নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লোকটা হঠাৎ কোথা থেকে জানি দৌড়ে এসে কেবিনে ঢুকলো!
ঢুকেই সাথে সাথে লক করে দিলো ডোর।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি।
অবাক করা চেহারা।একটু ডাকাত ডাকাত লাগছে দেখতে।অদ্ভূত তো!
লোকটা এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিচ্ছিলো।
এবার আস্তে আস্তে চোখ খুললো।
আমার দিকে তাকালো একবার।
তারপর সামনের সিটে বসে পড়লো।ভাবখানা এমন যেনো এটা তার ব্যক্তিগত কেবিন।
বাইরে ঠান্ডা খুব।
হাতমোজা লাগিয়ে বসে বসে আমি বই পড়ছিলাম।
স্যার আর্থার কোনান এর দ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট পড়ছিলাম।
শার্লক হোমস এর বই।রহস্য বই আমার পছন্দ।
বই থেকে মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকাচ্ছিলাম।
উহু!
আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেনা!
এবার আমিই নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলাম "হ্যালো.....কথা বলা যাবে প্লিজ?"
লোকটা চোখ বাঁকা করে তাকালো।ভাবখানা এমন যে হামসে বাড়া কৌণ হ্যায়!
আবার নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলাম "টিকেট আছে?"
লোকটা কর্কশ ভাবে গলা কাশি দিলো....
"না নাই" সংক্ষিপ্ত জবাব পেলাম।
"তো আপনি যদি দয়া করে বলতেন কেনো হুট করে কেবিনে ঢুকে পড়লেন?কিছু মনে না করলে বলি কি গত কিছুদিন যাবৎ ট্রেনে যে দূর্ঘটনাগুলো ঘটলো সেটা নিশ্চয় জানেন?" প্রশ্ন করলাম।
লোকটা একটু চোখ পাকিয়ে জবাব দিলো "মনে হচ্ছে যে আমি খুনি?"
একটু থতমত খেয়ে গেলাম।জবাব দিলাম একটু অন্যভাবে-"না আসলে তা না।তবে ভয় বলতে কিছু তো একটা থাকে।"
-আমার টিকেট নাই বলেই তো উঠলাম এই বগিতে।আপনি চাইলে উঠে যাবো।
-আচ্ছা থাক।বসেন।একা একা সময় কাটবেনা।কি নাম আপনার?
-আশরাফ খান।আপনার নাম?
-অভ্রনীল.....
-সুন্দর নাম।কি করেন?জবে আছেন নাকি পড়াশোনায়?
-নাহ....বেকার।
-ওহ....!
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম।
তারপর হঠাত খেয়াল করলাম আশরাফ খানের গালে একটা কাটা দাগ।
আসলেই ডাকাত কিনা কে জানে!
আশরাফ খান আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন কাশি দিয়ে।
তাকালাম উনার দিকে।আমি তাকানোর পর বললেন
-একটু আগে গত কিছুদিন আগের খুনের ব্যাপার নিয়ে বলছিলেন।
-জ্বী...
-পুলিশ তো কিছুই ধরতে পারেনি।
-আমি তেমন বেশি কিছু জানিনা।
-ওহ।একটা গল্প শোনাই।খুনীকে নিয়েই।
পিলে চমকে উঠলো!লোকটা কি বলতে চাচ্ছে!ভয় ভয় করছে।
তারপরেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম।
বললাম "হ্যাঁ বলুন"
আশরাফ খান শুরু করলেন-
ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন।আর প্রচন্ড রকম খুনে মেজাজী।ছোটবেলা থেকেই এমন ছিলো।ছেলেটাকে এক লোক রাস্তায় কুড়িয়ে পায়।তারপর সে নিজের বাসায় নিয়ে আসে পালক হিসেবে।তার বউ গত হয়েছিলো অনেক আগেই।তাই ঘর টা খালি খালি লাগছিলো।
আরেকটা মানুষ যুক্ত হলে তেমন অভাব হবেনা।
যাহোক,কয়েক বছর যাবার পর হঠাত করেই লোকটা ছেলেটার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করলো। কারণে-অকারণে বকা দেয়।ছেলেটাও মেনে নিচ্ছিলো।হাজার হোক তাকে অন্ন যোগানদাতা।
তবে কত আর মানা যায়।
একদিন সকালে প্রতিবেশীরা ওই লোকটার লাশ পায়।ঘরের সামনে পড়ে থাকা অবস্থায়।
ইচ্ছেমতো কোপানো হয়েছিলো লোকটাকে।কেউ হিসেব করতে পারেনি ঠিক কয় টুকরো করা হয়েছে।তবে খুন যে প্রচন্ড আক্রোশে করা হয়েছিলো তা বোঝাই যাচ্ছে।
ছেলেটাকে খোঁজার জন্য পুলিশ হন্যে হয়ে পিছু লাগলো।
এতবড় মার্ডার করে কোথায় যাবে আর!
কিন্তু আফসোস ছেলেটাকে আর পাওয়া গেলোনা।
তবে ওই এলাকার বিভিন্ন যায়গায় তখন থেকে মাঝে মাঝে খুন খারাপী হয়ে থাকে।
তবে তেমন আক্রোশে না।
ঠান্ডা মাথায় খুন।তাও আবার কোনো প্রমাণ ছাড়া।
প্রতিটা খুনই আলাদা রকমের।
খুব হালকা আঘাতে খুন করা হচ্ছে।
আর গত কয়েক মাসে তো ট্রেনে ৬ টা মার্ডার হয়ে গেলো।
সবগুলো আবার কেবিনে!
শুনেছেন নিশ্চয়?
হঠাত প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলাম।
"জ্বী....জ্বী শুনেছি!"
উনি ঠোট বাঁকা করে হেসে উত্তর দিলেন "ভয় হচ্ছেনা আপনার?"
-ভয় হবে কেনো?
-আপনিও তো কেবিনে।
এবার সরাসরি উনার চোখের দিকে তাকালাম।
লোকটা কি ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে!
মনে হচ্ছে।
আশরাফ খান আবার জিজ্ঞেস করলেন "ভয় করছে?"
"কই!না তো!" নিরলস জবাব দিলাম।মাথা ঠান্ডা রেখে প্রশ্ন করলাম-"তো...আপনি এতোসব জানেন কি করে?"
উনি আবারো ঠোট বাঁকা করে হাসলেন।কেমন জানি শয়তানী হাসি।
-জানি
-কিভাবে?
-আপনি এতো প্রশ্ন করছেন কেনো?
-খুনীর ছোটবেলার কাহিনীও জানেন তো তাই বললাম 'এতোকিছু' জানেন কিভাবে?
আশরাফ খান কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন "সময় হলে জানবেন
"
-মানে?
-মানে সময় হলে জানবেন।
-এখন বললে?
আশরাফ খান কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন।
তারপর উনার ব্যাগের ভেতর কি জানি খুঁজতে শুরু করে দিলেন।
হাতড়াচ্ছেন কিন্তু পাচ্ছেন না মনে হচ্ছে।
একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম আমি।
জিজ্ঞেস করলাম "নামবেন কোন স্টেশন?"
আশরাফ খান জবাব দিলেন না।
আশ্চর্য শব্দটা অস্ফূটে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো।
আবার জিজ্ঞেস করলাম "নামবেন কোন স্টেশন?"
-পরবর্তী এবং শেষ স্টেশন রাজশাহী না?
-হ্যাঁ
-তাহলে বোকার মতো জিজ্ঞেস করছেন কেনো বারবার!
-ওহ তাইতো!দুঃখিত!আমি কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছিনা তো।দুঃখিত।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
চুপচাপ বসে আছি।
আশরাফ খান যা খুঁজছিলেন তা বোদহয় পেয়ে গেছেন তাই আর ব্যাগ ঘাটতে দেখলাম না।তবে যা খুঁজছিলেন তা ব্যাগ থেকে বের করেননি।
উনি মাথা নিচে করে তাকিয়ে আছেন।
তাকিয়ে থাকলাম আমি।
ট্রেনের ঝিকঝিক ছাড়া অন্য কিছু শোনা যাচ্ছেনা।
লোকটা কি ভাবছে কে জানে!
অনেক কিছু চিন্তা করছে!
"তার চিন্তা গুলো যদি বুঝতে পারতাম" মনে মনে ভাবলাম।
যাহোক....আবারো বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।
আর কিছুক্ষণ পরেই রাজশাহী স্টেশন।
আশরাফ খান মুখ তুললেন।
বললেন "খুনগুলো করার সময় সামান্য ক্লুও রেখে যাচ্ছেনা খুনী।অদ্ভূত না?"
-"হ্যাঁ অদ্ভূত এবং বিচক্ষণ" জবাব দিলাম।
-"কেউ কোনোদিন প্রমাণও করতে পারবেনা।ভীড়ের মধ্যে যে হারিয়ে যাবো এখন আবার" উনি আমার দিকে তাকিয়ে কথা টা বললেন।
আমি চমকে উঠলাম!
-"আপনি খুন করেছেন?" প্রশ্ন করলাম।
-"ভেবে নিন যা ভাবার" নিরন্তর জবাব।
একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।
উনি ব্যাগ গোছানো শুরু করলেন।
সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিলেন।
তারপর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দরজার নবে হাত দিতে যাবেন ঠিক তখনই পেছন থেকে উনাকে বললাম-
"শুনুন.....আশেপাশের প্রতিবেশি থেকে তথ্য যোগাড় করে অন্যকে ভয় দেখানো ঠিক না।ভয় দেখিয়ে মজা পান নিশ্চয়! একটা তথ্য ভুলে গেছেন মিস্টার আশরাফ!খুনগুলো হচ্ছে রাত ৩.২০ থেকে ৩.৩০ এর মধ্যে আর খুনগুলো হচ্ছে ৩৪২ নাম্বার কেবিনে।আর আপনি এখন ৩৪২ নাম্বার কেবিনে.......!ঘড়িতে দেখুন তো কয়টা বাজে!"
আশরাফ খান পাথরের মতো জমে রইলেন।
দেখলাম বা হাত উপরে উঠছে আর মাথা নিচের দিকে ঝুঁকছে।
ঘড়ির সময় দেখার জন্য।
এটাই উনার শেষ ঘড়িতে সময় দেখা!
***সমাপ্ত***
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩০
সাকিব ইফতেখার বলেছেন: ধন্যবাদ :-)
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০২
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
হুম ভালোই।
মজা পাইসি ||