![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের মানবতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম সেই ৫ বছর বয়সে যখন ১জন স্বল্প পরিচিত লোক অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন গুলশান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল পর্যন্ত শুধু আমাকে বাঁচানোর জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে । আবারো কষাঘাত করল হৃদয় মন্দিরে মানবতা যখন আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক জন অপরিচিত লোক কক্সবাজার-হিমছড়ির নির্জন রাস্তায়, রাত ১ টায় বাইক দুর্ঘটনায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকা এই আমায় ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মাথার রক্ত প্রবাহ বন্ধ করার জন্য আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলেন আমাকে বাঁচিয়ে রাখার। দুটি দুর্ঘটনাই আমার মা আর বন্ধুর মাধ্যমে পরে জেনে ছিলাম তাই তাঁদের মুখটি পর্যন্ত দেখি নেই। কিন্তু গত ৫/১২/১৩ তে নিজের চোখে মানবতার অনেক কিছুই দেখেছি অনেক কিছুই শিখেছি আর সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরলাম আজ।
আমার গত ৫-৬ বছর যাবত ১ টা বাজে অভ্যাস হয়েছে যে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা আর মাঝে মধ্যে লাল লিকার এর চা খেতে বেড় হওয়া । সে দিন ও এমন ভাবে রাত ২ টায় বেড় হয়েছিলাম। আমাদের বাসা প্রধান সড়কের পাশেই তাই চা টা সহজলভ্য এই গভীর রাতেও। তো চা খেয়ে ফিরছিলাম রাস্তা পার হব, এমন সময় উলটো দিক থেকে ১ টা পিক আপ ভ্যান বলা নেই কওয়া নেই ধাক্কা মেরে বসে এবং ওই টা তে বোঝাই কৃত লোহার এঙ্গেল আমার ডান হাত এর কনুইর ভিতর প্রায় ইঞ্চি ছয়েক গেঁথে যায়। তাৎক্ষনিক আমি মাটি তে লুটিয়ে পড়ি আর প্রায় একটু দূরে থাকা একজন ভ্যান চালক+নৈশ প্রহরী দৌড়ে আমার কাছে আসেন এবং আমায় তুলে ধরেন। আমি নিজেই সেই রড টি টেনে বের করি। লোকটি তাৎক্ষনিক তার প্রায় নতুন গামছা দিয়ে শক্ত করে বেধে দেন কিন্তু ততোক্ষণে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গিয়েছেল। যা হোক ওই অবস্থায় বাসায় ঢুকলাম তারপর মায়ের আহাজারি আর খালাতো ভাইয়ের ছুটাছুটি শুরু হয়ে গেছে। একে তো অবরোধ আশে পাশে সব হাসপাতাল বন্ধ। ঘণ্টা খানেক ঘুরাঘুরির পর গুলশানের শাহ্বুদ্দিন মেডিক্যাল এ গেলাম এমারজেন্সি তে যে ডাক্তার ছিলেন তিনি গামছা খুলে দেখে বললেন রগ ছিঁড়ে গেছে অন্য কথাও দেখেন। আমার দুই এক ফোটা করে পড়তে থাকা রক্তের বেগ আরও বাড়তে থাকল কিন্তু তারা রক্ত বন্ধ করার কোন উপায় নাকি নেই তাঁদের কাছে কষে হাত বাধা ছাড়া। মা বললেন তবে এ্যাম্বুলেন্স বেবস্থা করেন তারা বলল ১৫০০ টাকা জমা দিন ভাড়া বাবদ !! অবাক হলেন এ তো কেবল শুরু । বাবা তাৎক্ষনিক তার কলিগ এর গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলেন তখন তাদের ফ্লোর এ আমার রক্তের পাশে একদলা থুথু ফেলে শেষমেশ ইউনাইটেড এ গেলাম সেখানেও কর্তব্য রত চিকিৎসক অপরাগ হয়ে পঙ্গু তে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। অজ্ঞতা অশ্রু শিক্ত নয়নে বাবা গাড়ী ছুটালেন পঙ্গু তে। সেখানেও মহান দালালদের কয়েকজন এগিয়ে আসলেন মানবতা দেখাতে
একজন চিকিৎসকও আসলেন আবারো কিছুক্ষন ক্ষত স্থান টানাহ্যাঁচড়া করে বললেন সকাল ৯ টায় কাউনটার থেকে টোকেন নিয়ে তারপর ও,টি তে নিতে হবে। তখন সময় মাত্র ৫ টা। রক্ত ক্ষরণ তখনো চলছে । আমার মার আহাজারিও তুঙ্গে। আর আমার যন্ত্রণার কথা কি আর বলব। একজন দালাল বললেন কাছেই ১ টা ভাল ক্লিনিক আছে ওইখানে ভালো সেবা পাবেন। আবেগি বাবা মা রাজি হয়ে তুলে নিলেন সেই মদখোর কে যার দুর্গন্ধ আমি পাচ্ছিলাম কিন্তু দিশেহারা বাবা মা পাচ্ছিলেন না। নিয়ে যাওয়া হল মহাম্মাদপুর বাবর রোড এ কাশ্মি জেনারেল এ। হাসপাতাল কম বাড়িঘর ই মনে হচ্ছিলো বেশি। দু জন ধরাধরি করে সিঁড়ি বেয়ে ও,টি তে নিয়ে গেলো । দরজা বন্ধ করে একজন হুজুর টাইপ লোক এসে নাড়াচাড়া করলেন ক্ষত তারপর বললেন আল্লাহ কে ডাকেন ভাই খুব খারাপ অবস্থা হাত কেটে ফেলতেও হবে নাকি ঠিক নাই। বাহীরে থাকা বাবা মা কেও একই কথা বললেন আর বললেন ১লাখ টাকা জমা দিন। কিন্তু আদও তেমন কিছুই না যখন ঘণ্টা খানেক পর একজন পঙ্গুর সার্জেন আসলেন আর আমায় বললেন বাবা চিন্তা করো না শুক্রিয়া করো মাত্র উপ শিরা দুই টা ছিরেছে। আমার বাবা ছুটে গেলেন টাকার সন্ধানে ওই হুজুর টাইপ মূর্খ ম্যানেজার এর কথা মত। মূর্খ বললাম কারন যখন আবারো তিনি আমার কাছে আসলেন এবং বললেন কি করো আমি যখন বললাম অনার্স করি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে, তখন তিনি বললেন ইংরেজি গ্রামার নিয়া কেন করলা না :O যা হোক কোন রকম আমার এক বন্ধু কে কল করালাম ও টি বয় কে দিয়ে আর আমার অপারেশন শুরু হল শেষও হল আধা ঘণ্টায়। যখন কেবিন এ নিয়ে যাওয়া হল তিন ক্লোজ ক্যাম্পাস ফ্রেন্ড হাজির ১জন খিলগাঁও থেকে, একজন মগবাজার থেকে আর একজন মোঃপুর থেকে। যা হোক বন্ধু দের নাম বলব না কারন এখানেই মুল মানবতার গল্প। মোঃপুর ফ্রেন্ডর নাম মনে করেন 'X'। ওর কাছে আবদার করলাম যেহেতু তোর মামাদের এলাকায় আধিপত্য ভালো তুই বলছিলি, দেখ বাবার উপর থেকে টাকার চাপ কমাতে পারিস কিনা ? যা হোক ও বলল রিলিজ এর দিন দেখা যাবে। আমি বললাম এমন একটা সাধারণ সার্জারি তে তো বন্ধু এত টাকা লাগে না। এ ছাড়া ওষুধ সহ প্রায় সব খরচ আমরাই দিলাম। তারপরেও ৮০,০০০/= :O ?
শেষ দৃশ্য রিলিজ এর দিন বন্ধু বল্ল ৫০,০০০/= তৈরি রাখ আমি আর মামা বিকালে আসছি। এই ৪দিনে এ বুয়া/নার্স এদের মাধ্যমে যা জানলাম তা হল ৩ তলায় থাকেন ক্লিনিক এর মালিক যিনি এই ভাবে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে জুলুম করেন আর টাকা না পেলে তাদের লাঞ্ছিত করেন। তো বিকালে 'X' ও তাঁর মামা আসলো তার আগেই মা কে বললাম ৩০,০০০/= এক সাথে আর বাকি ২০,০০০/= আলাদা রাখ দেখি 'X' কি বলে বা কি করে ? যথারীতি তারা এসে ৩০,০০০/= দেখে বলল কিভাবে হবে ক্লিনিকের মালিক মানবে না (যদিও তারা তখন টাকা সম্পর্কে তখনো আলোচনা করেন নি )। যা হক বলে কয়ে তাদের পাঠানোর কিছুক্ষন পর বাবা কে ডাকা হল নীচে অফিসে। মালিক বললেন মাত্র বিশ হাজার দিয়া কি অপারেশন হয় বলেন ? :O !!! বাবা তো অবাক কারন বাবা 'X' কে তখন এটাও বলেছেন যে এই ৩০,০০০/= এখন নেও পরের দিন শকালে আরও দশ হাজার দিব কিন্তু এখানে 'X' আর মামা পুরাই ২০,০০০/= কথা চেপে গেলেন :O । (বিঃদ্রঃ কেউ X কে চিন্তে পারলে দয়া করে নাম নিবেন না , কারন এই বন্ধু টাকে ১ম বর্ষ থেকেই খুব ভালবাসতাম। হয়তবা কারো প্ররোচনায় ... ) 'X' ভুল বুঝিস না আমায়, এই কথা গুলো মুখোমুখি বলার সামর্থ্য আমার নাই। আমি জানি তুই সাহায্যই করতে চেয়েছিলি কিন্তু দুঃখ এটাই সাহস করে সত্যি টা আমাকে বললে হয়ত বাবার কাছে অন্তত তুই ছোট হইতি না। আমার বন্ধুত্ত ছোট হতো না। বাবা বলতে পারত না টাকাটাই সবার কাছে মুখ্য। সাহায্য করতে এসে তুই ছোট হয়ে গেলি। আর এই সাহায্যর কথা দশ জন কে না বললেও পারতি। তারা হয়ত আজ তোকে খারাপ ভাব্বে। কিন্তু তুই তো তোর মামাদের গুটির স্বীকার।
এইবার কিছু কথা এলাকার বাল্য বন্ধুদের বলি, মা বলতেন বন্ধু রা কখন তোকে ভালো কিছু করাবে না, ভালো কিছু ওদের কাছ থেকে পাবি না। ওদের সাথে আড্ডা দিছ না। আম্মুর হাজার বারন সত্ত্বেও তোদের কাছে ছুটে গেছি । অফিস ছুটি নিয়ে হাসপাতাল গেছি, তোদের আত্মীয় দের রক্ত দিয়েছি কিন্তু তার বিনিময় কি হল ? বাসার পাশেই বাসা একদিন আসতে পারলি না। যখন হাসপাতাল ছিলাম তোদের মাঝে ১ জন ছাড়া কেউ কল ও পর্যন্ত করলি না। আমার আম্মুই তাহলে ঠিক ছিল এখন বুঝলাম। কথা গুলো সামনে থেকে বলতে পারতাম না তাই এখানে লিখলাম। হয়ত অনেকেই জানবি না আতিক কেন কল ধরে না। যদি বলিস বেশি হয়ে যাচ্ছে তবে তাই ই ঠিক। একজন নৈশপ্রহরীর গামছায় যে মানবতা ছিল তোদের ভিতর তার ছিটা ফোঁটাও যে নেই। এখানে কম বা বেশী পরিমাপ করার কিছুই নেই। হয়তবা আমিই অযোগ্য ছিলাম বন্ধু হিসাবে। আর মানবতা বন্ধুত্বর কাছে হাত পেতে আদায় করতে নিজেরও তো লজ্জা লাগে।
©somewhere in net ltd.