নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটোমামার বড়ো কীর্তি

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৭


আট ভাই-বোনের মধ্যে মজনু মামা সবার ছোট। ছোট মামা বড়ো কিছু হবেন-পরিবারের সকলেই এমন আশা পোষণ করতেন।
মামা বহু কষ্ট-সাধনা করে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনবার। ফেল করেছেনও তিনবার। প্রতিবারই তিনি খুব পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে মুরুব্বিদের পায়ের ধুলি মাথায় মেখেছেন। পরীক্ষার খাতায় লিখেছেনও মেলা। অন্ততঃ এদিক থেকে তিনি পরিষ্কার।
মামা চতুর্থবার পরীক্ষা দিয়ে বলতেন, ‘এবার দেখা যাবে, পরীক্ষকেরা আমাকে ফেল করায় কীভাবে। প্রশ্ন সব কমোন। ডান-বাম তাকাবার ফুরসত ছিল না। এবার ফার্ষ্ট ডিভিশনের নিচে আশা করছি না।’

যথাসময়ে পরীক্ষার ফল বেরোলো।
মামার রোল নম্বর তন্ন তন্ন করে খোঁজা হলো। রেজাল্ট শিটে মামার রুল নম্বর খুঁজে পাওয়া গেল না। মামার চিন্তায় সবাই অস্থির। কিন্তু মামার চোখে-মুখে চিন্তার কোনো ছাপ নেই। শান্তশিষ্ট মামা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আমার কাজ আমি করেছি। খাতা যাঁরা দেখেছেন তাঁরা কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন, সেটাই হলো আসল বিষয়। মহান প্রভু হয়তো আফসোস করে বলছেন, ‘হে মজনু, কেউ জানুক আর না জানুক, আমি জানি; তুমি তোমার কর্তব্য পালন করিয়াছ। কিন্তু কেহই তোমার উপযুক্ত মূল্যায়ন করিতে পারে নাই। হতাশ হইও না। আমি তোমাকে এর প্রতিদান দিব।’
অতএব মামা বেশ আছেন।

মজনু মামা এখন নির্জলা বেকার। বেকার বলে তার কাজের কোনো অভাব নেই। মামার ওপর কাজের চাপ ও তাপ অনেক বেড়ে গেছে। মজনু মামা পরিবারের লোকজনের ধমক খেয়ে কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গেছেন। হালের বলদ কাদায় পড়ে গেলে ঘা-গুঁতো খেয়েও যেমন নীরব থাকে। মজনু মামার অবস্থাও হয়েছে তেমন। পরিবারের ওপর মামা একটা ভারী বোজা হয়ে আছেন। মামা বুঝতে পেরেছেন, বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়া এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

দুই.
মামা বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেলেন।
এতে পরিবারের কেউ অবাক হলো না। সকলেই বলল, বেচারা যাবে কোথায়; ফিরে না এসে তার উপায় কি?
মামা ফিরে এলেন না। নানা-নানুর পীড়াপীড়িতে মামা খালারা সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করলেন। কোথাও মামার সন্ধান পাওয়া গেল না।

মামা অনুভব করলেন, নিজে কিছু করতে না পারলে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা যাবে না। কষ্ট না থাকলে চেতনা জাগে না। মামা একটা চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। অতঃপর মামা সফল হলেন।

এদিকে মজনু মামার জন্য নানুর বিলাপে ও নানার প্রলাপে বাড়ির সবাই অস্থির। অগত্যা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো, “মজনু, তুমি যেখানেই থাকো না কেনো তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো। তোমার চিন্তায় তোমার মা-বাবা শয্যাশায়ী।”
তিনদিন পর একটি চিঠি এলো বাড়িতে। ‘শ্রদ্ধেয় মা ও বাবা, আমি শহরে একটি ব্যবসা করছি এবং বেশ আছি। চিন্তা করো না। আগামী শুক্রবার বিকেলে বাড়ি আসছি। ইতি মজনু’

মুহূর্তের মধ্যে সংবাদটি সকল আতœীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে গেল। সবাই ছুটে এসেছে নানাবাড়ি। বাড়ি ভর্তি মানুষ। আনন্দ আর ধরে না।

আমরা সমবয়সী ছেলেমেয়েরা চট করে একটা বুদ্ধি আবিষ্কার করে ফেললাম। কলাগাছ দিয়ে একটা তোরণ নির্মাণ করে লাল ফিতা বেঁধে দিলাম। হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে মামার আগমন অপেক্ষায় ছটফট করছি। পাড়ার সবাই হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। উৎসব উৎসব ভাব।

দ্রুতবেগে একটা টেক্সি এসে গেটের সামনে থামল। মজনু মামা ট্যাক্সি থেকে নামলেন। মাঝারি সাইজের একটা ভারী ব্যাগ মামার কাঁধে। গেটের সামনে এসে লাল ফিতায় আটকে গেলেন মামা। বাড়ির প্রবেশপথে গেট দেখে অবাক হলেন মামা। থতমত খেয়ে আস্তে করে বললেন, ‘ঘটনা কিরে? তোরা আছিস কেমন? কথা বলছিস না যে! ‘আমরা মুখে কুলুপ এঁটে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

হঠাৎ মামার চোখ পড়ল গেটের গায়ে লেখার ওপর। ‘মজনু মামার আগমন, শুভেচ্ছা-স্বাগতম। গেটপাশ- বেকার হলে ফ্রি, রোজগারি হলে পাঁচ শ’ টাকা।’ গেটের এ লেখা পড়ে, ‘এটা কোন ব্যাপার না’ বলে মামা পাঁচশ টাকার কড়কড়ে নোট আমার হাতে দিলেন। ওম্নি প্রচন্ড করতালি শুরু হয়ে গেল। আমরা ফুলের মালা আর হাসি দিয়ে মামাকে বরণ করে নিলাম। নানা-নানির প্রলাপে-বিলাপে ভারাক্রান্ত বাড়িটি মজনু মামার আগমনে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠলো।

ছবি: নেট থেকে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০০

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: চমৎকার এক গল্প পড়লাম সত্যই মজা লাগছিল দাদা

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আপনি গল্প পড়ে মজা পেয়েছেন জেনে আমি খুশি।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: তিনবার পরীক্ষা দিয়ে তিনবার ফেল করা। কৃতিত্বের হার ১০০%। এমন সাফল্য সচরাচর দেখা যায় না। এই সাফল্যের কারনেই উনি জীবনে সফলকাম হতে পেরেছিলেন। B-)

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ঠিক বলেছেন আপনি। ধন্যবাদ।

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মজার গল্প।

৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ‌ইয়ে, মানে মামার ব্যবসাটা কি ছিলো?

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনবদ্য প্রকাশ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.