এক দুষ্ট-মিষ্টি ভালোবাসা

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

অদ্রি আর ছেলেটার নামটা হয় নাই-বা বললাম। জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতে পরে একই ডিপার্টমেন্টে। অদ্রি অনেকটা বেশিই ভালোবাসে। ছেলেটাকে কারো সাথে পর্যন্ত কথাই বলতে দেয়না । ছেলেটাও বড্ড বেশিই ভালোবাসে মোবাইল ফোনটা না থাকলে মনে হয় সম্পর্কটা টিকানো যেতোনা ।
.
রাত ১ টা বেঁজে ত্রিশ মিনিট
.
ক্রিং........ক্রিং......... ক্রিং
.
-- অদ্রি আমি এখন একটু রাখি ? আমার এখন
কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
.
-- না তা লাগবে কেন ? এখন
আমিতো পুরনো হয়ে গেছি । এখন তো আর আমার
সাথে কথা বলতে ভাল লাগবে না ।
.
আমি অদ্রির কথা শুনে কিছুক্ষনেরর জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলাম । এই
মেয়েটার মাথা কি খারাপ নাকি ? কিসের ভিতর
কি কথা বলছে ।
মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই কিন্তু
তখনই অদ্রির নিষ্পাপ চেহারাটা আমার চোখের
সামনে ভেসে ওঠে । তখন কিছুতেই অদ্রির উপর রাগ
করে থাকা যায় না । ওর সব পাগলামো সব
ছেলেমানুষী সহ্য হয়ে যায় ।
.
একবার ঠিক এমনই হয়েছিল । আমাকে ওর
পাগলামোর কারনে জায়গায় জায়গায় খুব লজ্জায় পড়তে হয় । রিক্সায়
করে ওর সাথে যাচ্ছিলাম । পথের মধ্যে আমার এক
বান্ধবীর সাথে দেখা । ক্লাসমেইট সাদিয়া ।
রিক্সা থামিয়ে ওর সাথে কথা বললাম কিছুক্ষন ।
কেন বললাম !
তার একই কথা !
অদ্রি কেমন সাইকোরমত আচরন করতে লাগলো। বললো,
.
-- তুমি কেন কথা বললে ঐ মেয়ের সাথে ?আমাকে ইগনোর করে কেন কথা বললে ?
.
-- আরে ওর সাথে কথা বললাম তো কি হয়েছে ? আর তোমাকে ইগনোর করলাম কোথায় ?
.
-- তাহলে তুমি কেন কথা বললে ?
.
-- আরে আশ্চর্য ! কথা বলেছিতো কি হয়েছে ?ফ্রেন্ড তো তাইনা?
.
-- কি হয়েছে ? কি হয়েছে ?
.
অদ্রি এতো জোরে জোরে চিৎকার
করে উঠলো যে আসেপাশের মোটামুটি সবাই ই
তাকিয়ে দেখলো আমরা কি করছি । আমার
অস্বস্তির সীমা থাকলো না ।
কিন্তু অদ্রির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । ওর
চিৎকার করেই চলেছে । আমি ওকে কয়েক বার
শান্ত করার চেষ্টা করছি, এরপর
আমি রিক্সা থেকে নেমে হাঁটা দিলাম ।
.
মনে মনে বললাম এই্ সাইকো মেয়ের পাশে আর একটুও
নয় ।
এই মেয়ের সাথে আর কোন সম্পর্ক নয় ।
.
রাতে অদ্রি কয়েকবার ফোন দিলেও আমি ধরলাম
না । মোবাইল বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম ।
ওর উপর খুব রাগ লাগছিল । খুব বেশি রাগ ।
সম্পর্কের মধ্যে মান অভিমান থাকবেই । মানুষের
উপর মানুষ রাগ করতেই পারে কিন্তু সেই রাগ করার
তো একটা লজিক থাকা চাই । কিন্তু অদ্রির বেলায়
এই লজিক ফলো করে না । কি সব লজিক বিহীন
কারন নিয়ে চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে ।
মেজাজটা ঠিক রাখা কষ্টকর হয়ে যায় ।
.
রাতে ফোন বন্ধ করে শুয়েছিলাম
সকালবেলা অদ্রি এসে হাজির । চোখ মুখের
অবস্থা দেখে মনে হল সারারাত একটুও ঘুমায় নি ।
কান্নাকাটিও করেছে নিশ্চই ।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হু হু
করে কেঁদে দিল । আসলে যত রাগই হোক না কেন
এমন করে কেউ
যদি কান্না কাটি করে নিজেকে কি ধরে রাখা যায়
। কাঁদতে কাঁদতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো ।
কান্নার বেগ যেন আরো বাড়ল ।
এই মেয়ের উপর কিভাবে রাগ করে থাকি !
প্রতিবারই ও অহেতুক ভাবে এমনটা করবে আমার
মেজাজ খারাপ হবে আবার ওকে ক্ষমাও
করে দিবো ।
.
আমি অদ্রিকে বললাম,
.
-- আচ্ছা তুমি এমন কথা কেন বলছো ?
.
-- বলব না ? তাহলে তুমি কেন ফোন
রেখে দিতে চাইছো ? আমাকে আর ভাল
লাগে না তাই তো আমার
সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না । কালকেও
তুমি এমনটা করেছ ।
.
-- আরে বাবা আমি বললাম না যে আমি আজ
সারা দিন প্রজেক্ট রেডির জন্য ব্যাস্ত ছিলাম । সকাল
থেকে রাত পর্যন্ত ? এখন তুমি বল সারা দিন
খাটা খাটুনি করে কি রাত
জেগে কথা বলতে ইচ্ছা করে !!
.
-- আমি জানি না । আমি কিছু জানি না । আমার
সাথে কথা বলতে হবে । আজ সারাদিন তুমি একটুও
কথাও বল নি ।
.
-- আরে আমি তো বিজি ছিলাম । কিভাবে বলবো ?
.
-- আমি জানি না । আমি কিছু শুনতে চাই না । কিছু
শুনতে চাই না ।
.
আমি ফোনের লাইন কেটে দিলাম । এই মেয়ের
সাথে কথা বলে লাভ নাই । একবার
যা বলতে তা থেকে কিছুতেই নামানো যাবে না ।
আর আমার পক্ষে এখন কথা বলা সম্ভব না কিছুতেই ।
আমি ফোন বন্ধ করে ঘুম দিলাম । ফোন
খোলা থাকলে অদ্রি ফোন করতেই থাকবে !
.
ঘুমিয়েই পড়েছিলাম । ঘুম ভাঙ্গলো খুব সকালে ।
সকাল না বলে বলে ভোর বলাই ভাল । কারন এখনও
খুব একটা আলো ফোটে নি ।
আমি আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মোবাইল
হাতে নিলাম । এখনও বন্ধ ।
আরে রাতে না বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ।
অদ্রি কি ঘুমিয়েছে ?
মেয়েটা এমন পাগলামো করে । নিশ্চয় ঘুমায়নি ।
আমি ফোন অন করতেই মেসেজের বৃষ্টি শুরু হল যেন ।
অদ্রির মেসেজ ।
সব গুলোতে কেবল একটা লাইন লেখা
আমি তোমাকে অনেক মিস করছি !!
আমি তোমাকে অনেক মিস করছি !!
আমি তোমাকে অনেক মিস করছি !!
এই মেয়েটা আসলেই পাগল । একদম পাগল ।
আসলে কাল রাতে এতো ক্লান্ত ছিলাম কিছুতেই
কথা বলার অবস্থায় ছিলাম । মেয়েটা নিশ্চই মন
খারাপ করেছে । কান্না কাটিও নিশ্চই করেছে ।
কি করবো ?
এখন ফোন দিবো !!
.
জানি একটু সরি বললেই ও মন ভাল
হয়ে যাবে কিন্তু আরো বেশি কিছু কি করা যায়
না?
যায় !!
আমি চট করে তৈরি হয়ে নিলাম ।
এতো সকালে কেউ বের হয় নি । সকালটা একদম
নির্জন । কোথা থেকে যেন পাখির ডাক
ভেসে আসছে !!
অদ্রি কি ঘুমিয়েছে ?
কে জানে ?
দুবার ফোন বাজতেই অদ্রি ফোন রিসিভ করল ।
কিন্তু কোন কথা বলল না । এর মানে হল ও রাগ
করেছে । আমি বললাম,
.
-- রাগ করেছ?
-- হুম !
-- খুব বেশি ?
-- হুম !
-- কথা বলবা না?
-- হুম !
আমি হেসে ফেললাম ।
-- কথা বলবা ?
অদ্রি কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম
-তুমি মাঝে মাঝে এমন ছেলেমানুষি কর । আমার
দিকটাও তোমার তো দেখা উচিৎ !
-- আর তুমি আমার দিকটা দেখবা না ?
-- আরে বাবা !! থাক বাদ দাও । দেখ বাইরে কি সুন্দর
সকাল ।
-- দেখবো না ।
-- আরে ! আমি না দোষ করেছি । সকালতো আর কোন
দোষ করেনি ।
অদ্রি কোন কথা বলল না ।
-- আচ্ছা তোমার মন ভাল করে দিব? দিবো ?
-- কিভাবে ?
-- আচ্ছা শুনো , তুমি এখন তোমার
জানলা দিয়ে যদি বাইরে তাকাও তাহলে তোমার
মন ভাল হয়ে যাবে । আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি ।
-- আচ্ছা ?
-- তাকিয়ে দেখ !
ঠিক তখনই অদ্রিকে জানলায় দেখা গেল ।
আমি হাত নাড়লাম ।
-- মন ভাল হয়েছে ?
অদ্রি কোন কথা না বলে জানলা থেকে সরে গেল
দ্রুত ।
কি হল ?
রাগ কি বেশি করেছে ?
এমন তো হবার কথা না ?
.
ঠিক তার কিছু সময় পরই অদ্রিকে হলের
গেটে দেখা গেল ।
গেট থেকে বের হয়ে একদম এদিকেই
এগিয়ে আসছে ।
এগিয়ে আসছে বলতে এদিকে দৌড়ে আসছে ।
আসতে আসতে একদম কাছে যখন চলে এল আমার
মনে হল ও থামবে না । সিনেমায় যেমন
নায়িকারা দৌড়ে এসে নায়কের
বুকে ঝাপিয়ে পড়ে নিশিরও তেমন কিছু করার প্লান
।
ঠিক তাই ই করলো !!
ভাগ্য ভাল যে সকাল বেলা । মানুষ জন কেউ নাই ।
-
"I've spent a year's time to learn Your Mind
language. Just to let you know that I've not forgotten our promise.
Let me have the chance to be your voice. I Love You."
,
-----------
অন্ধকার আকাশ্
------------
-
#অভ্র

০ টি +০/-০