নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয় করবো বাংলাদেশ ।।

বাংলাদেশপন্থী ।।

Aabid

মানুষের স্বভাব হচ্ছে পিছন দিয়ে টেনে ধরা ।সে চায়না তার সামনে দিয়ে কেউ এগিয়ে যাক ।খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এই স্বভাবের বাইরে থাকতে পারে ।যুগে যুগে তারাই মহাপুরুষ হয়েছে,হচ্ছে,হয়ে যাবে ।।(প্রথম লাইনটা আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক জাবেদ স্যারের ।পরের লাইনগুলি আমার লেখা)

Aabid › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি এবং তারা তিনজন...

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০

প্রথমেই আমার পরিচয়
দেই ।
আমি বৃক্ষ,বৃক্ষ মানব ।
আমি বহুদিন ধরে চিন্তা,
গবেষণা আর রাত
জেগে জেগে ভেবে একটা
জিনিস বুঝেছি যে আমি
মানুষ নই,আমি আসলে
একটা বৃক্ষ ।
আমার নিবাস ঐ দূর
কোনো বনের গভীরে
যেখানে মানুষের পায়ের
ছাপ পড়েনি,সেখানে
আমার সত্তা থাকে আর
শুধু একটা ফাঁপা বাঁশের
ন্যায় এই মনুষ্য সমাজে
আমি বিচরণ করছি এবং
আমার মনে হয় যে,
কোন এক রাতে আমি
ঘুমিয়ে পড়লে
জেগে দেখবো আমি
কোন এক গভীর বনে
দাঁড়িয়ে আছি,সেখানটা
আমার কাছে অপরিচিত
হলেও আমি সেখানের
বাসিন্দা ।
আমাকে ভুল করে কে
যেনো এই মানবসমাজে
রেখে গেছে ।
আমি বৃক্ষ,বৃক্ষ আমি,
আমি ও বৃক্ষ,বৃক্ষ ও আমি ।।


মজিদ সাহেবের
বয়স প্রায় ৮৫ বছর ।
পেশায় তিনি একজন
ভ্যানচালক ।
আমার সাথে তার
পরিচয় এক আকাশ কালো
মেঘলা দিনে ।
আমি যেনো কোথায়
গিয়েছিলাম ।
ফিরে আসছিলাম হেঁটে
হেঁটে ।
চারদিকে নিকষ কালো
আঁধারে ঢেকে গিয়েছিলো ।
আমি দ্রুত পায়ে হাঁটতে
লাগলাম ।
বিনামেঘে বজ্রপাত হচ্ছিল,
আমি ভয়ে,আতংকে চুপসে
যাচ্ছিলাম ঠিক তখন
মজিদ সাহেব পিছন থেকে
উঠে এসে বললেন-
বাবা,ভ্যানে উঠো ।

আমি তাকে বাসার
ঠিকানা বলিনি তবু সে
ঠিকঠাক আমাকে পৌছে
দিলো ।
আমি তাকে টাকা দিলেও
সে নেয়নি ।

সালাউদ্দীন সাহেব একজন
দিন মজুর,
দিন এনে দিন খান ।
কখনো মাটি কাটেন,
টুকিটাকি ব্যবসা করেন
আবার মাঝে মাঝে
বিরস হয়ে বসে থাকেন ।
আমার সাথে তার পরিচয়
অনেকটা অলৌকিকভাবে ।
আমি কলেজে যাচ্ছিলাম,
তখন নতুন কলেজে
উঠেছি ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে
কিছুদূর যেতেই দেখলাম
একজন পঞ্চাশর্ধ ব্যক্তি
একটা গাছ ধরে দাঁড়িয়ে
আছেন ।
তার পরণে একটা তালি
মারা লুঙ্গি,গায়ে তিলে
পড়া একটা পাঞ্জাবী ।
আমাকে দেখে বললেন-
বাবা,
আমাকে একটু হাসপাতালে
নিয়ে যাবে,আমার পা
মচকে গেছে ।
কিভাবে পা মচকালো আমি
তা জিজ্ঞেস করিনি ।
আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে
গেলাম ।
হাসপাতালে পা রাখতে
গিয়েই উনি বললেন-
বাবা পা ঠিক হয়ে গেছে ।
আমি কথা না বাড়িয়ে
চলে আসলাম ।

কাওসার কাগজ টোকায় ।
প্রতিদিন এক বস্তা কাগজ
টোকালে সে ৫০ টাকার
মতো পায় ।
একদিন দুপুরবেলা আমি
ঘুমাচ্ছিলাম ।
হঠাত্‍ ঘুমের ঘোরে
একটা শীতল হাতের
ছোঁয়া পেলাম আর শুনতে
পেলাম-
ভাই উঠেন,উঠেন ।
আমি আতংকে ঘুম থেকে
উঠে দেখি গায়ে ঢোলা
একটা জামা আর
হ্যাফপ্যান্ট পরা অবস্থায়
একটা ছেলে আমার খাটের
কিনারায় দাঁড়ানো ।
আমি ভয় পেলে বললাম-
নাম কি ? কি চাও ?
সে তার কাঁধে থাকা
ব্যাগ থেকে একটা ডায়রী
বের করে দিয়ে বললো-
এই নেন আপনার খাতা ।

আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম
কারন ডায়েরীটা আমার
জীবনের প্রথম লেখা
ডায়েরী ।
অসংখ্য শৈশব ঐ ডায়েরীতে
লিপিবদ্ধ ।
আমি ডায়েরী থেকে মুখ
ফিরিয়ে দেখি সামনের
ছেলেটি নেই ।
অন্য একদিনের কথা ।
আমি একা একা হাঁটতে
অনেকদূর চলে গেছিলাম ।
হঠাত্‍ ভয় লাগলো যে
বেশ দূরে এসে গেছি
ঠিক তখন দেখি সেই
ছেলেটি কাঁধে একটা
ব্যাগ নিয়ে আসছে ।
আমি তাকে ডাক দিয়ে
নাম জিজ্ঞেস করলাম ।
সে বললো তার নাম
কাওসার,সে কাগজ
টোকায় ।
তার আপন বলে জগতে
কেউ নাই ।
কাওসার আমার সাথে
বাড়ি পর্যন্ত আসলো ।
আমি তাকে থাকতে
বললাম ।
সে বললো,আমি ঘুমাই না ।।

-বাবা,কেমন আছো ?
:জী,ভালো ।আপনি ভালো ?
-গরীব মানুষের আবার
ভালো থাকা ।বাবা,আমি
তোমার পাশে বসতে পারি ?
:হ্যা,পারেন ।
আপনার জন্ম কত সালে,
মনে করতে পারবেন ?
-সেটা তো বলতে পারবো
না বাবা,আমি মূর্খ মানুষ ।
তয় বাবা,আমি ৫২ সাল
দেখেছি,ছেলেগুলি কিভাবে
বুকের রক্ত দিলো তা
জানি ।
:ভাষা আন্দোলন কথা
বলছেন ?
-হ বাবা,টগবগে কটা
ছেলে সামান্য একটা
ভাষার জন্য জীবন দিলো ।
:সামান্য বলছেন কেনো !
-বাবারে,
যার জন্য জীবন দিছে
তার কি কোনো দাম আছে ?
ভ্যান চালাই,কত জন ভ্যানে
ওঠে,কৈ কাউকে তো শুদ্ধভাবে
বাংলা কৈতে শুনিনি,
কি কি আবিজাবি মিশিয়ে
কথা কয় আর কিসব গান
শোনে আবার তার সাথে
সুর মেলায় ।ছেলেগুলি
ছিল বোকা,শুধু শুধু
জীবন দিয়েছে ।
একটা যুবকও দেখিনা
যার মইধ্যে দেশপ্রেম আছে ।

-আমি কি বসতে পারি ?
তাকিয়ে দেখি সালাউদ্দিন
সাহেব ।আমি বললাম-
জী বসুন ।
-কি কথা বলছেন আপনারা ?
:৫২ সালের ভাষা
আন্দোলনের কথা ।
এখনকার যুব সমাজ বাংলা
ভাষার প্রতি টান অনুভব
করেনা তাই ।
-আরে বাবা,আমি ৭১
সালে একজন যুবক ছিলাম ।
যখন শুনলাম পাকিস্তানী
হারামীরা আমাদের দেশের
মানুষ মারছে,আমি তখনই
যুদ্ধে চলে গেছিলাম ।
:আপনি মুক্তিযোদ্ধা !
-কাউরে বলিনারে বাজান ।
কত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধ
হতে দেখলাম আর আমার
বড় মেয়েটাকে গত বত্‍সর
যৌতুকের টাকা দিতে পারি
নাই বলে তাকে মেরে ফেলা
হয় ।

সালাউদ্দীন সাহেব কেঁদে
উঠলেন ।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো ।
আলো ঝাঁপসা হতে লাগলো ।
দূর থেকে কে যেনো হেঁটে
আসছিলো ।
কাঁছে আসতেই দেখি
কাওসার ।
আমি বললাম,
কি ব্যাপার কাওসার,
কেমন আছো ?
কাওসার করুণ কন্ঠে
বললো- ভাই তিনদিন
কিছু খাইনা,হাঁটতে কষ্ট
হচ্ছে ।

তার কথা শুনে মজিদ
ও সালাউদ্দীন সাহেব
একসাথে বলে উঠলেন-
খাবা কিভাবে বাবা,
দ্যাশের সবটেকা,খাবার
তো বড়লোককে ঘরে ।

মজিদ ও সালাউদ্দীন
সাহেব একসাথে উঠে
কাওসারকে বললেন-
আয় বাবা আমাদের
সাথে...
কাওসার হাঁটা শুরু করলো ।
আমি উঠে বললাম-
আপনারা কারা ?
তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে,
সবকিছু অস্পষ্ট ।
তারা তিনজন একসাথে
আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
আমরা বৃক্ষ !!!




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.