![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরকার দলীয় এক সাংসদ বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উত্থাপিত করেছিলেন। কিন্তু সংসদ মনে করেছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সংসদে আলাপের দাবী রাখে না। তা কি বিষয়? হিন্দী ভাষায় ডাব ডরেমন নামক কার্টুন ছবিটি ক্রমাগত বাংলাদেশের একটি বিশাল শিশু মনে কুপ্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, তাই এখনই তার বন্ধ দরকার। কুপ্রভাব মানে হিন্দী শেখা। সম্ভবত স্যাটেলাইট সংযোগ আছে এমন কোন বাসা নেই যেখানে হিন্দী ছবি দেখা হয় না। তখন কি সেটা প্রভাব ফেলছে না? এটা একটা পাল্টা যুক্তি হতে পারে। একই কথা হিন্দী গানে সয়লাব হয়ে যাওয়া গানের দোকানগুলোর জন্য প্রযোজ্য। তখন কি এ দেশের ভাষার ওপর প্রভাব পড়ে না? না কি বড়রা দেখলে পড়ে না ছোটরা দেখলে পড়ে? ডিস সংযোগ আছে এমন অনেক টিভিতে রিমোট থাকার কথা। সেখানে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল নামের একটা সুইচ থাকার কথা। যেটা টিপে কেউ চাইলে ডরেমনের চ্যানেলটা বন্ধ করে দিতে পারে। বাচ্চারা তাহলে আর হিন্দী ডরেমন দেখে প্রভাবিত হবে না। কিন্তু প্রলয় দেখবো না বলে কি চোখ বন্ধ থাকলে চলে? না কি তাতে প্রলয় পালায়? মোটেও না। ডরেমন শিশুমনে দ্রুত দখল করে নিচ্ছে। কারণ হিন্দী এবং বাংলা দুটো ভাষারই উদ্ভব একই প্রাকৃত থেকে। তার চেয়ে বড় কথা হিন্দী বাচ্চাদের কারণে তার বাবা-মা বা অন্য আত্মীয়দের জন্য ছোটকাল থেকেই বিদেশী ভাষা হিসেবে পরিচিত হয় না যে! দোষ তবে ডাবিং কার্টুনের? ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন আজকের নয়। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট সংযোগ মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে পড়েছে। হিন্দীর চেয়ে যেটি বেশি ক্ষতি করছে সেটি হচ্ছে কলকাতার সিরিয়ালগুলো। কই সেগুলো নিয়ে সুশীল সমাজের কোন বক্তব্য দেখি না। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বেশি অবক্ষয়ের জায়গাটা ওই সিরিয়ালের কল্যাণে বলেই বিশ্বাস করেন এ দেশের বিশাল একটা অংশ। কিন্তু তাদের বাসায় রিমোট কন্ট্রোল তাদের হাতে যারা সিরিয়ালগুলো গোগ্রাসে গেলেন। ইলাস্টিক টানতে টানতে একসময় ছিঁড়ে যেতে পারে, এসব কলকাতার সিরিয়াল ইলাস্টিককেও হার মানাতে ওস্তাদ। সংস্কৃতির আগ্রাসন যদি ভারতের হয় তবে এই তত্ত্ব খুব অকেজো। ওখানে তো ইংলিশও আছে। সেটা কেনো শেখা হয় না? ধরা যাক হিন্দী ডরেমন বন্ধ করে দেয়া হলো, এতে আমাদের ছোট্টশিশুরা আবারো দল বেঁধে টুনাটুনি শুনবে? সে তো ছোটকাল থেকে দেখে আসছে তার মা-বাবা হিন্দী সিরিয়াল, ছবি বা গান দেখে ও শুনে আসছে। এখন স্কুলে যাওয়ার সময় সেই অভ্যাস চাইলেই বন্ধ করা সম্ভব! তার মা-বাবা যারা ছোটকাল থেকে সুকুমার রায় পড়ে এসেছেন তারা সেই অভ্যাসটাকে ধরে না রেখে যদি হিন্দীতে নিজেদের জান কোরবান করে দেন তবে বাচ্চাদেরই বা কি দোষ! সাংস্কৃতি আগ্রাসন একটা বড় আকারের কথা। আমরা ভারতীয় সংস্কৃতির কুপ্রভাব দ্বারা আক্রান্ত এটা মোদ্দা কথা। এখানে জামা-কাপড়ের দোকানের নাম হয় মান্যভার (মান্যবর), সাজনা (সজন) এবং সেই শো রুম গুলোর মালিকরা হন সাবেক মন্ত্রী বা সাংসদের ছেলে-মেয়েরা। এখন গুলশানে নাকি মুম্বাইয়ে যে কায়দায় বিয়ে হয় তার সংশ্লিষ্ট কাজগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি করে। এই আ্গ্রাসন কে বন্ধ করবে? ডিসয়ালারা? থোড়াই কেয়ার। ডিসের সংযোগে তো এই দেশে ক্রিকেট আরো জনপ্রিয় হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের বাংলাদেশের ছেলেরা অনেক কিছুই শিখেছে। বিসিবি যেমন শিখেছে আইপিএলের আদলে বিপিএল কিভাবে করতে হয়। কই একজন ধোনি হবার জন্য কি করতে হয় ডিসের কল্যাণে সেগুলো রিয়াদরা সেগুলো জানলেও অনুসরণ করেন না কেনো? একজন শচীন টেন্ডুলকার যখন প্রতিটি সম্মানের জন্য বিশাল বিশাল কষ্ট করার কাজ অনবরত বলে যান, তখন সাকিবরা কেনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরের সময় মাগুড়ায় ঘুরতে যান? কেনো ভুলে যান সৌরভ গাঙ্গুলী ঘরের সামনের উঠোনে ভেজা টেনিস বলে বারবার বাউন্সার খেলা চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজে সেঞ্চুরি পেয়েছিল সে খবর ডিসের কল্যাণে মানুষ জেনেছিল। জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ার আগে আশরাফুল আলাদা একটা উইকেট বানিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন খবর তার অভিষেক হবার পর থেকে কখনোই কেউ কি শুনেছেন? যত দোষ শুধুই ডরেমনের? আমাদের নিজেদেরই কি নেই? হিন্দী ডরেমন বন্ধ হোক, হিন্দী সিরিয়াল বন্ধ হোক, কলকাতার সিরিয়াল বন্ধ হোক, এই প্রার্থনাতে কি বাঙ্গালি দিন পার করলেই হবে?
©somewhere in net ltd.