নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুরুজালি ও একটি বাঘ

১৯ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১৬

দরজা খুলেই কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গেল সুরুজালি। ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে’ করতে করতে ছুটে এলো ঘরের লোকজন। সুরুজালি ’বাঘ বাঘ’ বলে আঙুলে ইশারা করতেই সবাই বাইরের দিকে তাকালো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার! কারোর কলজে জুড়ে পানি নেই। সুরুজালিকে ফেলে দৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল তারা।

এক মুহূর্ত পরে সুরুজালি মোচড় দিয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং দ্রুত দরজার খিল লাগিয়ে দিল। সে বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখল, বাঘটি দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কিন্তু বাঘটিকে এত শ্রীহীন, দুর্বল আর মনমরা লাগছে কেনো। সুরুজালির ভয় কিছুটা কেটে গেলো। কিন্তু দরজা খুলল না সে।

’বড়ো বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। দয়া করে আমাকে দেখুন। আমাদের বাসস্থান সুন্দরবন এলাকাÑতেলে-পানিতে সয়লাব। দেখুন তেল-পানি আর কাদায় মাখামাখি আমার শরীর। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। দয়া করে আমাকে রক্ষা করুন।’ বাঘ মিনতি করে একথা বলতে বলতে উঠোনে শুয়ে পড়েছে। সুরুজালি বাঘের এই দুরবস্থা দেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি খেলা করতে লাগল।
সুরুজালি বাঘটিকে বলল, ’আমার একটি শর্ত মানলে পরে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারি।’
বাঘ বলল, ’এখন আমি খুব দুর্বল। হাত-পা চলছে না আমার। তোমার শর্ত পুরণের মতো কোনো শক্তি আমার নেই। তবে, দুর্বলরা কেবল সব শর্ত পুরণের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।’
’আমার শর্তটি পুরণের জন্য শক্তির দরকার নেই। তুমি রাজি হলেই হবে।’ বলল সুরুজালি।
’কী সেই শর্ত?’ মিনমিন করে জানতে চাইল বাঘ।
‘একেবারেই সোজা। তুমি আমার এই লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে বিশ্রাম করো। আমি তোমার বিপদ তাড়াবার ব্যবস্থা করি।’ বলল সুরুজালি।
দুর্বল বাঘটি কাঁপতে কাঁপতে লোহার খাঁচায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
সুরুজালি মনের আনন্দে দৌড়ে গিয়ে খাঁচার দরজায় একটি বড় তালা লাগিয়ে দিল।
বাঘ করুণ ভাবে সুরুজালির দিকে তাকিয়ে রইল।

সুরুজালি টিউবওয়েল থেকে বালতি বালতি পানি এনে বাঘটির গায়ে ঢালতে লাগল। বাঘের গায়ের তেল ও কাদা পরিষ্কার হয়ে গেল। তারপর সে কিছু খাবার দিল বাঘের সামনে। বাঘটি খেলো। এখন সে বেশ সুস্থ বোধ করছে। বাঘটি উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু খাঁচা এত ছোট যে সে ভালভাবে নড়াচড়া করতে পারছে না।

দুই.
’সুরুজালির বন থেকে একটা বাঘ ধরে এনেছে’Ñএমন সব খবর হাত পা মেলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। পরের দিন এলাকার লোকজন বাঘ দেখার জন্য ছুটে এলো সুরুজালির বাড়ি।
সুরুজালি আনন্দে ছটফট করতে লাগল। সে ভারি একটা মওকা পেয়ে গেল। সুরুজালি বাইরের উঠোনে গেলো এবং কৌতূহলী মানুষের সামনে গিয়ে বীরের মতো বলল, ’লড়াই করে বনের সবচেয়ে হিং¯্র আর শক্তিশালী বাঘকে বশে এনেছি। বাঘ দেখতে হলে টাকা-পয়সা লাগবে। মাগনা বাঘ দেখা যাবে না।’
লোকজনের আর তর সয় না। তারা আঙুল খাড়া করে বলল, ’টাকা পয়সা লাগে দেবো, আগে বাঘ দেখতে দাও! এই লও টাকা; এখন পথ ছাড়োÑবাঘ দেখি।’
সুরুজালি সবার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে একজন একজন করে পাঠিয়ে দিল বাঘের খাঁচার দিকে।
‘হালুম! কী ভয়ংকর! কত বড়ো বাঘ!’
পরের দিনগুলোতে লোকজনের আনাগোনা আরো বেড়ে গেল। সবাই টাকার বিনিময়ে বাঘ দেখছে।
সুরুজালি অল্প দিনেই অনেক টাকার মালিক হয়ে গেল।

একদিন বাঘটি সুরুজালিকে বলল, ‘দেখো, আমি এখন একদম ঠিক আছি। বন্দী জীবন আর ভাল লাগে না। আমি তোমার উপকারের কথা চিরদিন মনে রাখব। তুমি খাঁচার তালাটি খুলে দাও। আমি বনে চলে যাই।’
সুরুজালি কপালে চোখ তুলে বলল, ‘এসব কী বলছ তুমি! আমি তোমার জীবন রক্ষা করেছি, এখন আমার অনেক কিছু চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার আছে। আমার ইচ্ছা পুরণ করা তোমার কর্তব্য।’
বাঘ বলল ‘অতি লোভের ক্ষতি অনেক বেশি। তুমি তো কম কিছু পাওনি। আর কী চাই তোমার?’
‘আমি বীর হতে চাই।’ বলল সুরুজালি।
বাঘটি অবাক হয়ে বলল, ‘বীর!’
‘হ্যা, আমি বীর হতে চাই। এটা অর্থ-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, যশ-খ্যাতির চেয়েও অনেক বড় কিছু। টাকা পয়সা সবাই কামাই করতে পারে কিন্তু বীর সবাই হতে পারে না। আমার উত্তর পুরুষ হবে বীরের বংশধর। তারা যুগে যুগে আমার বীরত্বের কাহিনি নিয়ে গর্ব করবে। আর বীরেরা এভাবেই বেঁচে থাকে বহুকাল। আমি সেটাই চাই।’ বলল সুরুজালি।

এলাকার মানুষকে আমি বলেছি, ‘আমি তোমার সাথে লড়াই করে তোমাকে পরাস্থ করে এই খাঁচায় বন্দী করেছি। এই কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু আমি তাদের বুঝিয়ে দিতে চাই যে, আমি প্রকৃতই একজন বীর।’
‘মানুষ তো সত্যি কথাই বলছে। তুমি তো আমাকে ধরে আনো নি। আমি নিজেই এসে তোমার লোহার খাঁচায় বন্দী হয়েছি।’ বলল বাঘটি।
‘চুপ, একদম চুপ। এ কথা তুমি একবারও মুখে আনবে না। ধমক দিয়ে বলল সুরুজালি।
বাঘ বলল, ‘তা হলে তুমি আমাকে মুক্তি দিচ্ছ না।’
‘আগে আমার গলায় বীরের জয়মালা এসে পড়–ক; তারপর তোমার কথা।’ বলল সুরুজালি।

তিন.
এলাকার মানুষ বলে, ‘তোমার গায়ে এত শক্তি আর মনে এত সাহস নেই যে তুমি একটা বাঘকে পরাস্থ করতে পার। তোমার এ গল্প কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে- সুরুজালি?’
সুরুজালি শরীর ঝাকিয়ে বলল, ‘কী করলে তোমরা বিশ্বাস করবে, শুনি?’
সবাই বলে উঠল, ‘তুমি যদি এই বাঘটির সাথে প্রকাশ্যে লড়াই করে জিততে পারো তবেই আমরা বিশ্বাস করবো যে তুমি প্রকৃতই বীর। শুধু তাই নয় তোমাকে আমরা অনেক টাকা পুরষ্কার দিব এবং তোমাকে বীরের মর্যাদা দিয়ে মাথায় তুলে রাখব।’
সুরুজালি একটা তুড়ি মেরে বলল, ‘তাহলে তোমাদের তিনটি কাজই করার আছে এখন।
এক. আমার সাথে বাঘের প্রকাশ্যে লড়াইয়ের আয়োজন করতে হবে।
দুই. তোমাদের প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী অনেক টাকা জোগাড় করতে হবে আর
তিন. বীর সুরুজালির জন্য বিজয়মালা প্রস্তুত রাখতে হবে।’

সুরুজালির কথা শুনে এলাকার লোকেরা কৌতূহলে ফেটে পড়ল। তারা ঢোল কাসর পিটিয়ে ঘোষণা করে দিল, ‘সুরুজালির সঙ্গে বাঘের প্রকাশ্যে মরণপণ লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে সুরুজালি জিততে পারলে তাকে বীরের খেতাব ও অঢেল টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে...।’
সবার কান খাড়া হয়ে গেলো। ‘বাঘের সাথে সুরুজালির লড়াই?’ এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দ উত্তেজনার ঢেউ খেলতে লাগল।
এদিকে সুরুজালি বাঘের কানে কানে বলল, তোমার সাথে আমার প্রকাশ্যে লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে তুমি ইচ্ছে করেই পরাজিত হবে। আমি তোমাকে পরাস্থ করে তোমার বুকের উপর দাঁড়িয়ে বিজয়ের হাসি হাসব। আমি হব বীর সুরুজালি। বীরের গলায় মালা পরার সময় তীব্র আনন্দধ্বনি গর্জে উঠবে। তুমি ঠিক সেই মুহূর্তে চলে যাবে বনে। মুক্তি পাওয়ার এটাই তোমার শেষ সুযোগ। কথাটা মনে থাকে যেন?’
তার কথা শুনে বাঘ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

চার.
বিশাল মাঠ। লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি। খাঁচাবন্দী বাঘটিকে রাখা হয়েছে মঞ্চে। হাজার হাজার মানুষ টিকিট কেটে ‘বাঘ-সুরুজালির লড়াই’ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। দর্শকে পরিপূর্ণ মাঠ। ঢোল-কাঁড়ায় বাড়ি পড়ল। আনন্দ কৌতূহলে ফেটে পড়ছে মানুষ।
সুরুজালি খালি গায়ে লাল হাফপ্যান্ট পরে বাঘের খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো এবং সে নিজের হাতে খাঁচার দরজা খুলে দিল। বাঘটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে এলোÑ হালুম...!
হাজারো মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি আর হাততালিতে কান ফেটে যাচ্ছে।
রেফারির কড়া হুইশেলে বাঘ-সুরুজালির লড়াই শুরু হয়ে গেল। সুরুজালির গায়ে যত না শক্তি তার চেয়ে বহু গুণ তেজ দেখিয়ে, শক্তির উত্তেজনায় লাফিয়ে এবং বাঘকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, বাঘের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। বাঘ হুংকার ছেড়ে শরীরটাকে ঝাকি দিতেই সুরুজালি ছিটকে পড়ে গেল। সুরুজালি ঝটপট উঠে দাঁড়ালো এবং বাঘের সাথে বীরত্ব দেখাতে লাগল। কৌতূহলী মানুষের হই চই, তালি আর বাঁশির হুইশেলে কান ঝালাপালা হয়ে গেল।
চলছে বাঘে- সুরুজালিতে লড়াই। এক সময় বাঘটি বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে গেল এবং সুরুজালিকে থাবা মেরে ফেলে দিল। বাঘটি গড় গড় আওয়াজ করে সুরুজালির বুকের উপর গিয়ে বসল। সুরুজালি বাঘকে দুহাতে ঠেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ’তুই নয়, আমি তোর বুকে চড়ে বসব। দোহাই, তুই আমাকে বীর হতে দে। আমি তোকে মুক্ত করে দেব।’
‘আমি আমার শক্তির অপমান করতে পারি না,’ বলেই ক্রুদ্ধ বাঘ সুরুজালিকে মঞ্চের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে উধাও হয় গেল।



মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৪৭

আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: ভালো ছিলো গল্পটা।

১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন।

২| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
"পরাজয়ে ডরে না বীর,ভয়ে কাপে কাপুরুষ,
লড়ে যায় বীর। হে বীর,বল চির উন্নত মমশীর।"

১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ঠিক বলেছেন জনাব।

৩| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছবি এবং গল্পের সাথে মিল আছে। সুরুজালি ইজ্জত রক্ষা হলো

১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: কীভাবে রক্ষা হলো?
সে তো বীর হতে পারলো না ভাই।

৪| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: সুন্দরবনের রাজা বাঘের সাথে ফাইজলামীর পরিনাম কখনও শুভ হইতে পারে না।

ঈশপের গল্পের মতো আপনি একটা মেসেজ দিয়েছেন, তবে আমি সেদিকে গেলাম না। আমি বরন্চ বাঘের ইজ্জত নিয়াই বেশী কনসার্ন। :-B

১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

৫| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সুরুজ আলীরাই সবখানে!

আম জনতা তেলে কাদায় মাখামাখি মাৎসানায় খাচায়!

গল্পে +++

১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকবেন।

৬| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


নেওয়াজ আলি বলেছেন, " ছবি এবং গল্পের সাথে মিল আছে। সুরুজালি ইজ্জত রক্ষা হলো "

-আমার ধারণা ছিলো, নেওয়াজ আলী পোষ্ট পড়ে না, পড়লে বুঝে না

১৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা রইল।

৭| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমার ইচ্ছা করে একটা বাঘ পালতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.