![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রসঙ্গ: সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ এবং অবাস্তব অশ্বডিম্ব প্রাপ্তি!
-আবছার তৈয়বী
সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ পালন করা যাবে কি-না- এটা নিয়ে বছর দশেক যাবত বিভিন্ন লেখালেখি হচ্ছে। বাংলাদেশে ৪০ টিরও বেশি গ্রামে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে একদিন বা দুইদিন আগে রোযা রাখা হয় এবং সেই হিসেবে মিল রেখে ঈদও উদযাপন করা হয়। মাত্র কয়েক যুগ ধরে এটি হয়ে আসছে। চট্টগ্রামে এই নতুন নিয়ম চালু করেছে- মির্জাখীল দরবার। সেই দরবারের অনুসারীরা যেখানে আছেন, তারাও সেখানে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোযা পালন ও ঈদ উদযাপন করেন। মূলতঃ তারাই বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে দিয়েছে। আর সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে- সৌদি চিন্তা-সাম্রাজ্যবাদীরা। কিন্তু মির্জাখীল দরবারের সাথে সৌদি চিন্তা-সাম্রাজ্যবাদীদের কোনই মিল নেই। দুনিয়ায় হাজারও জীবন-মরণ সমস্যা থাকতে এই একটি বিষয় নিয়ে কেন এতো হৈ চৈ হচ্ছে- বুঝি না। ১৪০০ বছর ধরে চলে আসা একটি মীমাংসিত ও আচরিত ব্যাপার নিয়ে মাতামাতি করার কোন দরকার আছে বলে আমি অন্ততঃ মনে করি না। কিন্তু আমি বা আপনি মনে না করলেও প্রশ্ন যখন ওঠেছে- উত্তর অবশ্যই দিতে হবে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে- যদি আপনি 'সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ' পালন করার পক্ষে মত দেন- তো '১৪০০ বছর ধরে কারোই রোযা ও ঈদ শরীয়ত সম্মতভাবে হয়নি'- বলেই ধরে নিতে হবে। এ এক অসম্ভব ব্যাপার! এই মত ধরে নিলে যে সব দিনে রোযা রাখা হারাম, সে সব দিনেও রোযা রাখা হয়ে যায় এবং যে সব দিনে রোযা রাখা ফরজ সাব্যস্থ হয়, সে সব দিনে রোযা রাখা হয় না। এর অর্থ দাঁড়াল- ওই মুষ্টিমেয় লোক ছাড়া ১৪০০ বছর ধরে আর কারো রোযাও পূর্ণ হয়নি এবং কারো ঈদও হয়নি। প্রত্যেকে গুনাহে কবিরা এবং হারাম কাজ করেছেন। ব্যাপারটি কতোটা ভয়াবহ চিন্তা করেছেন?! শুধু তাই নয়, তেমনিভাবে চাঁদের সাথে সম্পর্কিত কোন তারিখের কোন ফজিলত মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া পৃথিবীর সব মুসলমানরাই বঞ্চিত ছিলেন বলে ধরে নিতে হয়! তার মানে আপনার মিলাদুন্নবী (দরুদ) হয়নি! আপনার ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম হয়নি! আপনার শবে মি'রাজ হয়নি! আপনার ঈদুল আযহা হয়নি! হায়, হায়... আপনার কি খুব বেশি আফসোস হচ্ছে- ভাই?
আরে ভাই, অাফসোস করার কোনই দরকারই নেই। কারণ, তাদের মত মানলে এই উম্মতের কারোরই রোযা, ঈদ এবং চাঁদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য কোন ইবাদাতই হয়নি। কোন আউলিয়া, কোন ইমাম, কোন তাবয়ে তাবেঈন, কোন তাবেঈন, এমনকি অনেক সাহাবী (রিদ্বওয়ানুল্লাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন)- কারোরই রোযা ও ঈদ হয়নি! যা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। চিন্তা-সাম্রাজ্যবাদী সৌদিয়া এই বিষয়টি বিশ্ব মুসলিমের 'মরা ঘোড়া' ওআইসির কাঁধেও সওয়ার করেছিল। সৌদি সমর্থিত 'রাবেতায়ে আলমে ইসলামী'র ওলামা কাউন্সিলেও তুলেছিল। সৌদিয়ার খরচেই দল-মত নির্বিশেষে মুসলিম বিশ্বের বাঘা বাঘা উলামারা এতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছাড়াই তাদের কনফারেন্স সমাপ্ত হয়েছিল। তার মানে তারাও বোঝাটি ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন। এর পর সৌদির ও সৌদি মদদপুষ্ট প্রস্তাবকরা চুপসে যায়। কারণ, এতে সৌদি উলামারাও একমত না। এর আড়ালে তাদের উদ্দেশ্যটা হলো- চিন্তা-সাম্রাজ্যবাদকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। আর সৌদির চিন্তা-সাম্রাজ্যবাদ বুঝেন তো? সেটা হলো- ওহাবীবাদ আর সালাফীবাদ। মানে- মাযহাব বিরোধী মতবাদ, ওলী- আউলিয়া বিরোধী মতবাদ, ইমাম-আয়িম্মা বিরোধী মতবাদ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিরোধী মতবাদ, সর্বোপরি আল্লাহ-রাসূল (দরুদ) বিরোধী এক ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ। কিন্তু কেউ কেউ এই বিষয়টি বর্তমান সরকারের মাননীয় ধর্মমন্ত্রী এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ডিসি মহোদয়েরও মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। তাঁরা বিষয়টির ব্যাপকতা বুঝে বাংলাদেশের সকল মতের উলামাদের এক টেবিলে বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেন। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা! চিল্লাচিল্লি,যাতায়াত খরচে আর ভুরিভোজনে কতগুলো টাকার শ্রাদ্ধ ছাড়া আর কিছুই হয়নি! সবখানেই আলোচনার ফলাফল দাঁড়ায়- 'একটা বড় ধরণের অশ্বডিম্ব'। সেই 'অশ্বডিম্ব'কে ভাগাভাগি করে উলামারা যার যার গন্তব্যে ফিরে গেছেন। বলুন- আলহামদু লিল্লাহ!
জেনে রাখুন- মূলতঃ 'রূইয়তে হিলাল' বা চাঁদ দেখা বিষয়টি দীনের মূল ইবাদাতের মধ্যে পড়ে না। এটি দীনের 'ওয়াসায়েল' বা অনুষঙ্গের মধ্যে পড়ে। এটি মূল ইবাদাত নয়, কিন্তু ইবাদাত শুদ্ধ হওয়ার প্রধান অনুষঙ্গগুলির একটি। এই ইস্যুটির পক্ষের এবং বিপক্ষের প্রধান দলীল হলো- একটি হাদীসে রাসূল (দরুদ)। আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেছেন-صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته فإن غم عليكم فاقدروا له ثلاثين অর্থাৎ "তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়ো। যদি তোমাদের কাছে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বলে অনুমিত হয় ( যেখানে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা না থাকে) তাহলে তোমরা শা'বানের ত্রিশ দিন পূর্ণ করো"। মজার ব্যাপার হলো- সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা পালন ও ঈদ উদযাপনকারীরাও এই হাদীসটিকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
'সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ' হলে صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته فإن غم عليكم فاقدروا له ثلاثين হাদীসে রাসূলের (দরুদ) ওপর আমল হয় না। ইসলামী শরীয়তে আমর (নির্দেশসূচক শব্দ) সাধারণ অর্থে ওয়াজিব হয়। আর বিশেষ ক্ষেত্রে 'নুদুব' বা মুস্তাহাব হিসেবেও পরিগণিত হয়। কিন্তু কোন অবস্থাতেই মুস্তাহাব থেকে নীচে নামে না। এটি উসুলে ফিকাহর একটি নীতিমালা। রোযা রাখার ক্ষেত্রে صوموا ও ছাড়ার ক্ষেত্রেও وأفطروا সাধারণভাবে প্রত্যেকের ওপরই ওয়াজিব হয়। 'উলিল আমর' (আইনি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ) চাঁদ দেখে থাকলে বা 'উলিল আমর' কোন বালিগ, আক্বিল এবং আদিল দুই মুসলমানের চাক্ষুষ সাক্ষীর প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে, সেক্ষেত্রে চাঁদ দেখাটা সাধারণ মুসলমানের জন্য জন্য সুন্নাত, মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান হয়ে যায়। কিন্তু 'উলিল আমর' এর সিদ্ধান্ত মানাটা সকলের ওপরই ওয়াজিব হয়। 'উলিল আমর' এর সিদ্ধান্ত মানার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের ওয়াজিবের ওপর আমল আদায় হয়ে যায়। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সরকারি বা বেসরকারিভাবে 'রূ'ইয়তে হিলাল কমিটি' বা 'চাঁদ দেখা কমিটি' আছে। তারা শরীয়ত প্রস্তাবিত কোয়ালিটির আদিল, আকিল ও বালিগ সাক্ষীদের চাক্ষুস সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং তা আইনি কর্তৃপক্ষ বা সরকারে সিদ্ধান্ত হিসেবে দেশব্যাপী নির্দেশনা হিসেবে ছড়িয়ে দেন। যারা 'সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ' উদযাপন করেন- তারা যেমন হাদীসে রাসূলের (দরুদ) ওপর আমল করেন না, ঠিক তেমনি এই বিষয়ে 'উলিল আমর'ও মানেন না। এমনকি সেই সম্প্রদায়ের কেউই চাঁদ দেখার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন না। তারা আন্ধা লোকের মতো নিজেদের শোহরতের জন্য অন্যের অনুসরণ করেন মাত্র। আর হাদীস অস্বীকার করে অন্যের অনুসরণ করা সম্পূর্ণই হারাম।
আপনি দেখবেন- 'সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ পালন' করার পক্ষের লোকেরা বিভিন্ন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন মাযহাববের ইমামের সিদ্ধান্তসমূহ দিয়ে থাকেন। কিতাবের উদ্ধৃতি ও সিদ্ধান্তগুলো ঠিকই আছে। কিন্তু তাদের নিয়ত বা উদ্দেশ্যটি ঠিক নেই। তাদের উদযাপনের পদ্ধতিটা ঠিক নেই। তারা যতই দলিল দিক বা হাদিসটিকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন- মূল ব্যাপারটি আসে শাহাদাতের (সাক্ষীর) বেলায়। দীনের সকল ক্ষেত্রেই সাক্ষীর বেলায় 'চাক্ষুষ সাক্ষী' অতি অবশ্যই জরুরি। 'চাক্ষুষ সাক্ষী ছাড়া ইসলামী শরীয়তে অন্য কোন সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়'। মনে রাখবেন, "শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন 'চাক্ষুষ সাক্ষী'র স্থলাভিষিক্ত হয় না"। তাই আরবে বা অন্য কোন স্থানে চাঁদ উদয় হলে তা ফ্যাক্স, টেলেক্স, টেলিগ্রাম, টেলিফোন, অডিও বা ভিডিও কল, রেডিও এবং টিভির সংবাদ, ইন্টারেন্ট বা ওয়েব ফ্রিকোয়েন্সি, এপস এবং অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করে দূরবর্তী কোন দেশে যেখানে উদয়স্থলের হুকুমত চলে না, বা 'উলিল আমর' (আইনি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ) তথা সরকার বা রুইয়তে হিলাল কমিটির কাছে দুইজন চাক্ষুস সাক্ষী স্বশরীরে এসে সাক্ষ্য দেয় না সেখানে চন্দ্রোদয়ের সংবাদ গ্রহণযোগ্য হবে না। এটাই হচ্ছে- লাস্ট এন্ড ফাইনাল কথা। মজার ব্যাপার হচ্ছে- যারা এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে বিশ্বের কোথাও চাদ দেখলে সকলের ওপরই তার হুকুম বর্তানোর ঝুটা দাবী করেন বা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করেন বা ইসলামী অাইনজ্ঞ ও ফিকাহবিদদের উদ্ধৃতিগুলো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন- তারা জানেনই না যে, খোদ মধ্যপ্রাচ্যেই সব দেশে একই দিনে রোযা পালন এবং ঈদ উদযাপন করা হয় না! তাহলে তারা কিসের ভিত্তিতে উম্মতের মাঝে ফিতনা করছেন? সবচেয়ে বড়ো কথা- রমজানের রোযা পালন এবং ঈদ উদযাপনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামে কোন ধরণের ফিরকাবাজিও নেই, ইখতিলাফও নেই। এই 'ইখতিলাফহীন' একটি বিষয়কে যারা ইখতিলাফের ডোরে বেঁধে ফিতনা ছড়াচ্ছেন- তারা ভালো কাজটি করছেন না। ইত্তিহাদে উম্মাহর স্বার্থে তাদেরকে চিহৃিত করুন এবং বয়কট করুন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার- মুহতারাম Mohammad Ali দাদা! যাঁর অনুরোধে আমি এই লেখাটি লেখার সৌভাগ্য সৌভাগ্য অর্জন করলাম।
বি.দ্র: ফিতনা নির্মূলে এবং মানুষকে আসল সত্যটি জানানোর লক্ষে সওয়াবের নিয়তে লেখাটি বেশি বেশি শেয়ার করুন। আর কপি করে অবিকৃতভাবে লেখাটি সর্বত্র ছড়িয়ে দিন।
তারিখ: ০৫ জুন, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এস এম ইসমাঈল বলেছেন: সারা বিশ্বে একই দিনে সর্বত্র ঈদ উদযাপন ঃ সম্ভাবনা ও বাস্তবতা:
সম্প্রতি আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষতঃ চাঁদপুর, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম এর বিস্তীর্ণ এলাকায় সউদী আরবের সাথে মিল রেখে রমজানের ঈদ ও কুরবানীর ঈদ পালনের এক অভিনব ফ্যাশনের হিড়িক পড়ে গেছে। তাও আবার ইসলামের নামে। বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ধধুঁয়া তুলে একটা সর্বজনস্বীকৃত বিষয় নিয়ে নতুন করে অনৈক্য ও বিভেদ ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। এর পিছনে অমুসলিম শিবিরের সুদুর প্রসারী চক্রান্ত ও যড়যন্ত্রথাকাটাও বিচিত্র নয়।
মূল আলোচনা শুরু করার আগে কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে করছি -
১। মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে বলেছেন, “ হে ঈমানদার বান্দাগন! রাসুলুল্লাহ (দঃ) তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহন কর এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।” আল কুরআন
২। বিদায় হজ্বের দিনে মহান আল্লাহ্ পাক নুর নবীজীকে এ মর্মে সুখবর দিয়ে আয়াত নাযিল করেছেন যে, “আজ তিনি ইসলাম ধর্মকে সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন এবং আমাদের জন্য তাঁর নিয়ামতসমুহকে পরিপর্ণ করে দিয়েছেন এবং ইসলাম ধর্মকে আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় ধর্ম হিসেবে মনোনীত করেছেন”।
৩। কোন দেশ বা ব্যক্তি ইসলামের জন্য দলীল হতে পারে না। বরং এ ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণিত বিধিবিধান তথা শরীয়তের আইন-ই পালনীয় হবে। যে বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-তে কোন উল্লেখ নাই কিংবা সম্মানিত সাহাবীদের দ্বারা কৃত কোন স্বীকৃত আমলও নাই, সে রকম কোন বিষয় অর্থাৎ নতুন কোন বিধিবিধান প্রচলনের ক্ষেত্রে কখনও কোন প্রতিষ্ঠিত শরয়ী বিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না।
৪। যে কোন ব্যক্তিকে তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন অর্থাৎ তাঁর নিজ দেশের প্রচলিত আইন ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। শুধুমাত্র প্রবাসীগন এর আওতাধীন নন। তাঁদেরকে তিনি বর্তমানে যে দেশে কার্যোপলক্ষে বসবাস করে আসছেন, সে দেশের প্রচলিত বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। এর অন্যথা করা চলবেনা।
৫। মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে আরও বলেছেন, “হে ঈমানদারগন ! তোমরা আল্লাহ্ পাক, তাঁর রাসুল ও তোমদের জন্য যারা নেতা নির্বাচিত হয়েছে তাদের অনুসরণ কর”। তাই মহানবী যা কিছু করেছেন ও যা কিছু করার অনুমতি দিয়েছেন তা-ই করতে হবে এবং দেশের প্রচলিত ইসলামী সরকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাই মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুলের (দঃ) নির্দেশের বাইরে গিয়ে কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজেদের মর্জি মাফিক কোন কাজ করা যাবেনা। তা আপতঃদৃষ্টিতে যত ভাল কাজই হোক না কেন। কারন অনেক সময় শয়তান মানুষকে নেক কাজের সুরতে এসে ধোঁকা দিয়ে থাকে।
৬। মহান আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হাকীমে আরেক স্থানে বলেছেন, “নিশ্চয়ই তিনি সকল বিষয়ে অতিশয় ক্ষমতাবান। তিনি রাত্রকালীন অংশকে প্রবিষ্ট করান দিনের মধ্যে আর দিবকালীন অংশকে প্রবিষ্ট করান রাতের মধ্যে”। সুরা আল ইমরান- এখানে ঋতু পরিবর্তনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে তিনি আরও বলেন,“তিনি রাত্র দ্বারা দিবসকে আছন্ন করেছেন এরূপে যে, সেই রাত্রি দিবসের প্রতি দ্রুত আসিয়া পৌঁছে। সুর্য,চন্দ্র ও তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন এরূপে যে, সব কিছুই তাঁর আদেশের প্রতি অনুগত। ........... প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্তায়ালা সীমা অতিক্রমকারীদেরকে ভালবাসেন না।
আর তোমরা ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে না। তা সংষ্কার/ মীমাংসার পর। আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ভয়-ভীতি ও আশা-ভরসা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল বান্দাদের অতি নিকটবর্তী”।
“হে ঈমানদার বান্দাগন! তোমরা নিজেদের কন্ঠস্বরকে নবীর কন্ঠস্বরের চেয়ে বেশী উঁচু করবেনা। যদি তোমরা তা কর, তাহলে তোমাদের নেক আমলসমুহ এমনভাবে বরবাদ হয়ে যাবে যে, তা তোমরা টেরও পাবেনা”। সুরা হুজুরাত
অর্থাৎ কোন কথা ও কাজে নবীজীর অগ্রবর্তী হওয়া চলবেনা। কারন, তাঁর নির্দেশিত পথেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, মঙ্গল ও সাফল্য।
৭। আল্লাহতায়ালার অপরিসীম সৃষ্টি বৈচিত্র, অভিনবত্ব, মহাবিজ্ঞানময় সৃজন কুশলতা,বিশ্ব চরাচর সৃষ্টির পিছনে নিহিত তাঁর অপার মহিমা তথা সুমহান লক্ষ্য, সর্বোপরি, মানব কল্যাণের জন্য তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকূলকে নিয়েজিত করার বিষয়টাকে সব সময় মনে রাখতে হবে। তিনি ইচ্ছা করলেই পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে দিন ও রাত করতে পারতেন। সব মানুষকে সর্ববিষয়ে সমান যোগ্যতা/সপদ/মেধা সপন্ন করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু মহান স্রষ্টা তা করেননি। কারন এর পিছনে তাঁর সুমহান সৃষ্টিকৌশল, রুচিজ্ঞান, রুচিবৈচিত্র, ইচ্ছার বহুমুখীতা, অভিনবত্ব সৃষ্টির গোপন প্রেরণা ও বাসনা, মনব প্রেম ইত্যাদি ক্রিয়াশীল ছিল। কারন, আল্লাহ্ পাক এটাই চান যে, তার জমীনের সবর্ত্র যেন সব সময় তাঁর সেজদা ও জিকির চালু থাকে।
৮। মুসলিম বিশ্বের সব দেশে একই দিনে ঈদ উদযাপনের ব্যাপারে ক্ষীণতম সম্ভাবনা থাকলেও তিনি তা তাঁর উম্মতদের জন্য উম্মুক্ত করে দিতেন। কারন তাঁর প্রবর্তিত ধমের্র মল সুরইতো হচ্ছে বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবাদ। এছাড়া তিনি কখনো বলেননি, “যে তোমরা বিশ্ব মুসলিমগন একই দিনে সম্মিলিতভাবে ঈদ-কুরবানী পালন করবে। এটা তোমাদের জন্য উত্তম”। কারন তিনি খুব ভাল করেই জানতেন যে, এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। এটা সাধারণ যুক্তি বিরোধী ও আল্লাহ্’র বিধান এবং ইচ্ছার পরিপন্থী।
৯। এ বিষয়ে বাধ সেধেছে খোদ আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। যা পৃথিবীব্যাপী সঠিক সময় নির্নয়ের মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ও সুস্বীকৃত। এটি আসলে ভূপৃষ্টের উপর একটা কল্পিত রেখা, যার দ্বারা বিভিন্ন দেশের সময়ের তারতম্য সঠিকভাবে নির্ণিত হয়ে থাকে। এটাকে বলে গ্রীনউইচ মান সময়। যা সকল দেশই নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছে।
১০। মহানবী যা কিছু করেছেন, তা’র সবই মানব কল্যাণের জন্যই করেছেন এবং আল্লাহ্’র নির্দেশ মোতাবিকই করেছেন। ভবিষ্যতের অনেক অনাগত ঘটনাবলীর ব্যাপারেও তিনি সম্মানিত সাহাবাদের নিকট ভবিষ্যতবানীও করেছেন। যেমন- পারস্য বিজয়, মক্কা বিজয়, কিয়ামতের আলামত সমুহ, ইত্যাদি। যদি বর্তমানকালের অভিনব উপায়ে ঈদ উদযাপনের ব্যপারে তাঁর কিছু জানা থাকতো তা তিনি অবশ্যই তাঁর প্রিয় সাহাবীদের অবগত করতেন।
১১। সীহাহ ছিত্তার হাদীস গ্রন্থসমুহের মধ্যে, বা ফিকাহের গ্রন্থাদিতে, চারি খলীফার আমলের কোন ঘটনার নজীর কিংবা চারি মাজহাবের ইমামগণের কোন গ্রন্থে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। তাছাড়া নামাজ,রোজা, হজ্জ, যাকাত এ সব বিষয়ে নতুন কোন বিধান চালু করা যাবে না। কারন এটি হলো ইজতিহাদ ফিদ্দিন। তাই এটা নিষিদ্ধ।
১২। এরকম করা হলে, তা হবে যুক্তিবিরোধী। কারন আপনি নামাজ পড়বেন বাংলাদেশের স্থানীয় সময়ে, সেহেরী-ইফতার করবেন বাংলাদেশের স্থানীয় সময়ে আর ঈদ পালন করবেন সউদী আরবের সময়ে। এটা কী করে সম্ভব? এতো একরকম পাগলামী ও বাতিকগ্রস্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর একটা কথা জানিয়ে দিচ্ছি –, সউদী আরব কিন্তু ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশ নয়। এটা রাজতান্ত্রিক দেশ। রাজার হুকুমেই চলে সে দেশের সব কিছু। সেখানে রাজপরিবারে বিচারের জন্য প্রযোজ্য এক রকম আইন আর অন্যান্যদের জন্য ভিন্ন আইন। আর সউদী আরব নামটাও কিন্তু তাদেরই দেয়া। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম বিশ্বে এটা আরব ভূখন্ড - তথা জাজিরাতুল আরব নামেই সর্বত্র পরিচিত ছিল।এরা শুধু মাত্র মুসলমানদের পবিত্র স্থানদ্বয়ের দেখাশুনাকারী ও রক্ষক মাত্র। এ ছাড়া তাদের আর কোন পরিচিতি নাই।তদুপরি বিশ্বের সব দেশের বিজ্ঞ আলেমেরা ইসলামের বিভিন্ন ইস্যুতে একমত নন।অঢেল পেট্রো ডলারের জোরে অনেক দেশের আলেমদের মাথা এরা কিনে নিয়েছে। ইসলামী শরীয়তের আইনকে অবজ্ঞা করে এরা নজদী/ওহাবীদের কথা মুতাবিক কাজ করছে। এই সব মৌলোভী, দুনিয়াদার আলেমদের সম্পর্কে আল কুরআনে বহু আগেই সতর্ক বাণী এসেছে -
মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, তারা আল্লাহ্’র বানীকে অতি সামান্য জিনিষের বিনিময়ে বিক্রি করে
এবার শুনুন বিজ্ঞানের কথা- বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগে এমন অভিনব প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে যে, যে কোন সময়ে, যে কোন স্থান থেকে নির্ভুলভাবে ভূপৃষ্টের যে কোন স্থানে চন্দ্রোদয়ের সঠিক তথ্য ও চিত্র পাওয়া অতি সহজ। তাই চাঁদ দেখা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই। সরল বিশ্বাসে নবীজীর কথা ও কাজের উপর আমল করা অপরিহার্য। আর নবীজীর ভাষ্যমতে, “শেষ যুগে তাঁর সুন্নতকে জীবিতকারী ব্যক্তি এক শত শহীদের সমান বিশেষ সম্মান ও সওয়াবের ভাগীদার হবে।
আল্লাহ্ই তৌফিক দাতা।।