নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃত্ত

বিবর্ণ হৃদয়

আবেগের কাছে বিবেক পরাজিত হলেই সভ্য পৃথিবীতে অসভ্য মানুষের যাত্রা শুরু হয়।

বিবর্ণ হৃদয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার পৃথিবীর সন্ধানে.....

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

অনেক মানুষের ভীড়। ভীড়ের মাঝখানে উঁকি দিয়ে দেখি একটি লাশ। একটি মেয়ের লাশ। খুব চেনা লাগছে। সারা দেহে রক্তমাখা। কাছে যেতেই আঁতকে উঠলাম। সে তো আর কেউ নয়! অহনা মারা গেলো তাহলে! আমি তো এসেছি, কিন্তু সে আমাকে রেখে এইভাবে চলে গেলো কেনো?

প্রায় দু'বছর আগ থেকে তাকে আমি চিনি। আমাদের পরিচয় ফেসবুকে। হোম পেইজে তার ফেসবুক আইডি দেখতে পাই। পরে তার টাইমলাইন দেখে অজানা এক টানে তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই। কয়েক দিন পর সে আমাকে নক করে। সে আমার পরিচয় জানতে চায়। সবেমাত্র একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে আমি একটি গভর্নমেন্ট জব করছি বলে তাকে জানাই। সে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ সেমিষ্টারে অধ্যয়ন করছে বলে আমাকে জানায়। তারপর থেকে রাত-দুপুরে তার সাথে আমার চ্যাট চলে।

চেনা-জানার পাঁচ মাস পর সে আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এ্যাকচেপ্ট করে। সে তার সাজানো স্বপ্নগুলো আমাকে শুনাতো, আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। নিজের অজান্তেই তার স্বপ্নে আমি জড়িয়ে যাই। তার স্বপ্নগুলো আমার হয়ে যায়। ভালোবেসি ফেলি খুব। কিন্তু বলার সাহস পাই না। যদি ভুল বুঝে! যদি আমাদের এই সুন্দর সম্পর্ক ভেঙে যায়! হারিয়ে ফেলি যদি তাকে। দ্বিধার মাঝে কেটে গেলো দেড়বছরের বেশি সময়। বলা হলো না তাকে ভালবাসি।

একদিন অফিস থেকে ফিরে ফেসবুক ওপেন করতেই দেখি অহনার এক'শ ষোলটি ম্যাসেজ। ম্যাক্সিমাম "হ্যালো" আর "শুনতে পাচ্ছো কি" লিখা। কয়েকটি ম্যাসেজে লিখা "ইমার্জেন্সী তোমাকে প্রয়োজন " শেষের একটি ম্যাসেজে তার সেলফোন নাম্বারটি পাই। সাথে সাথে কল করি। কিন্তু দেখি নাম্বার বন্ধ। টেনশনে পরে গেলাম। কিভাবে তার সাথে কন্টাক্ট করা যায় ভাবছি। তার কোনো ঠিকানা আমার জানা নেই। শুধু তার ভার্সিটির নাম জানি। তবে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান তখন বন্ধ ছিলো। ফেসবুক ওপেন করে বসে আছি, তার অপেক্ষায়। কিন্তু সে আর আসে না। একটু পরপর তার নাম্বার ডায়াল করি, সে একই কথা "এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না"। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা, সারা রাত তার অপেক্ষায় বসে আছি। তার ফেসবুকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছি, কিন্তু কোনো রিপ্লাই আসছে না।

সকালে তার নাম্বার ডায়াল করতেই রিং হলো। মনে হলো প্রাণ ফিরে পেলাম। কিন্তু বেশ কয়েকবার কল দিলাম, কেউ রিসিভ করছে না। সারাটি দিন এইভাবে কেটে গেলো, তার সাথে কথা হয়নি।
রাত একটার পর হঠাৎ তার নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করতেই বলল,
- আমি অহনা
- অহনা, আমি শ্রাবণ।
- হুম, জানি।
- কিভাবে জানো? তুমি কেমন আছো?
- তুমি ছাড়া কেউ আমাকে এতবার কল দেয়ার কথা নয়। শ্রাবণ, আমি ভালো নেই। তোমার সাথে আমার অনেক কথা ছিলো।
- হুম, বলো।
- সরাসরি বলতে হবে।
- ঠিক আছে, আমি আসছি। বলো কোথায় আসতে হবে?
- (চাপা হাসি হেসে) আরে পাগল, এতো রাতে আসতে হবে না। কাল সকালে ঢাকা ভার্সিটির আশে-পাশে আসতে পারবে?
- হুম, এক'শবার পারবো।

সারারাত আমাদের কথা চলে। জানতে পারি যে, তার মোবাইল তার কাছে ছিলো না, তাই সে কল রিসিভ করতে পারেনি।

সকালে পরিপাটি হয়ে বের হলাম। আজ প্রথম তার সাথে আমার সরাসরি দেখা হচ্ছে। তবে ফেসবুকে তাকে দেখেছি আগে। শাহবাগ থেকে তার জন্য একগুচ্ছ ফুল নিলাম। কতক্ষণ অপেক্ষা করার পর অহনা এলো। তার সুন্দরের কোনো উপমা আমার জানা নেই। থ্রি-পিস পড়ে আকাশ থেকে কোনো ডানাকাটা পরী নেমে আসছে মনে হলো। কাছে আসার পর আমি অপলক তাঁকিয়ে রইলাম তার পানে। সে মুচকি হেসে কথা বলা শুরু করলো।

কথা বলছি আর পাশাপাশি হাঁটছি। দুপুরে একটি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করলাম দু'জন। পরে রিকসায় ঘুরলাম অনেকক্ষণ। বিকেলে ধানমন্ডির লেকে গিয়ে বসলাম। সে আমাকে জানালো ফ্যামিলি তার বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু আমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না সে এখন। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমি রাজি হয়ে গেলাম। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করলাম আমরা। তারপরেই ঘটে গেলো আসল বিপত্তি। স্বপ্নগুলো যেনো একমুহূর্তে তছনছ হয়ে গেলো। দু'জন দু'পথে চলে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে চির অচেনা আমরা।

বাসায় এসে অনেকক্ষণ একা একা কাঁদলাম। কি অপরাধ ছিলো আমার ভালোবাসার! এমন কেনো হলো! আমি তাকে ভুলতে পারছি না। কিন্তু ভুলে যেতে যে হবে।

কয়েকমাস কেটে গেলো। অহনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমি বদলি হয়ে ঢাকার বাইরে চলে এসেছি। হঠাৎ একদিন জানতে পারি অহনা মানসিকভাবে অসুস্থ। আমি তার নাম্বারে কল দিলে তার ছোট বোন আমাকে তা জানায়। পরে জানতে পারি যে, আমার কাছ থেকে যাওয়ার পর থেকেই সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। তার ফ্যামিলি থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আমার সেলফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

আমি আজ ফিরে এসেছি অহনার কাছে। ধর্মীয় দেয়াল থাকায় দু'জন দু'পথে চলে গিয়েছিলাম। অহনা খ্রিষ্টান আর আমি মসুলমান এটা আমরা প্রথম জানতে পারিনি। বিয়ের পরিকল্পনা করার পর জানতে পারলাম একে অপরের ধর্ম। তারপর নিজের কাছ থেকে, লালিত ভালোবাসার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য দু'জন চলে যাই দু'পথে।

আজ সকল বাঁধা তুচ্ছ করে আমি অহনার কাছে ফিরে এলাম, আর সে কিনা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে অহনা চলে গেলো অন্য পৃথিবীতে। আমিও ধীরে ধীরে পা বাড়ালম সেই পৃথিবীর সন্ধানে। এইপারে হয়নি মিলন, হয়তো হবে ওপারে......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:২৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভাল লিখছেন
+++++++

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৩৫

বিবর্ণ হৃদয় বলেছেন: #মনিরা

ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.