![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অদ্ভুত সন্তানে ভরে গেছে ঘর
সেরালির স্ত্রীর সন্তান প্রসবের সময় হয়ে গেছে। সকাল থেকে দাইমা এসে সন্তান হওয়ার আগের কাজগুলো সেরে বসে আছেন। তিনি ধূপ-তুষ জ্বালিয়েছেন, ঘরের ফাঁক-ফোঁকরগুলো বন্ধ করেছেন আর যেখানে যা দরকার হতে পারে তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেডি হয়ে আছেন। সেরালি ঘরের বাইরে সন্তানের অপেক্ষায় পায়চারি করছে।
আটকুঁড়া সেরালির ঘরে সন্তান আসছে-এ খবরটা আর গোপন রইল না।
হঠাৎ নবজাতকের বিকট চিৎকার আর কান্নাকাটিতে পাড়ার লোকের কান খাঁড়া হয়ে গেল। ভেতর থেকে খবর এলো, সেরালির সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছে। সেরালি আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
দাইমা দরজা ফাঁক করে হাত ইশারা করে বাইরে থেকে দু‘জন মহিলাকে ডেকে ঘরে নিয়ে গেলেন। পাড়ার নারী-শিশুরা এসে সেরালির বাড়িতে এসে ভিড় করেছে। সেরালির সন্তান দেখার জন্যে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সবাই সেরালিকে বাহবা দিতে লাগল। তার আনন্দ আর ধরে না। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেবতার উদ্দেশে শত সহস্র কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দু‘হাতে মুখ মুছে নিল। সে সবাইকে চকি, পিঁড়ি আর মাদুর পেতে বসতে দিল। সবাই সেরালির উঠোনে বসে তার প্রশংসা করতে লাগল। সেরালি আনন্দে ঘরের ভেতর থেকে বাম হাতের মুঠ ভরে চিনি এনে ডানহাতের দু‘আঙ্গুলের চিমটিতে হাতে হাতে বিতরণ করে দিল। সামান্য ক’টা চিনিদানা মুখে গেলেও গলা ভেদ করে কারও পেট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
একমুঠ চিনি বিশ/পঁচিশ জনের মধ্যে বিতরণ করার পর হাতে যা অবশিষ্ট ছিল সেরালি তা ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটা মোটা কাগজে পেঁচিয়ে পাতিলের ভেতরে যতœ করে রেখে দিল।
এদিকে সবাই চিনি খাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে যখন একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে তখন সেরালি হাত মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে প্রশান্ত মুখে সবাইকে লক্ষ করে বলল, মিষ্টিমুখ তো করালাম, এবার মিষ্টিমুখে আমার সন্তানের জন্যে মিষ্টি করে একটা দোয়া করে যাও। খাওয়া আজই শেষ না আল্লাহ্ বাঁচিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে আরও খেতে পারবে।
এমন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। প্রসূতিঘরের দরজা ভেঙ্গে এক মহিলা লাফিয়ে এসে উঠোনে পড়ে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালিয়ে গেল। কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে উঠোনের লোকগুলো বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। আরেক মহিলা মুখ ঢেকে প্রসূতিঘর থেকে বেরিয়ে দিল ভোঁ দৌড়।
ঘটনা কি! ঘটনা জানার জন্যে কেউ কেউ উঁকি-ঝুকি করছে। প্রসূতিঘরে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। কট কট, চিকিচিকি, গুনগুন-ক্যাঁচক্যাঁচ, ফিচিক-কিচিক-চিরিৎ-চিরিৎ, শোঁ শোঁ, ঝন্ ঝন্!
ঘরের দরজা ফাঁক করে দাইমা ইশারা করতেই সেরালি দৌড়ে দরজার কাছে গেল। দাইমা বলল, ভাই, আমাকে বাঁচাও। আমি আর এই ঘরে থাকতে পারছি না। সেরালি বিস্ময়ে বলল, কেন, কী হয়েছে দাইমা?
দাইমা সেরালিকে বলল, সর্বনাশ! তোমার সন্তান তো একটা আর দুইটা না। খালি হইতেই আছে। ঘর ভরে গেছে সন্তানে! এগুলা তোমার ছেলে-মেয়ে, না ভূত-পেতনি আল্লায় জানে বলে দাইমা কাঁপতে লাগল।
এদিকে সেরালি দরজা ফাঁক করে গলা বাড়িয়ে ফুচকি দিতেই ইঁদুরের মতো কি একটা ছুটে এসে বলল, বাবা সেরালি, এদিকে আসো, তোমাকে একটা চুম্মা দিই, চুম্মা!
সেরালি চোখ দু’টো গোল করে দাইমাকে ডেকে বলল, ব্যাপার কি দাইমা! ঘরে এমন কটর কটর কথা কয় কেডা? দাইমা জবাব দিল, কেডা আবার, তোমার সন্তানেরা কথা কয়। সেরালি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, কী কন এসব? এক মিনিটের পোলা-মাইয়া আবার কথা কয় কেমনে?
‘কথা যে ক্যামনে কয় হেইডা জানি না বাবা, তয় কটর কটর কথা কইতাছে, হেগর কথার মধ্যে কোনো ফাক নাই-ভুল নাই।’ দাইমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে বলল, ‘তুমি তোমার সন্তানদের সামাল দেও, হোনো গিয়ে হ্যারা কী বলে আর কী করে। আজব কারবার।’
সেরালি শঙ্কিত মনে লম্বা পায়ে ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রীর পাশে গিয়ে বসল। চারদিক থেকে তার নবজাত সন্তানেরা দৌড়ে এসে সেরালিকে ঘিরে ধরল। এরা ইঁদুর বিড়ালের মতো এদিক-ওদিক ছোটোছুটি করছে। সন্তান সংখ্যা পঁচিশ ত্রিশটা হবে। একেকটার চেহারা-ছুরত একেক রকমের। একেকটার উচ্চতা আকার আকৃতি রং ঢং একেক রকমের। কোনোটা ইঁদুরের মতো, কারোর পায়ে আঁকাবাঁকা নখ, দেখতে লাগে গাছের শিকড়ের মত, কোনোটার কান মাটি পর্যন্ত ঝুলে আছে, কোনোটার গতরের চেয়ে মাথা বড়ো, একটার মাথা চেপ্টা আরেকটার মাথা লাউয়ের মত। কেউ দৌড়াচ্ছে, কেউ খেলা করছে, কেউ সেরালির হাত-পা বেয়ে মাথায় চড়ে বসে আছে, কয়েকটা পকেটের ভেতরে গিয়ে বসে আছে, কোনোটা আবার দেখতে ছোট বানরের মতো, কোনোটার লম্বা লেজ আছে আবার কোনোটার লম্বা নাক, মার্বেলের মতো চোখ, কোনোটার লম্বা কালো দাঁত, ঠোঁট ভেদ করে বেরিয়ে আছে। এর মধ্যে দু'টোর অদ্ভুত ধরনের মুখ। শরীরের তুলনায় তিন চার গুণ লম্বা মুখ। বিশাল হা। একটাও পরিপূর্ণ মানুষের মত নয়। একেকটা একেক রকমের। এরা একটু পর পর নিজের রূপ বদলে ফেলছে। এরা খেলছে-দুলছে। এরা কটর কটর কথা বলছে। ওরা সেরালিকে জান-প্রাণ দিয়ে বাবা বলে ডাকছে। সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনে সেরালির অন্তরাতœা ঠান্ডা না হয়ে হঠাৎ গরমে টগবগিয়ে উঠছে। সেরালির কাছে প্রসূতিঘরটা আলাদা এক স্বপ্নরাজের মতো মনে হলো। সে অদ্ভুত সন্তানদের কান্ডকীর্তি দেখে চুপ করে বসে রইল।
হঠাৎ করে সেরালি মাথাটা সোজা করে বসল এবং খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠল। সে ‘বাবা-সোনা’ বলে সন্তানদের ডাকাডাকি করে কাছে আসতে বলল। ওরা হুড়োহুড়ি করে এসে বাপকে ঘিরে ধরেছে। বড় মাথাওয়ালা এক ছেলেকে আদর করতে হাত বাড়িয়ে দিতেই, তার ছেলেটা খাবলামেরে সেরালির হাত টেনে নিয়ে বলল, আরও কাছে আসো বাবা। ভয় পাও নাকি? আমরা তো তোমার ছেলে-মেয়ে, প্রাণপ্রিয় সন্তান। আর তুমি হলে আমাদের বাবা সেরালি।
সেরালি খুশিতে সন্তানদের মাথা হাতিয়ে ’কুতুতুতু, ওয়াও-ওয়া, চুচু-মুচু’ ইত্যাদি শব্দ করে আদর-স্নেহ করছে। সন্তানেরা সেরালির আদর পেয়ে বিড়ালছানার মত মোলায়েম হয়ে গেছে। তারা আরও আদর পাওয়ার জন্য বাবার কোলে-পিঠে চড়ে আনন্দে লাফালাফি করতে লাগল। এতে সেরালির মনে কোনো বিরক্তির ছাপ দেখা গেল না। সে খুব আনন্দের সাথে তার অদ্ভুত সন্তানদের স্বাভাবিকভাবে আদর-স্নেহ বিলিয়ে দিল। চলবে...
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:১০
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এটা আসলে ভয় জাগানিয়া গল্প নয়-জীবনঘণিষ্ট।
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩০
শায়মা বলেছেন: খুবই মজার আর অন্যরকম গল্প ভাইয়া।
আর তার মায়ের কি অবস্থা জানতে ইচ্ছা হচ্ছে।
বেচারী তো মনে হয় ভয়েই হার্ট এটাক করেছে।
বাচ্চাদের দেখে না। এত গুলো পালবে কেমনে ভেবেই!!!
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:১০
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত। অপেক্ষা করুন আপু।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:৪৫
আনমোনা বলেছেন: বেশ মজার ভুতের গল্প। তবে ভয় লাগছেনা।
২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:১১
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভয় দেখাইনি বলে পাননি।
মজা পেলেই হলো।
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উরিব্বাবা!!!
একি কান্ড! সবতো লন্ডভন্ড অবস্থা দেখছি
যাই পরের পর্বে
+++
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২২
রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভয় লাগছে না।