![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্ধকার রাজ্যের গন্তব্যহীন পথিক আমি...!!
গন্তব্যহীনভাবে রেললাইনের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছি আমি। ঠিক কতক্ষণ ধরে হাটছি জানা নেই আমার। মাঝে মাঝে জীবনের প্রতি এতোটাই বিতৃষ্ণা লাগে যে আমরা বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা হারিয়ে ফেলি। এই মুহূর্তে আমার মাঝে বেঁচে থাকার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে অবশিষ্ট নেই। সকাল সকাল আম্মুর সাথে ঝগড়া করে বাসা হতে বেড়িয়ে পড়েছি।
.
আজ প্রিয়ন্তির জন্মদিন। অনেকদিন থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম আজকের এই দিনটায় ওকে একটা সারপ্রাইজ গিফট দিবো। এরপর ওকে নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াবো আর দুজনে মিলে একসাথে সময় কাটাবো। কিন্তু সকাল বেলা আম্মুর কথা শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আম্মুর কাছে টাকা চাইতেই বললো মাসের শেষের দিক। এসময় হাতে টাকা নেই। আর হঠাৎই এতো টাকা কিভাবে দিবে। মূলতো এই নিয়েই আম্মুর সাথে মাত্রাতিরিক্ত ঝগড়া হয় আমার। রাগের মাথায় পাশ হতে ফুলদানিটা নিয়ে সজোরে ড্রেসিং টেবিলের দিকে ছুড়ে মারি। এরপর আম্মুর কোনো কথা না শুনেই বাসায় আর ফিরবোনা বলে চলে আসি।
.
প্রিয়ন্তির সাথে আজ রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা। বাসা থেকে তো রাগ করে বেড়িয়ে এলাম। কিন্তু টাকার ব্যাবস্থা তো কোনো কিছুই হলো না। মানিব্যাগ হাতরিয়ে মাত্র পাঁচশ টাকার একটি নোট আর কিছু খুঁচরো টাকা ছাড়া কিছুই পেলাম না। এই টাকা দিয়ে গিফট তো দূরে থাক। প্রিয়ন্তিকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতেও পারবো না। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো। তার সাথে সাথে আম্মুর উপর আরো বেশি রাগ হচ্ছিলো।
.
অনেকক্ষণ ধরে রেস্টুরেন্টে কোনার একটি বেন্ঞ্চে বসে আছি। সকালবেলা কিছু না খেয়ে আসার কারণে পেট চো চো করছে। কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই দরজা ঠেলে প্রিয়ন্তিকে ভেতরে আসতে দেখলাম। আজ ও খুব সেজেগুজে এসেছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে যেনো আজ একটু বেশীই সুন্দর লাগছে। ও কাছে আসতেই হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে বললাম,
.
-'হ্যাপি বার্থডে প্রিয়ন্তি।'
-'থ্যাংকু।'
-'ওয়েলকাম।'
কিছুক্ষণ দুজন ঠায় নিরবে বসে রইলাম। প্রিয়ন্তি ই নিরবতা ভেঙ্গে আহাল্লাদি কন্ঠে বলে উঠল।
-'অভ্র।'
-'হ্যাঁ। বলো।'
-'তুমি আজ আমার জন্য কি গিফট এনেছো?'
-'ইয়ে মানে প্রিয়ন্তি। আমরা তো প্রায় সময়ই শপিং এ যাই। এই তো সেদিনই গেলাম। আজ একটু প্রবলেমের কারণে তোমার জন্য কোনো গিফট আনতে পারিনি।'
ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর মুখটা কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। ওর আহাল্লাদি কন্ঠ কিছুটা চেন্ঞ্জ হয়ে রেগে বলে উঠলো।
.
-'তুমি এসব কি বলতোছো? তুমি কি আমার সাথে ফাজলামী করতোছো? আমি আমার সব ফ্রেন্ডসদের বলে রাখছি তুমি আজ আমায় স্পেশাল গিফট দিবা। আর তুমি কিনা!'
-'আমি তো বললাম ই একটু প্রবলেম হইছে। আই সোয়ার কিছুদিনের মাঝেই তোমায় আমি গিফট দিবো। তুমি যা চাইবা তাই পাবে। তাছাড়া একটা গিফট ই সবকিছু বলো? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। সেটা কি কিছুই না?'
-'রাখো তোমার ভালোবাসা। তোমার সাথে রিলেশনে যাওয়াই আমার ভুল হইছিলো। শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করলাম। একচুলি ইয়্যু নো হোয়াট? ইয়্যু ডোন্ট ডিজার্ভ মি। ডোন্ট ট্রাই টু কনটাক্ট মি এভার!'
.
কথাগুলো বলেই ফুলগুলো আমার মুখের উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলো প্রিয়ন্তি। আমি নির্বাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখতে থাকলাম। কোথা থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলামনা। সামান্য একটা ব্যাপারকে ইস্যু করে সম্পর্কটা এভাবে ভেঙ্গে ফেলবে আমি কখনও কল্পনাও করিনি। হঠাৎই কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম। ভাবনার মায়াজাল হতে বেরিয়ে এসে আমি নিজেকে রেললাইনের উপর আবিষ্কার করলাম।
.
পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ায় সেখান হতে রক্ত বের হচ্ছে। যদিও সেদিকে আমার কোনো রকমের ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি তাকিয়ে আছি কিছুটা দুরে বসে থাকা একটি ছোটো ছেলের দিকে। ছেঁড়া জীর্ণ ধরা কাপড় পড়নে ছেলেটি বসে বসে কি যেনো খাচ্ছিলো। ছেলেটি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো।
-'ভাইজান মনে হয় সকাল থেইক্কা মুখে কিছু লন নাই। আমার কাছে রুটি আছে। খাইবেন?'
.
আমি যারপনাই বিস্মিত হয়ে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লাম। ছেলেটি আমার দিকে একটি শুকনো রুটি এগিয়ে দিলো। বাসায় হলে এমন খাবার ছুয়েও দেখতাম না। কিন্তু না খেয়ে থাকার দরুণ এখন এটাই যেনো অমৃত লাগছে আমার কাছে। আমি ছেলেটিকে বললাম।
-'তোর নাম কি?'
-'মোর নাম রাজু।'
-'সুন্দর নাম তো। কি করিস তুই?'
-'মুই রাস্তায় রাস্তায় কাগজ টোকাই।'
-'আচ্ছা। তোর সাথে পরে গল্প করবো। চল সামনে থেকে ঘুরে আসি।'
-'চলেন ভাইজান।'
.
কিছুটা সামনে গিয়ে ওকে নিয়ে একটি হোটেলে ঢুকলাম। এক প্লেট বিরিয়ানি দিতে ওকে বসতে বললাম। প্রথমে না না করলেও যখন বললাম।
-'তুই না আমাকে ভাই ডাকছিস? তাহলে ভাই থেকে নিতে এতো সংকোচ কিসের?'
এরপর আর বলার মতো কিছু খুঁজে পেলোনা রাজু। ও খাচ্ছে আর আমি দেখছি। প্রিয়ন্তিকে নিয়ে কতো ভালো ভালো জায়গায় খেয়েছি। কিন্তু এই বাচ্চাটিকে খাইয়ে যে সুখ। সেটা কখনও পাইনি আমি। রাজুর মাঝে আছে নিষ্পাপ এক সরলতা। আর প্রিয়ন্তি র মাঝে ছিলো শুধুই ছলনা।
.
হঠাৎই রাজুকে অর্থেক বিরিয়ানি প্যাকেট করতে দেখায় জানতে চাইলাম।
-'কি হলো? এগুলো কি করবি?'
-'ঘরে মা আছে। তার লাই লমু।'
আমি আরো একটিবার বিস্মিত হয়ে বললাম।
-'তোর সেটা নিয়ে ভাবতে হবেনা। তুই সবটুকু খেয়ে ফেল।'
এরপর আরো দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে রাজুর ঘরে গেলাম। ঘরে যেতেই রাজুর মা কান্নারত অবস্থায় ওকে জড়িয়ে ধরে বললো।
-'কোনহানে গেছিলি বাজান? তোরে কতো জায়গায় খুঁজছি। কিন্তু খুইজ্জা পাই নাই।'
রাজু সব খুলে বলার পর একটু স্থির হয়ে আমাকে ভেতরে আসতে বললো। আমি পরে আরেকদিন আসবো কথা দিয়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লাম।
.
রিকসায় করে বাসায় যাচ্ছি। আর ভাবছি যেই মেয়ের সকল ইচ্ছাই কিছু না ভেবে পূরণ করেছি সবসময়। যার জন্য নিজের মায়ের সাথে ঝগড়া পর্যন্ত করেছি। আসলে সেই মেয়ে আমাকে কখনও ভালোই বাসেনি। রাজুর মায়ের ওই অশ্রুর মাঝে আমি খুঁজে পেয়েছি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র অকৃত্তিম ভালোবাসাটুকু। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি বুঝতে পেরেছি আমি কি হারাতে বসছিলাম। আমি আমার মাকে হারাতে বসছিলাম। আমি আজ প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি আমার মায়ের মাঝে। আমি আসছি মা। আমি আসছি।
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: উৎসাহিত হলাম। ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭
স্পর্শিয়া বলেছেন: যে মেয়ের কাছে গিফট বড় তাকে ভালোবাসার দরকার নেই।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: জ্বি সেটাই। তার থেকে দূরে থাকাই উত্তম।
৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯
নীল কপোট্রন বলেছেন: দুদিনের ভালোবাসার জন্য বাবা মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা মোটেও কাম্য নয়।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: জ্বি ঠিক বলেছেন। কিন্তু এসব ঠুনকো ভালোবাসার মোহে পড়ে অনেকেই এমনটা অহরহ করে যাচ্ছে।
৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০১
নীল কপোট্রন বলেছেন: তা ঠিক। সবাই গল্পের মতো সত্যটা উপলব্ধি করলে ভালো হতো।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৬
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: জ্বি। সময় করে পাঠ ও মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
Shahjahan Ali বলেছেন: কমন টপিক। এই টপিকে লেখা অনেক গল্প পড়েছি। এমনকি আমিও লিখেছি। তবুও ভাল বলব। সাবলীল বর্ণনা।