![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- স্যার, জামা খুলবো?
- না।
- কেনো স্যার, আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?
- হয়েছে।
একটি সিগারেট মুখে নিয়ে মেয়েটিকে এক পলক দেখে নিলাম।
পোষমানা পাখির মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে।
উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের, চোখে-মুখে মায়ার ফুলঝুরি।
উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন/চার ইঞ্চি হবে হয়তো!
মেয়েটির চেহেরায় অন্যরকম একটা আকর্ষণ লক্ষ্য করছি,
এক অদ্ভুত টান!
কোনো সেক্সুয়াল টানের কথা বলছি না।
হঠাৎ করেই মেয়েটির প্রতি কেমন জানি এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে!
মনে হচ্ছে আমার হারিয়ে যাওয়া কাউকে আজ বহুদিন পর খুঁজে পেয়েছি।
জীবনে অনেক নারীর কাছাকাছি এসেছি।
আগে কখনো এমনটি অনুভব করিনি।।
হঠাৎ হাতের আঙ্গুলে আগুনের স্পর্শ পেয়ে দেখি সিগারেটটি জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে গেছে।
আমি তাকে বললাম,
- যাও, বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসো।
- লাগবে না স্যার। ফ্রেশ আছি।
আপনি চাইলে শুরু করতে পারেন।
- ঠিক আছে, তুমি একটু বিশ্রাম নাও।
আমি সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে রুমের বারান্দায় চলে গেলাম।
সিগারেটের অভ্যাস ছাত্রজীবনে তেমন ছিলো না।
২৫/২৬ বছর বয়স থেকে শুরু করেছি।
তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ১/২টা জ্বালিয়ে ধোঁয়া বের করতাম আর ছাড়তাম।
নেশা হিসেবে নয়, কৌতুহলে।
আর এখন প্রতিদিন কয়টি প্যাকেট শেষ করি,
তার কোনো হিসেব নেই।
মেয়েটি এখন বিছানায় বসে আছে।
তাকে উঁকি দিয়ে দেখে নিলাম।
শহর ঘুরে বেড়ানো আমার খুব পুরনো অভ্যাস।
নতুন নতুন শহরে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা সঞ্চার করি।
রাত কাটানোর জন্য বেছে নেয় ভালো মানের একটি আবাসিক হোটেল।
তবে মফস্বল শহরগুলোতে মন মতো আবাসিক হোটেল পাওয়া যায় না।
যা পাওয়া যায়, তাও আবার যথেষ্ট নিরাপদ নয়।
আজ যে শহরে আছি,
এটি দেশের অন্যতম একটি শহর।
তাই মফস্বল শহরের মতো ভালো হোটেল খুজতে বেগ পেতে হয়নি। এখন যে হোটেলে আছি,
এটি শহরের নামি-দামি হোটেলের একটি।
রুম নিয়ে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখনি হোটেলের এক স্টাফ এসে বললো,
- এক্সিউজ মি স্যার।
- হুম, কিছু বলবেন?
- স্যার, আপনার কিছু লাগবে কিনা জানতে এসেছি।
- থ্যাংকস
- স্যার, কিছু লাগলে বলতে পারেন। আমরা অতিথির জন্য সবকিছুর সুব্যবস্থা করে থাকি।
- মেয়ে হবে।
- জ্বি স্যার। কেমন বয়সের লাগবে?
- ১৮/১৯ হলে ভালো হয়
- স্যার, দেখতে হবে তাহলে। তবে ২৫-৩০ বছর বয়সের অনেক আছে।
- দেখে জানান।
- আর কিছু লাগবে স্যার?
- আপাতত না।
সালাম দিয়ে চলে গেলো।
হোটেলে একা থাকলে বিষণ্ণতা বেড়ে যায়।
তাই সব সময় সঙ্গী হিসেবে কাউকে প্রয়োজন।
এইভাবেই টাকার বিনিময়ে কেউ না কেউ জুটে যায়।
আজকের সঙ্গী আমার এই মেয়েটি।
হোটেলের স্টাফ তাকে ঊনিশ বছর বয়সী বলে চালিয়ে দিয়ে গেছে।
যদিও মিনিমাম বাইশ বছর বয়স হবে।
মেয়েটির চোখে-মুখে একটি নিষ্পাপ ভাষা দেখতে পাচ্ছি।
আজ হঠাৎ করে কেনো জানি কুহেলিকার কথা মনে পড়ছে খুব!
অনেক ভালোবাসতাম তাঁকে।
সে এখন আমার নেই।
কিন্তু ভালোবাসাটা রয়ে গেছে।
যাক, সে এক অন্য গল্প।
অনবদ্য প্রেমের গল্প।
সময় করে একদিন বলবো।
যা বলছিলাম, এইরকম সাত-পাঁচ চিন্তে করে তাঁকে আর ফিরিয়ে দেইনি।
রাতের ঘড়িরকাটা 'একটা'কে অতিক্রম করলো।
আমার হাতের সিগারেটের প্যাকেট ইতিমধ্যে খালি হয়ে গেছে।
আমি রুমে প্রবেশ করলাম।
মেয়েটি আগের মতই বসে আছে বিছানায়।
তবে তার দু'চোখ এখন ঘুমে ভারী হয়ে গেছে তা বুঝা যাচ্ছে।
আমি তাকে বললাম,
- তোমার ঘুম পাচ্ছে মনে হয়!
- না স্যার, আমি রাতে ঘুমাই না। আপনি শুরু করুন।
- তোমার নাম কি?
- বেশ্যা, ভদ্রলোকেরা বলে পতিতা।
- ওহ, পরিবারে কে কে আছে তোমার?
- স্যার, আপনার কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি জামা খুলছি, আপনি শুরু করুন।
- সমস্যা নেই। এখন জামা খুলতে হবে না।
আমি তোমার সাথে গল্প করবো এখন।
- স্যার, আমার কাজ গল্প করা নয়। আপনি যে কাজে আমাকে নিয়েছেন, সেই কাজ করুন।
- তোমার কথা শুনে তোমাকে শিক্ষিত মনে হচ্ছে।
আচ্ছা, তুমি এই কাজ করে কত টাকা পাও?
- আমাদেরকে শতকরা ৪০% দেওয়া হয়। হোটেল নেয় ৬০%। যেমন ক্লায়েন্ট যদি হোটেলকে ১০০০টাকা দেয়,
তাহলে আমি পাবো ৪০০ টাকা।
- এটা তো তোমাদের জন্য অনেক কম।
- অন্য হোটেলগুলো আরো কম হারে টাকা দেয়।
- এছাড়া আর কোনো টাকা পাও না?
- পাই, ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে যা বকশিস দেয়, তা আমার থাকে। আপনি এতো কিছু জেনে কি করবেন? আপনার কাজ শুরু করুন।
- এটাই আমার কাজ। তোমার সাথে আমি সারারাত গল্প করবো। আমিও তোমাকে বকশিস দিবো।
- না, আমি ভিক্ষুক নয়। শরীরের বিনিময়ে খাই। কারো করুণা নেয় না।
- ঠিক আছে, কিছুক্ষণ কথা বলে নিই....
চলতে থাকে কথা। একসময় সে খুব ফ্রি হয়ে আসে। সিদ্ধান্ত আমি আগেই পরিবর্তন করে নিয়েছি, তার সাথে জৈবিক লিপ্সা মেটাবে না আজ।
সঠিক সময়ে বিয়ে করলে তার বয়সী না হলেও তার
কাছাকাছি বয়সী একটি কন্যাসন্তান আমারও থাকতো।
জীবনের আজ পঁয়তাল্লিশ বছর পরে এসে জেনেছি,
কারো কারো জীবনে বাস্তবতা কত কঠিন।
পতিতা হিসেবে যে মেয়েটি আজ আমার রুমে প্রবেশ করেছিলো, বের হয়ে গেলো একজন আদর্শ নারী হওয়ার প্রত্যয় বুকে নিয়ে।
সেই সাথে বদলে দিয়ে গেলো আরেকটি অন্ধকার জগতের এই আমাকে।
কথা বলে জেনেছি সে একটি ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে।
পড়াশুনার খরচ যোগাতে সে মাঝে-মধ্যে হোটেলে যায়।
সংসারে আছে এক বৃদ্ধা মা আর প্রতিবন্ধী ভাই।
তাই বাসায়ও টাকা পাঠাতে হয়।
উপায়ন্তর না দেখে সে এই পতিতাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছে।
আজ সতের মাস পর।
তার সাথে দেখা হলো।
অবশ্য তা অপ্রত্যাশিত ছিলো না।
কারণ আমি জানতাম সে এইখানে আছে।
এই ঠিকানাটি আমিই তাকে দিয়েছিলাম।
এটা আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষীর কোম্পানি।
তার পার্টটাইম চাকরি হয়েছিলো এইখানে।
তবে এখন তা ফুলটাইম।
বেতনও খুব সম্মানজনক।
এইভাবে-ই বদলে যায় কিছু মানুষের জীবন।
একজন মানুষের সামান্য সহযোগিতা একটি জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন।
©somewhere in net ltd.