নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড়োদের ছোটোগল্প: চাচি কাহিনি

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪০

আমার চাচি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসন্তানের গর্বিতা মা। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ে দেওয়া ও ছেলেদের বিয়ে করানোর ষোল আনা কৃতিত্ব চাচির। চাচি জাত-বংশ, চেহারা-চরিত্র, আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থ-স¤পদ ইত্যাদি বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খাঁটি সোনার মতো দু’খানা জামাই আর দ’ুখানা বউ জোগাড় করে এনে ঘরে তুলেছেন। দশ পুরুষে যা না বুঝে চাচি নিজেই যে তার চেয়ে ঢের বেশি বুঝেন এ বিষয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। চাচি পাকা জহুরির মত যাচাই করে যা ঘরে এনেছেন তাতে যে কোনো খাদ থাকতে পারে না এ ব্যাপারে কারো দ্বি-মত নেই।

কিন্তু চাচি ছেলেদের সুখের ব্যাপারে যতটা না চিন্তিত, মেয়েদের সুখের ব্যাপারে ততটা নিশ্চিত। কারণ ছেলে দুটো ঠিক মায়ের মত হয়ে উঠতে পারেনি; বাবার মতো মিনমিনে স্বভাবের হয়েছে। চাচির কঠিন শাসন-বারণের মধ্যে থেকেও ওরা কীভাবে যে বাবার স্বভাব চরিত্র পেয়ে গেছে এ রহস্য নিয়ে চাচি বহুবার বহুভাবে গবেষণা করেছেন কিন্তু এর কোনো কিনারা খুঁজে পাননি। মেয়ে দুটো চাচির মতো হয়েছে বলে তাদের সুখ-শান্তির ব্যাপারে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজনই নেই।

বড় জামাই ব্যবসা করে, ছোটটা স্কুল শিক্ষক। মেয়েরা যখন স্বামীর বাড়ি থেকে মায়ের বাড়িতে মহা উৎসব আয়োজনে বেড়াতে আসে তখন চাচির আনন্দের আর সীমা থাকে না। দুই জামাই শাশুড়ির অকৃত্রিম আদর-আপ্যায়ন ও স্নেহ-ভালবাসায় সিক্ত হয়ে খুশিতে টগবগ করে। তারা শ্বাশুড়ির আদর পেয়ে গর্বে বুক ফুলিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের কাছে নানা কথার ছলে ইনিয়ে বিনিয়ে শ্বাশুড়ি বাড়ির সুনাম-সুখ্যাতির কথা বলে বেড়ায়। স্ত্রীসোহাগী জামাই বাবুরা শ্বাশুড়ি বাড়ির যতœ-আত্তিতে সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ি ফেরে।

এত কিছু করার পরও জামাই বাবুরা চলে যাওয়ার সময় শাশুড়িআ¤মা মুখে আঁচলের কোনা গুঁজে মাথা-পিঠ হাতিয়ে বলবেন, ‘বাবাজীরা মনে কিছু নিও না। কি করতে কি যে করেছি আর কি খাওয়াতেই বা কি যে খাইয়েছি। খাওয়া-দাওয়া আমারই মন মতো হয়নি, তোমাদের মন ভরবে কীভাবে। তবু বাবা তোমাদের দু’জনকে একসাথে পেয়ে পরাণটা জুড়ালো। এটাই বড় সান্ত¡না আমার। যাও বাবা! ফি আমানিল্লাহ্!’ -বলে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ঘরে ফেরেন শাশুড়ি। আনন্দ উৎসাহে যাদের আগমন ঘটে তাদের বিদায়টাও হয় খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে।

দুই.
চাচির ভাগ্যক্রমেই হোক আর বংশানুক্রমেই হোক দুই মেয়েই হয়েছে ঠিক মায়ের মতো। দুই জামাই পেয়েছেন অসম্ভব স্ত্রীভক্ত। স্ত্রীর কথার বাইরে ওরা কোনো কথা বলা বা করার সাহস করেছেন এমন বদনাম ওদের নেই। স্ত্রীর শাসন-বারণ, আদেশ-উপদেশ আর মাতব্বরীতে দুই জামাই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সর্বদা থাকে তটস্থ। ওরা কামাই রোজগারটাই করে শুধু আর বাদ বাকি সবকিছুর কর্তৃত্ব স্ত্রীর হাতে। সংসার, ধর্ম-ক¤র্ম, সামাজিকতা, আয়-ব্যয়, আইয়র-নাইয়র এ-সবই করে তারা নিজের ইচ্ছা মাফিক। স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে পকেট খরচার টাকাটা নিয়ে বাইরে যায়। স্ত্রীর ওপর দিয়ে কোন কথা বলার মুরোদ নেই ওদের। স্ত্রী যেভাবে বলবে সে ভাবেই চলতে-বলতে হবে। ব্যতিক্রম হলে সংসারে অশান্তির কোনো সীমা থাকে না। অশান্তি চরম আকার ধারণ করলে যাকে উপোস করতে হয় এবং ঘর থেকে বাইরে গিয়ে রাত্রি যাপন করতে হয় তিনিই স্বামী। অতএব হিংস্র বাঘের সামনে নিরীহ হরিণের মত নির্বিকার থাকাটাই শ্রেয় মনে করে স্বামী বেচারারা অত্যন্ত শান্ত-সুবোধ ও অনুগত প্রাণীর ন্যায় এ সমাজ-সংসারে কোনোমতে টিকে আছে। এতে কতটা সুখ, কতটা আনন্দ আর কতটা বেদনা আছে তারাই কেবল জানে। তবে পড়শীরা আড়ালে-আবডালে বউকে ’দজ্জাল বউ’ বলে মানে। এ সম্বোধনে কতটা আদর-সোহাগ, হিংসা-বিদ্বেষ আর ভয় লুকিয়ে আছে তা নিয়ে এ পর্যন্ত কেউ গবেষণা করতে সাহস করেনি। অতএব আমিই বা আগ বাড়িয়ে বিপদে পড়তে যাই কেন? সুতরাং আমিও কিচ্ছু জানি না! চুপ্।

যেটা জানি সেটা হলো এই স্নেহপরায়না মহান শ্বাশুড়ি জামাইদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যার কন্যা গৃহকর্তা স্বামীকে অঙ্গুলের নির্দেশে ওঠবস করায়, নিজের যোগ্যতা, শক্তি-সামর্থ আর জš§দাত্রী মায়ের আছর-আশীর্বাদে যারা সংসারের প্রভূতে পরিনত হয়েছে তাদের মায়ের মতো সুখী মা জগতে আর কয়টি আছে? অতএব তিনি মুখে পান পুরে আঙ্গুলের ডগায় চুন লাগিয়ে পাড়া বেড়িয়ে, আতœীয়-স্বজনদের কাছে নানা কথায় মেয়েদের সুখ-শান্তি, কর্তৃত্ব আর স্ত্রীর অনুগত স্বামীর প্রশংসা করবেন না তো কী? তিনি মেয়ের সুখ শান্তি আর কর্তৃত্বের জন্য যেমন আনন্দে গর্ব করেন তেমনি স্ত্রৈণ জামাইদের ভূয়সী প্রশংসা করে পাড়ার হিংসা-বিদ্বেষ উদ্রেক করে একাই পরম আনন্দ ও চরম সুখ উপভোগ করেন।

তিন.
কিন্তু সমস্যা হলো নিজের ঘরের দুই বউকে নিয়ে। বড় বউটা বড় জটিল ও অন্তর্মুখী। সে শ্বাশুড়ির আঙুলের ইশারায় নাচে না আর ছোটোটা বেজায় চড়া। গরম বালুতে ধান পড়লে খৈ যেমন ছটফট করে চারদিকে ছিটকে পড়ে তার কথার ধারও তেমন। পুত্রধনেরা স্ত্রীর কথামতো চলে-বলে বিধায় মায়ের কষ্টের শেষ নেই। বাড়িতে যার পা পড়ে তার কাছেই দুই ‘দজ্জাল’ বউয়ের বদনাম গীবৎ করে নাকের পানি চোখের পানি এক করে প্রলাপে-বিলাপে বাড়ি মাতিয়ে তোলেন চাচি। পোলাদের ডেকে বলেন, ‘মানুষ হলিনি তোরা, দুজনেই বউয়ের কোলে মাথা ফেলেছিস। আমার মতো হলিনে; হলি গিয়ে বাবার মত মিনমিনে কাপুরুষ, বিলাই। লজ্জা করে না তোদের? ‘মাগী’দের কথায় তোরা চলিস? তোদের কপালে যে দুঃখ-দুর্গতি কত দিক থেকে কীভাবে এসে ঘাড়ে চড়ে বসবে এর কোনো কুল-কিনারা খুঁজে পাবি না তোরা। বউয়ের কথায় যে পুরুষ চলে তার কি মেরুদন্ড আছে রে। বাঘিনীর ঘর ধেকে শিয়াল ছানার জš§!’

চার.
দুই মেয়ে স্বামীদের নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে এলো। মা তাদের কাছে টেনে নিয়ে আবেগে, মান-অভিমানে, দুখে-কষ্টে আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে দুই দজ্জাল বউ আর এদের অনুগত কুলাঙ্গার পরাজিত দুই সন্তানের নানান কাহিনী বিচিত্রভাবে তুলে ধরলেন। মায়ের কান্নার জোর আর চোখের জলের প্রবাহ দেখে মেয়ে দুটো অগ্নিমূর্তি ধারণ না করে পানিমূর্তি ধারণ করে বসে রইল। তারা একগাল হাসি দিয়ে মায়ের পিঠ-মাথা হাতিয়ে মাকে শান্ত্বনার বাণী শোনাতে লাগল। দুই মেয়ে মায়ের পক্ষ নিয়ে তিনটা লাফে ‘দুই মাগীর’ চুল না ছিঁড়ে বসে আছে দেখে তিনি অঝর ধারায় কেঁদে বুক চাপড়াতে লাগলেন। মায়ের অসহায় কান্না শুনে তার দুই মেয়ে মনে মনে তাৎক্ষণিক একটা ছক এঁকে ফেললো। ভাবিদের যন্ত্রণার দেওয়ার মুরোদ কতটা হলে পরে এ মায়ের চোখে পানি আসতে পারে! মেয়ে দুটি ভাবছে আজ যদি মায়ের পক্ষ নিয়ে ভাবিদের সাথে ঝগড়া করি তা হলে মা-বাবার অবর্তমানে এ বাড়িতে পা রাখার কোনো উপায় থাকবে না। বাবার বাড়ি হারানোর ষোলোআনা সম্ভাবনা ও যন্ত্রণাময় ভবিষ্যতের চিত্র এঁকে দু’বোন আপছে-আপ চুপসে গেল। মায়ের কান্নার তীব্র শব্দতরঙ্গ দু’মেয়ের কানে দ্যোতনা সৃষ্টি করতে পারেনি।

দুই মেয়ে মাকে এই বলে সান্ত্বনা দিতে লাগল যে, ‘মা তোমার ভাগ্য ভাল যে আমাদের দুটো ভাই ঠিক তোমার মত ভাল বউ পেয়েছে। তোমার আছর-আশীর্বাদে আমরা যেমন শ্বশুরালয়ে রাজত্ব করে খাচ্ছি, তোমার পোলার বউ দুটিও তোমার মতো এ বাড়িতে রাজত্ব করছে. তোমার কিছু হলে পরে এ বাড়ির কর্তৃত্ব কে নেবে বল? এরাই তো তোমার যোগ্য উত্তরসূরী। এতে তো তোমার দুঃখ থাকার কথা নয়; খুশিই হবার কথা মা।’ এ কথা শেষ হতে না হতেই চাচি বিছার মতো লাফিয়ে উঠে লাত্থিমেরে খাট থেকে ফেলে দিল তার নেমকহারাম মেয়েকে। মেয়েরা লাথি খেয়েছে কিন্তু ইস্পাত কঠিন মাকে টলাতে পারল না।

অতপর দুই মেয়ে মধ্যস্থতা করে মা-বাবাকে নিজ অধিকারের মধ্যে রেখে দুই দজ্জাল বউকে আলাদা করে দিয়ে বড় একটা কাজ স¤পাদন করার গৌরব নিয়ে তারা স্বামীর বাড়ি চলে গেল।
হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোশন, লেপ-তোষক, চাল-ডাল, নুন-তেল ইত্যাদি সবই ভাগ-বাটোয়ার হলো। ঘর-দোর, রান্না-বান্না, থাকা-খাওয়া সবই আলাদা। কিন্তু ঝগড়াঝাটি রয়ে গেল একত্রেই। তবুও যে যেখানেই থাকুক না কেন বউ-শাশুড়ির কটুকাটব্যের অস্থির নাচনে সবাই তটস্থ।
নিস্তব্দ দুপুরেও বাড়িটি ঝনঝন করে ওঠে।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেলে বাবা মা বিয়ে দেন। তারপরেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এতই অশান্তি হয় যে সবাই আলাদা হয়ে যায়। অথচ পরিবারের সকল সদস্যের যদি কিছুটা করে 'ছাড়' দেওয়ার মানসিকতা থাকে তাহলে এই সমস্যা হওয়ার কথা না।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৫৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: কিছু কিছু মা / শাশুড়ি (মানুষ) নামের কলংক ।এরা পশুর থেকেও অধম।

এরা তাদের বিকৃত মানষিকতা তাদের ছেলের বউদের উপর প্রয়োগ করে সংসারকে বিষময় / নরকময় করে তোলে।এই রকম একজন আমি দেখেছি ,তার কৃতকর্মের সাজা ভোগ করছি যিনি আমারই আপনজন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.