নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সকল অপূর্ণতায় পূর্ণ আমি। সব অসাধারন মানুষের ভীরে আমি অতি সাধারন এক মানুষ। পেশায় ছাত্র, নেশায় মুভিখোর আর বইপড়ুয়া। নিজেকে খুঁজে পাবার জন্য হাঁটতে থাকি। স্বপ্নের সাথে হাঁটি, স্বপ্নের জন্য হাঁটি। আর মাঝে মাঝে হাবিজাবি লেখি আমার ভার্চুয়াল খাতায়।

অভ্রনীল হৃদয়

অন্ধকার রাজ্যের গন্তব্যহীন পথিক আমি...!!

অভ্রনীল হৃদয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ হারানোর বেদনা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২১

মাথার উপর সাই সাই করে ক্রমাগত ঘুরে যাচ্ছে ফ্যান। উঠে দাড়িয়ে ফ্যান এর সুইচটা অফ করে দিলো নীরব। ড্রয়ার থেকে দড়িটা নিয়ে সিলিং ফ্যান এ ঢিল মারলো সে।
.
নীরব এবার এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। ক্লাস এর মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরব ও একজন। যেকোনো পরীক্ষায় সবার আগে যার নাম উঠে আসে। সে আর কেউ নয়; স্বয়ং নীরব। নীরবকে নিয়ে তার বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আত্মীয়স্বজন সবারই অনেক স্বপ্ন।
.
স্কুল ক্যাম্পাসে বন্ধুরা সহ বসে আছে নীরব। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের কাঙ্খিত ফলাফল প্রকাশিত হবে। আর সবার মতো নীরব ও দুশ্চিন্তায় বিচলিত হয়ে পড়েছে। পাশ হতে নীরব এর বন্ধু সাকিব বলে উঠে।
- আরে মাম্মা। এত্তো টেনশন কিসের? তুই যে এবারোও সবার মুখ উজ্জ্বল করবি। তা আমরা সবাই জানি।
- হা হা। তুই ও করবি। শুধু দেখে যা।
.
একটু পরেই তাদের ফলাফল প্রকাশিত হলো। প্রায় সবার মুখেই খুশীর আভা ফুঁটে উঠেছে। অনেকেই আনন্দ উল্লাশে ফেটে পড়েছে।
.
সবার অগোচরে নীরব মলিন মুখে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় তা কেউ খেয়াল করলো না। নীরবের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তার চেয়েও খারাপ শিক্ষার্থীরা এ পেয়েছে। আর সে কিনা ক্লাস এর টপ স্টুডেন্ট হয়েও 4.82 পেয়েছে। লজ্জ্বায় মিশে যাচ্ছে নীরব। কোন মুখে সে তার বাবা মা এর সামনে গিয়ে দাড়াবে।
.
বাসায় গিয়েই কাউকে কিছু না বলে নীরব তার ঘরে চুপটি করে বসে রইল। বাবা মা এর স্বপ্ন পূরণ করতে না পারার হতাশা যেন তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সন্ধ্যায় নীরবের বাবা রফিক সাহেব নীরবকে তার ঘরে ডেকে পাঠালেন। নীরবকে যা নয় তাই বলে গেলেন। নীরব শুধুই চুপ করে রইল। বলার মতো কিছু যে সে অবশিষ্ট রাখেনি। শেষমেশ নীরব এর মা এসে রফিক সাহেবকে থামান।
.
নীরব তার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আজকে এই ঘরটাকে আর অন্যান্য দিনের মতো সুন্দর লাগছে না। মনে হচ্ছে ভুল করে যেনো সে মৃত্যুপুরীতে এসে পড়েছে। জীবনটা আজ অর্থহীন মনে হচ্ছে নীরবের কাছে। ঠিকই তো বলেছে তার বাবা। সে তার বাবা মা এর অপদার্থ এক ছেলে। ওর মতো ছেলের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
.
রফিক সাহেব এশার নামাজ পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করেন। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছেন নীরবকে আজ অতিরিক্তই বলে ফেলেছেন তিনি। বিফলতাই তো সফলতার প্রথম সোপান। তাছাড়া নীরব যে খারাপ শিক্ষার্থী এমনটাও তো নয়। একটা ছোট ভুল নাহয় হয়েই গিয়েছে। এখনি বাসায় গিয়ে নীরবকে কাছে টেনে সব বুঝিয়ে বলবেন তিনি। নীরব বোধহয় অনেক রাগ করে আছে তার উপর। তবে তিনি জানেন তার ছেলে তার উপর বেশীক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবেনা। একটু বুঝিয়ে বললেই সব রাগ নিমিষেই পানি হয়ে যাবে।
.
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে তিনি তার বাসায় এসে পড়েছেন টেরই পাননি। কিন্তু তার বাসার সামনে এতো মানুষের ভিড় কেনো। অজানা এক আশঙ্কায় ভিড় ঠেলে ঘরে ঢুকেই নিস্তব্ধ হয়ে যান তিনি। সিলিং ফ্যান এর সাথে তার একমাত্র ছেলে নীরব এর লাশ ঝুলছে। নীরব এর মা নীরব এর লাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে তুমিই আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছো। তোমাকে আমি কখনও ক্ষমা করবোনা।
.
রফিক সাহেব কিছুই বলতে পারেননা। দু ফোঁটা অশ্রু তার গাল বেয়ে পড়ে যায়। বুকটা হাহাকার করে ওঠে হারানোর বেদনায়। চিৎকার করে বলতে চেয়েও বলতে পারেননা তিনি।
বাবা আমার ফিরে আয়। আর কখনও বকবোনা তোকে। শুধু আরেকটিবার ফিরে আয়। আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এইরকম অনেক ঘটনাই ঘটে। বাবা-মার উচিত আরো ব্যালেন্সড ব্যবহার করা। তাদের মনোজগতের ভেতরের পাঠ টুকু পড়ার চেষ্টা করা।

আর প্রকৃত মেধাবীরা যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে প্রশ্ন ফাসের অত্যাচারে- খুবই দু:খজনক!

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: জ্বি ঠিক বলেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে আমরা এখনো যদি রুখে দাড়াতে না পারি। তাহলে অচিরেই অনেক মেধাবী মুখ হারিয়ে ফেলবো আমরা। পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: বাস্তবতার আলোকে লেখাটা ভাল লেগেছে।

সব বাবা মা বাচ্চাদের ঘোড়ার মত রেসে নামিয়ে দেয়, যা কোনভাবেই ঠিক না।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৫

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: ব্লগে আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল! কৃতজ্ঞতা জানবেন সময় করে পড়ার জন্য, ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত হলাম।

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪১

উর্বি বলেছেন: নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল কান্নার চোটে :(

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: বাস্তবতা এমনি আপু। আমরা চাইলেই এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটা রোধ করতে পারি। কিন্তু সবাই সেটা বোঝার চেষ্টা করেনা। আর যখন বুঝে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। :( পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সব সময়!

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

ডার্ক ম্যান বলেছেন: এগুলো আগে বেশি ঘটতো। এখন কমে এসেছে।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৭

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: জ্বি ঠিক বলেছেন। তবে এখনো অনেক মেধাবী মুখ অচিরেই ঝরে পড়ে যায়। যা মোটেও কাম্য নয়। :( পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৩

নীল কপোট্রন বলেছেন: অল্প লেখার মাঝে বর্তমান সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। ভালো লাগলো।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১২

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: সময় করে মন্তব্য করেছেন এ জন্য কৃতজ্ঞতা! :)

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: নির্মম জীবনের খেলা.............. খারাপা লাগলো।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: বাস্তবতা বড়ই কঠিন। :( পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.