নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটাপুর বিয়ে

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪০


‘খালি দেও দেও কর কেন, একট্ওু দেব না, সারাদিন আমার পিছু পিছু ঘুরলেও না। তোমার জন্য আমি একা কিচ্ছু খেতে পারি না, আজ এই আইসক্রিমটা আমি একাই খাবো, যাও আমার সামনে থেকে’ আদরের ছোট ভাই তপুকে ধমক দিয়ে বলল তিন্নি।
‘দেবে না, একটুও না, ঠিক আছে, না দেওয়ার মজা দেখাচ্ছি’, বলেই এক দৌড়ে তিন্নির রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল তপু।
পাঁচ বছরের তপু বোনের সঙ্গে অভিমান করে যে-কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। ঘরের ভেতর থেকে কাপড় ছেঁড়ার শব্দ পেলো তিন্নি। সে জানালার গ্রিল ধরে চুপি দিয়ে দেখে ঘরের ভেতরে জিনিসপত্র এলোমেলো। তপু কামিজের এক কোনা পায়ে চেপে ধরে আরেক কোনায় কামড়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। তারপর হাতে নিল নতুন ওড়নাটি। ওড়নাটি টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করছে তপু।
‘মা, মাগো, তপু আমার নতুন কাপড় ছিঁড়ে ফেলছে, দেখে যাও তাড়াতাড়ি’, বলে চিৎকার করে ভাইকে বারণ করতে লাগল তিন্নি।’
‘ভাইটি আমার, লক্ষ্মী-সোনা-যাদু ভাই, ওড়নাটা তুই ছিড়িস না, এই নে, অর্ধেক আইসক্রিম তোকে দিয়ে দিচ্ছি, নে, ধর,’ অনুনয় করে বলল তিন্নি।
‘সেই সময় দেওনি কেন, এখন এইটুক খাব না, আমি তোমার সব কাপড় ছিড়ে ফেলব’, তারপর ছিঁড়ব তোমার নতুন জুতা’, বলে তপু ওড়নাটা ছেঁড়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল।

মায়ের আদর ও ধমকে তপু ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সে ছোঁ মেরে তিন্নির হাত থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে উধাও হয়ে গেল। ঘরের ভেতরে এলোমেলো পড়ে আছে ছেঁড়া কাপড় আর জুতা। তিন্নি ও তার মা যখন ছেঁড়া কাপড় ও জুতা গুছাচ্ছিল তপু তখন আপন মনে আধখানা আইসক্রিম চেটেপুটে খাওয়ায় ব্যস্ত। তার মধ্যে কাপড় ছেঁড়ার কোনো লক্ষণ নেই।

দুই.
তিন্নি আর তপু ভাই-বোন। একজনকে ছাড়া আরেক জন কিছুই বোঝে না। অনেক আদর আর মান-অভিমান চলে ওদের মধ্যে। তাদের মা দুই ভাইবোনের এসব কাণ্ড দেখে প্রায়ই বলেন, ‘তোদের খাতির আর ঝগড়া হলো আকাশের মেঘের মতো। এই দেখি ভালো, গল্প করছিস, আবার একটু পরেই দেখি ভীষণ ঝগড়া, মারামারি। তারপরেও তোদের একজনকে ছাড়া আরেক জনের চলে না। চোখের একটু আড়াল হলেই ডাকাডাকি হই চই শুরু হয়ে যায়। দুই ভাইবোনের এক আতœা। এখন কেমন লাগে, কাপড়গুলো ছিঁড়ে ছেলেটা পালালো কই।’

তিন.
তিন্নি চাকরি করে একটি পোশাক তৈরি কারখানায়। তাই সে প্রতিদিনই বাসায় ফেরার সময় একটা চকোলেট বা একটা আইসক্রিম এনে ভাইটির হাতে তুলে দিতে পারে। তপু আইসক্রিম পেয়ে যত না খুশি হয় তার চেয়ে ঢের বেশি আনন্দ পায় তিন্নি। তপু প্রতিদিন সন্ধ্যায় তার আপুটির জন্য অপেক্ষায় থাকে। আপুটি ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। তিন্নিকে দেখামাত্র সে হরিণ ছানার মতো ছুটে গিয়ে কোমড় প্যাঁচিয়ে ধরে। তারপর আপুটাকে কিলিয়ে, এটা সেটা বলে, টেনে, ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসে ঘরে।

চার.
তিন্নির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।
অনুষ্ঠানের দিন বিয়েবাড়ির অন্য সবার মতো তপুরও আনন্দের সীমা নেই। সে অন্যদের সাথে বাজি ফুটায়। সে নতুন পোশাক পরে হই চই করে বাড়ি মাতিয়ে তুলছে। তিন্নি নতুন বউ সেজে বসে আছে। তপু একটু পর পর তিন্নির কাছে গিয়ে শরীর ঘেষে বসে আর বলে, এটা আমার আপু, সুন্দর না? বলেই টান মেরে ঘোমটা খুলে ভোঁ দৌড়।
বর এলো। বিয়ে হলো। এবার বিদায়ের পালা। তপু বিয়ের কিছুই বুঝে না। সে কেবল আনন্দে আতœহারা হয়ে ছোটাছুটি করছে।
তিন্নি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঝাপসাচোখে তপুকে আদর করতে গেল। তপু আনন্দে ডুবে আছে। সে আদরের কোনো মূল্যই দিল না। সে আদরের হাত সরিয়ে দিয়ে তিন্নিকে ঠেলে ঠেলে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে বলল, তুমি বসো, আমি ঠেলা দেই।
এ আর খেলা নয়- বিদায়!
তপু তার সমবয়সী কয়জনকে নিয়ে গাড়ি ঠেলছে আর সুর করে বলছে হেঁইয়োরে হেঁইয়ো, আপু যায় হেঁইয়ো, গাড়ি চলে হেঁইয়ো। তপু গাড়িটা ঠেলতে ঠেলতে কতটুকু গেল। তারপর গাড়িটা তপুর হাতছাড়া হয়ে গেল। তপু গাড়ির সাথে দৌড়ে আর কুলোতে পারছে না। সে হাতছাড়া চলন্ত গাড়ির দিকে তাকিয়ে দুহাতের আঙুল চিমটাতে লাগল।

পাঁচ.
তপু এতক্ষণ খেলার আনন্দে বিভোর ছিল। গাড়িটি যতই দূরে চলে যাচ্ছে ততই তার খেলার আনন্দে ভাটা পড়তে লাগল। সে অভিমানে ঠোঁট ভেঙ্গে কাঁদতে লাগল। তার ছোট্ট বুকটা বার বার ফুলে উঠছে। আর চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ছে মাটিতে। কান্নাভেজা কন্ঠে তার মুখ থেকে অষ্পষ্ট শব্দ বেরিয়ে এলো ছোটাপু...। ততক্ষণে গাড়িটি অদৃশ্য হয়ে গেল।

তপু এক দৌড়ে বাড়ি চলে গেল। মা, মা, ছোটাপুু কই গেছে?
বেড়াতে গেছে।
কখন আসবে?
দুদিন পর।
আমি ছোটাপুর সাথে কথা বলব না।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: শিশুতোষ।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন:
ঠিক ধরেছেন আপনি।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ভাই-বোনের নিটোল সম্পর্কের একটি সরল গল্প।
শুধুই ভালোলাগা।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আমার প্রীতি নিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.