নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন্টুর স্বাধীনতা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৪


“বাবা, আমি স্বাধীনতা চাই। শুনতে পাচ্ছ বাবা আমি কি বলছি?”
বারান্দায় আরাম চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন মন্টুর বাবা। তিনি মাথা তুলে চশমার উপর দিয়ে তাকালেন মন্টুর দিকে। খুব অবাক হয়ে বললেন, ‘স্বা-ধী-ন-তা!’
“জি আমি স্বাধীনতা চাই।” শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে বলল দশ বছরের ছেলে মন্টু।
বাবা চোখের চশমাটা হাতে নিলেন এবং তার দিকে চোখ ছোট করে তাকালেন এবং মাথাটা উপরের দিকে ঝাকি মেরে বললেন, “কীসের স্বাধীনতা চাও তুমি?”
“আমার যা-ইচ্ছা তা-ই করব। আমাকে কিচ্ছু বলতে পারবে না তোমরাÑএমন স্বাধীনতা চাই।”
মন্টুর বাবা কয়েক মুহূর্ত স্থির তাকিয়ে রইলেন এবং ডান হাত উল্টিয়ে বললেন, “যাও, তোমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলাম।”

মন্টু এক লাফে বারান্দা থেকে উঠোনে গিয়ে পড়ল এবং তিনটা লাফে উঠোন পেরিয়ে ভোঁ দৌড়। তার দৌড় গিয়ে থামলো বাড়ির পাশের এক খেলার মাঠে যেখানে গ্রামের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে।
গরম বালিতে ধান পড়লে যেমন ছট্ ছট্ করে খই ফুটে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মন্টু তেমনি ছটফট করে নিজেকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। সে হাত ঝাড়ে, পা ঝাড়ে। হাতে পায়ের রশির শক্ত বান খুলে দিলে রক্ত যেমন চঞ্চল বেগে ছোটাছুটি করতে থাকে; বাবার দেওয়া স্বাধীনতা পেয়ে মন্টুও সেভাবে ছোটাছুটি করতে লাগল। সামনে যাকে পায় তাকেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “আমি এখন থেকে স্বাধীন। আমার যা ইচ্ছা তাই করব। আমাকে আর কেউ কিছু বলবে না। আহ্ কী শান্তি। আমি স্বাধীন। স্বাধীন আর স্বাধীন। ইশ্ কি মজা, কি আনন্দ!”
অস্থির মন্টু বাবার দেওয়া স্বাধীনতার বার্তা সবলে ঘোষণা করে দিল।

দুই.
সন্ধ্যা হয়ে এল। খেলা শেষে মাঠ থেকে সবাই চলে যাচ্ছে বাড়ি। অন্য সবার সাথে সময়মত বাড়ি গেলে আবার কীসের স্বাধীনতা? সুতরাং মন্টু শূন্য মাঠে একা এলোমেলো পায়চারি করছে। পায়ের সামনে মাটির ঢেলা, শুকনো গোবর যা পাচ্ছে তাতেই লাথি মারছে। ঢেলা আর গোবরগুলো ব্যাঙের মতো লাফিয়ে দূরে গিয়ে পড়ছে।

চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। সবাই মাঠ ছেড়ে চলে গেছে যার যার ঘরে। আলো জ্বালিয়ে পড়তে বসেছে অনেকে। ঘরে ঘরে পড়ার গুনগুন শব্দ।
মন্টু রাতে ঘরে গিয়ে উঠলো। ছোট বোন রাসুকে আদর করে পড়াচ্ছে তার বাবা। সেখানে গিয়ে বিপরীত দিকে ফিরে বসে রইল মন্টু। সে মাঠ থেকে রাত করে ঘরে ফিরেছে, হাত পা ধোয়নি, পড়তে বসেনি-এটা সে ঘুরেফিরে তার বাবা-মাকে শুনাতে চাইছে।
মন্টু রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে এটা সেটা বলে। তার মা একবার তার দিকে তাকিয়ে চুলোয় লাকড়ী ঠেলে দিচ্ছে। কারোর মধ্যে কোনো রাগ বা শাসনের সুর নেই। আর সবই চলছে খুব স্বাভাবিক ভাবে। মন্টু তার পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে ইচ্ছেমতো চলছে। কোনো বাধা বন্ধন নেই, শাসন-বারণ নেই, দারুন মজা!

মা রাতের খাবার বেড়েছে। মন্টুর সামনে থেকে ছোট বোন রাসুকে ডেকে নিয়ে গেল খাবার টেবিলে। টেবিলে মন্টুর খাবার বাড়া আছে। মন্টুর ডাক পড়েনি। ডাক দিলে যদি মন্টুর স্বাধীনতা কষ্ট পায়!

অন্যদিন না খেয়ে শুতে গেলে মা ঘুম থেকে টেনে তুলে নিয়ে খাওয়াতো। আজ কেউ কিছু বলেনি। সবাই যখন শুতে গেল, তখন মন্টু সুর করে বলতে লাগল, “আমি ভাত খা-ই-নি, খা-ব-না, আমার ইচ্ছা...।”
তার কথায় কেউ কানে তুলল না।
সে আগের মতো সকলের সঙ্গে বসে খায় না। সে তার ইচ্ছেমতো যখন ইচ্ছা তখন খায়, খখনো না খেয়েও থাকে সে। কারণ এটা তার ম্বাধীনতা।

মন্টু বই নিয়ে বসল টেবিলে। একটা একটা করে বই হাতে নিয়ে দু একটা পাতা উল্টিয়ে ধুম করে ফেলে দেয় খাটের উপর। কখনো উচ্চৈস্বরে ছড়া পড়ে, কখনো গুনগুন করে একটু পড়ে টেবিলে বই ছুঁড়ে ফেলে। খাতা নিয়ে এলামেলো আঁকাআঁকি করে। কোন কিছুতেই তার মন বসে না। “আমার পড়া শেষ” বলেই সে বইগুলি সশব্দে টেবিলে রেখে ধুম করে এসে শুয়ে পড়ে ছোট বোন রাসুর সাথে।

ভাই-বোন এক সঙ্গেই থাকে। মন্টু লেপ টেনে এনে তার গায়ে নিচে জড়ো করে রাখে। হাত পা ছিটকে নানা ভাবে রাসুর কাছে তার স্বাধীনতার সুখ প্রকাশ করে। মন্টুর দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ হয়ে রাসু অভিযোগ করলে বাবা মা রাসুকে বুকে টেনে নিয়ে শান্ত্বনা দেয়, ‘মা, রাগ করে না। ভাইয়া তো স্বাধীন। সে যা ইচ্ছা তা করুকগে।’ তবুও মন্টুকে কিচ্ছুটি বলে না।

তিন.
স্কুলে যাবার সময় হয়েছে। বেণু, রতন, সাজু এসে মন্টুকে বলল, “কিরে, তুই এখনো রেডি হসনি? ইস্কুলে যাবি না? তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
“না, আমি ইস্কুলে যাব না।”
“কেনো যাবি না?”
“এমনি, আমার ইচ্ছা। আমি না গেলে তোদের কোন অসুবিধা আছে?”
তার সহপাঠীরা তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। তারা মন্টুর মার কাছে নালিশ করে চলে গেল।

মন্টুর অফুরন্ত সময় কাটে নানা দুষ্টুমি করে। খেলার মাঠে সে সকালে দুপুরে-বিকালে যাওয়া আসা করে, একা একাই খেলে, ঢিলাঢিলি করে। গাছের ডালে বসে থাকে, পাখি ধরার ফাঁদ পাতে। যাকে তাকে কিল ঘুষি মারে, থুতু দেয়, বিড়াল দৌড়ায়। বাড়ির পোষা কুকুরের বাঁকা লেজ সোজা করার জন্য কসরত করে। একটি বাইসাইকেল নিয়ে ঘাম ঝরিয়ে সারা গাঁয়ে ছোটাছুটি করে।
মন্টু সারাদিন কী পরিমাণ স্বাধীনতার সুখ বিতরণ করে বেড়ায় তা বুঝা যায় বিকেলে যখন তার বিরুদ্ধে একের পর এক নালিশ আসতে থাকে, তখন।

চার.
মন্টুর উপর মা-বাবার শাসন-বারণ নেই, আদেশ-নিষেধের বালাই নেই। তার কোনো কাজে বা আচরণে মা-বাবা রাগ করে না, ধমক দেয় না। উপদেশ বিলি করে না। তার আদর নেই, ¯েœহ নেই; ছায়াও নেই-মায়াও নেই। স্বাধীনতা ভোগের দুর্বার আনন্দ দিনে দিনে কেমন যেন মলিন হতে শুরু করেছে।

সকালবেলা দুই ভাইবোন কথা বলছে। মা এসে নাস্তা করার জন্য রাসুকে যখন টেনে নিয়ে যাচ্ছে তখন মন্টু তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “নেও, আমাকেও টেনে নিয়ে যাও।” তার মা, তাকে ধরল না, রাসুকে নিয়ে চলে গেল।
খাবার সময় ছোট বোনটির যখন ডাক পড়ে তখন মন্টু এগিয়ে গিয়ে বলে, “আমাকে ডাকতে পারো না? খালি রাসুকে ডাক কেনো? ডাক দেও, “এই মন্টু ভাত খেয়ে যা।” মা ডাকল না।

দিনে দিনে মন্টুর মন কেবল মা বাবার আদর শাসন, ধমক আর বিধিনিষেধের জন্য কেমন যেন হাহাকার করতে লাগল। এ ভাবেই কেটে গেলো দশ দিন। এখন সে দুরন্ত ছাগলছানার মতো আর ছোটাছুটি করে না। কেবল বাবা-মার আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। কী যেন বলতে চায় কী যেন পেতে চায় কিন্তু কিছুই বলতে পারে না সে।

পাঁচ.
মন্টুর বাবা বারান্দায় চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছেন। মন্টু ধীর পায়ে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সে বার কয়েক ঢোক গিলে ভাঙ্গাস্বরে বলল, “বাবা, আমার স্বাধীনতা ফিরিয়ে নাও।”
মন্টুর বাবা মাথা তুলে ছেলের দিকে তাকালেন। এ কয়দিনে ছেলের মুখটা মলিন ও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তিনি মুখে কিছু না বলে ডান হাতটা মন্টুর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মন্টু উড়ে গিয়ে বাবার গলা প্যাঁচিয়ে ধরে চিঁ চিঁ করে কান্না জুড়ে দিল।
বাবার দেওয়া স্বাধীনতা পেয়ে এতদিনে যা হারিয়েছে তাই যেন কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নিতে চাইছে মন্টু।




মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৩

সাগর শরীফ বলেছেন: মন্টুর বাবার মত করে আমাদের বুঝানো হয় নাই কখনো। শুধু মাইরের উপর মাইর আর সপাটে মারা হয়েছে। এভাবেই জীবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছি।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
তখন বেতমারাই ছিল মহেৌষধ।
শুভ কামনা।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: কী মিষ্টি একটা লেখা! আমার খুব ভালো লাগলো!

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আপনার মন্তব্য পড়ে আমি উৎসাহ বোধ করছি। ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: দাদা আপনার মতো লেখতে পারি না কেমনে লেখা যায়

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভাই আমি এমন কী আর লিখি।
আপনি তো ভালই লিখছেন।
শুভেচ্ছা।

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৯

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: আপনি অনেক ভাল লেখেছেন স্যালুট জানাই

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: প্রীত হলাম। আমার ভালবাসা রইল।

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

দয়িতা সরকার বলেছেন: বাবা , আমার স্বাধীনতা ফিরিয়ে নাও। দারুন

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আমি আনন্দিত।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৩

রবিন.হুড বলেছেন: স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ঘুড়ি ওড়ানোর মতো সুতায় ঢিল দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আপনি ঠিক বলেছেন। শুভেচ্ছা নিন।

৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনন্যসাধারণ লেখা I

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমি আনন্দিত আপনার মন্তব্যে।
ভাল থাকবেন।

৮| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: গল্পে ভালোলাগা।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।

৯| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: মন্টু ভাগ্যবান।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৫

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.