নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লালমিয়ার নতুন বউ!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

লাল মিয়ার নতুন বউ সমলা, ভোর রাতে বদনা হাতে বাইরে গেল। ফিরে এল লাশ হয়ে। ‘আমি মরে গেছি, জলদি দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন’ বলেই লাশটা লাল মিয়ার পাশে লেই মেরে শুয়ে পড়ল। লাল মিয়া এটা-সেটা বলে, বউয়ের কোনো সাড়া-শব্দ নেই। সে হাত দিয়ে দেখে বউ তার পাথরের মত শক্ত। ভয়ে লাল মিয়ার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। সে কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে মেঝেতে পড়ে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিল।

তার চিৎকার চেচাঁমেচিতে পাড়ার লোকের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে’ বলতে বলতে লোকজন এসে ভিড় করেছে লাল মিয়ার ঘরে ও বাইরে। লাল মিয়া প্রলাপে-বিলাপে কেঁদে-কেটে হয়রান। খাটে তার বউয়ের লাশ।

কৌতূহলী লোকের কাছে প্রিয়তমা বউয়ের লাশ হওয়ার কাহিনী বয়ান করতে করতে লালের মুখে ফেনা উঠে গেছে।

দুই.
প্রতিবেশিরা লাল মিয়ার বাড়ির উঠোনে বসে মেলা সময় ধরে শলা-পরামর্শ করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, ‘লাশ দ্রুত কবর দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দা, কোদাল, খুন্তি, বাঁশ, তুস, খেজুর পাতা, কলাপাতা, চাটাই ইত্যাদি নিয়ে গোরস্থানে চলে গেল কয়েকজন। পুরোদমে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা।

ভেতর বাড়ির উঠোনের এক কোণায় চৌকি ফেলে এর ওপর মশারী টানা হয়েছে। তার চারপাশে সাদা শাড়ির বেড়া। এখানে লাশের গোসল হবে। মলিন মুখে মহিলারা রান্না ঘরে বড় ডেক্চিতে বড়ই পাতা-পানি গরম করছে। এক বৃদ্ধ মহিলা চৌকির কোণায় সাবান আর তোয়ালে হাতে নিয়ে চুপ করে বসে আছেন লাশ ও গরম পানির অপেক্ষায়। দু‘জন শক্ত মহিলা ধরাধরি করে গরম পানির ডেক্চিটা দিয়ে গেল বুড়ির সামনে। তিনি লাশের গোসল দিবেন।

একজন দায়িত্বশীল মহিলা এসে ব্যস্থভাবে আদেশের সুরে বলল, ‘ভেতর বাড়িতে কোন পুরুষবেটা থাকতে পারবে না, সবাই বাইরের উঠানে চলে যান’ তার কথায় সবাই নিঃশব্দে চলে গেল বাইরের উঠোনে। মহিলা ঘরে ঢুকে দেখে লাল মিয়া খাটের পায়ায় হেলান দিয়ে বিলাপ করছে, ‘আমার বউ কত আনন্দে বাপের বাইতে বেড়াইতে গেলো। আগামীকাল তার আসার কথা। হ্যায় আইলো রাইতে। তুই কেন এভাবে আইলি আর আমারে ছাইড়া চলে গেলিরে সমলা...।’

সে এসব বলে কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মহিলা লালকে বলল, ‘এই, তুইও বাইরে যা, এখন লাশের গোসল হবে, এখানে কোনো পুরুষবেটা থাকতে পারবে না।’ এ কথা শুনে লাল মিয়া চোখের পানি ও নাকের পানি এক করে ভো-ভ্যা করে কী যে বলল তার কিছুই বুঝা গেলো না। মহিলাটি লালের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ‘আইচ্ছা তুই এহানেই থাক্। কোন ঝামেলা করবি না কইলাম, বহুত কানছছ আর কান্নাকাটির কাম নাই, এহন বইয়া জিরাইয়া ল।’ লাল মিয়া বিলাপ বন্ধ করে অনুগত শিশুর মতো বসে রইল।

তিন.
দু‘জন মুরুব্বিগোছের মহিলা লাশের ওপর মশারী টেনে ধরেছে। শক্ত চার মহিলা লাশ নিয়ে আসবে বাইরে। লাশের মাথার দিকে দু’জন আর পায়ের দিকে দু’জন ধরাধরি করে লাশটা উপরে তুলে ধরতেই লাশটা বলে উঠল, ‘আস্তে ধইরেন গো, ব্যথা পাই, মরছি হেই কোনসমে আর এহন দিবেন গোছল?’ এ কথা শুনে মশারীধারী ও লাশধারী ছয় মহিলা ধড়াম করে মশারীসুদ্ধ লাশ খাটে ফেলে দিয়ে লাফিয়ে গিয়ে উঠোনে পড়ল। ওরা চীৎকার চেঁচামেচি করে পাড়া মাথায় তুলল। বাইরের উঠোন থেকে স্রোতের মত মানুষ এসে ভিড় করছে এখানে। ভয়ার্ত মহিলারা নাকে মুখে কথা বলে ভিড় ঠেলে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালিয়ে গেল। ছয় মহিলার কান্ড দেখে উপস্থিত লোকেরা কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে ভয়ে তারাও দৌড়তে লাগল। পাশের বাড়ির লোকেরা যার যার ঘরে গিয়ে খিল এঁটে বসে হাঁপাতে লাগল। দৌড়ে পেছনে পড়া মহিলা ও শিশুদের ভয়ার্ত চিৎকারে পাড়ার কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে এলোপাতাড়ি ছুেটাছুটি করছে। কয়েকজন লাফিয়ে গিয়ে গাছে উঠে ডালপালা ঝাপটে ধরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। মুহুর্তের মধ্যে লাল মিয়ার বাড়ি জনশূণ্য হয়ে গেল। লাল মিয়া একা অসহায়ভাবে উঠোনে বসে রইল। ঘরে বউয়ের লাশÑবাইরে লাল মিয়া। মাঝখানে অন্তহীন ভয়ঙ্কর দূরত্ব!

চার.
হই-হাঙ্গামা শুনে কয়েকজন মুরুব্বি এলেন লালের বাড়ি। তারা সমস্ত ঘটনা শুনে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এক মুরুব্বি আরেক মুরুব্বিকে আঙুল খাড়া করে বললেন, ‘মাতবর, এটা কিন্তুক অবহেলার বিষয় না; আইজকা লালেরটা খাইছে, কাইলকা খাবে আমারটা, পরশু খাবে তোমারটা। গোটা গেরাম ছারখার হয়ে যাবে। যা করার এখনই করতে হবে।’

মাতবর লোক পাঠিয়ে দিলেন দাংশুকে আনার জন্য।

অসংখ্য তাবিজ-কবচ, মাদুলি এবং সালু কাপড় পরিহিত ও তিন শিষ্য পরিবেষ্টিত ঝটাধারী এক ওঝা এসে উপস্থিত। নাম তার দাংশুওঝা। সে ভূত-পেতনী, দুষ্ট জ্বিন-পরি তাড়ানো, সাপের বিষ নামানো ছাড়াও বহু রহস্যবিদ্যায় পারদর্শী। তার চলন-বলন, চেহারা-ছুরত, সাঝসজ্জা আর উদ্যোগ-আয়োজন দেখে সবার ভেতরে আশার আলো সঞ্চারিত হলো। সবাই বলাবলি করছে ‘জাত ওঝা, এ ব্যাটাই পারবে’।

দাংশু ঘরের চার কোণা থেকে চার চিমটি মাটি নিয়ে লাশের শিথানে দু‘ চিমটি রাখল ও লাশের পায়ের পাতায় ঘষল দু‘ চিমটি। লাশের শিথানে লম্বামত আঁকাবাঁকা একটা সফেদ লাঠি অবলীলায় খাঁড়া করে রাখল দাংশু। তার নির্দেশে তিন শিষ্য গাল ফুলিয়ে শঙ্খ-শিঙ্গায় ফু দিল। দাংশুর চোখে মুখে রহস্যের ও আতœবিশ্বাসের ভয়ঙ্কর ছাপ ফুটে উঠল। শঙ্খ-শিঙ্গায় ফু দিতে দিতে তিন শিস্য কাহিল হয়ে গেল।

দাংশু ঝোলা থেকে বিন বের করে নিজেই ফু দিল। বেজে উঠল বিন। বিন বাজাতে বাজাতে ঘরের বাইরে চলে এলো দাংশু। খানাখন্দ, গর্ত, ছিদ্র বাদ রাখল না কিছু; সবখানেই লাগিয়ে দিল তন্ত্র-মন্ত্রের ছোঁয়া। আবার ঘরে প্রবেশ করল দাংশু। লাশটা ভালো করে দেখে গাল ফুলিয়ে আবারো বাজাতে শুরু করল বিন। কিছুতেই কিছু হচেছ না। তারপর দাংশু বিন ফেলে উচু নিচু স্বরে, মাথার ঝটা ও হাত বিক্ষিপ্ত করে জিন, ভূত, মায়াবিনী-কুহুকিনীর চৌদ্দগোষ্ঠীকে গালাগালি করল। তারপর তন্ত্রমন্ত্রবানে তুড়ি মেরে গাল ফুলিয়ে লাশের মুখে ফু দিতে গেল। অমনি ঠাশ্ করে একটা শব্দ হলো, থাপ্পড় মারার শব্দ। লাশের থাপ্পড় খেয়ে দাংশুওঝা গালে হাত দিয়ে একটা চিৎকারে দরজা ভেঙ্গে লাফিয়ে উঠোনে পড়ে হাঁটু ধরে বেশুমার হাঁপাতে লাগল। তার গালে পাঁচটা আঙ্গুলের পষ্ট দাগ। তার মুখ থেকে গলগল করে তাজা রক্ত বের হচ্ছে। তার চারপাশে লোকজন সভয়ে এসে ভিড় করেছে। চারদিক থেকে অসংখ্য প্রশ্নের বান তার দিকে। ‘দাংশু, ঘটনা কী!’ দাংশু কথা বলতে পারছে না। সে হাত ইশারায় কি জানি বলতে চেয়েও বলতে পারল না; কাতরাতে কাতরাতে ঢলে মাটিতে পড়ে বেহুঁশ হয়ে গেল। অবস্থা বেগতিক দেখে শিষ্যরা একটা মই এনে গুরু দাংশুকে তুলে হন্ হন্ করে এখান থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেল। মারাতœক বিপদ আঁচ করে হতভম্ব লোকজন ছুটাছুটি করে পালিয়ে গেল।

পাঁচ.
লাল মিয়ার আশপাশে কেউ নেই। উপায়হীন লাল মিয়া বহু কষ্টে পাশের নদীতে কলা গাছের ভেলায় বউয়ের লাশ ভাসিয়ে দিল। এবং দু‘হাত তুলে চোখের জলে কাতর স্বরে মিনতি করে বলল, ‘দয়াল তুমি সত্য, আমি সত্য, আমার বউ সত্য তবে আমার বউ নিয়ে এত রহস্য কেন? এই আমার প্রিয় বউয়ের লাশ ভাসিয়ে দিলাম নদীতে। তুমি তাকে আমার কাছে আবার ফিরিয়ে দিও। যে কোনো মূল্যে তাকে আমি ফিরত পেতে চাই দয়াল।’

ছয়.

পরের দিন রাতে দরজায় ঠক্ঠক্ শব্দ পেল লালমিয়া। সে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো।

-কে! কে?!

-আমি সমলা।

-সমলা মরে গেছে।

-কী বলেন এসব আপনি? অলুক্ষুণে কথা!

লালমিয়া চিৎকার করে ভূত! ভূত! বলে হঠাৎ চুপ মেরে গেল।

-রাগ করেছেন বুঝি, আমার তো আজকেই আসার কথা। খোলেন।

দরজা খুলে গেল।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

খেলাঘর বলেছেন:


কিছু একটা হয়েছে

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৫

নুরএমডিচৌধূরী বলেছেন: -কে! কে?!

-আমি সমলা।

-সমলা মরে গেছে।

-কী বলেন এসব আপনি? অলুক্ষুণে কথা!

লালমিয়া চিৎকার করে ভূত! ভূত! বলে হঠাৎ চুপ মেরে গেল।

-রাগ করেছেন বুঝি, আমার তো আজকেই আসার কথা। খোলেন।

দরজা খুলে গেল
==============

বেশ হয়েছে
+++++

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৩

দীঘল গঁাােয়র েছেল বলেছেন: দারুন রহস্যময়। কইছিলাম না ভূত আছে। এহন বিশ্বাস হইল তো। ছামচুও কইছিল। সে একটা টিভি টকশোতে ভুত নিয়া ব্যাপক আলোচনা করছিল। সেটা হইলো গিয়া বাহাত্তুর টিভিতে।বাহাত্তুর টিভির একটি ভূত বিষয়ক প্রোগ্রাম লাইভ টেলিকাস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.