নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladeshi Moinul

Bangladeshi Moinul › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়েজার-১ : অনন্তের পথে ৩৯ বছর

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩৩

আসছে ৫ই সেপ্টেম্বর হবে ভয়েজার-১ এর উৎক্ষেপণের ৩৯ বছর পূর্তি। চলুন একনজরে কিছু জেনে নেয়া যাক ভয়েজার-১ সম্পর্কে।

চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে আঁকা ভয়েজার-১।

১৯৬০ এর দশকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ‘মেরিনার প্রকল্প’ হাতে নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল গ্রহ পর্যবেক্ষণ। সেই উদ্দেশ্যে ১৯৬২ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ১০টি অভিযান (মেরিনার ১ থেকে ১০) চালায় নাসা। শুরুতে ভয়েজার ১ ছিল "মেরিনার ১১" নামে মেরিনা প্রকল্পের অধীনে। কিছুদিন পর বাজেট ঘাটতির কারণে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম শুধুমাত্র "বৃহস্পতি-শনির ফ্লাইবাই" এ নামিয়ে আনা হয় এবং নতুন প্রকল্পের নাম দেয়া হয় "মেরিনার জুপিটার-স্যাটার্ন প্রোব"। প্রকল্পের কাজ আগাতে থাকলে ইতিমধ্যে "পাইওনিয়ার ১০" থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির প্রতিকূল আবহাওয়া সম্পর্কে অবহিত হন এবং এই প্রকল্পের নাম ও কাজের ধারা আবারও পরিবর্তন করেন। এবার প্রকল্পটির নতুন নাম দেয়া হয় "ভয়েজার ১"। এই নতুন ভয়েজার ১ এর প্রকল্পের ডিজাইন ও কলাকৌশল পূর্ববর্তী অন্য যেকোনো মেরিনার প্রক্লপের চেয়ে আরও বেশি উন্নত করে করা হয়।
১৯৭৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর Titan IIIE নামক রকেট ইঞ্জিনে চড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এলসি-৪১ (Cape Canaveral LC-41) নামক বিমান বাহিনীর ঘাঁটি থেকে ভয়েজার-১ উৎক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে মহাশূণ্যের পথে পাড়ি জমায়।
ভয়েজার ১, ১৯৭৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝে থাকা এস্টেরয়েড বেল্টে প্রবেশ করে আর ১৯৭৭ সালের ১৯শে ডিসেম্বর এস্টেরয়েড বেল্ট অঞ্চলেই দুই সপ্তাহ আগে উতক্ষিপ্ত তার জমজ ভাই ভয়েজার ২ কে অতিক্রম করে।
১৯৭৯ সালের ৫ই মার্চ এটি বৃহস্পতিতে পৌঁছে। এসময় এটি বৃহস্পতির চাঁদ "আইও"র বুকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির খোঁজ দেয়। এবং এবারই প্রথম পৃথিবীর মানুষ প্রথমবারের মত পৃথিবী ছাড়াও সৌরজগতের অন্য কোথাও সক্রিয় আগ্নেওগিরির খোঁজ পেল।

চিত্রঃ বৃহস্পতির চাঁদ "আইও"র বুকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি।

১৯৭৯ সালের এপ্রিলে ভয়েজার-১ বৃহস্পতির এলাকা ছেড়ে শনির দিকে রওয়ানা দেয় এবং ১৯৮০ সালের ১২ই নভেম্বর শনির সবচেয়ে কাছাকাছি যায়। এরপর ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরেই ভয়েজার-১ শনির এলাকা ছেড়ে দূর আকাশের দিকে পা বাড়ায়।
১৯৯৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী ভয়েজার-১ সূর্য থেকে ৬৯AU দূরে থাকা "পাইওনিয়ার-১০" কে অতিক্রম করে মনুষ্য প্রেরিত সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তুতে পরিণত হয়। এসময় এর বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার!!! [১AU = সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব]
২০০৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী এটি টারমিনেশন শক এলাকা অতিক্রম করে এবং ২০১২ সালের জুনে হেলিওপজ এলাকায় প্রবেশ করে। ২০১২ সালের আগস্টে ভয়েজার-১ হেলিওপজ এলাকা অতিক্রম করে যায়। এসময় এটি সূর্য থেকে প্রায় ১২১AU দূরে ছিল এবং তখন এতে সূর্যের আলো পৌঁছুতে সময় লাগত ১৬.৮৯ ঘন্টা!!!
২০১৩ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর নাসার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দেন যে ভয়েজার-১ আমাদের সৌরজগত ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি আন্তঃনাক্ষত্রিক শূণ্যতায় প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হয় ২০২৫-৩০ সালের মাঝে এটি আমাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

চিত্রঃ ভয়েজার-১ এর বর্তমান অবস্থান।

অনন্ত শূণ্যতায় হারিয়ে গেলেও যদি কখনও এটি অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীদের হাতে পড়ে, তাই এতে উতক্ষেপনের সময়ই সংযুক্ত করা হয়েছিল "গোল্ডেন রেকর্ড" বা "সোনালী স্মৃতি" নামক একটি গ্রামোফোন রেকর্ড। যাতে পৃথিবীর কিছু ছবি, প্রাকৃতিক কিছু শব্দ এবং প্রায় ৫৫ রকম ভাষায় "সম্বোধন" রেকর্ড করা আছে, যার মধ্যে রক্তে অর্জিত আমাদের বাংলা ভাষাও একটি। ভয়েজার-১ এর কল্যাণে আমাদের মাতৃভাষা এখন আমাদের থেকে ২০.৩ বিলিয়ল কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে এবং যাচ্ছে আরও অনন্তের পথে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯

ছায়াপথের যাত্রী বলেছেন: " ভয়েজার-১ এর কল্যাণে আমাদের মাতৃভাষা এখন আমাদের থেকে ২০.৩ বিলিয়ল কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে এবং যাচ্ছে আরও অনন্তের পথে। "

ব্যাপারটি জানা ছিল না। চমৎকার এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২০

ছায়াপথের যাত্রী বলেছেন: " ভয়েজার-১ এর কল্যাণে আমাদের মাতৃভাষা এখন আমাদের থেকে ২০.৩ বিলিয়ল কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে এবং যাচ্ছে আরও অনন্তের পথে। "

ব্যাপারটি জানা ছিল না। চমৎকার এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৭

Bangladeshi Moinul বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৫

শোভন১ বলেছেন: ভালো পোস্ট। নাসার সাইটে ঐ গোল্ডেন রেকর্ডে কি আছে তা দেখাও যায়। কিছু ছবিও আছে। বাংলা ভাষায় যেটা আছে সেটা "নমস্কার..." দিয়ে শুরু করে কিছু একটা বলে, অনেক বছর আগে শুনেছিলাম।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৭

Bangladeshi Moinul বলেছেন: ৫৫টি ভাষার সবকয়টিই সম্ভাষণমূলক। আমাদের মত বা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীরা যদি এটি কখনো পায়, তাই তাদের ধন্যবাদসহ সাদর সম্ভাষণ জানানো হয়েছিল। তবে যেই আদিকালের গ্রামোফোন রেকর্ড এইটা!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.