নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজনই!

সাকিব ইফতেখার

লেখার মাঝেই ডুবে থাকতে চাই................ facebook.com/sakib.ifteqar

সাকিব ইফতেখার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোল্ডফিস!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪



-আম্মু আমি ওই গোল্ডফিস টা কিনবো।

রাস্তার পাশের একুরিয়ামের দোকানটার দিকে নির্দেশ করে আবদার করে বসলো ছোট্ট নিরা।
একুরিয়ামটাতে একটাই গোল্ডফিস আছে।দোকানের বাকি সব একুরিয়ামে মাছ অনেক।ওগুলো অন্য প্রজাতির।
নিরার মা বুঝেই পেলেন না উনার মেয়ে ওই ছোট গোল্ডফিসটার মধ্যে কি এমন দেখলো যে কেনার জন্য পাগল হয়ে গেলো!
বাসার একুরিয়ামে অনেক মাছ আছে।এই নিয়ে অনেকবারই গোল্ডফিস কেনা হয়েছে।তবে এগুলো বাঁচেনা বেশিদিন।কিভাবে জানি মরে যায়।
-না মা।আর গোল্ডফিস নয়।বাসায় অনেক মাছ আছে।ওগুলোর দেখাশোনা করতে হবে।
-না আমি ওইটা কিনবো।
-চলো।
-আম্মু!
-উউউহ!চুপ করবে?নাকি মারবো তোমাকে?

৬ বছর বয়সী নিরা কান্না শুরু করলো।তবে নিরবে।মেয়েটা খুব শান্ত স্বভাবের।কান্না করে নিরবে।অন্যান্য বাচ্চাদের মতো কান্না করতে করতে শহীদ হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি কখনো তার।
বাসার কাছেই একুরিয়ামের দোকানটা।
নিরাদের বাসা থেকে দেখা যায়।
নিরার আম্মুর ভাষ্যমতে এই দোকান থেকে তাদের একুরিয়ামের জন্য যত মাছ কেনা হয়েছে তাতে দোকানদার এমনি লাখপতি হয়ে যাবে।
নিরার বড় ভাই নাঈম এটা শুনে হাসে শুধু।
আম্মুর উক্তি শুনে সেও উক্তি করে।
নিরার ভাইয়ার ভাষ্যমতে তাদের আম্মু উক্তিতে বিখ্যাত।যেকোনো সময় কোন দেশ থেকে যে কিসের মেডেল পেয়ে যান আল্লাহ জানে!
নিরার আব্বু সবার কথা শুনে শুধু হাসেন।
উনি ডিবি পুলিশে আছেন।সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটে উনার।

নিরা আজ মনে মনে ভাবছে বাসায় গিয়েই ভাইয়াকে বলবে।ভাইয়া তাকে সব কিনে দেয়।
সে যা চায় সব।
গতবার যে গোল্ডফিসটা সে কিনেছিলো সেটার টাকাও ভাইয়া দিয়েছিলো।
টাকাটা পেয়েই নিরা দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে দোকান থেকে মাছ টা কিনে এনেছিলো।

বাসায় পৌছে নিরার আম্মু রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
নিরা তার ভাইয়ার রুমে উকি দিলো।
নাহ রুমে নেই।
উফ!
বাথরুমে?
বাথরুমেও ধাক্কা দিলো নিরা।
দরজা খুলে গেলো।
নাই।

বিরক্ত হয়ে তার রুমের দিকে হাটা দিলো সে।
চোখ এখনো লাল হয়ে আছে।
তার আম্মু খেয়াল করেনি সে কান্না করছিলো।
নিরা তার রুমে এসে দরজা টা লাগিয়ে দিলো।
জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো।
তার জানালা থেকে দোকানটা দেখা যাচ্ছে।
বেশি দূরে না।
৫ মিনিটের রাস্তা।
রাস্তাটা পার হয়ে ডানে হাটলেই একটু পরে দোকানটা।
আম্মুকে না বলে যেতে হবে।
ভাইয়া টাকা দিবে তো?
গতবার না দিলো একটা গোল্ডফিসের জন্য।
এবার যদি বকা দেয়?
নাহ।
বলবোই।
আস্তে করে জানালা থেকে সরে এলো সে।
বিছানায় বসে ভাবছে ভাইয়া আসলে কি কি বলবে।
কান্না করে বললে ভাইয়া দিয়ে দিবে।
আম্মুকে বলা যাবেনা মোটেই।


বিকেলে ভাইয়া আসলো বাসায়।
নিরা দৌড়ে ভাইয়ার রুমে গেলো।
-ভাইয়া....
নাঈম উল্টো দিকে তাকিয়ে ছিলো।ফিরে তাকালো।তার মুখ কেমন জানি থমথমে।ভাইয়া কি কারো সাথে ঝগড়া করে এসেছে!জবাব দিলো সে...
-বল!
-তোমাকে একটা কথা বলবো ভাইয়া।
-বল না!
-ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা দিবে?
-কিজন্য?
-একটা গোল্ডফিস কিনবো।
-আরেকটা কিনবা তুমি?টাকা গাছে ধরে?কিছু হলেই ছুটে আসো আমার কাছে।টাকা আমি গাছ থেকে পেড়ে দিবো?
-আচ্ছা ভাইয়া লাগবেনা।
কথাটা বলে নিরা এক দৌড়ে রুমে চলে আসলো।
দুচোখ যেন বাঁধ মানছেনা পানির।টলমল করছে চোখ।
বিছানায় মুখ লুকিয়ে কান্না করতে থাকলো।
কান্না করতে করতে কখনো যেনো দু'চোখ বেয়ে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো..........

সন্ধ্যার একটু আগে ঘুম ভাঙ্গলো নিরার।
চোখ কচলে ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।
ভাইয়ায় আজ তাকে বকা দিয়েছিলো মনে পড়ে যাওয়ায় আবারো চোখ ভেঙ্গে কান্না আসছে।
ছাদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ডান দিকে কাত হয়ে শুলো সে।
হঠাৎ কিসে জানি হাত লাগলো।
বালিশের পাশে একটা কাগজ।
আস্তে আস্তে খুললো সে ওটা।
ভিতর থেকে ৫০ টাকার একটা নোট টপ করে পড়লো!
লাফ দিয়ে উঠলো সে!
কাগজে কিছু একটা লেখা আছে-"ভাইয়া তোকে বকা দিয়েছি।স্যরি ভাইয়া।টাকা টা লুকিয়ে রাখ।ভাইয়া সন্ধ্যার পর বাসায় আসলে একসাথে গিয়ে কিনে নিয়ে আসবো"।

নিরা দৌড়ে ভাইয়ার রুমে গেলো।না সে নাই।
আম্মুর রুমে গিয়ে দেখে আম্মু ঘুমোচ্ছে।
বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুলো সে।
অনেক আনন্দ লাগছে তার এখন।
ভাইয়ার মন কোনো কারণে খারাপ ছিলো মনে হয় তখন।
প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেলো ভাইয়া আসেনা....
নিরা উশখুশ করতে লাগলো।
ভাইয়া আসার আগে কিনে নিয়ে আসলে কেমন হয়!
ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবো।
যেই চিন্তা সেই কাজ।
রেডি হয়ে গেলো সে।
আম্মুর রুমে উঁকি দিলো।
আম্মু ঘুমোচ্ছে এখনো।
আম্মু উঠার আগে নিয়ে আসা লাগবে।
আস্তে আস্তে দরজা খুলে বের হয়ে এলো সে।


বাসা থেকে বের হয়ে নিচে নামলো নিরা।
রাস্তা পেরোতে হবে।তারপর ডান দিকে কিছুক্ষন হাটলেই দোকানটা।
গাড়ি চলছে মোটামুটি।
একবার রাস্তা পার হতে গিয়ে মাঝখান থেকে ফিরে এলো।
একটা গাড়ি হুট করে চলে এসেছিলো।
ডানে বায়ে কয়েকবার তাকালো সে।
না গাড়ি নাই এখন।
সাবধানে রাস্তা পার হয়ে এলো।
হাটতে হাটতে দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো।
ওইতো গোল্ডফিস টা!
দোকানে ঢুকলো সে।
-আংকেল!
দোকানদারকে ডাক দিলো নিরা।
দোকানি ফিরে তাকালো।
-হ্যাঁ আম্মু বলো।কি লাগবে?
-ওই গোল্ডফিস টা দেন।
-একটাই তো আছে।
-ওই একটাই দেন।
দোকানি মাছ টা বের করে পলিথিনে ঢুকালো পানি সহ।
-কত দিবো আংকেল?
-৩০ টাকা দিলেই হবে।
-এই নেন
বলে টাকাটা বাড়িয়ে দিলো নিরা।
ভাংতি নিয়ে দোকানির হাত থেকে পলিথিন টা নিলো।


সে এখন মহাখুশি!
গোল্ডফিসটা শেষ পর্যন্ত কিনতে পেরেছে।
আম্মু তো চমকাবেই, ভাইয়াও চমকে যাবে সে যে একা কিনতে আসছে।
সে গোল্ডফিসটা নিয়ে নাচতে নাচতে ফুটপাত ধরে ছুটলো।
বাসার সামনে এসে পড়লো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
রাস্তা পার হতে হবে।
গাড়ি নাই।তবে ভিড় আছে রাস্তায়।
রাস্তা পার হতে যাবে এমন সময় কোথা থেকে একটা গাড়ি হুট করে এসে পড়লো।
নিরা পিছিয়ে গেলো।
উফ!
দৌড় দিবে ঠিক করলো সে।
একটু পিছিয়ে দৌড় দিতে যাবে এমন সময় আরেকটা গাড়ি এসে পড়লো।
সে থামানোর চেষ্টা করলো নিজেকে।
পারলো না।
হোচট খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো ফুটপাত এবং রাস্তা শেষভাগে।
হাত থেকে গোল্ডফিসের পলিথিনটা ছুটে গেলো।
ওটা রাস্তায় পড়ে গেছে।
ঠিক সেই মূহুর্তে ওই গাড়িটা গোল্ডফিসটা মাড়িয়ে দিলো!
পলিথিন ফাটার শব্দ হলো অনেক জোরে!।
গাড়িটা চলে যাওয়ার পর নিরা তাকিয়ে রইলো পিষে যাওয়া মাছটার দিকে।
এখনো মাটিতে পড়ে আছে সে....
চোখ টলমল করছে!
পথচারীরা তাকিয়ে আছে তার দিকে।
নিরা তার ভাইয়াকে কি জবাব দিবে এখন!
ভাইয়া এতো শখ করে টাকাটা দিয়ে গিয়েছিলো।
তার শখের গোল্ডফিসটা মারা গেছে!
নিরা আর চুপ রাখতে পারেনি নিজেকে.....রাস্তায় বসেই চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো!
-আমার গোল্ডফিস............
কান্নার মাঝে বিড়বিড় করতে লাগলো সে.......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:১৫

নিশি মানব বলেছেন: আমিতো মনে করছিলাম নীরা মেরে ফেলবেন শেষ পর্যন্ত। কিন্তু না মারেন নাই।
অবলা জলজ প্রানী গোল্ড ফিশ।বুঝতে পারেনা নাই লেখক নামে মানুষরা বড় সেলফিশ।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪০

সাকিব ইফতেখার বলেছেন: আপনি যেটা ভেবেছিলেন সেটা ঘটেনি।যেটা আশা করেছিলেন তারচেয়েও বেশি ধাক্কা খেয়েছেন আশা করছি।এখানেই আমার স্বার্থকতা :)
ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.