নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিচারী নারী-দ্বিচারী পুরুষ: মানুষ মাত্রই কি দ্বিচারী?

২৭ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৯

সোস্যাল মিডিয়াতে একটা ট্রল প্রায়ই দেখবেন যেখানে দু’জন শাশুরীর মধ্যে কথা হচ্ছে। শাশুরীকে যখন তার ছেলে ও পুত্রবধুর ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয় তখন তিনি স্ত্রীর কথামতো চলার অপবাদে ছেলেকে বউয়ের চাকর, স্ত্রৈণ-নানা আখ্যা দেন। আবার একটু পরেই যখন তার মেয়ে জামাইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি বলেন, জামাই অত্যন্ত সুবোধ। তার মেয়ের কথা ছাড়া চলে না। সারাক্ষণ শ্বশুর বাড়ির ন্যাওটা হয়ে থাকে। এই শাশুরীর চরিত্রকে কী বলেন আপনারা? দ্বিচারী বোধহয়।

দ্বিচারীতার আরো কিছু সাক্ষাত উদাহরন বলি?

সামনের লোকটার মুখে দুর্গন্ধ হলে আমরা তার উপর বিরক্ত হই।কিন্তু তার দুই নাম্বারি পয়সায় কেনা বডি স্প্রের ঘ্রানের প্রশংসা করি।লোকটা দুই নাম্বারি পয়সা কামিয়ে বড়লোক হলে তাকে তোয়াজ করি। ফুটপাত অবৈধ দখল হওয়ায় আমার হাঁটতে অসুবিধা হলে দখলদারদের গালি দিই কিন্তু সেই আমরাই অন্যের হক নষ্ট করে ঘুষের পয়সা সহাস্য বদনে হাত পেতে নিই।পুলিশ ঘুষ খায়, পুলিশ খারাপ-খুবই কমোন ডায়লগ অথচ আমি বড় কর্মকর্তা হওয়ায় আমাকে লোকে রাস্তায় দেখলেই চা খাওয়ায়, সিগ্রেট সাধে আর আমিও আমার অধিকার হিসেবে সেটা খাই-এতে কোনোরকম অপরাধবোধ হয়না।পাবলিক প্লেসে কেউ ধুমপান করলে আমরা জাগ্রত বিবেক নিয়ে তাকে হামলা করি অথচ পাবলিকলী সহকর্মীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থাতেই আমি ঘুষের/কমিশনের দরাদরি করি-লজ্জাবোধ করিনা।মন্ত্রীরা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে ডিল করলে তাদের গালি দিই অথচ যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি তার স্বার্থ, তার হাজার হাজার কর্মীর জীবন জীবিকার কথা না ভেবে নিজের স্বার্থে আসবে-এমন চুক্তি সাইন করি-বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয়না?নিজের অবুঝ সন্তানদের সততার উপদেশ দিই। আবার উপদেশ দেবার পরেই তার পকেটে যে পকেটমানিটা গুজে দিই তার উৎস বিভিন্ন কাজ/অর্ডারে পাওয়া কমিশন। নাহ, আমার একটুও অসুবিধা হয় না। দুর্নীতি করবেনই? বন্ধ করতে পারছেন না? করুন, অসুবিধা নেই। অন্তত দয়া করে দ্বিচারিতা বন্ধ করুন।

ফিলিস্তিনে আমাদের মুসলমান ভাইদের ইসরাইল অত্যাচার করলে আমরা এখানে কোক, পেপসি, ইউনিলিভার বর্জনের ডাক দিই অথচ সৌদি আরব যখন কাতার বা ইয়েমেনের মুসলমানদের উপর যুদ্ধ শুরু করে তখন আমরা সৌদি তেল বর্জন করি না। নজরুলকে “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই” কবিতার জন্য নিজেদের স্বজাতি মনে করে আপ্লুত হই আবার সেই আমরাই নজরুলের শ্যামা সঙ্গিত শুনে তাকে কাফের বানিয়ে দিই। স্বর্গে যাবার স্বপ্নে বিভোর, সারাক্ষন মনে লালায়িত স্বপ্ন তার জন্য। কিন্তু ধর্মগুরু হতে চন্ডাল-মরতে কেউ রাজি না। আরে ভাই না মরলে স্বর্গে যাবেন কী করে? বনানীতে তরূণী ধর্ষিত হলে আমরা তণুর ভাইয়েরা ধর্ষকের ফাসি চাই কিন্তু সেই ভাইয়েরা ধর্ষিত তরুণীকে বিয়ে করতে রাজি না।

অনেকের মধ্যেই বিশেষত বাঙালী সমাজে প্রচলিত ভুল মিথগুলোর একটি হল-”বিধাতা নারী-পুরুষের ভুমিকাকে আলাদা করে দিয়েছেন।সংসারের সকল গৃহস্থালী কাজ তাই একচেটিয়াভাবে বাড়ির মেয়েরা করবে।”মেয়েরাও অনেকে এটাই ধ্রূব সত্য বলে মনে করেন।পুরুষরাতো করেনই।তাই গৃহস্থালীর ছোটখাটো কাজ যেমন ডিনারের পর বাসনগুলো ধুতে হাত লাগানোকে অনেকেই মর্যাদা হানিকর বলে মনে করেন।অথচ নিজের ছেলে ইটালী গিয়ে হোটেলে বাসন মেজে পয়সা রোজগার করলে তাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন।এটা কি দ্বিচারিতা নয়?নিজ গৃহে বাসন মাজা,বাচ্চার ন্যাপি বদলানো বা সবার কাপড়গুলো নিজে আয়রনিং করলে তাতে প্রেস্টিজ কমবে না, বাড়বে।বিধাতা মানুষ সৃষ্টি করেছেন।নারী-পুরুষের পৃথক ভুমিকা মানুষ নিজেই নিজের সুবিধামতো সৃষ্টি করে নিয়েছে। সেইসাথে নিজের সুবিধামতো নির্ধারন করে নিয়েছে নিজের দ্বিচারী ডিসকোর্স। একজন ছেলে যখন প্রেম করতে চায় সে খোঁজে মডেল কন্যা। আবার সেই ছেলেই যখন দু’চার বছর প্রেম করার পর বিয়ের পাত্রি খোঁজে তখন চায় পর্দানশীন ধার্মিক পাত্রী। কে যেন বলেছিল, পুরুষেরা বিয়ে করতে চায় বোরকা পরা সানি লিওন কিন্তু সানি লিওন তওবা করে বোরকা পড়লেও তাকে গ্রহন করবে না। আর মেয়েরা খোঁজে ইমাম সাহেবের মতো পুতঃপবিত্র স্বামী অথচ সেই আবার ইমাম সাহেবকে বিয়ে করতে রাজি না কারন সে (তথাকথিত) মডার্ন বা কুল না।

একটা চ্যানেলে সিরিয়ালের মধ্যে কিঞ্চিৎ বক্ষ উন্মুক্ত নারীর দৃশ্য এলেই বুক ঢাকতে সেখানে ব্লার করে দেখানো হয়। তার একটু পরেই আবার গোসলখানায় গণহারে মেয়েদের প্রায়নগ্ন গোসলের দৃশ্য কোনোরকম রাখঢাক না করে দেখানো হয়। তাহলে এটা কি দ্বিচারিতা বা চরিত্রহীনতা নয়? একটা বাংলাদেশী মেড ইন্ডিয়া ফ্লেভারের সিরিয়ালে দেশের সুস্থ সঙইসকিরিতির (সংস্কৃতির) ধারক দুই জামাই বউ অভিনেতা অভিনেত্রী সেই স্টার প্লাস টাইপ (ঘুমাতে কাতান পড়া, জাগরনে লিপস্টিক থাকা, কুটনামি, পরকিয়া) সিরিয়ালে সগর্বে অভিনয় করে যাচ্ছেন আবার সভাসমিতিতে দেশী সংস্কৃতি নিয়ে চোখের জল ফেলছেন। এটাকে কী বলবেন? পাকিস্তানী মুরগীর রান চিবাচ্ছেন একদিকের গালে, আরেক কানে মোবাইলে আলিম দারের বজ্জাতীর জন্য তার মুন্ডুপাত করছেন! কেমন হয়ে গেল না? ধোয়া ওঠা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আইপিএল ম্যাচ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন আর অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড কাপে ইন্ডিয়ার বজ্জাতীর জন্য মাঠে ময়দানে আহা উহু করছেন! কেমন কেমন লাগে না?

এবার একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দ্বিচারিতার নগ্ন উদাহরন বলি। কোনো দেশে এই যুগেও দেখেছেন, নারি ও পুরুষ খেলোয়াড়দের একই টীম/ যেকোনো খেলায় জাতীয় দল মানে ছেলেদের টীম। কেন? রাস্ট্র যদি বলতে পারে নারী পুরুষ সমান, তবে আলাদা টীম কেন?
দ্বিচারীতা আসলে আমাদের মন মগজে। দ্বিচারীতা নারী-পুরুষের শয়নে, স্বপনে। মানুষের মনোজগতে, চিন্তায়, জীবনাচরনে, কালচারে, উঠতে বসতে দ্বিচারীতার জয়জয়কার। তবে ওইযে, যারা দুই নৌকায় পা দেয়, তাদের শেষ পরিণতি জানেন তো?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪০

তপোবণ বলেছেন: চমৎকার, একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যাকে বলে। ভাল লাগল।

২৭ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪

বেচারা বলেছেন: ধন্যবাদ তপোবন। সাথে থাকবেন। সাথে রাখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.