নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেড়ালের পেটে ইঁদুরের নাচ

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১০

এক বেড়াল ঝোপের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে হাসিমুখে বলে, বাহ্, বাহ্ চমৎকার নাচ তো! হ্যা, নাচো ইঁদুর ভাই, নাচো। কী সুন্দর নাচ তোমার! নাচের তারিফ না করে পারলাম না।
ইঁদুর নাচ থামিয়ে ডান-বাও তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে বলে, তোমাকে দেখে তো আর নাচানাচি হবে না, হবে কাঁপাকাঁপি। এই দেখো না কেমন কাঁপছি আমি, থত্থর!
বিশ্বাস করো, তোমার এই কাঁপনের মাঝেও নাচের ছন্দ-তাল লুকিয়ে আছে যা দেখে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। আজকের বিকেলটা সত্যিই আমার জন্যে খুব আনন্দের। তোমাকে ধন্যবাদ সুন্দর নাচ দেখাবার জন্য।
বেড়ালের প্রশংসায় ইঁদুর আনন্দে নেচে-গেয়ে চলে গেল।
বিড়াল সুবিধে করতে পারলো না। সে পরের দিন অনেক খোঁজ-খবর করে গেলো ইঁদুরের বাড়ি।
একটা ইঁদুর চিৎকার করে বলল, ওই যে দেখো, দেখো একটা বেড়াল। সাবধান হয়ে যাও সবাই!
নাচের ইঁদুরটি বলে, আরে না, আমি ওকে চিনি। ও অতোটা ভয়ংকর নয় যতোটা তোমরা মনে করছ। ও আমার নাচের ভক্ত, অনেক প্রশংসা করে আমার।
অন্য ইঁদুরেরা সতর্ক হয়ে বলল, বেড়াল আমাদের বড় শক্রু, ওর সাথে আবার কথা কিসের খাতির? চলো পালাই।
চোখের পলকে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল ইঁদুরেরা। শুধু ওই ইঁদুরটাই রয়ে গেল যার নাচ দেখে বেড়াল অনেক প্রশংসা করেছিল।
আমি এখানে আসার পথে যাকেই তোমার কথা বললাম, সে-ই তোমার খুব প্রশংসা করল আর বলল, তোমার মতো নাচের বেড়াল এই বনে আর একটিও নেই। আমি তোমার বন্ধু হতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। আশা করি তুমি নাচ না দেখিয়ে আমাকে ফিরে যেতে দেবে না।

বেড়ালের প্রশংসার তোড়ে ইঁদুর নাচ শুরু করে দিল, চুক চুক ঝিকা ঝিকা ডিব ডিব ডার না। বেড়াল নাচের সাথে তাল মিলিয়ে মাথা ঝাকিয়ে, হাততালি দিয়ে, গুণগুণিয়ে গান গেয়ে, শীষ মেরে ইঁদুরকে উৎসাহ দিচেছ। ইঁদুর নাচতে নাচতে কাহিল হয়ে গেল। কিন্তু বেড়াল তাকে থামতে দিচ্ছে না। বলে, থেমো না বন্ধু, এত সুন্দর নাচ আগে কখনও দেখিনি আমি, আমাকে উপভোগ করতে দাও। কী চমৎকার নাচ, উফ্!

নাচতে নাচতে ক্লান্ত ইঁদুরটি পাক খেয়ে পড়ে গেল বেড়ালের সামনে। বেড়াল ইঁদুরটাকে মোলায়েম হাতে আদর করতে করতে হঠাৎ ঠেসে ধরল। এবং বলল, তোমার নাচের মত তোমাকেও পছন্দ করি আমি। তবে আফছুছ এ জন্য যে, আমি এখন একটা ইঁদুরের সাথে তার নাচটাও খেয়ে ফেলবো। পারলে আমি ওটা আলাদা করে রাখতাম পরে উপভোগ করার জন্য।
ইঁদুর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, তুমি না আমার নাচের ভক্ত, আমার বন্ধু। এ কী বলছ তুমি? আমাকে ছেড়ে দাও। কথা দিলাম, আমি যতদিন বেঁচে থাকি তোমাকে নাচ দেখাব।
না বন্ধু, ক্ষুধার পেটে নাচ আর ভালো লাগছে না। আমি তোমাকে এখনই খেয়ে ফেলব। এ কথা বলে বেড়ালটি গপাস গপ করে ইঁদুরটাকে আস্ত গিলে ফেলল।
হতভাগা ইঁদুরটি বেড়ালের পেটে যাওয়ার আগে বলে গেল, আমি তোমার পেটে গিয়েও নাচব, মনে রেখো।

দুই.
বেড়াল ইঁদুরটি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল। কিন্তু ইঁদুরের শেষ কথাটা মনে হতেই সে লাফিয়ে উঠল। তার ভয়, না জানি বোকা ইঁদুরটা পেটের ভেতরে নাচ শুরু করে!
বেড়ালের ভয় সত্যি হলো। ইঁদুরটা বিড়ালের পেটে তিড়িং বিড়িং নাচ শুরু করে দিলো। বেড়ালের পেট একেক সময় একে দিকে ফুলে উঠছে। বেড়াল ‘ওরে বাপরে‘ বলে উল্টা-পাল্টা দৌড়তে লাগল এবং একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে গোত্তামেরে পড়ে রইল।

যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে বেড়ালের কষ্ট। তার শরীর ফুলে গেছে, পেটটা ঝুলে মাটির সাথে প্রায় লেগে গেছে। বেড়াল ভাবল, পেট থেকে নাচের ইঁদুরটাকে বের না করলেই নয়। সে বনের পশুদের কাছে গিয়ে বলল, নাচের ইঁদুরটাকে কিছুতেই হজম করতে পারছি না। তাকে পেট থেকে বের করে আনো তো ভাই। তারা বলে দিল, এসব তোমার মনের ভুল। আমরা তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না ভাই।

অবশেষে বেড়ালটি ইঁদুরের বাড়ি এসে সবাইকে ডেকে বলল, ইঁদুর ভায়েরা, শোনো, নাচের ইঁদুরের মত তোমরাও আমার মহান বন্ধু। আমার নাচের বন্ধুকে বড়ো আদর করে আমার পেটে তুলে রেখেছিলাম। তার নাকি আমার পেটে আর ভালো লাগছে না। তাকে পেট থেকে বের করে আনো বন্ধুরা!
ইঁদুরেরা পিটপিট করে তাকিয়ে বলল, এমন আচানক কথা তো জীবনেও শুনিনি আমরা।
বেড়ালের ঝুলে যাওয়া পেট আর চোখের পানি দেখে একটা ইঁদুর পাশের ইঁদুরকে ঠেস মেরে বলল, দেখ্ দেখ্ আমাদের মহান বন্ধুর কি অবস্থা! মনে হয় তার পিশাব-পায়খানা সব আটকে গেছে! তার কথা শুনে একটা ইঁদুর ফিক করে হাসি দিতেই সবার মুখে খলখলিয়ে হাসির খই ফুটে উঠল।
ইঁদুরগুলোর এমন রসিকতা দেখে বেড়াল রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল তোমরা আমাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করার সাহস পেলে কোথায়?
একটা ইঁদুর তেড়ে এসে বেড়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তুমি একটা বজ্জাত-মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এখান থেকে ভালোয় ভালোয় চলে যাও।
বেড়ালটি মন খারাপ করে চলে গেল।






মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.