নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষা হতে শিক্ষার বিদায়: আমরা কেন পড়াশোনা করব, কেন করব না?

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৯

আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করতেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি কী সেটা বলতে হবে, আমি দু’টো নাম বলতাম-সবকিছুতে রাজনীতিকিকরণ আর শিক্ষাব্যবস্থার পঁচন। আপনি হয়তো বলবেন, এত এত সমস্যা থাকতে এই দু’টো কেন? আমার কাছে মনে হয়, এই দু’টো হল বাকি সবকিছুর জন্মদাতা।
আমরা স্বাধীন হয়েছি ৪৫ বছর। এই ৪৫ বছরেও আমরা শিক্ষাব্যবস্থার ৩টি মূল ভিত্তি নিয়ে সার্বজনীন ঐকমত্যে পৌছাতে পারিনি। ৩টি বিষয় হল-
এক: আমাদের কোন থীম নিয়ে পড়াশোনা করানো হবে-গণতান্ত্রিক? সমাজতান্ত্রিক? সাম্যবাদী? ধর্ম নিরপেক্ষ? ধর্মবিশ্বাসবাদী? পুঁজিবাদী নাকি কল্যান রাষ্ট্রবাদী? মানে আমাদের কোন বিশ্বাসের ভিত্তিতে শেখানো হবে? আমাদের প্রজন্মকে কোন বিশ্বাসে বড় করা হবে?
দুই: আমাদের শিক্ষার্থীদের কোন সিস্টেমে পড়াশোনা করানো হবে-ইংলিশ মিডিয়াম? বাংলা মিডিয়াম? মাদ্রাসা? সলিড ধর্মশিক্ষা নাকি ক্যাডেট মাদ্রাসা? (তথাকথিত) সৃজনশীল নাকি গতানুগতিক মুখস্ত? এমসিকিউ নাকি ডেসক্রিপটিভ?
তিন: আমরা কি পৃথিবীর তাবৎ দেশের মতো ইন্টামিডিয়েট বা টুয়েলভথ ক্লাস পর্যন্ত পড়িয়েই শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট মনে করব (যেখানে সব দরকারী টেকনিক্যাল বিষয় শিখানো হবে) নাকি আমাদের এই অদ্ভূৎ সিস্টেম ( বাধ্যতামূলক ৫ বছরের অনার্স/মাস্টার্স) ফলো করব?
শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক নীতি ও পরিকল্পনাই যেখানে ঠিক হয়নি সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা হতে আমরা বেশি কী আশা করতে পারি? তারচে যা পাচ্ছি সেটাই কি বেশি নয়? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, কোর্স কারিকুলাম, টিচিং মেকানিজম, শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে মৌলিক কোনো ক্ষতি যদি ইতিমধ্যেই সাধন করা হয়ে থাকে সেটা হল, শিক্ষা হতে নৈতিকতা, সৃষ্টিশীলতা ও ফিলোসফি বিষয়টাকে পুরোপুরি নির্বাসন দেয়া হয়েছে। এখন শিক্ষা মানে হল শুধু তথ্য জানা বা মুখস্ত থাকার নাম। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যটি পর্যন্ত উহ্য হয়ে গেছে। আপনি যেকোনো স্কুল হতে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করুন, সে কেন একাডেমীতে ভর্তি হয়েছে? আমার বিশ্বাস, বেশিরভাগের উত্তর হবে, একটা ভাল ক্যারিয়ার গড়তে চাই মানে টাকা পয়সা কামাতে চাই। আমাদের পিচ্চিকাল পর্যন্ত বাবা-মা কে দেখতাম, বয়স হলেই একজন শিক্ষকের কাছে নিয়ে গিয়ে বলতেন, আপনার হাতে তুলে দিলাম। ওকে মানুষের মতো মানুষ করার দায়ীত্ব আপনার। কাজী কাদের নেওয়াজের সেই বিখ্যাত কবিতাটি মনে আছে?
“বাদশাহ আলমগীর,
কুমারে তাহার পড়াইত এক মৌলবী দিল্লীর........। ”
এখনকার দিনে ওসব বদান্যতা আর কোনো বিষয়ই না। তাছাড়া এই দেশে কমার্শিয়াল এডুকেশন নামেও যা আছে সেটার পর্যন্ত সর্বনাশ করা সারা। কোনো ধরনের প্রয়োজন যাঁচাই না করেই প্রতিবছর ৭ লক্ষ গ্রাজুয়েট সৃষ্টি করা হচ্ছে যারা ৫ টি দীর্ঘ বছর একাডেমিতে আটকা থাকে। যদি তাদের চাকরী জন্য রেডি করাও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবু বলব, যেসব সাবজেক্টে, যে পদ্ধতিতে ওনাদের রেডি করা হচ্ছে তার সাথে দেশের চাকরীর সম্পর্ক খুব সামান্য। এদেশে ওনাদের চাকরী পাবার ন্যুনতম যোগ্যতা যুগের ও পৃথিবীর সমস্ত দেশের সিস্টেমের বিপরীতে হল ন্যুনতম গ্রাজুয়েশন। মানে হল, আপনার সত্যিকারের দরকার থাক বা না থাক, গ্রাজুয়েশন তথা ৪ বছরের ডিগ্রী শেষ না করে আপনি কোথাও এ্যপ্লাই পর্যন্ত করতে পারবেন না। তার উপরে, যেহেতু সারাদেশে একই কালচারে বাই ডিফল্ট মাস্টার্স করছে সব গ্রাজুয়েট, তাই ট্রেন্ড অনুসরন করতে গিয়ে এবং প্রতিযোগীতায় টিকতে গিয়ে আরো ১ বছর বসে মাস্টার্স করতে বাধ্য হচ্ছে কোনো রকম যুক্তি ছাড়া।
আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছ হতে অন্যায্যভাবে কেড়ে নেয়া হচ্ছে জীবনের মূল্যবান ৫ টি বছর। অনার্স ও মাস্টার্সের বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেট তাদের যদি নিতে না হত, তাহলে সেই ১১ বছরের মাথায় (ইন্টারমিডিয়েট করেই) তারা জবে ঢুকত। যে বাড়তি ৫ টি বছর তারা জব করার ন্যুনতম যোগ্যতা পেতে খরচ করে সেই ৫ বছরে তারা ম্যানেজারিয়াল পজিশনে পৌছে যেত। ক্যারিয়ারে সেটেল করে ফেলত। মেধার কি ভয়ানক অপচয়!
পাশাপাশি যে মৌলিক ক্ষতিটি শিক্ষাব্যবস্থায় করা হয়েছে সেটা হল, পড়ে পাশ করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে দেয়া। উন্নত বিশ্বের মতো এখানে ওপেন বুক (নকল) আর ওপেন কোয়েশ্চেন (প্রশ্ন ফাঁস) চালু হয়েছে। এখন আর পড়াশোনা করাটা (এমনকি কমার্শিয়াল পড়াশোনাটুকুও পর্যন্ত) মুখ্য বিষয় না, পাশ করা, সার্টিফিকেট ও জিপিএ-৫ নিশ্চিত করা, ক্লাস ডিঙানোটাই মুখ্য। এখন টিচারকে মা-বাবা বলে দেন, “ও যেন গোল্ডেন-৫ পায় সেটা নিশ্চিৎ করবেন।” সবচেয়ে আত্মঘাতি ও ধ্বংস্বাত্মক কালচার যেটা চালু হয়েছে সেটা হল, যেহেতু এখন ডিগ্রী নেয়ার পরেও ইন জেনারেল, জ্ঞানের ঘাটতি আসমান সম, তাই ধীরে ধীরে একটা ট্রেন্ডকে প্রমোট করা ও বিশ্বাস করানো হচ্ছে। সেটা হল, যেসব জ্ঞানের ঘাটতিকে শিক্ষার নিম্নমান হিসেবে ধরা হবে, সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব, তাৎপর্যটাকেই অস্বীকার করা, ওগুলোর অস্তিত্বকেই মূল্যহীন প্রতীয়মান করা। সেগুলো না থাকা কোনো ব্যাপারই নয়-এই বিশ্বাসকে ব্যাপক হারে প্রতিষ্ঠিত করা। অলরেডি শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট মেজরিটি অংশ এটা বিশ্বাসের অংশ করে নিয়েছে যে, অংক না পারা, ইংরেজি না পারা, ক্রিয়েটিভ লেখা না লিখতে পারা, রিডিং না পড়তে পারা, পাঠ্য বিষয় (যেটা পড়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে) সে সম্পর্কে ডেপথ না থাকা-এগুলো কোনো সিরিয়াস বিষয় না।
অদ্ভূৎ এক বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের মন মগজে-মুখস্ত করা যাবে না, গুগল থাকতে কিছু মনে রাখার দরকার কী, অংক তো ক্যালকুলেটরেই করা যায়, কম্পিউটার থাকতে বানান জানতে হবে কেন, রচনা লেখা মানে জ্ঞান নয়, ইতিহাসতো সার্চ করে নিলেই হবে, রবীন্দ্রনাথ নজরুলের লেখা পড়ার দরকার কী-ইত্যাদি ইত্যাদি। তো প্রশ্নটা হল, তাহলে স্কুলে কলেজে কেন পড়তে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা? চাকরী করার ন্যুনতম সার্টিফিকেট আনবার জন্য সময় কাটাতে? যাস্ট সফলতার সাথে ক্লাস ওয়ান হতে অনার্স ফোর্থ ইয়ার-এই ১৬ বছর স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটির গন্ডিতে ঘোরাফেরা শেষ করতে পারলেই ধরে নিতে হবে হ্যা, শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে? ছেলে অবশ্যই শিক্ষিত হয়েছে?
আর এত কথাবার্তা ও ডেফিশিয়েন্সিতো শুধু যেই কমার্শিয়াল শিক্ষাব্যবস্থাটুকু অন্তত চালু আছে সেটা নিয়ে বললাম। শিক্ষার সত্যিকারের যে উদ্দেশ্য-আলোকিত মানুষ তৈরী করা, সুনাগরিক তৈরী করা, দেশপ্রেমিক তৈরী করা, বিচক্ষণ নাগরিক সৃষ্টি করা, দেশকে এগিয়ে নেবার মতো নেতৃত্ব সৃষ্টি করা-ওগুলোতো বহু বহু দুরের কথা। জানেন কি, প্লেটো কেন আইডিয়াল স্টেটের থীম নিয়ে ভেবেছিলেন আর কেনই বা তিনি আইডিয়াল সিটিজেন বানানোর জন্য একাডেমীর দর্শন মনে ধারন করতেন? একাডেমির জন্ম কেন হয়েছিল সেটাকেই ভুলে যাওয়া হয়েছে বা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন স্কুল হতে ইউনিভার্সিটি-ছাত্র হবার একটাই উদ্দেশ্য-ছাপোষা কিংবা কর্পোরেট কেরানী হওয়া। আর এই সার্বিক পঁচন ধরা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই আজ শিক্ষার্থী শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছে, শিক্ষক ধর্ষনে নামছে, সালোয়ারের সাথে টি-শার্ট পড়া বন্ধ করতে নোটিশ পড়ছে, শিক্ষকের হাত হতে বাঁচতে ব্যাগে পিপার স্প্রে ঢুকছে, টিচারকে নামাতে আন্দোলন হচ্ছে, ছাত্রদের লাঞ্চনার জবাবে শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সেই যে, আগের দিনে সিনেমাতে দেখতাম, সাবেক হেডমাস্টার পিতার হাতে লেখা পত্র নিয়ে নায়ক শহরে শিক্ষকের এককালের ছাত্রের বাসায় চাকরীর আশায় আগমন, ছাত্রের মেয়ের সাথে প্রেম.................। কোথায় সেই দিন?
ছোটবেলায় আমাদের চতুর্পাশের সবাই আমাদের একটা ভুল কথা শিখাত। লেখাপড়া কর যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। দুই দিক দিয়ে এটা ভুল। প্রথমত: আজকের যুগে গাড়িঘোড়ায় তারাই চড়ে যারা পড়ালেখা না করে অন্য ধান্দায় বড় হয়। পড়ালেখা করে গাড়ি কেনার মতো পয়সা কামানো যায়না। দ্বিতীয়ত: পড়ালেখার উদ্দেশ্য কখনোই গাড়িঘোড়ার মালিক হওয়া নয়, চাকরি বাগানো নয়, বড়লোক হওয়া নয়। পড়াশোনার একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মতো হওয়া। যেখানে পড়াশোনার উদ্দেশ্যই ভুল শেখানো হয় সেখানে শিক্ষিত লোকেরা কি অশ্বডিম্ব প্রসব করবেন?
(শিক্ষার মান, শিক্ষার পদ্ধতিগত ত্রূটি নিয়ে বলবার মতো যথেষ্ট শিক্ষিত ও একাডেমিশিয়ান আমি নই। তাই যদি আপনি আরো বিস্তারিত ও গভীর বিশ্লেষন পড়তে চান তবে দু’জন বিজ্ঞ মানুষের এই দু’টি লেখা পড়ে নিতে পারেন:
১. Click This Link
২. Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন করে তুলে ধরেছেন।

এক মাৎসানায় সময় যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর দিয়ে!
অর্থহীন জিপিএ ফাইভ, আইএম জিপিএ ফাইভ এর বস্থা ভরা সনদ দিয়ে জাতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে- তারাই ভাল জানে!

একেবারে কেঁচে গন্ডুষ করলে যদি কিছূ বাঁচার আশা করা যায়!
কিন্তু করবে টা কে?

+++++

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:২৬

বেচারা বলেছেন: আমিও জানি না ভৃগু। এক অজানা অমানিষা অপেক্ষা করছে এদেশের জন্য। হয়তো আমরা মধ্যম আয় হতে উচ্চ আয়ের দেশ হব। কিন্তু সেটা হব একদল গন্ডমূর্খ অসভ্যে ভরা উচ্চ আয়ের দেশ।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৫

ডা. সুরাইয়া বীথি বলেছেন: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার যে কি করুণ দশা তা অার বলে বোঝানো সম্ভব না। না শিক্ষকরা নিজেরা কিছু শিখতে অাগ্রহী না তারা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অর্থে যুগোপযোগি কোন কিছু শিখাতে সক্ষম!!

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫

বেচারা বলেছেন: দুঃখিত। অনেকদিন ব্লগে ছিলাম না বিধায় আপনার ধন্যবাদটা কাজা হয়ে গেছে। যা বলেছেন সত্যি বলেছেন। সত্যি বই মিথ্যা বলেননি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.