নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজনই!

সাকিব ইফতেখার

লেখার মাঝেই ডুবে থাকতে চাই................ facebook.com/sakib.ifteqar

সাকিব ইফতেখার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা!

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৯

-আম্মা,আজকে কি আনছো আমার লাইগ্যা?
-দুইটা আপেল আনছি রে বাজান।মানুষ আইজকাইল ট্যাকা-পুইসা দিতে চায়না।
-আপেল!দেও আমারে।
-ল খা।বাজান আমার......
মায়ামাখা হাতখানি ছেলের মাথায় বুলাতে বুলাতে আপেলগুলা ছেলের হাতে দিলো রহিমা বানু।
আপেল পেয়ে ছেলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
ছেলের বয়স মাত্র ৬ বছর।
এই বয়সেই সে সব দেখে ফেলেছে।
বাবার মৃত্যু,দারিদ্র্য,মায়ের পরিশ্রম।
রহিমা বানুর ছেলে একটাই।
শখ করে নিজের নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছে রহিম।
ওরা থাকে স্টেশনের পাশে একটা জায়গায়।
ঘর বানিয়েছে কিছু পলিথিন দিয়ে।
কোনোমতে থাকা যায় দুজনে।
মাঝে মাঝে রহিমা বানুর ছেলেটা সেই ছোট ঘড়টার বাইরে বসে মানুষ দেখে।
বড়লোক মানুষ।
সে মাকে প্রশ্ন করে,
-আম্মা,আমরার ঘর নাই ক্যা?
-আছে না বাজান?রাইত ঘুমাস না ঘরে?
-ওই দেহো আম্মা।মাইনষের কত বড় বড় গাড়ি।আমরার ঘর থেইক্কা বড়।
-ওইদিকে চাইস না বাজান।তারার ট্যাকা আছে এর লাইগ্যা কিনতা পারে।আমরার নাই বাজান।
-নাই ক্যা?
-তোর আব্বা নাই যে এর লাইগ্যা।
-ওহ।

রহিমা তার মায়ের কথা শুনে মাথা নাড়ে।
সে বুঝেছে।
তার বাবা নাই বলেই বুঝি আজ তাদের সুন্দর ঘর নাই।
প্রতিরাতে তার বাবাকে মনে করে করে সে ঘুমায় আর বকা দেয়।

একদিন রহিম দৌড়ে আসলো তার মায়ের কাছে।
-আম্মা! আম্মা!
-ক বাজান।
-ওই দেহো ওই মাইয়াটার বাপ মইর‍্যা গেছে।
রহিমা বানু ছেলের মাথার উপর দিয়ে উকি দিলো।
একটা মেয়ে আর একটা মহিলা একটা লাশ নিয়ে বসে আছে।এম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছে মনে হয়।স্টেশনে এমন ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায়।
রহিম ডাক দিলো তার মাকে,
-আম্মা!ও আম্মা!
-ক বাজান।
-এহন এরাও আমরার মতো গরীব হইয়া যাইবো না?
-হ বাজান......
রহীমা বানুর মাথায় কথা ঢুকছেনা।তার স্বামী মারা যাওয়ার দিন ঠিক ওখানটাতে লাশ নিয়ে বসে ছিলো সে।কোলে ছিলো রহিম।তার বয়স ছিলো তখন মাত্র ৩ বছর।
রহীমা বানু জোরে কান্না করতে পারেনি সেদিন।
কেউ তাকে সাহায্য করতে আসবেনা জেনে।
এক রিকশাওয়ালা সেদিন তাকে বিনা খরচে গোরস্থান পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলো।
দাফন-কাফনের জন্য তাকে সহযোগীতা করেছিলো সেখানের গার্ড।
সেদিন রহীমা বানু বুঝেছিলো ভালো মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছে।শুধু তার স্বামীটাই থাকলোনা!
খুব ভালো মানুষ ছিলো লোকটা।
হঠাৎ কি জানি এক অসুখ হলো আর বাচাঁনো গেলোনা।
ডাক্তাররা সাহায্য করেনি।
তাই হয়তো মারা গেছে।
-আম্মা!
রহিমের ডাকে রহীমা বানুর চিন্তায় চিঁড় ধরলো।
-ক বাজান।
-আমার ক্ষিদা লাগছে আম্মা।
-একটু দাঁড়া বাজান।একটু পরে দিমু আইন্যা।আমার শরীরটা ম্যালা খারাপ করছে।মাথা টা ধইরা রইছে।
-না আম্মা।আমার ক্ষিদা লাগছে।
-আইচ্ছা দেহি......

রহীমা বানুর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।
কিন্তু ছেলের তো ক্ষুদা লাগছে।
ছেলেটাই তো তার সব।
তাকে ছাঁড়া রহীমা বানুও বাঁচবেনা।

স্টেশন থেকে বের হলো রহীমা বানু।
ফুটপাতের দোকান গুলা দিয়ে হাটছে সে।
সে এসব দোকান থেকে ফল,খাবার ইত্যাদি মাঝে মাঝে চুরি করে।
সবসময় কাজে যেতে পারেনা।ভিক্ষা করে আর কতো।মানুষ এখন কাজও দেয়না।
সেদিন আপেল দুইটাও চুরি করেছিলো সে।
দোকানীরা তো আর গরীব হয়ে যাবেনা এক-দুইটা আপেল হারালে।
সে চুরি করতোনা।
প্রথম প্রথম এইসব দোকানে হাত পাততো।
তার ছেলের জন্য আপেল-কমলা নেওয়ার জন্য।
দোকানীরা দিতোনা।
তারপর থেকে মাঝেমধ্যে সে চুরি করে ফেলে!

রাস্তার দোকানে আজ ভিড় বেশি।
বড় সুযোগ।
দুইটা আপেল নিতে পারলেই ছেলে খুশি হয়ে যাবে।
এক দোকানের দোকানী ওদিকে ফিরে আপেলের ওজন মাপছে।
সাথে সাথে ছো মেরে দুইটা আপেল নিয়ে দৌড় দিলো!
পেছন থেকে কে জানি চিৎকার দিয়ে উঠলো!
-ওই ধর!ধর!চোর!
রহীমা বানু জানপ্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করছে।ভীড়ের কারণে পারছেনা।
হঠাৎ কে জানি পেছন থেকে তার শাড়ি ধরে ফেললো।
সে ইজ্জ্বত বাঁচাতে দাঁড়িয়ে পড়লো।
দৌড়ালে শাড়ি খুলে যাবে।
হাটু গেড়ে বসে পড়লো ওই লোকটার সামনে।
-মাফ কইরা দেও গো বাজান।আমার ছোড পোলাডা না খাইতা পারলে মইরা......
কথাটা শেষ করতে পারলোনা রহীমা বানু।
কে জানি তার নাক বরাবর ঘুষি মেরে বসলো!
রহীমা বানু চিৎকার দিয়ে উঠলো,
-আমারে মাইরোনাগো বাজান!ও বাজানগো।তোমরার পায়ত ধরি গো বাজান।আমার পোলাডা মইরা যাইবো গো বাজান।আপেল লইয়া যাও গো বাজান।আমারে মাপ কইরা দেও গো........
কথাগুলো বলার ফাঁকেফাঁকে প্রচন্ড গতিতে তার উপর হামলা চললো!যে যেদিকে পারে মারছে।
-মার শালিরে!
-মার!আরো জোরে মার!
-মার ছোটলোকের বাইচ্চারে মার!
মার খেতে খেতে খেতে একসময় রহীমা বানু মাটিতে লুটিয়ে পড়লো!
তার মুখ থেকে রক্ত ফেনা বের হচ্ছে!
মুখ থেকে শুধু এই বের হচ্ছে.....
-আমার পোলাডা মইরা যাইবো গো বাজান....আমারে আর মাইরোনা........
চোখে অন্ধকার নেমে আসছে তার আস্তে আস্তে।
হঠাৎ কার গলা শোনা গেলো,
-এই দেখি কি হইছে..........মাই গড......এই রিকশা ডাক দাও........ওই রিকশা....... তাড়াতাড়ি চলো.......

রহীমা বানু আর কথা বলছেনা.....তবে তার মুখে একটু হাসি দেখা যাচ্ছে মনে হলো!
ভালো মানুষ যে এখনো পৃথিবীতে আছে................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.