![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালোবাসা পৃথিবীর বড় অস্ত্র। মানুষকে ভালোবাসুন, সম্মান করুন পৃথিবীর সব কিছু জয় করতে পারবেন।।
সাদা পাঞ্জাবি
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা হয়তো এমনই,কষ্ট পায় কিন্তু অভিমান করতে পারে না।আরোবির আজ HSC টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে,ভালোভাবেই পাশ করল।খুব সামনেই HSC ফাইনাল পরিক্ষা।তাই কয়েক দিন পরই কলেজে বিদায় অনুষ্ঠান।সেই উপলক্ষে কলেজে মিলাদ মাহফিল হবে।কলেজের ক্যাম্পাসে আজ সবাই পাঞ্জাবি কেনার কথায় ব্যস্ত।সবাই আড্ডা দিচ্ছে,আড্ডার মূল বিষয়ই পাঞ্জাবি।কার পাঞ্জাবির কতো টাকার বাজেট,কে কোথায় থেকে কিনবে?কে কি রঙের পাঞ্জাবি কিনবে,তা নিয়েই সবাই ব্যস্ত।এখন কোচিং চলে,কোচিং এর ফাকে এ সব নিয়েই আড্ডা হয়।খুব ইচ্ছে সবার মতো আরোবিও পাঞ্জাবি পড়ে আসবে। সাদা পাঞ্জাবি...।সমস্যা টা হলো এই দুঃসময়ে পরিবার থেকে কিভাবে পাঞ্জাবি কেনার টাকা চাইবে?
অবশ্য মন টা খুব খারাপ।সে ভাবছে “ মধ্যবিত্ত রা হয়তো এই রকমই হয়। কোনো কিছু চাওয়া পাওয়ার মধ্যেও অনেক হিসাব নিকাশ থাকে।কোন কিছু পেলেও হয়তো অনেক তর্ক যোদ্ধ করে পেতে হয়।কী করব?
মন খারাপ করার কারন কি?সৃষ্টিকর্তা তো এভাবেই পাঠিয়েছেন”। তাই বলে সৃষ্টিকর্তার কাছেও একটু অভিমান।
তার পর ও আশা করে মার কাছে বলে- বরং মা বুঝায় ‘ধনীদের মতো যেভাবে মন চায় সেভাবে চললে হয় না।কলেজের বন্ধুরা সবাই কিনেছে এ কথা বললে বলে ‘সবার টাকা পয়সা আছে তাই সবাই কিনেছে।
কিছুদিন পর প্রবল ইচ্ছা নিয়ে বড় আপুর কাছে পাঞ্জাবি চেয়ে বসল।বড় আপু ও দিতে না’রাজ।
সে জিদ নিয়ে ভাবে কেনো মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করলো,কিছুই তো সহজে পায় না।দরকার হলে ও পরিবারের চিন্তা করে আর খোজে না।
কিছু দিন পর কথা............
আরোবি কলেজে গেছে ,ক্লাস করতেছে, হঠাৎ অনুভব করলো তার জ্বর এসেছে।আসলে কয়েক দিন পর পরই অসুস্থ হয়ে যায়।কিন্তু কাওকে বুঝাতে দেয় না,সব কিছু চেপে রাখে।প্রথম দুই বার ডাক্তার দেখালে ও কিছু দিন ঠিক হয়ে আবার হয়।পরিবারের কাছে বারবার বললে হয়তো বলবে “তুই ঠিক মতো ঔষুধ খাস না,না হয় বলবে এটা উছিলা,পড়া কামাই দেওয়া ইত্যাদি।তাই এসব চিন্তা করে বলেও না।আর মাঝে মাঝে এভাবে অসুস্থ থাকতে থাকতে হয়তো অভ্যাসই হয়ে গেছে।
কিন্তু অন্য দিন থেকে আজ একটু ভিন্ন,বেশিই খারাপ লাগছে।ভূমি হচ্ছে,রক্ত ভূমি।সে অনেক ভয় পেয়ে গেছে।বাড়িতে চলে আসলো।কাউর সাথে কথা বলছে না।হঠাৎ করে এমন অসুস্থ পূর্বে কখন ও হয় নাই।সারা টা দিন চুপ চাপ ছিলো,ঘরেই শুয়ে আছে,আর উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা করছে। রাতে যখন বিছানায়খুব চিৎকার করছে তখন পরিবারের সবাই এসে তাকে প্রচন্ড খারাপ অবস্থায় দেখলো।প্রচন্ড জ্বর আর মাথার চারদিকে রক্ত।সবাই তো অনেক ভয় আর কান্নাকাটি করে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
এভাবে কয়েক দিন ধরেই সে হসপিটালে পরে আছে।আগের থেকে আরো বেশি খারাপ।হঠাৎ দুই দিন পর ডাক্তার তার বাবা কে যা শুনালো তা কেও বিশ্বাস করতে পারলো না।
তার নাকি ব্লাড ক্যান্সার......।
এখন বাবা যেভাবে পারে টাকা জোগার করছে,চিকিৎসা করতেছে,খরচ করতেছে কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছে না।সে এখন লক্ষ করল,আজ তার যত্ন নেয়ার মানুষের অভাব নেই।খুব যত্ন করছে।আগে না পাওয়ার ভয়ে কিছু চাইতো না,আর এখন সবাই এসে বলছে তোর কি লাগবে?তুই কি খাবি?তার ক্যাম্পাসের সব চেয়ে হিংসুটে ,দেখতে না পারা বন্ধুটি ও তার পাশে বসে হাত ধরে আছে।অভিমানে রাগ করে চলে যাওয়া,অনেক দিন তার সাথে কথা না বলা সেই প্রিয় বন্ধুটি ও তার পাশে বসে চোখের পানি ফেলছে।আর অপরাধির মতো নিচু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরোবিও তার দিকে চেয়ে থেকে কি যেনো ভেবে হাসছে।
হঠাৎ এক দিন সকালে আরো খারাপ অবস্থা।খুব আবল-তাবল বলতেছে।চার দিকে সবাই কান্নাকাটি করতেছে।
এক সময় তার আপুকে বলতেছে,
“আপু
হ্যা,
“কলেজের বিদায় অনুষ্ঠান কি চলে গেছে? সবাই খুব সেজে গুছে গেছে,তাই না আপু...।রাকিবের পাঞ্জাবি টা মনে হয় অনেক সুন্দর ছিলো।ও বলছিলো অনেক দামি পাঞ্জাবি কিনবে।ইকরামের পাঞ্জাবি টা মনে হয় আরো সুন্দর হবে।আসলে ছেলেটা কে খুব ভালোই মানা্বে”।
এসব কথা শুনে সবার কষ্ট গুলো আরো বেড়ে গেলো।কেউ কিছু বলতে পারছে না।আপু চিৎকার করছে আর মাথা টা কোলে নিয়ে চুমু দিয়ে বলছে,
‘তোর জন্যে আজই খুব দামি,সুন্দর পাঞ্জাবি কি্নে আনব।এখনই যাব। তুই কি রঙের পাঞ্জাবির কথা বলছিলি?
সাদা পাঞ্জাবি ,তাই না??”
আরোবির কথা গুলো আগের থেকে আরো অ-স্পষ্ট হয়ে গেছে।গ্যানগ্যানিয়ে তার বোন এর হাত টি ধরে বলতেছে-
“আমার সাদা পাঞ্জাবি লাগবো না আপু।আমাকে সেলাই বিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় দিতে পারবি আজ?কেউ না করবে নাতো আপু।মা বলবে নাতো যে “ধনী মানুষেরা পড়ে তর ও পড়তে হবে নাকি?” মা...। তুমি আর না দিতে বলবে নাতো আজ...?
“মাগো, মা...।।
‘বল বাবা...।
“তুমি আপু কে দুই টুকরো সাদা কাপড় দিতে বলবে তো? কেউ না করবে নাতো?”
(মা’র মুখ থেকে আর শব্দ ভের হচ্ছে না,শুধু চেয়ে আছে আর চোখের পানি পড়ছে।)
এভাবে গ্যানগ্যানিয়ে কয়েক বার বলতে বলতে আর কিছু বলছে না।
একটু পরই দেহ টা শব্দ বিহীন হয়ে গেলো...........................
...............বাশার...............
©somewhere in net ltd.