নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা শহরের নন-কনভেনশনাল পেশার মানুষদের হালহকিকত: পর্ব-২

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭

[লেখাটি কোনো জরিপ বা গবেষনা হতে লিখিত নয় বিধায় তথ্যগত বিভ্রাট ও অমিল থাকতে পারে। আমার কাছে সংখ্যার চেয়ে বৈচিত্র ও সংগ্রামটি বেশি গুরুত্বপূর্ন।এই লেখাটির কিছু বিশেষ অংশ অনুলিখিত হয়েছে আমার কিছু সুহৃদের দেয়া তথ্যকে ভিত্তি করে। লেখার পরবর্তি অংশে তাদের সৃজিত অংশগুলো আসবে। ব্লগে আমার নিজের পরিচয় উহ্য থাকায় তাদের নামও নিচ্ছি না। কেউ যদি জানেন, নীক নেম কী করে বদলাতে হয়, একটু জানাবেন। আমি সত্যি নামে লিখতে চাই। ]

পূর্ব প্রকাশিতের পর.....

৩.চায়ের দোকান: মালিবাগ মৌচাকের একটি চায়ের দোকানের কথা শুনেছিলাম যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কাপ চা বিক্রী হয়। প্রতিকাপ ৫ টাকা হতে ১৫ টাকা। যদি সবাই ৫ টাকার চাও খায়, তবে ৫ টাকা X ৪০০ কাপ = ২০০০ টাকা হতে ৬০০০ টাকার বিক্রী। তাতে মাসে বিক্রী ১২০০০ কাপ। প্রতি কাপে যদি তার ২ টাকাও লাভ থাকে তবে নেট লাভ ২৪০০০ হতে ১ লক্ষ টাকাও হতে পারে। যা একজন সিনিয়র ম্যানেজার হতে এজিএম লেভেলের আদমীর বেতনের সমান।

৪.ফুড কার্ট: মিরপুর স্টেডিয়ামের বিপরীতে ঝাল মুড়ি বিক্রেতা ইয়াকুব মিয়া। তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় আসেন তার কলিজা ঝালমুড়ির ডেকচি নিয়ে একটা ঠেলা ভ্যানে। সন্ধ্যা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় একবস্তা (১০-১২ কেজি মুড়ি তিনি বিক্রী করেন। একটি প্লাস্টিকের পিরিচে করে বা কাগজের ঠোঙায় করে কাগজের চামচ দিয়ে সাজিয়ে। প্রতি ইউনিট ২০ টাকা, ৩০ টাকা। কমপক্ষে ২০ টাকা করে তিনি প্রতিদিন বিক্রী করেন প্রায় ২০০ ইউনিট। তার মানে প্রতিদিন তার বিক্রী ৪০০০ টাকা। নেট লাভ থাকে ৮০০-১২০০ টাকা, তার মানে মাসে ২০ হাজার হতে ৩০ হাজার টাকা। একজন গড়পড়তা অফিসারের মাসিক বেতনের সমান।

৪.মুচী: আমার অফিসের পাশে মসজিদের গেটে দু’জন মুচি কাজ করেন। শেড, চৌকি বিছিয়ে তাদের স্থায়ী অফিস। খুব আজব হল, আমি কখনো দু’জন মুচীকে একত্রে ব্যবসা করতে দেখিনি। যেটা ওনাদের দু’জনকে দেখি। একবার বুট পালিশ করাতে গিয়ে আলাপ হল। দুইজনের কেহই আদিম ডোম বা মুচী সম্প্রদায়ের নন। দু’জনই বাঙালী এবং ‍মুসলিম। তারা প্রতিজোড়া জুতা পালিশ করতে নেন গড়ে ৫০ টাকা। আমার বুট রং করতে তারা ১২০ টাকা চার্জ করেছিল। প্রতিদিন তাদের গড় আয় ন্যুনতম ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। তার মানে মাসে ৪৫০০০ থেকে ৬০ হাজার টাকাও। হ্যা, এটা অংকের হিসাব। এর মধ্যে অনেক ব্রেকডাউন, লস আছে। সেটা ভিন্ন কথা।

৫.সব্জি হকার: মিরপুর কাঁঠালতলা মসজিদের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরছি। হঠাৎ বৃষ্টি নামায় একটা দোকানের শেডের নিচে দাড়ালাম। একজন সব্জি বিক্রেতা বৃষ্টি হতে বাঁচতে সেখানে এলেন। আমি তার কাছে জানতে চেষ্টা করি তার ব্যবসার ধরন। তিনি মিরপুর ১ নম্বর হতে সব্জি কেনেন। সকাল হতে দুপুর ২/৩টা পর্যন্ত বাসাবাড়িতে গিয়ে গিয়ে, কখনো রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে সব্জি বিক্রী করেন। প্রায় সময়ই তার সংগ্রহে থাকে ৫-৬ ধরনের সব্জি। প্রতিটার গড়ে ৫-৭ কেজি। প্রতিদিন সামান্য ফেলে দেয়া সব্জি বাদ দিলে তিনি প্রায় পুরোটাই বিক্রী করতে পারেন। গড়ে তিনি প্রতিদিন বিক্রী করেন ৪০ থেকে ৬০ কেজি সব্জি। প্রতি কেজিতে মার্জিন রাখেন ৫-১০ টাকা। তার মানে প্রতিদিন লাভ প্রায় ৩০০ টাকার মতো। মাসে ৯ হাজার টাকা।

৬.ডিম/হাঁস বিক্রেতা: অফিসের গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি। সামনেই দেখি একজন হকার এক ঝুড়ি হাঁসের ডিম নিয়ে বসেছেন। তার ডালায় প্রচুর ডিম। জিজ্ঞেস করে জানলাম, তার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। ঢাকার তেজগাও হতে ডিম কেনেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ ডজন হতে ৫০ ডজন ডিম কেনেন। দাম পড়ে ৭০/৭৫ টাকা ডজন। বিক্রী শেষে তার গড়ে লাভ থাকে ১০ টাকা ডজন, মানে প্রতিদিন তার লাভ ৩০০ হতে ৪০০ টাকা। মাসে আয় ১০ হাজার হতে ১৫ হাজার টাকা। মাঝে মধ্যে ডিমের সাথে হাঁসও বিক্রী করেন। বাড়তি লাভ।

৭.গার্মেন্টস কর্মী: কিউআই:-যদিও আসলে এটি খুবই কনভেনশনাল একটি পেশা। কিন্তু আমি এটিকে আমি এটিকে নন-কনভেনশনাল বলছি কেননা, এই দারুন একটি কার্যকর পেশায় আমাদের তথাকথিত শিক্ষিতদের আগ্রহ নেই। একজন এসএসসি হতে এইচএসসি পাশ ছেলে বা মেয়ে এই পেশায় প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা শ্রম দিয়ে মাসে ওভারটাইমসহ ৯-১০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। তার চেয়েও বড় সুবিধা হল, যেসব ছেলেমেয়ে গ্রামে ডিগ্রী পড়াশোনা চালানোর সঙ্গতি নেই, তারা এই পদে কাজ করে তাদের পড়াশোনা দিব্যী চালিয়ে যেতে পারে। পরীক্ষার সময় হলে ছুটি নিয়ে বা জব ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে যায়। পরীক্ষা শেষে আবার নতুন জবে ঢোকে। জব পেতে কোনো সমস্যাই হয় না। আমার দেখা, বহু ছেলেমেয়ে এভাবে তাদের গ্রাজুয়েশন করছে। চাইলে এই পেশা হতেই তারা পরবর্তিতে সিনিয়র পদেও যেতে পারে। এমনকি জিএম পর্যন্ত। গ্রামে অর্থাভাবে যেসব ছাত্রছাত্রীরা বিপদে পড়েছে, তারা এই পেশাটা অবলম্বন করতে পারে।

৮.মিন্তি: ঢাকার যেকোনো বাজারেই আপনি মিন্তিদের দেখতে পাবেন। মিন্তি কোনো আলাদা বা নতুন পেশা না। ছোট ছোট বাচ্চারা (৭-১২ বছর বয়সী, অবশ্য এখন বড়রাও ওদের এই রুজিতে ভাগ বসিয়েছে।) পেটের টানে বা পরিবারের দায় টানতে বাজারে নিজের চেয়ে আকারে বড় ঝুড়ি নিয়ে যারা বেশি বাজার করেন, তাদের বাজার সওদা মাথায় বয়ে বেড়ায়, গাড়িতে তুলে দেয়। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রেট নেই। তবে বাজারের অবস্থানভেদে তাদের দরদাম ওঠানামা করে। জীবনে একবারই আমি তাদের সাহায্য নিয়েছিলাম। সেটাও বাচ্চাটার বারংবার অনুরোধে। কারন, প্রথমত, মিন্তি দিয়ে বয়ে নেবার মতো বাজার আমি করি না। দ্বিতীয়ত, একটি শিশুকে স্রেফ টাকার জোরে শ্রম দেয়ানোর মতো কাজ করতে আমার বাঁধে। মিরপুর ১ নম্বর বাজারে একজন শিশু মিন্তি গড়ে প্রতিদিন আয় করে ৩০০-৩৫০ টাকা। মাসে সেটা হয় ৭-৮ হাজার টাকা। সাধারনত অতি দরিদ্র বা অসহায় পরিবারের শিশুরাই মিন্তির কাজ করে। যদিও শিশুশ্রম দেশে নিষিদ্ধ। তবে হ্যা, সেটা শুধু গার্মেন্টস শিল্পে প্রযোজ্য বলে আমার কাছে দৃষ্ট হয়। বাকিদের জন্য সাতখুন মাফ। এমনকি শিশুশ্রম বন্ধ করতে যেসব এনজিও, সরকারী দপ্তর কাজ করে, তাদের কর্তারাও দিব্যি বাজারে মিন্তিকে কাজে লাগান। বাজারের ব্যাগ হাতে বয়ে বেড়ানোর মতো নিচু কাজ তারা পারেন না।

৯.বাইক রাইডার: ঢাকাতে সবশেষ নন-কনভেনশনাল পেশার সংযোজন বোধহয় এটা। উবার ও পাঠাওসহ অনেকগুলো রাইড শেয়ারিং বিজনেস এসে পড়ায় নিজের বা ভাড়ার বাইক, গাড়ি দিয়ে কাউকে গন্তব্যে পৌছে দিয়ে আয় করার অভিনব বিজনেস কনসেপ্ট এই মুহূর্তে ঢাকার মাটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে গাড়ি ও বাইকের রাইডারের আয়ের একটা বড় অংশ নিয়ে নেয় কোম্পানী। রাইডারের নিজের গাড়ি বা বাইক যদি থাকে আর সারাদিন যদি তিনি রাইড নিতে পারেন তবে আয় বেশি। তবে অনেকেই আছেন, অফিসে যেতে বা ফিরতে কিংবা ছুটির দিনে বাইক/কার রাইড সার্ভিস দিয়ে কিছু বাড়তি পয়সা আয় করার চেষ্টা করেন। এই পেশায় যারা পার্টটাইম, মানে অফিসে যাবার বা সেখান হতে ফেরার সময় একটা দুটো রাইড নেন, তাদের জন্য বড় লাভ হল, বাইক বা গাড়ির তেলের খরচটা উঠে যায়। আর যারা পারমানেন্টলী চালান, তাদের যদি নিজের গাড়ি থাকে আর নিজে চালান, তবে আয় একটু বেশি। অন্যদের জন্য ড্রাইভারকে বাড়তি পয়সা দিতে হয়। যাহোক, একজন পারমানেন্ট রাইডার দিনে মোটামুটি ২০-২৫ টি রাইডও পেতে পারেন। তার ন্যুনতম প্রতি রাইডে চার্জ ১৫০ টাকা হলেও দিনে মোট আয় ৩০০০ টাকা। তেলের খরচ ও ওভারহেডসহ অন্যান্য প্রযোজ্য কস্ট বাদ দিয়ে নেট লাভ থাকবে অন্তত ১০০০-১৫০০ (আনুমানিক, আমার কাছে পারফেক্ট তথ্য নেই।) গাড়ি সার্ভিস হলে আয় আরো বেশি। কারন ভাড়া বেশি।

চলবে........

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: তাদের বিক্রি দেখলেন- খরচের হিসাব তো করলেন না। পুলিশ কে টাকা হয়। স্থানীয় নেতাদের দিতে হয়। দাড়োয়ান কে দিতে হয়। টহল পুলিশকে দিতে হয়।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

বেচারা বলেছেন: পরামর্শটা ভাল। কিন্তু মুশকীল হল, যা কিছু দেয়া দরকার, সব দিতে গেলে সেটা বানাতে যে পরিমান সময় ও শ্রম দরকার, আর সেটা করার পরে যে পরিমান সাইজ হবে, কেউ পড়বে না। আমার লক্ষ্য ছিল, খুব সংক্ষেপে এই পেশা বৈচিত্রটিকে তুলে ধরা।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০

জগতারন বলেছেন:
ব্লগার সাহাদাত হোসেন (সত্যের ছায়া) একসময় এমন একটি সিরিস চালু করেছিলেন।
যদিও এখন তিনি এটি আর লিখেন না। তবে তিনি একটি পেশা নিয়ে এক একদিন লিখতেন
এবং সেই পেশার লোকটি ও তার আয়, জীবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতেন।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে খুব মনযোগ সহকারে পড়তাম ও খুব ভালো লাগতো।

আপনাকেও বলবো; এক একটি এই বিচিত্র পেশার ব্যাক্তি নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখুন।
এ-ই যেমন; তার আয়, ব্যায় পরিবার, ছেলে-মেয়ে, সুখ-দুখ বা প্রশান্তি। ইত্যাদী
আমরা প্রবাসীরা আমাদের দেশের বিভিন্ন মানুষদের জানতে পারবো।
অবশ্যই ভালো লাগবে।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

বেচারা বলেছেন: প্রায় একই রকম লেখার একটি দারুন সিরিজ আছে এক ভদ্রলোকের। নাম মনে করতে পারছি না। তিনি মূলত ফটোগ্রাফার। হ্যা, অমন করে লিখলে আরো উপভোগ্য তো হতই। কিন্তু মুশকীল হল সময়। যা কিছু দেয়া দরকার, সব দিতে গেলে সেটা বানাতে যে পরিমান সময় ও শ্রম দরকার, আর সেটা করার পরে যে পরিমান সাইজ হবে, কেউ পড়বে না। আমার লক্ষ্য ছিল, খুব সংক্ষেপে এই পেশা বৈচিত্রটিকে তুলে ধরা।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

বেচারা বলেছেন: নাম মনে পড়ল ওনার। জিএমবি আকাশ সাহেব।

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২০

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: আমরা দূর থেকে আসলে যেটা দেখি সবসময় সেটা ঘটেনা।

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭

গরল বলেছেন: এত তথ্য দিলে আল্লার মাল আব্দুল মুহিত সাহেবতো ইনকাম ট্যাক্স বসিয়ে দিবে।

৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:২৮

চাঙ্কু বলেছেন: সমস্যা হল এই নন-কনভেনশনাল পেশাগুলো ফ্লোটিং পেশা। এইজন্যই ব্যাংকগুলো তাদেরকে ১০ টাকাও লোন দেয় না :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.