নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতৃত্ব-মাতৃত্বের স্বাদ ও দায়: সময় থাকলে পড়ুন, না থাকলে কুয়ায় পড়ুন

১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮


আমি জানি, আপনি আকাশ থেকে পড়বেন, তবু বলছি। ছবির এই পিচ্চি পরীটা হল আমাদের...........ওর নাম হল................ইপ্সিতা। আমি ও আমার স্ত্রীর বৈধ-যৌথ-সামাজিক বসবাস মানে বিবাহিত জীবনের বয়স ১০। এই কন্যা ইপ্সিতার বয়স.........।
না, এই লেখাটি আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর খবর আপনাদের ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলবার জন্য নয়। আর আজ আমাদের ওই নামকাওয়াস্তের আনুষ্ঠানিকতার দিনও নয়। এটুকু জাস্ট গৌড় চন্দ্রীকা করলাম। মূল টপিক ভিন্ন। আপনি নিশ্চই এখনো ইপ্সিতাকে নিয়ে পড়ে আছেন? রহস্যটা একটু পরে খোলাসা করি?
।।
বাবা-মা হবার অনুভূতি, আবেগ নিশ্চই খুব স্বর্গীয়। তবে সদ্য মা ও বাবা হবার সেই পবিত্র অনুভূতি নিশ্চই সারাজীবন সেই প্রথম দিনের মতোই থাকেনা স্বাভাবিকভাবেই। সেই আবেগের তীব্রতায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন। জীবনের ধাপে ধাপে নানান মিথস্ক্রিয়ার মিশেলে একটা পর্যায়ে মা-বাবা হবার সেই তীব্র আবেগ রুপান্তরিত হয় দায়ীত্বশীলতায়। বাবা-মা ধাপে ধাপে রূপ পরিগ্রহ করেন মা-বাবা হতে প্রথমে সন্তান পালক, অতঃপর সন্তানের শাসক, সুরক্ষাদাতা, শিক্ষক, মন্ত্রণাদাতা, গাইড, নিয়ন্ত্রক, পরিচালক, ডাক্তার ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন সময় হয় সেই এককালের সন্তানের নিজেরই মা কিংবা বাবা হবার। তো এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাবা-মা হিসেবে আমাদের আবেগ, দায়ীত্ববোধ ও শেষকালে প্রাপ্তিবোধ কেমন হয় বলতে পারেন? সেটার উত্তরে যদি আপনি আপনার নিজের বাবা-মায়ের অভিজ্ঞতা বা নিদেনপক্ষে নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলাতে চান তবে সেটা খুব অসমসাময়িক হয়ে যাবে। কারন আপনার বাবা-মায়েরা কেউ এই ট্যাব প্রজন্মের সন্তানের বাবা-মা ছিলেন না। আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রমিজিং সময়টাও ট্যাব প্রজন্মের বা আজকের ইয়ো ইয়ো প্রজন্মের সাক্ষি ছিলনা। আপনারা যারা এখন বাবা-মা এবং গড়পড়তায় ২৫-৪০ বছর বয়সী তাদের সাথে তাদের সন্তানদের বাকি সময়টা মোটেই আপনাদের বাবা-মায়ের সাথে আপনাদের জীবনটা যেমন কাটতে দেখেছেন তেমনটা হবে না নিশ্চিৎ থাকুন। কেন? সেটাই আমার মূল লেখা।
।।
আপনারা, মা ও বাবা, নিজেদের ছোটকালের সাথে নিজেদের বাচ্চাদের ছোটকালের একটা ট্যালি করুনতো। কতগুলো পার্থক্য বের করতে পারেন দেখুন। অন্যান্য হাজার হাজার পার্থক্যের পাশাপাশি কয়েকটা মৌলিক পার্থক্য দেখাচ্ছি-ট্যাব, ইন্টারনেট, ডিশ, মোবাইল, স্পিড, সহজলভ্য টাকা ও সিঙ্গেল ফ্যামিলি প্রথা। আগামির বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় বাবা-মা’র সাথে সন্তানের সম্পর্কটি যদি আজকের আমেরিকা বা যেকোনো পশ্চিমা সমাজব্যবস্থার মতো হয়ে যায় (সবরকম ফিচারসহ) তার প্রধান কারন হবে এগুলো। কী ভাবছেন? না, আমাদের সমাজ কখনো ওরকম হবে না? ওয়েল, আপনি কলা কিনলে তার খোসাটাওতো বাসায় আনতে হবে তাই না? পশ্চিমা সংস্কৃতি, টেকনোলজি, সিস্টেম, শিক্ষাব্যবস্থা, সোসাল মেকানিজম, ফ্যামিলি সিস্টেম, মিডিয়া সব যখন পশ্চিম হতে আমদানী করেছেন তখন ওগুলো হতে সৃষ্ট তাদের সামাজিক কুষ্ঠটাওতো এনজয় করতেই হবে তাই না? আমি নিজে খুব হতাশাবাদী। আপনি যদি আশাবাদী হন তবে বুকে হাত রেখে বলুন আপনি কী বিশ্বাস করেন যে, আপনাদের বৃদ্ধ বয়সে আপনারা যেমন বাবা-মাকে শিশুর মতো আগলে রেখেছেন, আপনাদের সন্তানরাও তেমনটা হুবহু করবে। আপনারা যদি সবাই আমার সাথে দ্বিমত পোষন করেন তবে আমি অত্যন্ত আবেগ নিয়ে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আর যদি তা না করেন, তবে ভাবুন কেন এমনটা হবে। যদি বলি এর পেছনে এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি আপনারাই দায়ী? বিশ্বাস হবে? না হলে পরের বাক্যগুলো পড়ুন।
।।
আমাদের এক শিক্ষক স্কুলে বায়োলজি পড়াবার সময় বলতেন, আগে যখন মায়েরা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতেন তখন বাচ্চা মা’য়ের মতো হত আর মায়ের সাথে সম্পর্ক হত। এখন মায়েরা শরীরের কন্সট্রাকশন ঠিক রাখতে বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ান। তো স্বভাবও হয় গরুর মতো। তাই সম্পর্ক গরুর সাথে। বাবা-মাকে তাই গরুর মতো লাথি দেয়। রূপক হলেও সত্যির খুব কাছাকাছি। আমার নেটওয়ার্ক, বন্ধু ও সহকর্মীর একটা দলের কাছে আমি জানবার চেষ্টা করি তাদের প্যারেন্টহুড সম্পর্কে। কেমন আছেন তারা বাবা-মা হিসেবে আর তাদের সন্তানেদের ব্যাপারে তাদের ভাবনা সম্পর্কে। সবারই কমোন দৃষ্টিভঙ্গি-সময় বদলেছে। সন্তানরা বখে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে, প্রাণহীন কিংবা সম্পর্কহীন হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মার কথা শোনেনা, বাবা-মা’র মতো ভাবে না, কোনো সোস্যাল নর্মসের মূল্য দেয়না, ট্যাব নিয়ে পড়ে থাকে, ইন্টারনেট আসক্ত। তার সাথে যুক্ত হয়েছে মাদক, আড্ডা, পড়ায় ফাঁকি, বাইরের জীবনে আসক্তি, বন্ধুদের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক, পুওর ফিজিক্যাল ফিটনেস, মেন্টাল ইমম্যাচিওরিটি, মানসিক ঘাটতি, রং মেন্টালিটি, দেশের ইতিহাস জানায় অনাগ্রহ, ঐতিহ্য মানা বা জানায় বিতৃষ্ণা। স্কুলের বাচ্চা বাচ্চা পোলাপান মিলে সহপাঠীকে মেরে ফেলছে, দলবেধে মেয়েদের উত্যক্ত করছে, গাজা টানছে, মাদক নিচ্ছে, চাঁদাবাজি এমনকি অস্ত্রধারন পর্যন্ত। বলবেন, ওটা খুব সামান্য সংখ্যক। ওকে, কে আপনাকে এই পরিসংখ্যান দিল যে সংখ্যাটা কম।
।।
কেন এই পঁচন? কখনো ভেবেছেন? নাহ, সমাজব্যবস্থাকে অন্ধের মতো দোষ দেবেন না। আমাদের নিয়েই সমাজ। কখনো ভেবেছেন সন্তানদের এই ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তনের জন্য আমরা বাবা-মায়েরা নিজেরাই দায়ী। লম্বা লেখা হলে পড়বেন না বলে সংক্ষেপে শুধু কারনটা বলি? আমরা সন্তানদের সচ্ছলতা ও কমফোর্ট দিতে গিয়ে পয়সা আয়ের পেছনে এতটা সময় দিই যে বাচ্চাদের সময় দেয়া সম্ভব হয়না। এই ফাঁকে তারা বাবা-মা নয়, অন্যকিছুর সাথে সম্পর্ক করে। সোজা হিসাব, বাচ্চার কমফোর্ট চাইলে তার রেসপেক্ট আবার পাবেন না। পঁচনটা শুরু অবশ্য পিচ্চি অবস্থাতেই। সেই প্রথম সেলফি হতে শুরু করে ট্যাব, গ্যাজেট, বাবা-মা হবার আতিশয্যে তার জন্য অঢেল বরাদ্দ, আবেগ, আয়োজন, আইপ্যাড, ট্রেন্ডি বাইক, অসময়ে দামী মোবাইল, অবাধ ইন্টারনেট, প্রাইভেসী, পকেটমানি, ফার্স্ট হবার তাড়না, গোল্ডেন ফাইভের প্রেশার, ছোটখাটো অপরাধ ইগনোর করা-আর কতগুলো বলব? আর হ্যা, আপনারাই তো ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে একলা চলার নীতি ফলো করেছেন। ওটার ফল তো এখন ফলছে। ওগুলোই পতনের শুরু করে। একসময় সেটা নিয়ন্ত্রনের বাইরে যায়। গতকাল আমার এক পিতা সহকর্মীর সাথে তাদের প্যারেন্টহুড নিয়ে কথা বলছিলাম। কথা প্রসঙ্গে এলো, বাবা-মা কেন তার সন্তানদের যাবতীয় আব্দার ও অত্যাচার মেনে নিতে বাধ্য? উত্তর দিলাম নিজেই, “It's not only because they are your children but also, they have arrived on this earth as a result of your conjugal enjoyment as a man & woman." আবার সন্তানরা যদি ভাবে, বাবা-মা আমাদের পৃথিবীতে এনেছেন তাদের কাজের ভিতর দিয়ে তো আমাদের আর এত দায়বদ্ধতা কিসের তবে তাদের জন্য উত্তর হল, “Yes, their enjoyment brought you to this earth but they had options to enjoy and still avoid you which means, you have been here also because, they wanted to bring you here."
।।
যাহোক, যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দিয়ে বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যকার রসায়ন ডিফাইন করা যাবে না। লেখাটা হয়তো বাবা-মা’র জন্য একপেশে হয়ে যাচ্ছে। সন্তানদের উদ্দেশ্যে আজ একটা কথা বলব। যেসব ইঁচড়ে পাকা পোলাপান ইদানিং বলা শুরু করেছে, তোমরা টাকার পিছনে দৌড়েছ, আমাদের জন্য সময় ছিলনা বিধায় আমরা বখে গিয়েছি, তারা জেনে রাখুন, আপনার ওই বাবা-মা’ই যদি আবার যথেষ্ট পরিমানে আপনাদের পকেট মানি, ট্যাব, দামী মোবাইল, ট্রেন্ডি বাইক কেনার পয়সার যোগান না দিতে পারতেন তবে আপনারাই আবার বলতেন, কেমন বাবা-মা তোমরা যে সন্তানের ”সামান্য” আবদারও মেটাতে পারো না? খুব ধীরে হলেও পশ্চিমা দেশের পারিবারিক সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করছে। ওদেশে ১৮ হলে বাচ্চারা আলাদা হয়ে যায়, একা থাকে, বয় বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। তাদের বাসায় নিয়ে আসতেও আপত্তি নেই। আমাদের বাচ্চারা এমনকি কিছু বাবা-মায়েরাও ওই সংস্কৃতিতে গা ভাসানো শুরু করেছেন। ওয়েল, বাবা-মা, পশ্চিমা হন সমস্যা নেই। তবে যখন ওদের মতো করে আবার আপনাদের ছেড়ে বাডিকে নিয়ে লিভ টুগেদার শুরু করবে তখন আবার রি রি করার অপচেষ্টা করবেন না। আর সন্তানেরা, পশ্চিমাদের মতো ১৮ তেই কিংবা তারও আগে নাইট আউট, ডে আউট, রুম ডেট-সব রপ্ত করছেন, এনজয় করছেন, ভাল কথা। তবে পুরোটা কিন্তু নিজের দায়ীত্বে করবেন।
।।
পশ্চিমা জীবন যাপন করবেন কিন্তু যেই বয়ফ্রেন্ড বিট্রে করে আরেকজনের হাত ধরবেন অমনি বিয়ারিং খামের মতো বাবা-মা’র কাছে এসে পড়বেন আর নাঁকি কান্না কেদে শুরু করবেন, “আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কখনো.......................” ওসব হবে না। আর পশ্চিমারা নাইট আউটের জীবন যাপন করে ঠিকই কিন্তু তারা সম্পর্ক ভেঙে গেলে হাসতে হাসতে বিয়ার খেতে খেতে হোস্টেল রুমে গিয়ে মুভি দেখে, নতুন পার্টনার খোঁজে। আপনারা সেটা করতে পারেন না। পারেন যেটা সেটা হল, বাপ-মা’র বাড়ি এসে তাদের নিয়ে প্রেমিক বা প্রেমিকার বাড়ির সামনে অনশন করতে, “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমায় ধর্ষন করেছে” এই মর্মে মামলা করতে। আগেই বলেছি, কলা কিনলে তার খোসাটাও কিনতে হবে। লেখা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা ও সন্তানেরা: আমি খুব ব্লাইন্ডলি বলছি। আমাদের সেই ৭০-৮০ দশকের পরিবার ও সমাজ প্রথাই বেষ্ট ছিল বলে আমি বিশ্বাস করি। সেটার খুব ড্রাস্টিক চেঞ্জ আমাদের জন্য আশির্বাদ বয়ে আনছে না। আমরা আমাদের সেই পুরোনো ঐতিহ্যে থাকি। আখেরে ভাল হবে। অতি আধুনিক হতে গেলে তার উল্টো কামড়টাও সহ্য করতেই হবে। Every action returns with double force। সন্তানকে মানুষ করুন, ফার্স্ট বয় না। বাবা-মাকে বন্ধু মনে করুন, বয়ফ্রেন্ডকে না।
।।
যারা হঠাৎ করে অতি প্রগতিবাদী সমাজবিজ্ঞানী হয়ে আমাদের পুরোনো দিনের প্যারেন্টহুড ও বাচ্চা মানুষ করার সব প্রথাকে পাইকারী হারে চ্যালেঞ্জ করে তাকে ভেঙে চুড়ে দেবার পক্ষে, তাদের বলছি, পরিবার, সন্তান ও সমাজ একটি সামাজিক প্রপঞ্জ। আপনারা যেই উগ্র রিস্ট্রাকচারিংয়ের সমর্থক তার কিন্তু কোনো সফল এক্সপিরিমেন্ট কোথাও হয়নি। আমাদের শান্তির সমাজটাকে অযথা গিনিপিগ করবেন না। একদল সমাজহিতৈষী মিন মিন করে বলছেন, সন্তানকে প্রহার করবেন না, সন্তানকে বুঝুন, সন্তানের বন্ধু হোন, সন্তানের উপর প্রত্যাশা চাপিয়ে দেবেন না, সন্তানকে প্রেশার দেবেন না, তাকে শাসন করবেন না, সন্তানকে সময় দিন ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যা ওগুলো সবই দরকার তবে শুধু ওগুলো দরকার না। আরো অনেক মহামারির দরজা বন্ধ না করলে ওগুলো কাজে দেবে না। আমাদের বাবা-মা, শিক্ষক আমাদের ৮ নম্বর সাইজের বেত দিয়ে পিটিয়ে মানুষ করেছেন। আমরা বখে যাইনি তো। ক্লাসে ভাল ফল করবার চাপ তখনো ছিল, আমরা আত্মহত্যা করিনি তো। বাবা-মা তখনো বন্ধু ছিলনা তো, ছিল অভিভাবক। তবু দেশে তখন ড. শহিদুল্লাহ, ড. ইউনুস, ড. আবেদ, ব্রজেন দাস, মইনুল হোসেন, এফআর খান, এমআর খানেরা জন্ম হতেন তো? বেতের বাড়ি আমাদের বাচ্চাদের নষ্ট করে না। করে ঝকমারী ও আদর্শবিহীন সমাজ ব্যবস্থা। সন্তানদের সামনে পিতামাতাই কোনো আদর্শ রাখতে পারেন না। টাকা কামাতে গিয়ে নিজেরাই দুর্নীতি করে তাদের সন্তানদের কাছে চোরের মতো থাকেন। চুরি করার টাকায় সন্তান বড় করলে তাকে সারাজীবন কোলে বসিয়ে রাখলেও সে তার বাবা-মা’কে আর শ্রদ্ধা করবে না। সার্বিকভাবে এই দেশ তার বাচ্চাদের সামনে কোনো স্বপ্ন বা আইকন তৈরী করতে পারছে না। আমাদের বাচ্চাদের সামনে একজন বারাক ওবামা বা একজন মাদার তেরেসা বা অন্তত একজন জাকারবার্গ নেই।
।।
আমার কেন যেন মনে হয়, এদেশের বাবা-মায়েদের মধ্যে একটা বড় অংশ বাবা-মা হবার কাবেলিয়াত অর্জনের আগেই সন্তানের বাবা-মা হয়ে বসে থাকে। বিয়ে বা বিয়ে ছাড়াই তাদের মধ্যে দ্রুত সন্তানের মালিক (!) হয়ে যাবার একটা প্রবণতা কাজ করে। হয়তো বলবেন এটাতো বায়োলজিক্যালী হয়ে এসেছে এবং হবে। হ্যা, অবশ্যই, বংশবৃদ্ধির চিন্তা প্রাণীদের জীবনবিস্তারের অন্যতম অনিবার্য লক্ষ্য। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, বাবা-মা হবার নিশ্চই একটি দারুন প্রস্তুতি দরকার। সবদিক হতে-আর্থিক, আত্মিক এবং জ্ঞানগত। তবে যারা সংসার টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হিসেবে সন্তান কামনা করেন তাদের হিসাব আলাদা। আজাকাল তো আবার নানান রকম ম্যাজিক ড্রিংকস খাইয়ে বাচ্চাকে তরতর করে টলার, শার্পার, স্ট্রঙ্গার করে দ্রুত কাবিল করে তোলার হাজারটা মাধ্যম টিভিতে চটকদার করে পরিবেশন করা হচ্ছে আর বাবা-মায়েরা সেগুলো গোগ্রাসে গিলছে মানে এ্যাড গিলে খাচ্ছে আর সেগুলো তাদের বাচ্চাদের গিলিয়ে তাদের দ্রুত আরো দ্রুত এ্যাডাল্ট করে নিচ্ছে। কেন ভাই? এত তাড়া কেন? বাচ্চা ছোট থাকলে সমস্যা? তাকে তিন বছরে ৩০ বছরের সমান ম্যাচিওরড করতে চাচ্ছেন কেন? আর যদি চান আর তাকে দ্রুত হাত-পায়ে বড় করেন (শুধু কি হাতে-পায়ে বড় হয়, মনে মনে হয় না?) তবে সে ৫ বছরের বয়সে ২৫ বছরের কর্ম ও অপকর্ম করতে চাইবে না? যখন করতে দেবেন না, তখন সে কিভাবে আপনাদের সাথে রিএ্যাক্ট করবে? আর ড্রিংকস খাইয়ে শরীরে বড় করলেন, পাশাপাশি ট্যাব, নেট, ফেবু, সেলফী, গেমস তো আছেই তাকে মেন্টালী সেয়ানা করে তুলতে।
।।
আমি কোনো বিজ্ঞানী বা মনোবিশেষজ্ঞ নই। শিশু বিশেষজ্ঞও নই। সাদাচোখে যা মনে হয়েছে তাই বলেছি। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চই আরো ভাল বলতে পারবেন। আমার লেখা পড়ে যদি আপনাদের নিজ নিজ সন্তানের প্রতি নিজেদের মহব্বত হ্রাস পায় তবে আমাকে ফ্রেন্ডলীষ্ট হতে ঘ্যাচাং করে দিন। সন্তান যখন দেখে তার বাবা-মা তার দাদা বা দাদীকে একা রেখে নিজেদের সন্তানদের নিয়ে এপার্টমেন্টে থাকে তারপর তাকে মাতৃপ্রেমের অমীয় বাণী শোনালেও কাজ হয়না। ওল্ড হোম যে হারে বাড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে কোনো বাবা-মা’ই তাদের নিজেদের কেনা ঢাকাইয়া ফ্ল্যাটে শেষ জীবন কাটাতে পারবেন না। তাদের আদরের সন্তানেরা নিজ দায়ীত্বে তাদের ওখানে দিয়ে আসবে। কেন? ওইযে, ব্যাক্তিসাতন্ত্র যেটা পশ্চিমাদের অনুসঙ্গ। কী ভাবছেন, না, ওরকম হবে না? আমি ভয় দেখাচ্ছি? ওয়েল, বাংলাদেশের বিগত ১০ বছরের সেপারেশন রেট আর বৃদ্ধাশ্রমের অকুপ্যান্সি রেটটা একটু ঘেঁটে দেখুন।
।।--।।
সবশেষে একটা কথা বলি, ইপ্সিতা নামে আমাদের কোনো কন্যা নেই। কন্যা কেন, কেউই নেই আমাকে বআমার স্ত্রীকে বাবা কিংবা মা নামে ডাকবার জন্য। আমরা যখন ঘর বাঁধবার স্বপ্ন দেখতাম ১০ বছর আগে, তখন হতেই আমরা দু’জনে মিলে মেয়ের নাম ঠিক করেছিলাম ইপ্সিতা আর ছেলের নাম রাজা। আমরা আজও খুব শখ করে জমানো কিছু বেবিদের পোশাক কাবার্ডে ভাঁজ করে রেখেছি। মাঝে মধ্যে বের করি, হাত বুলাই, কাল্পনিক ধুলা ঝাড়ি, আবার সযত্নে ভাঁজ করে রেখে দিই। হ্যা, যেহেতু আমরাও মানুষ, রক্ত মাংসে গড়া, বাংলাদেশের জল হাওয়ায় মানুষ হওয়া মানব-মানবী, তাই আমাদের মনেও একটা হাহাকার, একটা তীব্র শূন্যতার হুতাশন বাজে না তা বলব না। রাতঘুমে দু’জনেই ইপ্সিতাকে ছোঁবার জন্য হাত বাড়াই, শুধু দু’জনের হাত দু’জনকে ছোঁয়। দু’টো হাতই শুন্য ফেরে। যখন রাস্তায় হাঁটি আমি নিটোলের হাত আলতো করে ধরে রাখি। রাস্তার ইর্ষাকাতর রমনীরা কিংবা করুণা মাখানো ‍দৃষ্টির পুরুষদের উপেক্ষা করেই অমন করে হাত ধরাধরি করে হাঁটি। হঠাৎ মনে হয়, মাঝখানে একটা কচি হাত দু’জনকে বাঁধনে বাঁধবার কথা। কখনো কখনো আমরা একত্রে বসে ইপ্সিতার স্মৃতি বানাই। ওর জন্য স্বপ্ন দেখি, ওর কাল্পনিক ভবিষ্যত গড়ি। জলে চোখ ভরে ঠিকই, তবে আবার সান্তনাও লাগে যখন দেখি আমাদের চতুর্পাশের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের হাতে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন। সন্তানের থেকে পাওয়া বঞ্চনায় নিরবে চোখের জল ফেলছেন।
।।
আমি একজন পিতাকে চিনি যিনি তার ২টি বিচ্ছু ছেলে থাকার পরও তার ডায়বেটিক ও ঝুঁকিগ্রস্থ স্ত্রীকে পেগন্যান্সিতে বাধ্য করেছেন মেয়ে পাবার আশায়। মেয়েটি হবার সময় মায়ের জীবন খুব সামান্যের জন্য বেঁচেছে। এক ডজন পিতা-মাতাকে চিনি যারা তাদের ৪র্থ সন্তান (ছেলে/মেয়ের) আশায় প্রায় বৃদ্ধ অবস্থায় বাবা-মা হবার ঝুকি নিয়েছেন। মুশকীল হল, তার বড় সন্তানের পাশে তার শেষ সন্তানকে ঠিক ভাইবোনের মতো লাগেনা। একটি দম্পতিকে দেখেছি সন্তান পাবার আশায় নিজেদের শেষ কপর্দক শেষ করে লোনে ডুবে গেছেন চিকিৎসা করাতে। সন্তান থাকা বা না থাকায় জীবন ধ্বংস হয় না। আমরা সন্তানের জন্য পরিবার গড়ি না। সন্তান একটি উপজাত যা পরিবারের অংশ। সে বা তারা এসে সংসারে পূর্ণতা দেয় মাত্র। যারা এতক্ষণ আমাকে সমাজপ্রথার বিরোধী ভাবছিলেন, তাদের বলি, আমি ঘোর সমাজবাদী, ঘোর সংসারি মানুষ। পরিবারের খুব লোভ আমার। বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্কটি স্বর্গীয়, রক্তের বন্ধনে আঁটা আর পবিত্র। একে রক্ষা করতে শুধু ভালবাসা, শাসন, কেয়ার আর বিবেকই যথেষ্ট। বিত্তের বা ঝকমকে স্টাইলের কোনো বাহুল্য ওখানে জরুরী না।
(পিচ্চি পরী দু’টোর নাম আমিও জানিনা। এক শীতের ভোরে হাঁটতে গিয়ে এই পরী দু’টোকে শিউলী তলায় আবিষ্কার করি। ওদের বাবা-মা’র কাছে স্যরি যদি অন্যায় করি। তবে হ্যা, ওদের নানাভাই সাথে ছিলেন।)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৫

ওমেরা বলেছেন: বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্কটি স্বর্গীয়, রক্তের বন্ধনে আঁটা আর পবিত্র। একে রক্ষা করতে শুধু ভালবাসা, শাসন, কেয়ার আর বিবেকই যথেষ্ট। বিত্তের বা ঝকমকে স্টাইলের কোনো বাহুল্য ওখানে জরুরী না

একথাটুকু খুব বেশী ভাল লেগেছে । ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.