নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটোগল্প: কঙ্কাল

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৬

তোলপাড় কান্ড! সমস্ত গ্রাম তেতে উঠেছে। সবাই আছে দৌড়ের ওপর। একজনের সাথে আরেকজনের দেখা হতেই রহস্যের প্রশ্ন -‘ভাই রাতে-বিরাতে কী সব ঘটছে শুনেছেন তো? এমন আজব ঘটনা তো জীবনেও শুনিনি! এ আবার কীশের আলামত!‘

গভীর রাতে একটি কঙ্কাল এসে ঘোরাফেরা করে গ্রামে। লম্বা লম্বা কদম ফেলে বাড়ি-ঘরের সম্মুখ দিয়ে নীরবে হাঁটা-চলা করে কঙ্কালটি। চলার পথে একটু পর পর অদৃশ্য হয়ে গিয়ে আবার দৃশ্যমান হয়। গ্রামের আঁকাবাঁকা সরু পথ ধরে এঁকেবেঁকে চলে কঙ্কালটি। এ রহস্যময় ভয়ংকর ঘটনায় গ্রামের ছোট-বড় সবার ঘুম হারাম হওয়ার যো হয়েছে!

কঙ্কালের ভয়ে সন্ধ্যার পরে শিশুরা ঘর থেকে বের হয় না। একা চলাফেরা করে না। গ্রামের মুরুব্বীরা পরামর্শ করে কঙ্কাল তাড়াবার যতগুলো বুদ্ধি-কৌশল আবিষ্কার করে-তাও আবার পালিয়ে যায় কঙ্কালের ভয়ে।

কঙ্কালের যন্ত্রণায় অস্থির গ্রামবাসী গেল মাতবরের কাছে। আর কত সহ্য হয়? এ গ্রামে আর ঢুকতে দেয়া যাবে না কঙ্কালটাকে।
মাতব্বর বলল, ‘ডাকো দেখি বইদ্দাকে।’ বইদ্দা এ গ্রামের বাসিন্দা। মা-বাবাহীন দুঃসাহসী ছেলে। বয়স পনের বছর। তার কাজ-কর্ম, খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, কথা-বার্তা, জীবন-যাপন অন্যদের থেকে আলাদা। সে কারো ধার ধারে না, জাত-পাত মানে না, কাউকে তোয়াক্কা করে না। কারো ভয়ে মিথ্যা কথা কয় না। তাকে দিয়ে অনেকেই সামান্য কিছুর বিনিময়ে অসামান্য কাজ আদায় করিয়ে নেয়। ভরা ল্যাট্রিনের পায়খানা ফেলতেও বইদ্দার ডাক পড়ে। এলাকার ওঝা-কবিরাজেরা মাত্র এক শ টাকার বিনিময়ে তাকে দিয়ে অসাধ্য সাধন করে। গভীর রাতে গোরস্থানের মাটি ও শ্মশানঘাটের ছাই এনে দেয় এ বইদ্দা। তার এ রকম বহু উপকারের ও নানা দুঃসাহসিকতার কাহিনী আছে কিন্তু স্বীকৃতি নেই। সমাজের লোকজনেরা বদিউজ্জামানকে ‘বইদ্দা’ বলে ডাকে।

কয়েকজন গিয়ে বইদ্দাকে নিয়ে এল মাতবরের সামনে। ‘বইদ্দার ডাক পড়ল যে মাতবর, ঘটনা কি?’ বইদ্দা জানতে চাইল।
মাতবর বললেন, ”সহজে তো আর কেউ তোকে ডাকে না; কঙ্কালটাকে হয় শেষ করবি; নয় তো গ্রাম ছাড়া করবি। কোনটা করবি ক। আমাদের জীবন-মরণ সমস্যা!“

বইদ্দা দৃঢ়তার সাথে বলল“ কঙ্কাল আমি তাড়াবো; তবে আমাকে দিতে হবে বীরের মর্যাদা।“
টাকা-পয়সার পরিবর্তে বইদ্দার মুখে এ রকম কথা শুনে সবাই হা করে রইল। খানিক নীরবতার পর মাতবর মাথা তুলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ”হে ঠিক আছে। তুই আগে কঙ্কালটাকে খতম কর, তোকে বীরের মর্যাদাই দেয়া হবে।”
বইদ্দা হনহন করে চলে গেল।

সুবেহ সাদিকের আগে আগে গোরস্থান থেকে অদ্ভুুত চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দে গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের কান খাড়া হয়ে গেল। হুড়মুড়িয়ে মানুষজন বাইরে এসে বলছে, ‘এই রে, মনে হয় ধরে ফেলেছে। বইদ্দা-বইদ্দা বলে গোরস্থানের দিকে সভয়ে এগুতে লাগল কেউ কেউ। হঠাৎ গোরস্থানে একটা আগুনের কুন্ডলী পাক খেয়ে উপরে উঠে দপ্ করে নিভে গেল। বইদ্দার লাঠির তীব্র আঘাতে কঙ্কালটি আগুনের কুন্ডলী পাকিয়ে আকাশে মিলিয়ে গেল কি না! আতঙ্কে থমকে দাঁড়াল সবাই। বইদ্দা গোরস্থান থেকে চিৎকার করে বলছে, ‘খতম, খতম। শেষ করে দিয়েছি, শেষ করে ফেলেছি। ভয় নেই, আর ভয় নেই। সবাই ঘুমাও।’ তারপর একটা শব্দ হলো। ধপ করে পড়ে যাওয়ার শব্দ।
চারদিক থেকে লোকজন ছুটে এলো গোরস্থানে। বইদ্দাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। ক্লান্ত-শ্রান্ত বইদ্দা উপুড় হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। আশপাশের লতাপাতা, গাছগাছালি ও বইদ্দার সারা গায়ে ধস্তাধস্তির অসংখ্য ছাপ। তার মুখ থেকে সাদা ফেনা বেরিয়ে আসছে। থরথর করে কাঁপছে তার সমস্ত শরীর। ভিড় ঠেলে মাতবর এলেন। বইদ্দা, বইদ্দা বলে ডাক দিতেই কষ্টে মাথাটা তুলে বইদ্দা বলল, “আমি আমার কথা রেখেছি মাতবর।”

মাতবরের ইশারায় কয়েকজন তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে গেল প্রাইমারি স্কুলের মাঠে। লাল গাইয়ের টাটকা দুধে গোসল করানো হলো বইদ্দাকে। কৌত‚হলী লোকে লোকারণ্য স্কুল মাঠ। মাতবর ভিড় ঠেলে বইদ্দাকে নিয়ে একটা টেবিলের উপর গিয়ে দাঁড়ালেন। আবেগে কৃতজ্ঞতায় সিক্ত মাতবর বইদ্দার কাঁধে ডান হাতটা রেখে আন্তরিকতার সাথে ধীরে-সুস্থে বললেন“এই বইদ্দা আমাদের ভয়মুক্ত করল। অসাধ্যকে সাধন করল। এখন থেকে আমাদের শিশুরা ভয় ও চিন্তা মুক্ত। আমি গ্রামের সবার পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি যে, “জীবন বাজী রেখে গ্রামের মানুষকে ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে দুঃসাহসিক অবদান রাখার জন্য জনাব মোঃ বদিউজ্জামান ওরফে বইদ্দাকে দরগারবন গ্রামের বীরপুরুষ খেতাবে ভূষিত করা হলো।” এ ঘোষণা শেষ হতে না হতেই সবাই মুহুর্মুহু করতালিতে বীর বদিউজ্জামানকে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে হৃদয়ে বরণ করে নিল। জনতার মুখ থেকে আওয়াজ উঠল-বীর বদিউজ্জামান - দীর্ঘজীবী হোক।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৯

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: গল্পে কোন টুইস্টিং-টার্নিং নেই। আহামরি কিছু হয়নি। দুঃখিত।

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: পাঠকের সমালোচনা পাই না বলে আমাদের এই দুর্গতি।
দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার সমালোচনাপূর্ণ মন্তব্য আমার লেখার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ ভাই বি এম বরকতউল্লাহ।

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।
আজ আপনার বেশ কয়টা গল্প পড়লাম। আমি অভিভূত। গল্পগুলো আমাকে আপন বেগে টেনে নিয়ে গেল প্রথম থেকে শেষ অবধি।
প্রিয়তে রাখলাম। আরগুলো না পড়লেই নয়।
আপনার শুভ কামনা করি।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩০

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১৮

শিখণ্ডী বলেছেন: কিছু বুঝলাম না।

৩০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এ আমার দুর্ভাগ্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.