নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হানিফ লাঠিয়াল-প্রেক্ষাপট যুগে যুগে

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

প্রেক্ষাপট-১:
হানিফ, মির্জার লাঠিয়াল। যেকোনো বিপদ, জবরদখল, গুম, খুন, কারো বউকে কারো উঠতি মেয়েকে ধরে আনা-সকল কাজে সে মির্জার ডানহাত। তার বস কেএস ফিরোজ। হানিফরা বংশ পরম্পরায় মির্জাদের দাস। তাদের জীবন, যৌবন, ধ্যান, জ্ঞান সবকিছু মির্জারা। সারাজীবন মির্জাদের সম্মান প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে তাদের জীবন ব্যায়ীত হয়। বিনিময়ে তারা কি পায়? কলুর বলদকে যেমন দিন শেষে শুকনা খড় যাবর কাটার জন্য দেয়া হয় তাদেরও তেমনি যৎসামান্য খুদ-পানির পয়সা দেয়া হয় যাতে তারা বেঁচে থেকে মির্জাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে। মাঝে মধ্যে মির্জারা তাদের পিঠ চাপরে দেয় কিংবা বড়জোর একটা বড় উপাধী টুপাধী দেয় আর তাতেই হানিফরা বিগলিত হয়। মির্জাদের হয়ে লড়াই করতে করতে একদিন আরো বড় কোনো মির্জার পান্ডাদের হাতে জীবন দেয়। হানিফদের দুধের শিশুরা অকালে এতিম হয়, বউটা হয় বিধবা। মির্জার দেয়া তকমা তাদের ক্ষুধার অন্ন দিতে পারেনা। মির্জারা সহসা নতুন হানিফদের কিনে এনে বহাল করে। তবু হানিফরা, কেএস ফিরোজরা প্রতিনিয়ত মির্জাদের লাঠিয়ালী করে যায় আর জীবন দিয়ে যায়।

প্রেক্ষাপট-২:
শিল্পি। না, শিল্পা শেঠি না, শিল্পি। শিল্পিদের বাবা-মা তাদের অন্য নাম রাখলেও তারা সময়মতো সবাই শিল্পি নাম ধারন করে। নিমতলী, কান্দুপট্টি, টানবাজার, সিডনী, ব্রিকলেন, বড়বাজার, দৌলতদিয়া সবখানের শিল্পিরাই তাদের বাবা-মায়েদের দেয়া নাম বদলায়। না, তাদের এফিডেভিট লাগেনা। তাদের তো আর বিসিএস দিতে হয়না। নিজেরাই নাম পাল্টে নেয়। আর তাদের বাবুরা তাদের নাম বদল নিয়ে খুব একটা আগ্রহীও নন। তারা শুধু আগ্রহী তাদের প্রদেয় কড়ির বিনিময়ে প্রাপ্য ও প্রাপ্ত আদিম বিনোদনের কস্ট-এফেক্টিভিটি নিয়ে। শিল্পীরা (না না, বলেছিতো, শিল্পা নয়) কড়ির বিনিময়ে প্রমোদ বিলি করে। তারা প্রমোদবালা। বাবুরা তাদের কষ্টার্জীত (!) কড়ির বিনিময়ে এই প্রমোদ কেনেন। সে অর্থে তারা কোনো দোষ করেননি। শিল্পীদের বাড়ি নেই কিন্তু ঘর আছে। তাদের সৎকারের অধিকার নেই কিন্তু মৃত্যু ঠিকই আছে। বস না থাকলেও ম্যাডাম আছে। বাড়িওয়ালা নেই তার বদলে আছে বাড়িওয়ালী। শিল্পিদের (অ)মানবিক জীবনের কসটে কস্টিত হয়ে শহরের সমাজসেবকরা দলে দলে আসেন শিল্পিদের দরদে দরদী হয়ে। শহরের সমাজ সেবক বাবুরা তাদের নিয়ে সভা করেন, সেলফি তোলেন, তাদের শরীরের খোঁজ নেন (!!!), সেমিনার করেন, স্ট্যাডি করেন, প্রোজেক্ট করেন, ফান্ড আনেন, প্রোজেক্টের গাড়ি কেনেন,ক্রেষ্ট নেন, বিদেশে যান শিল্পিদের দুর্দশা বিদেশী বাবুদের কাছে তুলে ধরতে। শিল্পিরা এক এক সমাজদরদী বাবুকে একেকভাবে গ্রহন করে, তাদের তালে তাল মিলায়, আশায় বুক বাধে। তারপর একদিন বাবুরা মদ, মাংস, প্রোজেক্ট ফুরালে আবার পদ্মার ওপাড়ে শহরে চলে যান। শিল্পিরা সেই শিল্পিই থেকে যায়। নতুন করে আবার কোনো বাবুদের প্রমোদ আর সমাজসেবা করতে দেবার জন্য তৈরী হয়। অনেকদিন পর মরে ভূত হয়ে পদ্মার জলে ভেসে যায়। (যেহেতু নাম বদলের দিন তারা সৎকারের অধিকার হারায়।) তারাতো সত্যিই শিল্পি তাইনা? অন্যের প্রয়োজনে নিজেকে এভাবে শৈল্পিকভাবে বিসর্জন দিতে পারাটা তো রীতিমতো শিল্প আর শিল্পিরা তার রুপকার।

প্রেক্ষাপট-৩:
একটুকরা নির্দোষ রাবার। কুন্ডলী করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। তাকে বিপনী বিতানের এক কোণে চুপচাপ সঙ্গোপনে রাখা হয়। হঠাৎ হঠাৎ বাবুরা আসেন। ত্রস্ত করে তারা কাচুমুচু করে দোকানদারের কাছে রাবারটিকে চান। দোকানী অন্য কাষ্টমারকে লুকিয়ে একপ্রকার হারাম মালের মতো রাবারের টুকরাটিকে প্যাকেটে লুকিয়ে লজ্জায় প্রায় মাটিতে মিশে যাওয়া বাবু সাহেবের হাতে তুলে দেন। বাবু সাহেব তাকে নিয়ে দ্রুত প্রস্থান করেন। যেন সে একটি নিষিদ্ধ বস্তু। রাবারটি নিজের এই হীন স্ট্যাটাসে কুন্ঠিত বোধ করে। বাবু সাহেবরা তাকে পকেটস্থ করে নিয়ে যান, তাকে ছিড়ে ছিবড়ে করে তাকে পঙ্কিলময় করে নিজেদের বিপদমুক্ত রেখে ৩০ সেকেন্ডের অবদমন স্বাচ্ছন্দে উপভোগ করেন। অতঃপর একটি সিগ্রেট ধরাতে ধরাতে (যাকে একদিন পরম যত্নে বুক পকেটে করে নিয়ে এসেছিলেন) তাকে চরম ঘৃনায় দুআঙুলের চিমটায় ধরে সঘৃনায় বাইরে নিক্ষেপ করেন। একদা সমাদর প্রাপ্ত রাবার টুকরা অন্যের প্রমোদে জীবন উৎসর্গ করে মাটিতে মিশে যায়। বাবুসাব পরদিন আবার কোনো নতুন রাবার টুকরাকে খরিদ করে আনেন। পরিত্যাক্ত রাবারটিও নিজেকে শিল্পি ভাবে আর আত্মপ্রসাদে ভোগে।
প্রেক্ষাপট-৪:
মিঃ কর্পোরেট। তিনি এই শহরের একজন ৪০ ছুঁই ছুঁই মধ্যবিত্ত (মাসে কত ইনকাম করলে তাকে মধ্যবিত্ত নামক মাকাল ফল বলা যায়?)। শহরের একটি নামী কর্পোরেশনে তিনি চাকোরী (জব) করেন। প্রতিদিন সকালে তিনি ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠেন। ডাক্তার বলেছেন হৃদয়ে কিঞ্চিত প্রতিবন্ধকতা (ব্লক) দেখা দিয়েছে। তাই প্রত্যুষ হন্টন (মর্নিং ওয়াক) করতে হবে। নাহলে যে অকালে মরে ”কর্পোরেশন”কে অকুলে ডুবাবেন। প্রত্যুষ হন্টন শেষে তিনি কুসুম গরম পানিতে চান করেন। (ডাক্তার বলেছে কুসুম গরম পানিতে চান করলে শরীর চাঙ্গা থাকে আর তাতে সারাদিন প্রচুর কাজ করা যায়। তিনি ক্লান্ত হলে ”কর্পোরেশন” যে অকুলে ভাসবে। অতঃপর তিনি একটি সেদ্ধ ডিম (কুসুম বাদে-কারণ ডাক্তার বলেছেন কুসুম খেলে ৪০ওর্দ্ধরা দ্রুত মরে যায় আর মরলে তার ”কর্পোরেশন” যে অকুলে ভাসবে), ও আটার রুটি সহযোগে নাস্তা সেরে নেন। নাস্তা সারতে সারতে একফাঁকে কোনোমতে সহধর্মীনি কর্তৃক রচীত সংসারের কলা মুলা, আটা, তেল, টয়লেট পেপার, পাতলা পায়খানার ওষূধ, পিঁয়াজের অভাবের ফিরিস্তিনামা শোনেন। ততক্ষণে তার বাতব্যাথা, মাথাঘোরা আক্রান্ত সহধর্মীনি তার ততোধিক ব্যস্ত বাদবাকি পারিবারিক সদস্যদের নাস্তা রেডি করেন। মিঃ কর্পোরেট অতঃপর সারাদিন অফিস, হাজার হাজার ফাইল, কাস্টমার সামলানো, মিটিং, ব্রিফিং, চিটিং, ফেসবুকিং, সোস্যাল স্টাটাসিং, ফাঁকে ফাঁকে কমবয়সী মহিলা কর্মীদের টিজিং, নানাপ্রকার ধান্দার ইচিং বিচিং শেষে সন্ধা নামার অনেক পরে ধুঁকতে ধুঁকতে আবার গৃহে ফেরেন। শুরু হয় আরেক মধ্যবিত্ত ঘ্যানঘেনে সিরিয়াল লাইফ-এককাপ লাল চা, বহু পড়ায় নেতিয়ে পড়া পেপারটা আবার কোনোমতে গেলা, হিন্দুস্থানী রগরগে টিভি সিরিয়ালে চোখ বোলানো, রাতের ভাত খাওয়া (মধ্যবিত্তরা ডিনার করেনা, তারা ভাত খায়, উচ্চবিত্তরা ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার করে), তখনো বাসায় না ফেরা উচ্ছনে যাওয়া ছেলেকে উদ্দেশ্য করে “হারামজাদা রাত করে ফিল্ডিং মার……..ছে” টাইপের গালি দিয়ে, ফেসবুকিং এ ব্যস্ত রোগা মেয়েকে (অনেক ভয়ে ভয়ে) কিঞ্চিত শাসন করে পরের দিনের কর্পোরেট লাইফের জন্য প্রস্তুত হতে বিছানায় যান। (ডাক্তার বলেছেন দ্রুত বিছানায় যেতে না হলে শরীর খারাপ হবে আর শরীর খারাপ হলে ”কর্পোরেশন” যে অকুলে………….)। ব্যস্ত কর্পোরেট লাইফ ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এই ভয়ে তিনি সহধর্মীনিকে বিশেষ (!) সঙ্গও দেন না, পাছে রাত জেগে শরীর খারাপ অতঃপর ”কর্পোরেশন”…….অকু…………। মিঃ কর্পোরেটরা এভাবে কর্পোরেশনের উন্নয়নে, তাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তুলতে নিজেদের জীবন, যেীবন, শক্তি, মেধা, সমাজ, সংসার, সম্ভাবনা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কাম, ক্রোধ সব হাসিমুখে বিসর্জন দেন। ত্রিশ দিবস পার হলে বয়োবৃদ্ধ এ্যকাউন্টেন্ট কিছু ছাপানো কাগজ (কড়ি) হাতে ধরিয়ে দেন। আর ”কর্পোরেশন” মাঝে মাঝে তার পিঠ চাপড়ে দেয়। সাবাস সাবাস বলে তাকে আরো একটু উস্কে দেন। মাঝে মাঝে দুয়েকটা খেলাত টেলাতও জুটে যায়। এমনি করে মিঃ কর্পোরেটরা তাদের জীবন পার করে দেন আর একদিন মিঃ আজরাইল এসে তাকে এই মহান (!!) দায়ীত্ব হতে অব্যাহতি দেন। কর্পোরেশন একটা মেমো রিলিজ করে “অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো………………………….. আমরা অত্যন্ত শোকাহত……………………………… কোনোদিন পূরণ হবেনা………………………………অকালে চলে…………………………… ইত্যাদি ইত্যাদি। অতঃপর নতুন মিঃ কর্পোরেটের খোঁজে বিজ্ঞাপন আর অচিরেই নতুন ছাগু মিঃ কর্পোরেটের আগমন। আবার নতুন মেমো-”এতদ্বারা ………..নতুন মিঃ কর্পোরেট……..তাকে পেয়ে আমরা ধন্য………………………..নবদিগন্ত উন্মোচিত…………………..আগের কর্পোরেট যে কর্পোরেশনের বারোটা বাজিয়েছিলেন সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার…………..করবেন” ইত্যাদি ইত্যাদি।

হায় মিঃ কর্পোরেট, হায় নয়া জামানার লাঠিয়াল, হায় শিল্পিরা্। ধন্য তোমাদের জীবন, ধন্য তোমাদের পিঠ চাপড়ে দেয়া, সাবাস রাবার টুকরার যোগ্য ভায়রা ভাইয়েরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.