নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড়োদের ছোটোগল্প: এক কামরার ঘর

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩১


পিতামাতাহীন রমেলাকে চোখের জলে স্বামীর সংসার ছেড়ে ভাই ভাবীর সংসারে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার সাথে রয়েছে তিনটি অবুঝ শিশু কন্যা। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ বছর, মেঝোটার তিন বছর আর ছোটটার মাত্র ৪ মাস। রমেলার দোষ, সে বারবার কন্যাসন্তনের জন্ম দিচ্ছে। স্বামী ও তার পরিবারের সবাই যেখানে মনে প্রাণে পুত্র সন্তান চাইছে সেখানে সবার ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে বারবার কন্যা সন্তান জš§ দেয়াটা রমেলার ধৃষ্টতাই বটে। পুত্র সন্তান জন্মদানে অক্ষম অযোগ্য বউ দিয়ে আর কাজ কী? অতএব ওকে তাড়াও। শাশুড়ি, ননদের আড়াই ইঞ্চি লম্বা জিহ¦া আর সুযোগ্য স্বামীর সাড়ে তিন হাত লম্বা শক্ত লাঠির অকথ্য জ্বালা-যন্ত্রণা ও অত্যাচারে জর্জরিত রমেলা চরম অবজ্ঞা অবহেলায় দুর্বল শরীর নিয়ে অভাগা তিনটে কন্যা সন্তানসহ যখন ভাইয়ের সংসারে এসে উপস্থিত হলো তখন ওই পরিবারের ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।

বিবাহিতা কন্যা বা বোন স্বামীর বাড়ি থেকে দই মিষ্টি পান সুপারি নিয়ে আকর্ণ হাসির রেখা টেনে যখন ছেলে পুলে নিয়ে বাপ ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন আনন্দে গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। বাবা-ভাইয়ের বাড়িতে আনন্দ উৎসবে কেটে যায় সময়। তার সুখ শান্তির কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে পরম তৃপ্তি লাভ করে সবাই। কিন্তু স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে যে কন্যা বা বোন বাপ ভাইয়ের সংসারে এসে হাজির হয়- সমাজ সংসারে তারচেয়ে ভারী বোজা আর হয় না।

রমেলার ভাগের পৈত্রিক স¤পত্তি ভোগ করছে যে ভাই সেই ভাই ভাবীর সাথে মাস দেড়েক থেকেই রমেলা বুঝতে পারছে সে উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনূনে পড়েছে। তার জমি আছে কিন্তু তাতে কোন অধিকার নেই। খেয়ে না খেয়ে, অন্যায়-অত্যাচারে, ভাই ভাবীর খোটা, গীবৎ, পাড়া পড়শীর ফিসফিসানী আর নানা কুসংস্কারের তান্ডবে দিশেহারা রমেলা বহুবার স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু পুত্র সন্তান জš§দানের নিশ্চয়তা না থাকায় তার স্বামীর সংসারে যাওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে গেল। তার স্বামী ও শাশুড়ি পরিস্কার জানিয়ে দেয়- আমাদের বাড়িতে তোকে, এমনকি তোর তিন কন্যাকেও আর গ্রহণ করা হবে না। ভাগ্যবিড়ম্বিতা রমেলা শুধু নারীই নয়, সে মাও বটে। পিতা যেভাবে সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেÑমা তেমনটি পারে না। নিজের জীবন যায় কিন্তু সন্তান ছাড়ে না কোনো মা। রমেলাও ছাড়েনি।
দুই.
রমেলার স্বামী নেই, সংসার নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই। চারদিকে অন্ধকার! উপায়হীন রমেলা এতে ভেঙ্গে না পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে থাকে। এনজিওর এক মাঠকর্মীর সাথে আলাপ করে রমেলা সদস্য হয়ে যায়। সে এনজিও হতে ঋণ তুলে নতূন জীবনে প্রবেশ করে। প্রতিবেশী নূরীর সহযোগিতায় সে বাজার থেকে পান, সুপারি, তেল, শূঁটকি ও চকোলেট কিনে এনে এগুলো এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করতে থাকে। অল্প পুজির এই ব্যবসায় যে আয় হয় তাতে তিন কন্যা নিয়ে সে কোনোমতে চলতে পারে। রমেলা দিনে দিনে আতœপ্রত্যয়ী, অভিজ্ঞ ও সাহসী হয়ে ওঠে। অবলা নারীর সাথে বিপুলা পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার দূরত্ব যতই কমতে থাকে ততই সফল হতে থাকে সে।

এলাকার লোকজন বিশেষ করে গৃহিনীদের সাথে তার ব্যবসায়িক সখ্যতা গড়ে ওঠে। অর্বাচীন গৃহবধূ রমেলা এখন পাকা ফেরি ব্যবসায়ী। নিজের আয়ের টাকায় সে বাপের ভিটায় ছোট একটা দো-চালা ঘর করে আলাদা থাকতে শুরু করে। সে প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করে ২য় দফায় দ্বিগুণ ঋণ তুলে দ্বিগুণ উৎসাহে এগিয়ে চলতে থাকে। দুই বছরের মাথায় রমেলা পেল গৃহঋণ। নিজের ঘরটাকেই সে আয় উপার্জনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। সে সেলাই মেনি কিনে রাতে দর্জির কাজ করতে থাকে। সে বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। রমেলাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিন কন্যার দুর্ভাগা মা রমেলা জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আতœনির্ভরশীল নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। রমেলা এখন পরনির্ভরশীল নয়Ñআতœপ্রত্যয়ী স্বনির্ভর নারী।

এখন তার স্বামী আদরের তিন কন্যা ও ভাগ্যবতী স্ত্রীকে সংসারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করছে। রমেলা ক্ষোভে, অভিমানে স্বামীর ঘরে আর যাবে না বলে ওদের জানিয়ে দেয়। কিন্তু আপন ঘরের লক্ষ্মী পরের ঘরে থাকবে কেন? তারা রমেলাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এলাকার ময়মুরুব্বি ধরেছে। মুরুব্বিরা পষ্ট বলে দিয়েছে, রমেলা এখন স্বামীর ঘরে যাবে কি যাবে না এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার।


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


রামেলা ওখানে না গিয়ে, স্বামীকে নিজ বাড়ীতে আনলে ভালো হবে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: অন্যের ছায়ায় আর মায়ার আঁচলে থাকলে রমেলাকে অবলা নারী হয়েই থাকতে হতো। তাঁর ভেতরের শক্তি প্রকাশ পেয়েছে যখন সে দেখেছে এই জগৎ-সংসারে তার কেউ নেই তখন।
অভিমানী রমেলার কাছে তার স্বামী ফিরে আসবে- কারণ সমাজ মেনে নিয়েছে রমেলা এখন নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ধন্যবাদ।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে কোনও স্বাধীনতা নাই। আমাদের সমাজের চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। এরকম ঘটনা অনেক ঘটে।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:১৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
আনাকে ধন্যবাদ জানাই।

৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: রমেলা বড় দুঃখী।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:১৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আপনি গল্পটি ভাল করে পড়েন নি অথবা পড়লেও বুঝতে পারেন নি।
অদম্য সংগ্রামী রমেলা দািরদ্র্যকে জয় করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।
সে এক স্বাবলম্বী নারী।

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৯

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত নারীর কোন মুক্তি নেই, যতই শিক্ষিত অথবা মূর্খ হোক না কেন।
@চাঁদগাজী বলেছেন, " রমেলা ওখানে না গিয়ে তার স্বামীকে নিজ বাড়িতে আনলে ভাল হবে"। এ ব্যপারে আমি একমত না।
এইসব স্বামীরা দুইদিন পর আবার ভোল পাল্টায়, এদেরকে দিত্বীয়বার সুযোগ দেয়া মানে হুদায় দুঃখ বাড়ানো।
নারীদের বাস্তব অবস্থা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। +++

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:১৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ঠিক কথাই বলেছেন ভাই ঝিঁ ঝিঁ।
অর্থনৈতিক মুক্তি আর সব মুক্তির পথ বাতলে দেয়।
স্বামীকে নিজ বাড়িতে আনলেও আর সমস্যা হবে না কারণ স্বামী এখন রমেলার শক্তিসামর্থ কতটুকু আছে তার টের পেয়ে গেছে। সুতরাং...
ভাল থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.