নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব কেন?

১০ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

আমাদের অকৃতজ্ঞতার ইতিহাস খুব পুরোনো নয়। প্রাগৈতিহাসিক কাল হতেই তার জন্ম। ল্যাংটো কাল হতে একটা কথা শুনতাম, “যেই পাতে খায়, সেই পাতে হাগে।” কৃতঘ্নতার এর চেয়ে ভাল উপমা আর হয় না। একটু শুরুতে পিছিয়ে দেখি।

মুসা (আঃ) একদিন খিজির (আঃ) এর সাথে ভ্রমন করছিলেন। পথে একটা নদী পড়ল। দুজন এতিম ছেলে তাদের নৌকায় করে নদী পাড় করে দিলেন। তারা পাড়ে উঠতেই খিজির আঃ তার লাঠি দিয়ে নৌকার তলায় একটা ফুটো করে ডুবিয়ে দিলেন। মূসা আঃ খুব অবাক হয়ে এই অকৃতজ্ঞতার কারন জানতে চাইলেন। [উত্তরটা পরে বলছি]

মহামতি রাম তার স্ত্রী সীতাকে নিয়ে ১৪ বছর বনবাস করেন। স্ত্রী সীতা তাকে ১৪ বছর বনে সঙ্গ দেন। সবরকম কষ্ট, বেদনা, দুর্বিসহ দিন মেনে নেন হাসিমুখে। লোকালয়ে ফেরার পর রাবণ কান্ড। তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রাবণের হাত হতে সীতাকে উদ্ধার। মাঝে লঙ্কাপুরী ধ্বংস। এমন যে পতিপ্রাণা রমনী সীতা, তাকে দুষ্টলোকের দাবীর মুখে ও কুপরামর্শে মহামতি রাম চরিত্রহীনতা (আড়ালে সতীত্বহীনতার) দোষ দিয়ে বসলেন। আগুনে ঝাপ দিয়ে সীতাকে নিজেকে নিঃষ্কলুশ প্রমান করতে হয়েছে। রাম কৃতজ্ঞতার ধার দিয়ে হাঁটেননি। ভাবেন নি, অসতী হলে তিনি ১৪ বছর রামের সাথে বনে যেতেন? আর অসতী হলেও তিনি যে ১৪ বছর স্বামীর সাথে বনে থেকেছেন, সেই কৃতজ্ঞতাতেই তো তাকে মেনে নেয়া উচিৎ।

স্কুলের বইয়ে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের গল্প মনে পড়ে? তার প্রিয় বন্ধু ব্রূটাস আর পম্পেই মিলে তার খুনে নেতৃত্ব দেয়। হন্তারকের ছুরির আঘাতে ঢলে পড়ার মুহূর্তে সিজারের সেই বিখ্যাত উক্তি, “এল ব্রূটে?” মানে ব্রূটাস, তুমিও?” যেই বন্ধুদের তিনি সম্রাট হয়ে উঁচু পদে তুলে এনেছিলেন, তারাই তাকে হত্যা করে। আহ কৃতজ্ঞতা।

হালের সুলতান সুলেমান দেখেন? (অবশ্য আমাদের প্রকৃত পুরুষ মানুষেরা সিরিয়াল দেখেন না। ওতে নাকি নিজেদের নারীদের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়। অামি বুঝি না, ’মেয়েদের মতো লাগবে’ এমন ভয় যদি পুরুষকে সারাক্ষন চালিতই করে, তবে এমন ঘৃন্য ‘মেয়ে’ মানুষকে সে বিয়ে কেন করে?) অকৃতজ্ঞতার চুড়ান্ত প্রদর্শন দেখতে পাবেন বিভিন্ন চরিত্রে। সাফিয়ে সুলতান-অসংখ্যবার ক্ষমা পাওয়া স্বত্ত্বেও আবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন (যদিও পরিচালকের ইচ্ছায়।) বুলবুল আগা-প্রাণভিক্ষা পেয়েও আবার কোসেমের পেছনে লাগে। কোসেমকে সুলতানা হতে যে কাজ করে, সেই মুরাদ পাশাকে মুহূর্তের অবাধ্যতায় খুন করায় কোসেম। প্রাণ বাঁচাতে, মান বাঁচাতে কোসেম সুলতান হানদান সুলতানকে সাহায্য করলেও হানদান প্রাণ পেয়েই কোসেমকে ল্যাঙ মারতে নেমে পড়ে। সব চরম কৃতজ্ঞ লোকজনের সমাহার। আমি এই শিক্ষাগুলোর জন্যই সুলতান সুলেমান দেখি।

কৃতজ্ঞতার রয়েছে জটিল অঙ্ক। রয়েছে জটিল মারপ্যাঁচ। জাতীয় পর্যায়ে অকৃতজ্ঞতার ভুড়ি ভুড়ি উদাহরন পাবেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বৃটিষরা বাঙালী তথা ভারতীয় ‍উপমহাদেশের মানুষের সহায়তা নেয়। প্রচুর ভারতীয় তাদের হয়ে লড়ে। যুদ্ধ শেষ হলে ভারতের স্বাধীনতা দেবে-এমন একটা বিশ্বাস বা ধারনা দেয়া হয় তাদের। যুদ্ধ শেষ হলে সেই আশায় ছাই ঢেলে দেয় অকৃতজ্ঞ ও চতুর বৃটেন। উপমহাদেশে হাটু গেড়ে বসতে, মসনদ দখলে এদেশীয় ক্ষমতালোভী আমলাদের সাহায্য নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। সেই মীরজাফর, মীরকাশিমের কী পরিণতি করেছিল লর্ড ক্লাইভ তা কি জানেন? কৃতজ্ঞতার ধার দিয়েও যায়নি কখনো কোনো কালে, ক্ষমতা যারাই বগলদাবা করেছেন। হালে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে আপনি মুক্তিযুদ্ধের কৃতজ্ঞতার মাপকাঠিতে মাপতে গেলে নিজেই বিব্রত হবেন। দায় কার-সেটা অনেক বিশ্লেষনের দাবী রাখে। আমি শুধু কৃতজ্ঞতার জটিল গ্যাড়াকলের কথা বলছি এখানে।

একটা অদ্ভূত অকৃতজ্ঞতার কথা বলি। মানুষ নাকি তার সৃষ্টিলগ্নে আদিম যুগে পাহাড়ে, জঙ্গলে, বনে, গাছের ওপরে বাস করতে। ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সেই মানব জাতি একসময় নিজের সুরক্ষা, সুন্দর থাকা, সভ্য হবার তাগিদ হতে প্রথমে পরিবার, তারপর দল, তারপর সমাজ, তারপর দেশ, তারও পরে মহাদেশ, জাতিসংঘ গঠন করে। তো কথাটা হল, ব্যক্তিমানুষ বা একক মানুষ তার নিজের দরকারে রাষ্ট্র পয়দা করেছিল। রাষ্ট্র’র নিজের অস্তিত্বের জন্য ব্যক্তিমানুষের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। কিন্তু আজকে রাষ্ট্র নিজেই একটি দানবীয় প্রতিষ্ঠান। দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে লক্ষ্য করে দেখুন। দুনিয়ার প্রায় সর্বত্রই রাষ্ট্রযন্ত্র নামক দানব ব্যক্তিমানুষের গলাটা টিপে ধরে তার যাবতীয় ইচ্ছা, অনিচ্ছা, চাওয়া, পাওয়া, ভাল-মন্দ লাগা, তার মতামত, স্বাতন্ত্র সবকিছুকে নির্মমভাবে পিষে মারছে। ব্যক্তির মতামত, ব্যক্তিসাধারন তথা জনগনের মনের কথাটা রাষ্ট্র কোন দেশে কান পেতে শোনে? বরং রাষ্ট্রের ইচ্ছা অনিচ্ছা চাপিয়ে দেয়া হয় জনগনের উপর। রাষ্ট্র যেটা বিশ্বাস করে, সেটা তার নাগরিকদের মানতে বাধ্য করা হয়। এই মানুষের জন্যই নাকি রাষ্ট্র আর বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। রাষ্ট্র কোথায় আজ মানুষের স্বার্থ দেখছে? কোথায় সে তার সন্তানদের কাছে টানছে? সে ব্যস্ত কতিপয় ধান্দাবাজ ও পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষায়। সাধারনের মুখ সেলোটেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয়ায়। ইহাকে আমরা কৃতজ্ঞতার সেন্সরশীপ ও পুলিশী প্রতিদান হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।

আপনাদের মনে পড়ে কিনা? এই বঙ্গদেশেই জনৈক সন্তানেরা তাদের মাকে ঘরে স্থান না দিয়ে গরুর গোয়ালে নিয়ে রেখে এসেছিল? সেই মাকে শিয়ালে কুকুরে কামড়ে আধমরা করে ফেলে যায়? সেকি? ভুলে গেলেন? আমাদের তথাকথিত ’সামাজিক মাধ্যমে” [আসলে অসামাজিক মাধ্যম] কত ভাইরাল হয়েছিল ঘটনাটা! আমরা কত কত স্ট্যাটাস দিলাম সেটা নিয়ে।

ওহো, আপনাদের তো বলিইনি। পৃথিবীতে অকৃতজ্ঞতা বা কৃতঘ্নতার সবচেয়ে বৃহত্তম ও বর্বরতম উদাহরন হল বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যা। একটা গোটা জাতিকে যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিলেন, যেই বাঙালী জাতি স্বাধীনতা পাবার পরে তাকে বরণ করে নিয়েছিল বীরের মতো, বাবার সত্যিকারের আসন দিয়েছিল, যেই মুজিব এদেশের ৩ লক্ষ অত্যাচারিত মায়ের পিতৃত্বের দায় নিয়েছিলেন, সেই জাতির পিতাকে বাঙালী জাতি রীতিমতো পরিকল্পনা করে, আয়োজন করে, ঘটা করে হত্যা করে ফেলে। এতটুকু হাত কাঁপে না। আড়ম্বর করে তার খুনিদের সিংহাসনে বসায়। এতবড় জঘন্য কৃতঘ্নতা স্বাধীনতার মাত্র ৪ বছরের মধ্যে। একটি গোটা জাতির কৃতঘ্ন হতে সময় নেয় মাত্র ৪ বছর!! [কেউ কেউ এতক্ষন লেখাটা পড়ে মজা পেলেও এই অনুচ্ছেদটি পড়েই আমাকে আওয়ামিলীগার বানিয়ে তুলোধোনা শুরু করবেন। কেউ কেউ মন্তব্যে লজিক দেখাবেন, ’কেন বঙ্গবন্ধুর খুন জায়েয ছিল’। মিয়ারা, নিজের পিতাকে হত্যা করার কোনো লজিকই আদতে লজিক নয়, ওটা অযুহাত মাত্র।]

উপকারীকে নাকি বাঘে খায়? কপালকুন্ডলার নবকুমারকে মনে পড়ে? যে নবকুমার তার নৌকার লোকদের খাবার সংস্থান করতে বনে নেমেছিলেন আর তার সাথের লোকেরা তাকে বনে ফেলে রেখেই চলে যায়? বাঘের গলা হতে কাঁটা বের করে বিপদে পড়া বকের গল্পও নিশ্চই মনে পড়ে? আপনি কারো উপকার করবেন, আর তিনি সেটা মনে রাখবেন, আপনার দরকারেও তিনি ঝাপিয়ে পড়বেন-এমনটা যদি আপনি ভেবে থাকেন, তবে ভাই আপনি কলি যুগে অচল। বরং এখন যুগটা হল এমন, আপনি কারো উপকার করতে আপনার কলিজাটা বের করে দারুন করে ফ্রাই করে প্লেটে করি খেতে দিবেন, সে আপনাকে বলবে, “লবনটা কম হয়ে গেছে।” ভার্চুয়াল সাইবার জগতেও অকৃতজ্ঞতার ছড়াছড়ি। আপনি আপনার স্মার্ট ফোনের ব্লুটুথ ব্যবহার করে এক ফোন হতে অন্য ফোনে শেয়ারইট এ্যাপ নিয়ে নেন। তারপর শেয়ারইট ইন্সষ্টল করে জীবনের তরে ব্লুটুথকে ভুলে যান।

আপনি যদি বাস্তব জগতে কারো কোনো রকম উপকার করেন, কাউকে বিপদ হতে উদ্ধার করেন, তবে আপনার মনে কী কাজ করে? আমি বাজে লোক তো, তাই বাজে চিন্তাই সবার আগে মনে আসে। আমার ধারনা, মাত্র ১% লোকের মধ্যে নিঃস্বার্থতা কাজ করে। যিনি উপকারের বিনিময়ে একদমই কিছু প্রত্যাশা করেন না। বাকি ৯৯% মানুষ উপকারের বিনিময়ে ফিরতি প্রতিদান, কেউ কেউ বিশেষ কোনো সুবিধা, কেউ কেউ অন্তত বিপদে পড়লে ফিরতি উপকার পাবার আশা করেন। একদম কিছু না হলেও, উপকারভোগী মানুষটি উপকারীর প্রতি মানসিকভাবে কৃতার্থবোধটুকু বজায় রাখুন আর মুখে একটি শুকনো ধন্যবাদ অন্তত দিন-সেটাও প্রত্যাশা করেন না-এমন মহামানবের দেখা পেলে আমি তার পায়ের ধুলা মাদুলীতে ভরে গলায় ঝোলাব।

মুশকীল হল, “Thank you", "So kind of you", "I am so grateful" ইত্যকার চটুল বাক্যসমষ্টি বা তার চোস্ত বাংলা প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের মানুষ কেন যেন, ফরমালিটি করে হলেও ওই শব্দগুলো বলতে গেলে জিহবা জড়িয়ে যায়। আর সত্যি সত্যি উপকারের প্রতিদান দেবার ক্ষেত্রে তো “কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলে পাজি।” তবু মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদের ”মানব’ পরিচয়কে তো আর ভুলে যেতে পারি না। তাই শত অনাচারের পরেও কবি জসীমউদ্দীনের সুরে বলতে হয়-

আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই, যে মোরে করেছে পর।

কেউ যদি বলেন, আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো উদাহরনই কি নেই? হ্যা হ্যা, আলবত আছে। স্রোতের একদম বিপরীতে বাংলাদেশের জন্মানো রাজাকারকূলের পাকিস্তান নামক ব্যর্থ ও নোংরা রাষ্ট্রটির প্রতি কৃতজ্ঞতার লালা নিঃস্বরন দেখলে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় জাতি হিসেবে আমরা অকৃতজ্ঞ। কীভাবে সম্ভব হয়েছিল, ১৯৭১ সালে পাকি কুত্তাদের সঙ্গ দেয়া তাদের পক্ষে? সেটা সময় হলে আরেকদিন বলব।

[কপাল কুন্ডলার যে উক্তিটাকে আমি হেডিং করেছি-সেটিকে আসলে ইচ্ছা করে একটু বাঁকিয়ে দিয়েছি। সত্যিটা হল, তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হই কেন?। আর মূসা আঃ এর ঘটনাটিতে ওই নৌকাটিকে খিজির আঃ ফুটো করে দিয়েছিলেন, ওই অসহায় ছেলেটির নৌকাটিকে সেই দেশের রাজা কর্তৃক সিজ করা আটকাতে।]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬

নাঈমুর রহমান আকাশ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

১২ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪

বেচারা বলেছেন: ধন্যবাদ। সাথে থাকুন। ভাল থাকবেন।

২| ১০ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: লবনটা কম হয়ে গেছে"" =p~

১২ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪

বেচারা বলেছেন: পাতে নিয়ে নিন। হা হা হা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.