প্রশংসা কুড়াবে। মিডিয়ায় হৈচৈ পড়ে যাবে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করবে। সরকারের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হবে। পরিবেশ উন্নয়ন হবে। সরকারের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা জমা হবে। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও প্রশংসা করতে বাধ্য হবেন এবং তাঁর ভুলটি বুঝতে পারবেন। এতে করে ওহাবী-কওমীদের 'স্বপ্নসাধ' অতিসহজেই ধুলিস্যাত হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র এই লেখকের কথাগুলো আন্দোলনকারী সুন্নী সমাজ ও আমার প্রিয় মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকরা শুনবেন কী- মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন বটে!
( বি.দ্র. জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের লক্ষ্যে লেখাটি বেশি বেশি শেয়ার করুন। কপি করে অবিকৃতভাবে নিজেদের টাইমলাইন থেকে একযোগে পোস্ট করুন। সকল গ্রুপে ও পেইজে দিন। মনে রাখবেন- আপনার একটি পোস্টেই দেশ ও জাতির প্রভূত কল্যাণ হতে পারে। সকলকেই ধন্যবাদ।)
তারিখ: ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.