নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজনই!

সাকিব ইফতেখার

লেখার মাঝেই ডুবে থাকতে চাই................ facebook.com/sakib.ifteqar

সাকিব ইফতেখার › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তখেলা!(ছোট রহস্য গল্প)

০২ রা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫০




এক

মাথা ঝিমঝিম করছে।
চিনচিনে একটা ব্যথা।
কি হয়েছিলো মনে করার চেষ্টা করলো অহনা।
এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তার!
ঝট করে চোখ খুললো সে।
ভাবলো হাসপাতালে আছে।
নাহ!
এটা হাসপাতাল নয়।
ছোট একটা রুম।একটা জানালাও নেই।
ছোট একটা দরজা আছে।
রুমের মধ্যে আছে শুধু একটা পাটি যেটাতে অহনা শুয়ে আছে।
সে কোথায়!
এক্সিডেন্ট হওয়ায় তাকে কেউ নিয়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে।এখানে কেন এনেছে!
কে?
হঠাত দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ শুনে কান পাতলো অহনা।
ভারি বুট জুতোর আওয়াজ।
আর্মি?পুলিশ?কে!
"হেল্প!"-চিৎকার দিয়ে উঠলো অহনা।
পায়ের আওয়াজ থমকে গেলো।
আর কোনো আওয়াজ আসতেছেনা।
একটু পর আওয়াজ দ্রুত হলো।
কাছে আসছে।খুশি হয়ে উঠলো অহনা।
খুট করে দরজার খুলে একজন ঢুকলো ভিতরে।
মোটামুটি বয়স হবে।৪০ আনুমানিক।শরীর যথেষ্ট শক্তিশালি।
লোকটা তাকে দেখেই প্রশ্ন করলো,
-জ্ঞান ফিরেছে তাহলে?
-হ্যাঁ।কিন্তু আপনি কে?
-আমার পরিচয় আপনার জানা লাগবেনা।আপনাকে বাঁচিয়েছি বলে অন্তত একটা ধন্যবাদ আশা করা যায়?
-জ্বী।ধন্যবাদ।কিন্তু আমি এখন নিজের বাসায় যাবো।
-এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?
-মানে?
-মানে ধীরেসুস্থে যাবেন।বাঁচালাম যেহেতু সেহেতু অধিকার তো খাটাতেই পারি?নাকি?
-অধিকার ব্যাপারটা পছন্দ হলোনা।তবে আমার জন্য কষ্ট করায় আপনাকে ধন্যবাদ।এই জায়গাটি কোথায়?
-পরে জানবেন এগুলো।
-এখানে আর কে কে আছে?
-কেউ নেই।
-আপনার মা-বাবা,স্ত্রী,আত্মীয় কেউ নেই?
-নাহ।
-একা থাকেন?
-হ্যাঁ।চলুন।উঠে ফ্রেস হয়ে নিন।তারপর খাওয়াদাওয়া হবে।
একটা টাওয়েল দিয়ে লোকটা চলে গেলো।অদ্ভূত চাহুনি তার!নামটাও জানা হলোনা।তবে অহনার কেমন জানি ভয় করছে।লোকটাকে চেনেনা,জানেনা।ভয়ানক ঠান্ডা গলায় কথা বলে।
রুম থেকে বের হলো সে।
রুম তো মনে হচ্ছে অনেকগুলো।
ডাইনিং রুমের স্পেস অনেক।
লোকটা পাশের একটা রুম থেকে বের হয়ে অহনাকে জিজ্ঞেস করলো,
-কি?কোনো সমস্যা?
-আপনার এখানে জানালা নেই কেন?
-এটা বেজমেন্ট।জানালা থাকবে কিভাবে?
কথাটা বলেই লোকটা আবার ধুকে গেলো রুমটাতে।
অহনার বুক কেঁপে উঠলো!লোকটার কোনো মতলব আছে নিশ্চয়!
পালাতে হবে এখান থেকে।চিন্তা করতে করতে ডাইনিং এর এক কোণে তাকালো সে।
কিছু একটা পড়ে আছে ওখানে।
নাড়াচাড়া করছে।
আলো কম ওখানে তাই বোঝা যাচ্ছেনা কি ওটা।
অহনা এগিয়ে গেলো জিনিসটার দিকে।
নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
নিথর পড়ে আছে।
অহনা আস্তে ধাক্কা দিলো।
কেপে উঠলো বস্তুটা।
দেখেই আঁতকে উঠলো অহনা!
মানুষ!
জলজ্যান্ত একটা মানুষ বাঁধা!


দুই


-কে আপনি?
-আপনি কে?
-লোকটা আমাকে বেধে রেখেছে।
-কেন?
-জানিনা।তবে অবশ্যই আমার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে।
-কারণ তো থাকবেই।তাকেই জিজ্ঞেস করবো।
-করুন।
-আপনি পাগল-টাগল না তো?
-বিশ্বাস করুন।লোকটা পাগল।আপনি কি লোকটার পরিচিত?
-জ্বী না।রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমার।উনি আমাকে হেল্প করেছেন।বাঁচিয়েছেন।
-ফালতু গল্প।মেরে ফেলার প্ল্যান করছে।আমার অবস্থা দেখছেন না আপনি?
-আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
অহনা ডাক দিলো লোকটাকে।
লোকটা রুম থেকে বের হলো।চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে চরম মাত্রায় বিরক্ত,
-কি ব্যাপার?ডাকছেন কেন?
-উনাকে ছেড়ে দিন।
-ছেলেটা একটা পাগল।তাকে ছাড়বো কেন?
-তাকে ছাড়ুন।
-নাহ।
-ছাড়বেন না?
-নাহ।
-আমি ছাড়লাম!
বলেই অহনা ছেলেটার দড়ি খুলে দিতে লাগলো।লোকটা ডাক দিলো অহনাকে।অহনা ফিরে তাকিয়েই চমকে গেলো!লোকটার হাতে পিস্তল!
-বেশি চালাকি করলে খুলি ফুটো করে দিবো মেয়ে!
-আপনি আমাকে বাঁচিয়ে এনেছেন?নাকি মারতে এনেছেন?
-দুটোই।মেয়ে মানুষ খুন করাটা আমার একটা নেশা।ছেলেটা একবার দেখে ফেলেছিলো এমন একটা কু-কাজ।ধরে এনে বেধে রেখেছি।হেহেহে!
এবার অহনা ঘাবড়ে গেলো।
লোকটা কি সাইকো!
এতোক্ষণ তো ভালোই মনে হচ্ছিলো।
লোকটা মনে হয় তার মনের কথা পড়ে ফেলেছে।জবাব দিলো,
-হ্যাঁ, আমি সাইকো।
-আমাকে নিয়ে আপনি কি করতে চান?
-তেমন কিছু নয়।২৪ ঘন্টা পর তোমাকে খুন করে রাস্তায় ফেলে আসবো।
-ছেলেটা?
-সে এখানেই থাকবে।না খাইয়ে মারবো ওকে।
-আর যদি আপনাকে আক্রমণ করি আমরা?
-পিস্তলটার কথা মনে থাকবে আশা করি।
বলেই লোকটা রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো আবার।
অহনা ছেলেটার হাতের বাঁধন খুলে দিলো।
হাত ঝাড়া দিলো ছেলেটা।
বয়স ৩০ এর মতো।
তবে দেখতে ছোট লাগছে।মায়া আছে চেহারায়।
-আপনার নাম?
-নাঈম।আপনার?
-অহনা।
-আপনাকে কি করবে শুনেছেন?
-হুম।পালানোর কোনো পথ আছে?
-লোকটা যেহেতু তার রুমের মধ্যে সেই সুযোগে আমরা দরজা খুঁজে বের করি চলুন।আমার জানা নেই।
-চলুন।
অহনা আর নাঈম মিলে খুঁজতে শুরু করলো।
দরজা পেলো ওরা। কিন্তু তালা মারা।
শক্তিশালি সিকিউরিটি দিয়ে রেখেছে লোকটা!
অহনা প্রশ্ন করলো নাঈমকে,
-কি করা যায়?
-তালা ভাঙ্গতে গেলে লোকটা শুনে ফেলবে।সে কিভাবে এতো নিশ্চিন্তে পাশের রুমে থাকছে এখন বোঝা গেলো।হাই সিকিউরড তার বেজমেন্টটা।
-হ্যাঁ সেটাই দেখতে পাচ্ছি।অন্য পথ চিন্তা করেন।
-তাকে খুন করতে হবে এখান থেকে পালাতে চাইলে।
-আমি এর আগে মানুষ খুন করিনি।
-এখন শিখতে হবে।
-আপনি পারবেন না কাজটা করতে?
-চেষ্টা করবো।


তিন


-শক্ত কিছু একটা খুঁজোন।
-রান্নাঘরে খুঁজে দেখি।
-চলুন।
দুজন খুব আস্তে আস্তে রান্নাঘরে ঢুকলো।
রান্নাঘরে তেমন কিছুই নেই।
থালা,বাটি....নাইফ!
নাইফ আছে একটা!
অহনা নাইফটা নিয়েই লাফিয়ে উঠলো।
তখনই দুর্ঘটনাটা ঘটলো।
লাফিয়ে উঠার কারণে তার মাথা বাড়ি লাগলো সাজিয়ে রাখা প্লেটগুলোতে।
ঝনঝন করে উঠলো সব।
লোকটা এক দৌড়ে এসে হাজির।
-কি ব্যাপা...
অহনার হাতে নাইফ দেখেই থমকে গেলো।চোখ সরু হয়ে গেলো,
-কি ব্যাপার?এটা তোমার হাতে কেন?
-আ...ও...ওই যে পেঁয়াজ কাটার জন্য।
-পেঁয়াজ দিয়ে কি করবে তুমি?
-কিছু তো একটা করতে হবে।খাবো।ক্ষুদা লেগেছে।
-আমাকে বললেই হতো।আর এই পাগলটা এখানে কি করে?
নাঈম কুঁকড়ে গেলো লোকটার চাহনী দেখে,
-আ..আ...আমি তো আসতে চাইনি।উনি এনেছে!
-উনি নিয়ে আসলেই তুই চলে আসবি ব্যাটা?যা ভাগ!
নাঈম বের হয়ে গেলো।লোকটা অহনাকেও বাইরে যেতে বলে কাজে নেমে পড়লো।রান্না করবে।
খাবার খেয়ে চুপচাপ বসে আছে দুজন।
লোকটা আবার তার রুমে ঢুকে পড়েছে।
তবে বোকার মতো নাইফটা রেখে গেছে টেবিলের উপর।
অহনা নাঈমকে বললো,
-ধীরেসুস্থে আক্রমণ করবো আমরা।একটু সময় নিয়ে।লোকটা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।
-ঠিক আছে।
-তুমি নজর রেখো লোকটার উপর।
-ঠিক আছে।
-আমার হাতে সময় খুব কম।তার টাইম মোতাবেক খুব একটা সময় পাচ্ছিনা আমি।তাই প্ল্যান যেন ফেইল না হয়।
-ঠিক আছে।
নাঈম লোকটার রুমের দরজার পাশে গিয়ে বসে থাকলো।
অহনা উঠে হাত মুখ ধুতে গেলো।একটু শুয়ে নিবে।যথেষ্ট ব্যথা করছে শরীর।
তবে শুতে গিয়ে যে ঘুমিয়ে পড়বে তা বুঝতে পারেনি!
চোখ খুললো অহনা।আস্তে আস্তে।
ঝাপসা লাগছে সব।
হঠাত মুখের উপর কিম্ভুতকিমাকার কিছু একটা ভেসে উঠায় লাফ দিয়ে উঠলো সে!
যেটা দেখে চিৎকার দিয়েছিলো সেই জিনিসটাও চিৎকার দিয়ে উঠলো তার দেখাদেখি!
-ওফ!নাঈম!
-আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিলে!
-এই মুখোশ পড়ে আমার মুখের সামনে কি করছিলে তুমি?
-প্র‍্যাকটিস করছিলাম।লোকটাকে মারার চেয়ে ভয় পাওয়ানোটা মজা পাবো বেশি!
-তাহলে পালাতে হবেনা আর।
-তা ঠিক।চলো।লোকটা ঘুমিয়ে গেছে।নাক ডাকছে জঘন্যভাবে।
-তুমি রেডি?
-হুম।
দুজনেই চুপচাপ এগুলো।
লোকটার দরজায় আস্তে করে চাপ দিলো অহনা।সে সামনে আছে।তার হাতেই নাইফটা।
নাঈম ছেলেটা আসলে ভীতু।
প্রথমে সাহসী দেখাচ্ছিলো তাকে।
কিন্তু সময় যতই যাচ্ছে ভয় গ্রাস করছে ওকে আস্তে আস্তে।
অহনা ঠিক করলো সেই মারবে।
তার বুকে কেন জানি সাহসটা বেশি।
বিপদ বেশি তারই।
লোকটার রুমে ঢুকলো।
একেবারেই অন্ধকার।
নাক ডাকার শব্দ আসছে।
লাইট কোনদিকে হতে পারে।
লাইট জ্বালাবে?
না থাক!
অন্ধকারেই ছুরি বসাবে ঠিক করলো অহনা।
পেছনে একবার তাকালো সে।নাঈম একটু দূরে আছে।
কিন্তু ছেলেটার দিকে দৃষ্টি দিলে হবেনা এখন।
লোকটাকে মারতে হবে পালাতে চাইলে।
নাইফটা আস্তে করে উপরে তুললো অহনা।বিছানায় খুব দ্রুতগতিতে নামিয়ে আনবে।
নাহলে মরবেনা।
যে ভাবা সেই কাজ।
আস্তে আস্তে হাত উপরে তুললো অহনা।
দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিচে নামিয়ে আনলো নাইফটা।
কিছু একটাতে গেছে গেলো নাইফ।
অহনা আবার মারলো।
আবার!
আবার!
আবার!
উন্মাদের মতো মারতে থাকলো,
-কুত্তার বাচ্চা!আমাকে মারবি?আমাকে?এখন কেমন লাগে?
কথাটা বলে আরো দুই-তিনবার মারলো সে।নাইফটা মনে হয় পুরোটা ঢুকানো যায়নি বডিতে।
হাত থেকে ফেলে দিলো হাতিয়ারটা।
-নাঈম লাইট অন করো তো।
ঝট করে লাইট অন হলো।
অহনা যা দেখলো তাতে চোখ কোঠর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো!
লোকটা ঠিক তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে!
বিছানায় কোনো মানুষ ছিলোনা!
একটা কুকুর রাখা বিছানায়।এটাকেই কুপিয়েছে সে এতক্ষণ!
নাঈমকে নিয়ে পালাতে হবে অথবা লোকটাকে খুন করা লাগবে।
-নাঈম কিছু পাও কিনা দেখো।প্লিজ!একটু সাহস করো!লোকটাকে খুন করা লাগবে।নাইফটা আনা সম্ভব না।
লোকটা হাসছে।ঠান্ডা দৃষ্টি এখনো!
-নাঈম!
নাঈমের দিকে ফিরে তাকালো অহনা।
অসম্ভব!
কি দেখছে সে!
নাঈম হাসছে!
হাতে রিভলবার!
অহনার দিকে তাক করা!
নাঈম হাসলেও তার কণ্ঠ অদ্ভূত রকমের ঠান্ডা,
-দুঃখিত অহনা অভিনয় করার জন্য!অভিনয় না করলে কাছে থেকে এতো আনন্দ পেতাম না!একটা মানুষ বাঁচার জন্য কি কি করতে পারে সেটা তোমার মতো একজন বন্দীর সাথে অভিনয়ের মাধ্যমে না থাকলে বুঝতেই পারতাম না!আমি অনেকদিন পর এমন আনন্দ পেলাম!অনেকদিন পর!আমার সারভেন্টটাও অস্থির অভিনয় করে!হাসান মিয়া,যাও দড়িটা নিয়ে এসো....কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তখেলা হবে!রক্তখেলা!

**********************************************************সমাপ্ত*************************************************************************************************

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.