নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজনই!

সাকিব ইফতেখার

লেখার মাঝেই ডুবে থাকতে চাই................ facebook.com/sakib.ifteqar

সাকিব ইফতেখার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৫২

রাতুল নাঈমার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কি শুনলো সে এই মাত্র!
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে!
কল্পনাও করতে পারেনি!

ঘটনার শুরু.....
১.
.....প্রায় ৩ মাস আগে

চশমার ফাক দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো নাঈমা।
মায়াবী চেহারা।অদ্ভূত এক ভালোলাগা আছে ছেলেটার মধ্যে।
ছেলেটাও মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকাচ্ছে।
তখন খুব সাবধানে চোখ সড়িয়ে নিচ্ছে নাঈমা যেন ছেলেটা বুঝতে না পারে নাঈমা তার দিকে তাকিয়েছিলো।
ক্লাস ব্রেক চলছে।সব স্টুডেন্টস ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছে।
ভার্সিটিতে আজ প্রথম ক্লাস।
অন্য সবার চেয়ে এই ছেলেটা তাকে টানছে বেশি।
এর আগে কাউকে দেখে এতোটা নজর কাড়েনি।
ছেলেটা কোন ডিপার্টমেন্ট এর জানতে পারলে খুব ভালো হতো।
ভাবতে ভাবতে গ্লাসে হাত দিলো সে।
পানি শেষ।যাহ বাবা!
উঠে দাঁড়ালো নাঈমা।
বাইরে আসলো ক্যাফেটেরিয়ার।
ছেলেটার সাথে আর দেখা হবে কিনা কে জানে।
সে কেমন তাও তো জানেনা!

অনেককিছু ভাবতে ভাবতে ক্লাস ঢুকলো সে।
স্যার আসছেন।
সে দ্বিতীয় সারির একটা চেয়ারে বসলো।
স্যারের লেকচার খুব মনযোগ দিয়ে তুলতে লাগলো এমন সময় ঘটাং করে দরজা খুলে ক্লাসে প্রবেশ করলো একটা ছেলে!
ওই ছেলেটাই!
খুশি হয়ে উঠলো নাঈমা।
ছেলেটা তাহলে ওদের ডিপার্টমেন্টের।
ছেলেটা ক্লাসে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
স্যার ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-এই ছেলে।ক্লাসে ঢুকো নাহলে বের হয়ে যাও।আটকে আছো কেনো?
-দুঃখিত স্যার!আমি মনে হয় ভুল ক্লাসে এসে গেছি।দুঃখিত স্যার।
কথাগুলা এক নিঃশ্বাসে বলেই উল্টো ঘুরে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো।
নাঈমার মন খারাপ হওয়ারও টাইম পেলোনা ছেলেটা আবার উকি দিলো ক্লাসে।
-স্যার এটা আমারই ক্লাস!
লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো ছেলেটা।
-তুমি কিভাবে বুঝলে যে এটা তোমারই ক্লাস?
স্যার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
-স্যার ওই মেয়েটাকে দেখে
কথাটা বলে ছেলেটা নাঈমার দিকে আংগুল তুলে দেখালো।নাঈমা প্রচন্ড অবাক হলো।তাহলে ছেলেটা ভালোই নজর রাখছে তার উপর।
-মেয়েদের উপর নজরদারী করছো?
-না স্যার।মেয়েটাকে আগের ক্লাসেও দেখেছি।আর মাত্র তো একটা ক্লাস করলাম।নতুন পরিবেশ।তাই ক্লাস চেনা ভুল হয়ে গেছে।
-নাম কি তোমার?
-রাতুল,স্যার।
-আচ্ছা যাও বসো সিটে।
-ধন্যবাদ স্যার।


২.
-এই যে!
রাতুলকে ডাক দিলো নাঈমা।ক্লাস শেষ।ছেলেটা ফিরে তাকিয়ে তাকে এক পলক দেখেই দ্রুত হাটা শুরু করলো।নাঈমাও রাতুলকে ধরতে তার হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো।পারলে দৌড়ায়।প্রায় কাছাকাছি চলে আসলো সে তার।
-শুনেন।আপনার সাথে কথা আছে।
-কি কথা?
রাতুল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-আপনি ক্লাসে আমাকে দেখিয়েছিলেন কেন সেটা জানতে চাচ্ছি।
-কেন আপনাকে দেখানো যাবেনা এমন কিছু কোনো আইনে লেখা আছে?
-না তা নেই।কিন্তু স্যারের সামনে তো আমাকে লজ্জায় ফেললেন।
-তাহলে দুঃখিত।
-দুঃখিত বলার কিছু নেই।
-গেলাম।
-শুনেন.....
-এখন আবার কি?
-না কিছুনা।আচ্ছা যাচ্ছেন যান।

রাতুল কিছু না বলেই চলে গেলো।তেমন কিছু বলার মতো পাচ্ছিলোনা নাঈমা।প্রথম দেখা আর মেয়ে হয়ে নিজে থেকে প্রথম এগিয়ে গিয়ে কথা বলা মনে হচ্ছেনা ঠিক হবে।তবে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব প্রয়োজন।কাছাকাছি না আসলে সম্পর্ক করা যাবেনা।সে সম্পর্ক দূরে টেনে নিতেই নকল বন্ধুত্বে জড়াবে। কারণ সত্যিকারের বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্কে জড়ালে সেটা বেশিদিন থাকেনা।
নাঈমা চুপচাপ ভাবছিলো এসব।এখনো তো কোনো আলাদা বন্ধু হয়নি ভার্সিটিতে এসে।হবে। আস্তে আস্তে।এসব ভাবতে ভাবতে হাটা শুরু করলো সে।রিকশা নিতে হবে।তারপর বাস ধরতে হবে যে।


৩.
ক্লাসের এক কোণে বসে আছে রাতুল।
নাঈমা আড়চোখে খেয়াল করছে তাকে।
নাহ।ছেলেটা একটাবারের জন্যও তাকায়নি তার দিকে।
হয়তো বা তাকিয়েছে।কিন্তু নাঈমা বুঝতে পারেনি।সে তো আর হা করে তাকিয়ে থাকেনা।
মাঝেমাঝে তাকাচ্ছে।রাতুলও হয়তো মাঝেমাঝে তাকাচ্ছে।
ক্লাসে মন বসছেনা নাঈমার।
ছেলেটার সাথে খুব ইচ্ছা করছে অনেক আড্ডা দেয়।
কিন্তু ছেলেটা লাজুক টাইপের।
কারো সাথে এখন পর্যন্ত তেমন কথা বলতে দেখেনি।
কোনো বন্ধু কখনো ছিলো কিনা কে জানে।

ক্লাস শেষ হলো প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট পরে।
সবাই ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাচ্ছে।
ক্লাস প্রায় ফাকা হয়ে যাচ্ছে।নাঈমা ঠিক করলো এই সুযোগ টা সে নিবে।ক্লাস প্রায় ফাকা হয়ে গেলে সে এগিয়ে গেলো রাতুলের দিকে।
রাতুল তার মোবাইলে কি জানি করছিলো।
নাঈমাকে আসতে দেখেনি।
-হ্যাল্লো মিঃ
ডাক দিলো নাঈমা।
হঠাত কারো ডাকে রাতুল হকচকিয়ে গেলো!
চট করে মোবাইলের ডিসপ্লে অফ করে দিলো।
তারপর একটু রেগে গিয়ে জবাব দিলো,
-কি ব্যাপার?এভাবে কারো মোবাইলের দিলে তাকিয়ে থাকা ভালো না।
-আমিতো আপনার মোবাইলের দিকে তাকাইনি।আমি শুধু ডাক দিলাম।
-তাই বলে এভাবে।
-তো?
-শুনোন,আপনার সমস্যা কি?প্রথমদিন থেকেই কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছেন বারবার।
-কি বলছেন আপনি?আপনার সাথে কথা বলা নিষেধ নাকি?
-না তা না।দেখতেই পারছেন আমি কথা বলতে ইচ্ছুক না।
নাঈমা কিছুক্ষণ রাতুলের দিকে তাকিয়ে থাকলো।প্রচন্ড খারাপ লাগছে।ছেলেটা এতো বাজেভাবে আচরণ করছে কেনো!
আর কিছু বললোনা নাঈমা।
মাথা নিচু করে চুপচাপ ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো।
ছেলেটা কি একটাবারের জন্যও তাকায়নি তার দিকে!
অসমাপ্ত একটা আগ্রহ নিয়ে সে ক্যাফেটেরিয়ার দিকে আগালো।
পেছনে ফিরে তাকালে হয়তো দেখতে পারতো রাতুল তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
চোখের পাতায় রাজ্যের কৌতূহল।

ছুটির পর....
নাঈমা ডাক দিলো রাতুলকে।
রাতুল যারপরনাই বিরক্ত হলো।
মেয়েটা কি শুরু করলো।
মারাত্মক বিরক্ত করছে সে।
-আমাকে ডাকলেন?
বিরক্ত হয়েই জবাব দিলো রাতুল।
-হ্যাঁ ।
-বলেন কি বলবেন?
-এমনি কথা বলতে চাচ্ছিলাম।আপনার সময় হবে?
-না।
-কেনো কেনো?কি কাজ এখন!?
-আমার ব্যক্তিগত সমস্যা। আমি আপনাকে টাইম দিবো কিনা তা আমার ব্যাপার।তাইনা?
-তা ঠিক
তারপরেও তো.....
-দুঃখিত।আমি গেলাম।
-রাতুল দাঁড়ান।
ঘুরে দাঁড়িয়েও থমকে গেলো রাতুল।তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে।ঘুরে দাঁড়ালো সে।
-সমস্যা কি আপনার?
-এমনি তোমার সাথে আড্ডা দিতে ইচ্ছা হচ্ছে।তোমার যদি সময় হয়.....
-না সময় নেই।
কথাটা বলে নাঈমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঝট করে ঘুরে দাঁড়ালো রাতুল।ঝড়ের বেগে ওখান থেকে চলে গেলো!


দুদিন পর....
নাঈমা গত দুদিনই রাতুলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে।ফলাফল ওই একই।
রাতুল প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।
সেদিন তো হুমকিই দিয়ে বসলো সবার সামনে অপমান করে বসবে যদি নাঈমা তাকে ডিস্টার্ব করে।
নাঈমা কি করবে!ভালোবেসে ফেলেছে ছেলেটাকে।
সেদিনের হুমকির পরেও রাতুলের সাথে কথা বলতে এগিয়ে গেলো।
-রাতুল?
-হু?
বেঞ্চে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো রাতুল।নাঈমার ডাক শুনে মাথা তুললো।তবে তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে নাঈমাকে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত।
-বসবো?
-না।
-কেনো?
-কালকে না বললাম আমাকে ডিস্টার্ব করবেনা?
-আমি তো তোমাকে ডিস্টার্ব করছিনা।বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছি শুধু।
-এটা বন্ধুত্ব করার ধরণ?ডিস্টার্ব করে?
-না আমি আসলে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনা।তুমিই তো কারো সাথে কথা বলোনা।তাই আমাকেই এগিয়ে আসতে হলো।
-প্রয়োজন নাই।তোমাকে এ'কদিনে বিরক্ত লাগতে শুরু হয়েছে আমার।যাও এখান থেকে।আউট........!
-প্লিজ রাতুল.....ফ্রেন্ডস?
হাত বাড়িয়ে দিলো নাঈমা।
রাতুল তার বাড়ানো হাত ধরলোনা।
-শাট আপ।আমার আশেপাশে তোমাকে আর দেখতে চাচ্ছিনা।আবার দেখলে থাপ্পড় মেরে দাত ফেলে দিবো।অসভ্য মেয়ে!

নাঈমার হাতটা আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে।চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।রাতুলের চিৎকারে ক্লাশের সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
নাঈমা আস্তে করে চোখ টা মুছে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।এক পা বাড়িয়ে একটু ফিরে তাকালো।চোখ প্রচন্ড লাল এবং ভিজে গেছে....
-ধন্যবাদ।
রাতুলের উদ্দেশ্যে বলে নাঈমা তার ব্যাগ নিয়ে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেলো।

৪.
তারপর প্রায় ১৫ দিন পর রাতুল ক্লাসে আসলো।
অনেক কাজে ব্যস্ত ছিলো সে।
ক্লাসে এখনো কারোর সাথে কারোরই তেমন মিল হয়নি।তাই ক্লাসের কোনো খবরও রাখতে পারেনি।নাঈমাকেও দেখা যাচ্ছে না।


২০-২৫ মিনিট পর হটাত নাঈমা ক্লাসে এসে সোজা তার সিটে গিয়ে বসলো।
একবারো এদিকে তাকালোনা।
রাতুল ভাবছে সেদিন এভাবে ব্যবহার করা ঠিক হয়েছে কিনা।
বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে সে।
মেয়েটা তাকে কি না কি ভাববে।
তবে যেভাবে বারবার এগিয়ে এসে কথা বলতে চাচ্ছে তাতে মেজাজ খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক।

এই প্রথম রাতুল নাঈমার দিকে ভালো করে তাকালো।
সুন্দর মেয়েটা।
আহামরি না হলেও খুব মায়াবী চেহারা।
কেনো জানি হটাত করে ভালো লাগতে লাগলো।
না এটা ভালোবাসা বলা যায় কিনা তা রাতুল জানেনা।
তবে তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।
অন্তত দুঃখিত বলার জন্য হলেও কথা বলতে হবে।

ক্লাস প্রায় শেষের দিকে...
রাতুল অনেক্ষণ ধরে উশখুশ করছিলো।
ক্লাস শেষ হচ্ছেনা আজ!
অনন্তকাল ধরে চলছে তো চলছেই।
স্যার কি আজ ফাজলামি শুরু করেছে তার সাথে!

৫.
ক্লাসের বাইরে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে রাতুল।
নাঈমা বের হচ্ছেনা।তার সাথের সব বান্ধবীরা বের হয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় যাচ্ছে।শুধু সে নাই।
রাতুল অনেক্ষণ অপেক্ষা করলো।নাহ নাঈমা বের হচ্ছেনা।
অধৈর্য হয়ে উঠলো রাতুল।
বাধ্য হয়ে ক্লাসেই কথা বলতে ঢুকলো।
আগের চেয়ারেই বসে আছে নাঈমা।
চুপচাপ।
কোনোদিকে দৃষ্টি নেই তার।
চোখ বন্ধ করে মাথা নিচের দিকে রেখে বসে আছে।
খানিক ইতস্তত করলো রাতুল।তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো নাঈমার দিকে।
-বসতে পারি?
আস্তে করে মাথা তুলে তার দিকে তাকালো নাঈমা।মেয়েটা কান্না করছিলো!চোখ লাল হয়ে আছে!
-কি ব্যাপার!তুমি কান্না করছিলে?
-না হাসতেছিলাম।
-ফাজলামি করো?
-না মজা করছিলাম।
-বসতে পারি?
-তোমার ইচ্ছা।

নাঈমার সামনে বসলো রাতুল।
-আমি দুঃখিত।
-কেনো?
-তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম তাই।
-না সমস্যা নাই।
-কেনো নাই?
-সমস্যা থাকলে খুশি হতেন?
-না তা না।
-আমি আসলেই দুঃখিত।
-আচ্ছা সমস্যা নাই।
-আর তোমার সাথে তুমি করে কথা বলে ফেললাম হুট করেই!
-তো আমি কি তোমার আন্টি যে আপনি করে কথা বলবে?
-ইয়ে......
চোখ মুছে মুচকি হাসি দিলো নাঈমা।
রাতুল তাকিয়ে রইলো!
কিছু একটা আছে এ হাসিতে!
সামথিং ভেরি ভেরি স্পেশাল!
সেও ওই হাসির বদলে একটা হাসি দিয়ে পরিবেশ অনুকূলে আনার চেষ্টা করলো।
-ফ্রেন্ড?
হাত টা আলতো করে বাড়িয়ে দিলো রাতুল।
নাঈমা কয়েক সেকেন্ড বাড়িয়ে দেয়া হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো!
বোঝা যাচ্ছে বেশ অবাকই হয়েছে মেয়েটা।
তারপর আস্তে করে সেও হাতটা বাড়িয়ে দিলো।
খুশিটা তার চোখ খুব ভালো করেই বলে দিচ্ছে।
রাতুল যখন নাঈমার হাতের স্পর্শ পেলো তখন কারেন্টের হাজারো ভোল্টেজ তাকে আঘাত করলো মনে হচ্ছে।
হাতটা বেশ ঠান্ডা!
-তোমার হাত এতো ঠান্ডা কেনো!অসুখ টসুখ করেনি তো?
-না আমি ঠিক আছি।
হাতটা ছাড়িয়ে নিলো নাঈমা।
-চলো কিছু খাই।
অফার করলো রাতুল।
-না এখন খেতে ইচ্ছা করছেনা।
-তোমার ইচ্ছা।মোবাইল নাম্বারটা দাও তোমার।
-কেনো?
-ওমা!মোবাইল নাম্বার কেনো চায় মানুষ?
-অনেক কারণেই চায়।কেউ আড্ডা দেয়ার জন্য চায়,কেউ এমনি চায়,কেউ বা শিট কালেক্ট করার জন্য চায়।আরেক প্রজাতির পাবলিক ডিস্টার্ব করার জন্য চায়।তুমি কোনটা চাও?
-আমি তোমাকে সবগুলা করার জন্যই নাম্বার চাচ্ছি!
-কথা কম বললেও চালাক কম না!
-তা বলতে পারো।
-হটাত করে আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলো কেনো?
-এমনি।মনে হচ্ছিলো তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয়নি।তাই কথা বলতে এলাম।তোমার সমস্যা থাকলে আমি গেলাম?
-না।বসো।মজা করছিলাম।
-এভাবে কেউ মজা করে? এটাকে মজা নেয়া বলে।
-বাদ দাও।
-দিলাম।বাসায় যাবে কখন?
-আমার আর বাসা!
-মানে কি?
-না কিছুনা
৬.
হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো নাঈমা।
-আমি গেলাম।
-কোথায়?
-একটা জায়গায় যাচ্ছি।অনেক পছন্দের জায়গা ওটা আমার।
-আমাকে নিয়ে যাবে?
-তুমি যাবে!
-কেনো?আমি গেলে সমস্যা কি?
-না সমস্যা নাই।তবে তোমার মতো মেয়েলি ছেলে খুব কম দেখেছি আমি।

কাশি দিলো রাতুল।
মেয়েটা তাকে ধুয়ে ফেলছে একেবারে।
রাতুলও উঠে দাঁড়ালো,
-চলো আমিও যাবো।
-ওই জায়গা স্বাভাবিক না।
-মানে?
-মানে জঙ্গলের অনেক ভেতরে।
-তো?
-ইয়ে....তুমি তো মেয়েলি ছেলে।তাই আমার সন্দেহ আছে ভয়ে অজ্ঞান-টজ্ঞান হয়ে যাও কিনা!
-মেজাজ কিন্তু মাত্রা ছাড়াচ্ছে।অতিরিক্ত বলে ফেলছো তুমি।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে।আর নাহয় নাই বললাম।চলো?
চোখ কুঁচকে রাতুলের দিকে তাকাচ্ছে নাঈমা।অদ্ভূত দৃষ্টিভঙ্গি। সন্দেহজনক!তার চোখে এখনো সন্দেহ রাতুল আসলেই যাবে কিনা!


৭.
ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে একটা রিকশা ডাকলো নাঈমা।
জায়গার নাম বলায় রিকশাওয়ালা মাথা নাড়লো যাবেনা।
নাঈমা অন্য রিকশাকে ডাক দিলো।
রাতুল প্রথম রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে আছে।আর রিকশাওয়ালা তাকিয়ে আছে নাঈমার দিকে।
দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে কিন্তু রাতুল সেটা ধরতে পারছেনা।
-ধুর।কি ভাবছি।রিকশাওয়ালার হয়তো নাঈমাকে ভালো লেগে গিয়েছে তাই মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
চিন্তা করতে করতে মুচকি হাসলো রাতুল।
হঠাত নাঈমার ডাকে তার চিন্তায় ছেদ পড়লো।
কর্কশভাবে তাকে ডাকছে নাঈমা।
-আসছি.....
বলেই রিকশায় প্রায় লাফিয়ে উঠলো রাতুল।
-এভাবে কেউ রিকশায় উঠে?
-তো কিভাবে উঠবো?
-আস্তে আস্তে।
-কিউটভাবে?
-কিউট?
-মেয়েদের পছন্দের শব্দ।আমি যদি আস্তে আস্তে উঠতাম তাইলে কখন না বলে উঠতা হাউ কিউট রাতুল!
-শাট আপ।
-ঠিক আছে এখন থেকে স্লো মোশনে উঠবো।তখন চিল্লাতে পারবেনা।
-স্লো মোশনে কেউ উঠতে বলেনি।শুধু স্বাভাবিক ভাবে উঠলেই হবে।
-বাব্বাহ!
-কি?
-নাহ কিছুনা।
রাতুল চুপ হয়ে গেলো।


৮.
রিকশা হঠাত মোড় নিয়ে নির্জন এক রাস্তায় ঢুকলো।
একেবারে যে নিরব তা না।
কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে মাঝেমাঝে।
মাথা ঘুরিয়ে রাতুল নাঈমাকে কিছু একটা বলতে যাবে তখন দেখে নাঈমা রাতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।তার দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে!শিউরে উঠলো রাতুল।
-নাঈমা?
-বলো!
-কোথায় যাচ্ছি আমরা?
-আর ৫ মিনিট।
-আমি জানতে চাচ্ছি এক্সাক্টলি কোথায় যাচ্ছি।
-তোমাকে বললেও চিনবানা।তাই ঘ্যানঘ্যান করে মাথাটা খেয়োনা আমার।

ক্লিন বোল্ড আউট হয়ে রাতুল চুপ মেরে গেলো।
কি মেয়েরে বাবা!

৯.
প্রায় দশ মিনিট জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চুপচাপ নাঈমাকে ফলো করে যাচ্ছে রাতুল।
সে বুঝতে পারছেনা নাঈমা তাকে আসলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো রাতুল ঠিক তখনই নাঈমা বলে উঠলো,
-এসে গেলাম!

আসলেই জায়গাটা অনেক সুন্দর।
ছোট একটা কার্লভার্টের উপর দাঁড়িয়ে আছে ওরা।
নিচে একসময় একটা মোটামুটিভাবে খাল বা কিছু একটা ছিলো বোঝা যাচ্ছে।
একটু দূরে একটা ছোট পুকুর।
পাখি ডাকছে!
নাঈমার দিকে তাকালো রাতুল,
-জায়গাটা তো সুন্দর।কিভাবে এর খবর পেলে?
-এই জায়গা থেকে একটু দূরে আমাদের বাসা ছিলো।৫ মিনিটে হাটা পথ।আব্বু মাঝেমাঝে আমাকে এখানে নিয়ে আসতো।তাই চিনি।আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এটা।
-বুঝলাম।হঠাৎ এখানে আসার খায়েস জাগলো কেনো?
-আমার মন খারাপ থাকলে আমি এখানে বসে বসে কাঁদি।
-এখন আবার কান্না-টান্না করিওনা ভাই।আমি এগুলা নিতে পারিনা।
-কান্না করার মতো আর কিছু থাকলে তো কান্না করবো!
-বুঝিনি কথাটা।
-নাহ কিছুনা।
-এখানে এতো গন্ধ কিসের?বাজে একটা গন্ধ আসছে।
-জানা নাই।ইচ্ছে থাকলে খুঁজে দেখো গন্ধের উৎস কোথায়।
-না থাক।
-চলো বসি?
-আচ্ছা।


বসার পর নাঈমা প্রশ্ন করলো,
-মানুষ মারা গেলে কি পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে?
-আমাদের ধর্মমতে পারেনা।তবে তার আত্মা ঘুরে বেরায়।তবে জীবনে অনেক কাহিনী শুনেছি যাতে মনে হয় আত্মা কোনো ব্যাপারে অতৃপ্তি থাকলে সে সেটা উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত পৃথিবীতে থেকে যায়।
-তাই নাকি!
-হুম।হঠাৎ এই প্রশ্ন?
-গতকাল আমার এক আত্মীয় মারা গিয়েছে।অনেক ভালো লাগতো তাকে।চিন্তা করছি সে এখন কি করছে!কোথায় আছে!
-সে জান্নাতে বসে বাদাম খাচ্ছে মনে হয়!
রাতুলের দিকে চোখ কুচকে তাকালো নাঈমা।
-ফাজলামি করছো তুমি আমার সাথে?
-দুঃখিত।তবে সত্যি আমার কেন জানি মনে হচ্ছে জান্নাতে বসে বসে সে বাদাম খাচ্ছে!
-অদ্ভূত ছেলে!
-কে?
-আমার সামনের বদ ছেলেটা।
-বাব্বাহ!
-আমাকে ভালোবাসবে?

কথাটা শোনার পর রাতুল নাঈমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো।
সে বুঝতে পারছেনা নাঈমাকে কি জবাব দিবে!
সে কখনো কারো প্রেমে পড়েনি।প্রেম করা তো দূরে থাক।
-না নাঈমা।আমি পারবোনা।
-আমি অবশ্য জানতাম তুমি এমনই উত্তর দিবে।
-তাহলে আর বলে কষ্ট পেতে গেলে কেনো?
-আমার এটা জানা জরুরি ছিলো।
-কিন্তু আমি দুঃখিত নাঈমা।সত্যি দুঃখিত।
-না না।স্বাভাবিক ব্যাপার এটা।তুমি কাউকে পছন্দ নাই করতে পারো।

মাথা নিচু করে বসে থাকলো রাতুল।মাথা ঘুরছে ভনভন করে।
নাঈমা হঠাত আস্তে করে ধাক্কা দিলো রাতুলকে।
আবারো শিউরে উঠলো রাতুল।
কেনো!
সেই উত্তর খোঁজার চেয়ে নাঈমার মন ভালো করা জরুরি।
তার আগেই নাঈমা রাতুলকে বললো,
-মন ভালো করতে চেষ্টা করবে এখন আমি জানি।দরকার নেই।আমার মন ভালোই আছে।তবে চলো উঠি।বাসায় যেতে হবে।
-চলো.....
দুজন চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো।
রাতুলের তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।
জায়গাটা তার কাছে এখন অসহ্য মনে হচ্ছে!


১০.
বাসায় ফিরেই ওয়াসরুমে দৌড় দিলো রাতুল।
মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখনই ফেটে যাবে।
এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি এর আগে।
নাঈমাকে না করেও তার প্রচন্ড খারাপ লাগছে!
মেয়েটাকে তো তারও ভালো লেগে গিয়েছিলো।
"তাহলে না করে কেনো তাকে কষ্ট দিলাম!"
কাজটা একদম ঠিক হয়নি।
তাহলে কি তাকে বলে দিবে সেও রাজি!
নাহ!
কিভাবে সম্ভব!
নাঈমা যদি এখন রিফিউজ করে!

ওয়াসরুম থেকে মাথা ধুয়ে নিজের বিছানায় ধুপ করে পড়লো রাতুল।
কি করবে সে এখন!
অদ্ভূত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সে।
না কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
তবে তার মন একবার বলছে সম্পর্ক কর।আরেকবার বলছে না।
তার মনকে সে কোনোভাবেই বোঝাতে পারছেনা।

কি করবে তা ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো রাতুল।




১১.
সকালে.....
খুব তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে পড়লো রাতুল।
৯ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
খুব তাড়াতাড়ি ক্লাসে যেতে হবে।
নাঈমা হয়তো খুব রাগ করে আছে তার উপর।

ক্যাম্পাসে....
ক্লাসে নেই নাঈমা।আজ আসেনি।
মানে কি!
সে এতোটাই অভিমান করে বসে আছে যে ক্লাসেই আসেনি আজ!
নাঈমা ক্লাসে কারো সাথে কথা বলতোনা।
তারপরেও কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলো নাঈমাকে দেখেছে কিনা।
কেউ নাঈমাকে চিনতেই পারলোনা।
দুজনকে পাওয়া যারা নাঈমাকে চেনে।
তাদের হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞেস করলো রাতুল,
-নাঈমাকে চেনো?
-শ্যামলা করে যে মেয়েটা?
-হুম।
-তাকে তো অনেকদিন যাবত দেখিনা।
-কালই তো এসেছিলো ক্লাসে।
-আমরা দেখিনি।হয়তো এসেছিলো। তবে খেয়াল করিনি।
-ওহ।

চুপচাপ তাদের পাশ কাটিয়ে এলো রাতুল।
মেয়েটা এতো অভিমান কিভাবে করতে পারে......!



১২.
তিনদিন পর....
নাহ!
আজও সে এলোনা।
কি ব্যাপার!
আজকে তার বাসায় যেতে হবে যেভাবে হোক।
সেদিনকার ওই দুইটা ছেলেকে ডেকে সে নাঈমার বাসার ঠিকানা চাইলো।
তারা দিতে পারবেনা।নাঈমার সম্পর্কে তারাও বেশি কিছু জানেনা।

কিভাবে বাসার এড্রেস পাবে এখন!
কোনো পথই তো খোলা নেই।

হঠাত মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে লাগলো রাতুলের।
আরেহ!ডিপার্টমেন্ট অফিসে গেলেই তো স্টুডেন্টস ইনফরমেশন কালেক্ট করা যাচ্ছে!
সে দৌড় শুরু করলো অফিসের দিকে।

অফিসের কেরানীকে অনেক অনুরোধ করে খুঁজে বের করলো মেয়েটার বাসার ঠিকানা।
নাঈমা সুলতানা...........
ঝটপট ঠিকানা টুকে নিলো মোবাইলে।
গেইটের দিকে হাটতে শুরু করলো। হাটা না বলে দৌড়ই বলা ভালো বোধহয়।
হঠাত পেছন থেকে কেই ডাক দিলো তাকে।
ফিরে তাকালো সে।নাঈমার সাথে এই মেয়েটাকে একবার দেখেছিলো অনেক আগে।
-তুমি নাকি নাঈমার খোঁজ করছিলে?
-জানো তার ব্যাপারে?সে গত তিনদিন ক্লাসে আসেনি কেনো?
-তিনদিন!তার সাথে আমার গত ১৫/১৬ দিন যাবত কোনো কথাই হয়নি।
-ক্লাসে তো এসেছিলো ৩ দিন আগেও।তুমি ক্লাসে আসোনি বোধহয়?
-আমি ক্লাস মিস দেইনা।নাঈমা এসেছিলো নাকি ক্লাসে?কই?আমার সাথে দেখা করলোনা মেয়েটা।চুপচাপ ক্লাস করে চলে গেলো।
-হুম সেদিন আমরা ক্লাস ঠিকমতো না করেই চলে গিয়েছিলাম।
-সেজন্যই হয়তোবা।
-প্রথম ক্লাস করেছিলাম শুধু।
-নাঈমা কোথায় বসেছিলো?
-সামনের দিকেই।
-ও আচ্ছা।
-গেলাম তাহলে।
-যাও।

আবার জোরে হাটা শুরু করলো রাতুল।পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পারতো কেমন অদ্ভূত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা।চোখে রাজ্যের কৌতূহল!

১৩.
শেষ পর্যন্ত বাসাটা খুঁজে পেলো রাতুল।
দরজায় নক করামাত্র একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো।
তবে উনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতুলের চেহারা দেখার জন্য দরজা খোলেননি।অন্য কিছুর অপেক্ষায় ছিলেন।
-কে তুমি?
-জ্বী,এটা নাঈমার বাসা না?
-হুম।তুমি কে?
-জ্বী আমি তার ক্লাস মেট।
-আমি নাঈমার আম্মু।ভেতরে আসো।
নাঈমার আম্মুর পেছন পেছন বাসায় প্রবেশ করলো রাতুল।
আন্টি তাকে বসতে বলে নিজেও বসলেন।
-কেনো এসেছো বাবা?
-আন্টি নাঈমা কোথা......
নাঈমার আম্মু ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন হঠাত করেই।কথাটাও শেষ করতে পারলোনা রাতুল।
সে বুঝতে পারছেনা উনার হয়েছেটা কি।
-কি ব্যাপার আন্টি?কোনো সমস্যা?
-নাঈমাকে গত ১৮ দিন যাবত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বাবা!সারা শহর তন্নতন্ন করে খুজলো পুলিশ।কিন্তু আমার মেয়েটাকে কেউ এনে দিতে পারলোনা।


রাতুল দাঁড়িয়ে গেলো ঝট করে!
নাঈমার মায়ের সামনে কি বলবে এখন!
কি শুনলো সে এই মাত্র!
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে!
নাঈমা নিখোঁজ!
কখন?
কোনদিন?
কিভাবে?
তিনদিন আগেও তো নাঈমা তার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।
ক্লাসরুমে,জঙ্গলে........
জঙ্গলে!!!

সে কি ওখানে!
তাই বলে ১৮ দিন যাবত!
সে আন্টিকে কিছু না বলেই ঝড়ের বেগে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
দৌড়াতে শুরু করলো।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানে যেতে হবে।
সে ওখানেই আছে।রাতুল নিশ্চিত।
কিছুক্ষণ দৌড়ে দেখলো আর পারছেনা।
তাড়াতাড়ি রিকশা একটা ডাক দিলো।

প্রায় ২০ মিনিটের মাথায় রিকশা এসে থামলো সেই জঙ্গলের মুখে।
রাতুল রিকশা ভাড়া দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো জঙ্গলের ভিতর।
খুব তাড়াতাড়ি পৌছাতে হবে।
খুব......
রাতুলের মনে হচ্ছে সে অনন্তকাল ধরে দৌড়াচ্ছে।
কোথায় সেই জায়গা!
তাহলে কি সব ভ্রম!
না!
কিভাবে সম্ভব!

আরো জোরে দৌড়াচ্ছে এখন সে।
হঠাত করে একটা খোলা জায়গায় এসে পড়লো রাতুল!
এইতো সে ই জায়গা।
কার্লভার্ট,পুকুর,খাল আর.......গন্ধ!
গন্ধটা বিকট আকার ধারণ করেছে।
মনে হচ্ছে আশেপাশে থেকেই আসছে।
খুব কাছে।
তবে নাঈমা এখানে নেই!
রাতুল নাঈমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে নিচে নামতে শুরু করলো।
হয়তো কার্লভার্টের নিচে আছে।কারণ তাতে কার্লভার্ট ছাদ হিসেবে কাজ করবে।
কার্লভার্টের নিচে নামলো রাতুল।
জায়গাটা প্রসস্থ অনেক।
তবে সামনে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।
যত আগাচ্ছে তত গন্ধটা বাড়ছে।
পেটের নাড়িভুঁড়ি সব বের হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
নাক চেপে আগালো রাতুল।

যা দেখলো তাতে মাথার পেছনের চুল সরসর করে দাঁড়িয়ে গেলো!
সত্যি.....
তার বিশ্বাসই ঠিক....
নাঈমা এখানেই আছে....রাতুল ঠিকই নিশ্চিত ছিলো....



পরিশেষেঃ
পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বলা হয় নাঈমা আত্মহত্যা করেছিলো ১৮ দিন আগেই।
ঠিক যেদিন রাতুল তাকে অপমান করেছিলো।
রাতুল এখন আর কারো সাথে একদম কথা বলেনা।
তাহলে তিনদিন আগে কে তার সাথে দেখা করেছিলো!
নাঈমা নিজে!তার আত্মা!যাকে শুধু সেই দেখতে পাচ্ছিলো!
নাঈমা রাতুলের মাধ্যমে শুধুমাত্র তার লাশ খুঁজে পাওয়ার জন্যই এখানে এনেছিলো!
তবে নাঈমার আত্মা হয়তো এখনো অতৃপ্ত!
সে যে তার কাংখিত ভালোবাসা পায়নি!
কে জানে নাঈমা আবার ফিরে আসে কিনা...............!
রাতুল এখনো মাঝে মাঝে শিউরে উঠে..........!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০১

মনিরুজ্জামান শুভ্র বলেছেন: ভয় লাগছে এখন .।। বেশ লিখেছেন ।

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:১১

মোজাম্মেল নকিব বলেছেন: অসম্ভব ভালো লেগেছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.