![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদিম সমাজের অর্ধনগ্ন মানুষগুলোকে দেখেছেন হয়তো বিভিন্ন মুভির সুবাধে।
পুরুষ'রা তাদের লিঙ্গ আড়াল করে রাখতো গাছের পাতা বা ছাল দিয়ে।
নারীদের ক্ষেত্রেও ছিলো একই অবস্থা।
তবে কোনো কোনো আদিম সমাজে নারীদের বুকের বিশেষ অংশটিও ঢেকে রাখতে দেখা যায়।
এই সমাজে নারীদের তেমন মূল্যায়ন না করা হলেও তাদের নির্যাতন করা হতো না।
তারপরেও আমরা তাদের জানি বর্বর অসভ্য জাতি হিসেবে।
আর একটু এগিয়ে আসি।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর আগমনকালীন সময়।
আরবে এই সময়টাকে বলা হতো অন্ধকারচ্ছন্ন যুগ।
তখন মেয়ে শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো।
নারীদেরকে দাসী বা যৌনকর্মী হিসেবে বাজারে কেনাবেচা করা হতো।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এই অন্ধকার থেকে নারীদের মুক্তির পথ খুজে বের করেন।
সময়ের পরিবর্তনে জানা যায় নারীদেরকে ইসলাম ধর্ম দিয়েছে অনেক বেশি মর্যাদা ও সম্মান।
যখন ছোট ছিলাম।
দেখেছি আশে-পাশের পুরুষদেরকে,
যারা নিজের রাগ মেটানোর জন্য বউকে পিটাইতো।
অনেক সময় দেখা গেছে স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রী মারা যেতে,
আবার কেউ কেউ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে।
জহির রায়হানের "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসে বউ পিটানো চিত্রটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
সময়ের পরিবর্তন সভ্যতার উন্নয়ন।
শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার থেকে মুক্তি দেয় এবং দিচ্ছে।
শিক্ষা শুধু শিক্ষিতজনকেই আলোকির করে না,
সেই আলোয় বিকশিত হয় পুরো সমাজ ব্যবস্থা।
আমি যাদেরকে আগে বউ পিটাতে দেখেছি,
তারা কিন্তু এখনো শিক্ষিত হয়নি।
তবে তারা এখন আর বউকেও পিটায় না,
এই যে বললাম, শিক্ষার আলো একজন দু'জনের মাধ্যমে সমগ্র সমাজ ব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে,
সেটার প্রভাবেই তারা প্রভাবিত বা বলা যায় আলোকিত।
তবে এই পুরুষ শাসিত সমাজে দূর্বলের উপর সবলের নির্যাতন এখনো পুরো মাত্রায় বন্ধ হয়নি।
আর এই সমাজে নারীকেই গণ্য করা হয় দূর্বল প্রাণী হিসেবে।
এখনো দেখি স্বামীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নারী'রা ছুটে আসে বিভিন্ন বিচারালয় বা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জানা যায় যে, একজনের প্রতি অপরজনের সন্দেহ বা অবিশ্বাস অথবা যৌতুকের বকেয়া আদায়ের জন্য এই নির্যাতন চলে।
এই নির্যাতন একেক শ্রেণীর মানুষ একেকভাবে করে থাকে।
অতি নিম্ম লেভেল থেকে সর্বোচ্চ লেভেল পর্যন্ত এই নারী নির্যাতন বিশেষ করে বউ নির্যাতন লক্ষণীয়।
নিম্ম শ্রেণীর মানুষ যে নির্যাতন করে দৈহিকভাবে,
উচ্চ শ্রেণীর মানুষ তা করে মানসিক টর্চারের মাধ্যমে।
এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে,
শিক্ষার আলো কি তাহলে এই আধাঁর দূর করতে ব্যর্থ?
না, শিক্ষার আলো কখনো ব্যর্থ হয় না।
তবে দুর্জন বিদ্যান বলে একটি ব্যাপার আছে।
এই দুর্জন বিদ্যান নিজেরা যেমন বিবেক-মনুষ্যত্বহীন হয়,
তেমনিভাবে সমাজের চারিপাশকে তারা কলুষিত করে।
তাই তাদের আর তাদের চ্ছত্রছায়ায় থাকা মানুষগুলোকেই বউ পিটাতে দেখা যায়।
আদিম সমাজে কিন্তু এই ধরণের নির্যাতন ছিলো না।
তারপরেও আমরা সেই সমাজকে অসভ্য সমাজ হিসেবে জানি।
আরবের অন্ধকার যুগে নারীদের মূল্যায়ন না করলেও কিন্তু বউ পিটানোর দৃশ্য ছিলো না তখন।
কিন্তু এই যুগে সভ্যতার মুখোশ লাগিয়ে কিছু পুরুষ এমন সব কাজ করে যাচ্ছে যা অসভ্য যুগের মানুষগুলিও কখনো করেছে বলে জানা যায় নি।
এখনো কিছু পুরুষ নিজের স্ত্রীকে অর্ধাঙ্গিনী ভাবতে পারেনি।
তার সামনে আবির্ভূত হয় একজন শাসক হিসেবে।
বাইরে কারো সাথে ঝামেলা হলে ঘরে গিয়ে বউকে নির্যাতন করে তার প্রতিশোধ নেয়।
পুরুষ তার নিজের বিশাল বড় বড় ভুলগুলোও তার চোখে ধরা পড়ে না।
কিন্তু তার স্ত্রীর সামান্যতম ভুল আকাশের সমান বড় মনে হয়।
সেই পুরুষ একবারও ভাবে না, যে মেয়েটি তাকে বিশ্বাস করে তার নিজের মা-বাবা অর্থাৎ সকল আপনজন রেখে চলে এসেছে তার সাথে, তাকে সে কিভাবে অবিশ্বাস করে?
কিভাবে তার দেহে-শরীরে আঘাত করে?
এখনো অনেক পুরুষ বিয়ে করে শুধুমাত্র তার দেহ ভোগ করার জন্য।
বিয়েটাকে নেয় ভোগের লাইসেন্স হিসেবে।
দেহের তুলনায় মনের গুরুত্ব তাদের কাছে ক্ষীণ।
বউয়ের চাওয়া-পাওয়া,
ভালো লাগা খারাপ লাগা তাদের কাছে অর্থহীন।
এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সেই আদিম যৌন খেলায় তাদের সহধর্মিণীর মতামত বা ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা বা মূল্যায়ন করা হয় না।
তারপরেও ঘুরেফিরে সকল দোষে দুষ্ট করা হয় নিজের বউকেই।
এই পুরুষ শাসিত সমাজে এখনো অনেক পুরুষ নিজের বউকে পিটিয়ে কৃতিত্ব দেখায়।
আমি সেই সকল পুরুষ আর আদিম অসভ্য সমাজের বর্বর মানুষগুলির মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনা।
তবে ধরণগত হালকা পার্থক্য আছে।
আদিম সমাজের মানুষগুলো ছিলো মুখোশহীন অসভ্য যদিও তারা এইভাবে বউ পিটাইতো না,
আর বর্তমানের এই শাসক শ্রেণীর পুরুষগুলো হচ্ছে মুখোশধারী অসভ্য।
তবে এটাও সত্য যে পুরুষ মানেই শাসক নয়,
বেশিরভাগ পুরুষ-ই বিশ্বাস করে তার স্ত্রী তার অর্ধাঙ্গিনী।
একজন ঘরের বাইরে বা দেশের বাইরে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে,
আর অপরজন সংসার দেখে,
সন্তানদের লালন-পালন করে।
অথবা সেও তার স্বামীর সাথে অর্থ উপার্জন করে,
দু'জন মিলেই সন্তান লালন-পালন করে।
একে অপরকে বিশ্বাস করে।
কারণ বিশ্বাস হচ্ছে ভালোবাসার মুল শক্তি এবং সুখের অন্যতম মন্ত্র।
আর প্রকৃত ভালোবাসা তাদের সংসারেই বিরাজ করে।
কাজেই বলা যায়, বউকে পিটানো বা কোনো টর্চার করার মাঝে কোনো কৃতিত্ব নেই।
যা আছে, তা হচ্ছে অসভ্যতা, বর্বরতা, হীনতা ও মনুষ্যত্বহীনতা।
আসুন নিজেদের স্বার্থে এই অসভ্যতার বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসি এবং প্রকৃত মানুষ হই।
©somewhere in net ltd.