নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা শহরের নন-কনভেনশনাল পেশার মানুষদের হালহকিকত: পর্ব-৩

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫০

[লেখাটি কোনো জরিপ বা গবেষনা হতে লিখিত নয় বিধায় তথ্যগত বিভ্রাট ও অমিল থাকতে পারে। আমার কাছে সংখ্যার চেয়ে বৈচিত্র ও সংগ্রামটি বেশি গুরুত্বপূর্ন।এই লেখাটির কিছু বিশেষ অংশ অনুলিখিত হয়েছে আমার কিছু সুহৃদের দেয়া তথ্যকে ভিত্তি করে। লেখার পরবর্তি অংশে তাদের সৃজিত অংশগুলো আসবে।]

পূর্ব প্রকাশিতের পর....................

১০.টিউশনি: ঢাকার এমনকি মফস্বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কিন্তু টিউশনি করায়নি জীবনেও এমনটা আপনি খুব বিরল ঘটনা জানবেন। আমরা যখন একাডেমীতে ছিলাম তখন একজন টিউশনি মাস্টারের বেতন ন্যুনতম ১০০০ টাকা হতে রকমভেদে ৩০০০ টাকাও ছিল। আজকাল শুনি সেটা অনেক বেড়েছে। গ্রামে আমার ২ ভাগনিকে এক ম্যাম পড়ান। সপ্তাহে ৫ দিন। তার স্যালারিই ৩০০০ টাকা। যতটা জানতে পারলাম, বর্তমানে ঢাকায় বাংলা মিডিয়ামের ক্লাস ৪ থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াতে একজন টিউশনি টিচারের মাসিক বেতন হতে পারে ৪,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা পর্যন্ত। ইংলিশ মিডিয়ামে সেটা ৮,০০০ থেকে ১৫,০০০ তক আছে। টিউশনির সম্মানি নির্ভর করে, বাচ্চা কোন ক্লাসের, সপ্তাহে কতদিন পড়াবে, কোন স্কুলের বাচ্চা, দিনের কোন সময়ে, কতগুলো সাবজেক্ট পড়াতে হবে এবং টিচার কোন বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্টে পড়েন-তার ওপর।

[এই অংশটুকু অনুলিখিত]
১১.প্লাম্বিং: জনাব রাজু আহমেদ। বাসা: রাজশাহী। বয়স=৩৮ (প্রায়) পেশা: সেনেটারি মিস্ত্রী। নিরক্ষর হওয়ায় নিজের নাম লিখতে জানেন না। প্রায় ১৫ বছর আগে একজন ৩০ টাকা দৈনিক লেবার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তারপর মিস্ত্রী হন। এখন বাসাবাড়ি কন্ট্রাক্ট নেন। বাড়ি যদি ১ তলা হয় তবে সেই বাড়ির যাবতীয় পানির লাইনের কাজ তিনি নিজে প্ল্যান করে করে থাকেন। মালামাল বাদে চার্জ করেন ৫০,০০০ টাকা। তার লেবার খরচ ৫,০০০ টাকার বেশী হয় না। বিল্ডিংভেদে কাজের দর ভিন্ন হয়। মাসে তিনি ২,৫০,০০০ টাকা আয় করেন। খরচ ২৫,০০০ টাকা।

১২.নরসুন্দর/নাপিত: জামিলুর রহমান। বাড়ি: রাজশাহী। বয়স ৩৫ (প্রায়), পেশা: নরসুন্দর বা নাপিত।
অত্যন্ত পরিশ্রমী ব্যক্তি। সকাল ৮ হতে রাত ১১ টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। মাঝে ১ ঘন্টা রেষ্ট নেন। হাতের কাজ খুব ভালো না হলেও দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। চুল কাটা ৫০ টাকা, সেইভ করা ৩০ টাকা। সাথে গাভির দুধের ব্যবসা আছে। প্রতিদিন গড় আয় ২,০০০ টাকা। সে হিসেবে মাসে ৬০,০০০ টাকা। দোকান ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ মাসিক খরচ ৩,৫০০ প্রায়। ল্যান্ড প্রোপার্টি বেশ কিছু করে ফেলেছেন।

১৩.অটো ড্রাইভিং: এহতেশামুল হক। বাড়ি: রাজশাহী। বয়স ৩০ (প্রায়), পেশা: অটো ড্রাইভার।
২০০৯ সালেএকটা অটো দিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ ২১ টি অটোর মালিক। নিজে অটো চালান এবং অটো ভাড়ায় খাটান। ২০ টি অটোর ভাড়া পান দৈনিক ৫৫০ x ২০ = ১১,০০০ টাকা। দৈনিক বিদ্যুৎ ও সার্ভিসিং খরচ ১৫০ x ২০ = ৩,০০০ টাকা। থাকে ৮,০০০ টাকা। মানে মাসিক ২,৪০,০০০ টাকা। শহরে ২ তলা বাড়ি করেছেন।

[এই অংশটুকু অনুলিখিত]
১৪.হাউজ মেইড/বুয়া: আমার বাসার কাজের খালার নেট ইনকাম ৬,০০০/- আনুষঙ্গিক আর ও ৬০০০/- টাকা পায় পরোক্ষ ভাবে যেমন-থাকা,খাওয়া,পরা ও চিকিৎসা বাবদ। ঢাকাতে ছুটা বুয়া নামে একটা কনসেপ্ট আছে। তারা স্থায়ী নন। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে একটি বাসায় আসেন। বাসন ধোয়া, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া, রান্না করা-এই ৪ টি কাজ একেকটি ইউনিট। তার ১টি হতে ৪টি করেন বিভিন্ন বাসায়। প্রতিটি কাজ মাসের ২৬-২৮ দিন। প্রতি ইউনিট কাজের জন্য তাদের চার্জ ৫০০ থেকে ১২০০ (এলাকাভেদে)। বেশিরভাগ বুয়াই ২টির বেশি কাজ নেন না। তার মানে একটি বাসায় তার ২ ইউনিটের কাজে ২৬ দিনের সার্ভিসে তিনে পান কমপক্ষে ১০০০ টাকা। গড়ে তারা ৪-৬ টি বাসায় কাজ করে। দিনে শ্রম দেন ৫-৭ ঘন্টা। তাতে তার মাসিক আয় কমপক্ষে ৪০০০ থেকে ১০ হাজার টাকাও আছে। স্টান্ডার্ড একটি পার্ট টাইম জব। ঠিক এই কাজটিই আমরা আমেরিকা গিয়ে করি লেখাপড়ার খরচ বা প্রাথমিক সময়ে খরচ চালাতে। কিন্তু সেই আমরাই ঢাকাতে থেকে এই কাজ করলে থু থু দেবে লোকে।

[এই অংশটুকু অনুলিখিত]
১৫.কাটিং মাস্টার: রাজশাহীর একজন কাটিং মাস্টার (টেইলর) এর কথা জানি যার মাসে ইনকাম লাখ টাকার উপরে। তিনি কখনো কখনো স্টাইল ভেদে একটা শার্ট কাটিং করতে হাজার টাকাও নেন।

[এই অংশটুকু অনুলিখিত]
১৬.ভেলপুরিওয়ালা: আমাদের FBS-DU এর সামনে যে ভেলপুরিওয়ালা আছে সে প্রায় ১০-১১ বছর ধরে ওখানে সেল করে। ২০১০ এ আমি যখন বিবিএ লাস্ট সেমিস্টারে তখন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন সে বলেছিল যে তার ডেইলি সেল প্রায় ৩,০০০ পিস। সে সকালে আনত প্রায় ২,০০০ পিস এবং সন্ধ্যায় সে আনত প্রায় ১,০০০ পিস। তখন সে ৩ টাকায় সেল করত, যেটা সে এখন ৫ টাকায় সেল করে। সে নিজেই এগুলা বানাতো। পার পিস কস্টিং কত সে তা না বললেও আনুমানিক ৬০-৭০ পয়সার বেশি হবে বলে মনে হয়না। এখন হিসাব করেন, তার প্রফিট কত। ৩ টাকাও যখন পিস ছিল, তখন নেট লাভ হত কমপক্ষে ২ টাকা x ৩,০০০ পিস = ৬০০০ টাকা প্রতিদিন। আমি ধরে নিলাম ওটা ৩,০০০ টাকা। মাসে ৯০,০০০ টাকা। যেই বিজনেস ফ্যাকাল্টির সামনে তিনি ভেলপুরি বিক্রী করেন, সেই ফ্যাকাল্টির একজন ছাত্র ওই টাকার মাসিক আয়ের ঘরে পৌছাতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৪ বছর।

১৭.বিভিন্ন দোকান/কারখানার সহকারী: ঢাকা শহরে যারা কাঁচা বাজারে যান, তারা দেখবেন, প্রতিটি মুদী দোকানেই একটি বাচ্চা ছেলে থাকে। ফুটফরমাস খাটে। জিনিসপত্র এগিয়ে দেয়, চা খাওয়ায়। তার মাসিক বেতন ২,৫০০ টাকা। প্রায়ই দেখবেন পেঁয়াজ, রসুন, আলুর দোকানদারকে সাহায্য করেন একজন মহিলা। কুলায় ঝেড়ে তিনি পেঁয়াজ, রসুন দোকানীর ঝুড়িতে দেন। ওই মহিলা এরকম ৭/৮টি দোকানে কাজ করেন। তার বেতন দিনঠিকা। প্রতিদিন দোকান প্রতি তিনি পান ৫০-১০০ টাকা। ৪টি দোকান হলেও পান কমপক্ষে ২০০ হতে ৪০০ টাকা। মাসে সেটা দাড়ায় ৫,০০০ থেকে ৯,০০০ টাকা।

১৮.টোকাই: ঢাকায় পথচলতি প্রায়ই দেখবেন কিছু কমবয়সি বাচ্চা হতে কিশোররা একটা প্লাস্টিকের বস্তা কাঁধে করে প্লাস্টিক, কাগজ টোকায়। এরা সেই পথশিল্পী যাদের নিয়ে রনবী বিখ্যাত “টোকাই” কার্টুন করেছিলেন। নামটাও বোধহয় তার দেয়া। একজন টোকাই দিনে সংগ্রহ করতে পারে ৫ থেকে ১০ কেজি কাগজ, প্লাটিকের আবর্জনা। ভাঙ্গারীর দোকানে সেগুলো বিক্রী হয় কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকায়। তার মানে দিনে আয় ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। এদের একটি অংশ সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলবার ডাম্পিং ইয়ার্ড হতে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশেও বর্জ্য সংগ্রহ করে। যা খুবই বিপদজনক।

১৯.ময়লা নেবার লোক: কলাবাগান লেক সার্কাস রোডে এই ধারনাটির জন্ম। এখানকার একজন উদ্ভাবনি মানুষের মাথায় এই সামাজিক উদ্যোগ (আজ ব্যবসা) এর কথাটি প্রথম আসে। সেখান থেকে আজ সারা ঢাকাসহ বড় বড় সব শহরে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের সার্ভিস আছে। সাধারনত এলাকার বাড়ি মালিকদের সমিতি বা ব্লক ভিত্তিক কমিউনিটি সমিতি এই সার্ভিস চালায়। কখনো কখনো ব্যক্তি উদ্যোগেও এই সার্ভিস দেবার ব্যবস্থা আছে। একটি গারবেজ নেবার গাড়িতে সাধারনত দু’জন লোক থাকে। বাসাপ্রতি মাসিক চার্জ নেয় ১০০ টাকা হতে ১৫০ টাকা (এলাকাভেদে)। সাধারনত তাদের কভারেজ ন্যুনতম ৫০ বাসা হতে ৬০ বাসা। তার মানে দাড়াল মাসে তাদের আয় কমপক্ষে ৫০ বাসা ও ১০০ টাকা = ৫,০০০ টাকা। অবশ্য সমিতি হলে তারা ওই টাকা পাবে না। তারা পাবে বেতন। সেটাও ওই টাকার কাছাকাছি। সাথে বাড়তি আয় আছে। কারন সংগৃহিত গারবেজের থেকে তারা বিক্রয়যোগ্য কাগজ, প্লাস্টিক, কাঁচ আলাদা করে পরে বিক্রী করে। তা হতেও একটা বাড়তি আয় থাকে তাদের। তবে খুবই রিস্কি কাজ এটি।

২০.দোকানের সেলসম্যান: ইদের সময় আপনি যখন মার্কেটের পর মার্কেট ঘুরছেন, একটার পর একটা জামা কিনছেন, তখন আপনার হাতে রাত ১২ টার সময়ও হাসি মুখে কাপড়ের প্যাকেটটি তুলে দিচ্ছেন যে সেলসম্যান, তার মাসিক আয় কত জানেন? মাত্র ৪,০০০ টাকা হতে সর্বোচ্চ ,৮,০০০ টাকা। কি, অবাক হলেন? আমার নিজের সংগৃহিত তথ্য এটি। রোজা বাদে রোজ ডিউটি সকাল ১০ টা হতে রাত ৮টা, কোনো ব্রেক ছাড়া। তার মানে ১০ ঘন্টায় তারা আয় করে গড়ে ২০০ টাকা। অথচ তার সমান বা কম শিক্ষাগত যোগ্যতায় গার্মেন্টসের একজন QI মাসে আয় করে ৯-১০ হাজার টাকা। তার ছুটি আছে, ইনসুর‌্যান্স আছে, প্রভিডেন্ট ফান্ড আছে, অসুখ হলে ডাক্তার আছে, সরকারী ওয়েলফেয়ার ফান্ড আছে। তবুও মানুষ গার্মেন্টসে না গিয়ে ওই জব কেন করে জানি না।

২১.রিক্সাওয়ালা/বাস স্ট্যাফ: রিক্সা চালানোকে নন-কনভেনশনাল পেশা বলা যায় না। স্রেফ একটি ভাল ইনকামের পেশা বলে এটিকে নিয়ে আমি বলছি। নিজের একটি রিক্সা প্রায় কারোরই নেই। তাই ভাড়ার রিক্সার ভিত্তিতে বলছি। একবেলা ও ডবল বেলা-দু’রকমভাবেই রিক্সাওয়ালারা রিক্সা চালান। একদিনে তাদের সর্বনিম্ন ট্রিপ হয় ১০০০ টাকা হতে ১৫০০ টাকা তক। রিক্সার জমা/ভাড়া বাবদ দিতে হয় গড়ে ১৫০ হতে ২০০ টাকা। অন্যান্য খরচ, ওভারহেড বাদ দিয়ে তার নেট ইনকাম প্রতিদিন ৭০০ টাকার মতো। মাসে গড়ে ১৮-২০ হাজার। কী? ভাবছেন, তারা তো তাহলে বড়লোক হয়ে যেত? না, এটি শুধু অঙ্কের হিসাব। বড়লোক তারা হয় না। তার অনেক কারন আছে। ঢাকার পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যেসব বাস চলে, তার একজন ড্রাইভারের প্রতিদিনের ইনকাম গড়ে ১০০০ হতে ১,২০০ টাকা। ভাবতে পারেন, তবে তো সে বাড়ি গাড়ি করে একাকার করে ফেলেছে। না, তার কারন তারা মাসে ১৫ দিন ডিউটি করে। আর তাদের প্রচুর ন্যায্য ও অন্যায্য খরচ আছে।

২২.হাতিওয়ালা: মিরপুরের রাস্তায়সহ ঢাকার রাস্তায় আস্ত হাতির দেখা পাওয়াটা খুব আজব, তাই না? কিন্তু আমি প্রায়ই এক হাতিকে দেখি। মাহুত পিঠে বসে পিচঢালা রাস্তায় হাতিকে নিয়ে টাকা তুলতে বেড়িয়েছে। একদিন তাকে থামালাম। জিজ্ঞেস করলাম হাল হকিকত। তার থেকে জানা গেল, একদিনে তার হাতি দোকান, বাড়ি, পথচারী হতে তুলতে পারে হাজার পাঁচেক টাকা। দিনে হাতির পেছনে খরচ হয় হাজার চারেক। সবমিলিয়ে দিনে তার লাভ থাকে হাজার খানেক। সবদিন হাতি রাস্তায় নামে না। আমার ধারনা তিনি মাসে অন্তত ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা কামাই করতে পারেন। তবে তিনি কীভাবে ঢাকাতে হাতি জোগাড় করলেন সেটা একটা রহস্য। হাতি ধরা বেআইনী হবার কথা।

২৩.প্যাটিসওলা: স্থান: ঢাকার লোকাল বাস; কাল: অদ্য সন্ধ্যা; পাত্রপাত্রী: আমি, নিটোল ও জনৈক প্যাটিসওলা; দর্শক: লোকাল বাসের আমজনতা; ঘটনাক্রম: আজ সন্ধ্যায় গিন্নী নিটোলকে নিয়ে গিয়েছি আসাদগেট। জরুরী একটা কাজে। ফেরার সময় বৃষ্টি। কোনমতে দৌড়ে মিয়া বিবি উঠে পড়ি একটা লোকাল বাসে। কায়ক্লেশে দুটো সিট ম্যানেজ হওয়ায় খোদাকে ধন্যবাদ দিই। একটু থিতু হয়ে বসার পরে সামনে খেয়াল করে দেখি একজন প্যাটিসওয়ালা তার বক্স নিয়ে বসেছেন। বাঙালী মাত্রই সহযাত্রীর সাথে খোশ আলাপে মজে। আমি এমনিতেই মানুষের পেশা নিয়ে সবসময় আগ্রহী। প্যাটিসওয়ালার সাথে আলাপ জমাতে তার কাছে তার কাজের খোঁজখবর নিলাম। যা জানলাম তাতে শ্রদ্ধা আর সমীহবোধ জাগল মানুষের ঐকান্তিকতা, চেষ্টা, অধ্যবসায়, শ্রম ও সততার প্রতি। ভদ্রলোক (প্যাটিসওলাদের কেউ ভদ্রলোক বলেন না বোধহয়) প্রতিদিন দারুস সালাম কারখানা হতে মালিকের কাছ থেকে এক টিন প্যাটিস কেনেন। টিনে ধরে ২০০ পিস। ১০-১৫-২০ টাকা-তিন রকমের প্যাটিস থাকে। তার মানে কমপক্ষে ২০০ পিস/২০০০ টাকার প্যাটিস তিনি বিক্রি করেন। প্রায় সবদিনই বিক্রী হয়ে যায়। যতটা তিনি বললেন, তাতে জানলাম ১০ টাকার প্যাটিস তিনি কেনেন ৩-৪ টাকা করে মালিকের কাছ থেকে। বাকিটা তার। তার মানে প্রতিদিন ২০০ পিস বিক্রী করলে তার মার্জিন থাকে ৭ X ২০০ = ১৪০০ যেটা তার নিজের। তার থেকে বাদ যাবে তার যাতায়াত খরচ আর দুপুরের/বিকেলের খাওয়া দাওয়া, চা, পানি, সিগারেট, পান ইত্যাদি। যাহোক, ধরে নেয়া যায় প্রতিদিন তার নেট মুনাফা ১,২০০ কমপক্ষে। আর তিনি মাসে ২৫ দিন কাজ করেন। মানে দাড়াল, তার মাসে ন্যুনতম আয় ৩০,০০০ টাকা যেটা আসলে ৩৫-৪০ হাজার হবে। কারন বেশি দামের প্যাটিসও থাকে।

ভদ্রলোককে আমি জিজ্ঞেস করি, তিনি গ্রাম হতে এসে এই বুদ্ধি বা সুযোগ কীভাবে পেলেন। তিনি হেসে জবাব দেন, “ঠ্যাকা ভাইজান, ঠ্যাকা।” আমিও তাই ভাবি। ঠ্যাকা মানুষকে কতকিছু করতে শেখায়। কত কী ভাবতে, আবিষ্কার করায়। তা না হলে একজন অশিক্ষিত মানুষ, শহরে এসে নিজের মতো করে স্বাধীন ব্যবসা করছেন। আর আমরা বিএ/এমএ পাশ করে চাকরীর পেছনে হত্যে দিয়ে মরি। কোট টাই পড়া চাকরীর পেছনে ঘুরে মরি, সারাজীবন কেঁচোর মতো বাঁচি। অথচ এইসব অশিক্ষিত অথচ উদ্যমী উদ্যোগী মানুষেরা নিজের চেষ্টায় নিজের স্বাধীন পেশা বেছে দারুনভাবে জীবন চালাচ্ছেন। আয় রোজগারও বেশি।

একজন এম এ পাশ মানুষ বর্তমান বাংলাদেশে খুব ব্যাতিক্রমী কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া শুরুতে অনেকদিন ওই আয়ের ধারেকাছেও বেতন পান না। তাই বলে ভাববেন না, আমি পড়াশোনাকে অনুৎসাহিত করছি। আমি পেশার ডাইভারসিফিকেশন ও যেকোনো পেশাকে সম্মান ও সুযোগ হিসেবে নেবার বিষয়টাকে দেখাচ্ছি। এটাকে সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ যেভাবেই নিন নিতে পারেন। খবরটা হল, বাংলাদেশে প্রথাগত বা কনভেনশনাল চাকরীর থেকে, অপ্রচলিত বা ননকনভেনশনাল কাজের আনুপাতিক নেট ইনকাম দিন দিন বাড়ছে। অনেকক্ষেত্রে তা বেশিও। বিসিএস বা মাল্টিন্যাশনালের কেরানী হবার স্বপ্ন না দেখে নিজের কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করুক আমার দেশের গ্রাজুয়েটরা-সেই কামনা করি।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপনার এই সিরিজটা আমার ভাল লাগছে; একটু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ; লেখতে থাকুন, পাশে আছি; আপনার ধৈর্য্য আছে এসব বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার; এজন্য ধন্যবাদ আপনাকে;

২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৯

বেচারা বলেছেন: চেষ্টা করেছি শুধু বিষয়গুলোকে আনতে। সময় ও শ্রম দিতে পারলে একদম ফার্স্ট হ্যান্ড তথ্য নেয়া যেত। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি বলব- লেখা সুন্দর। ভাষা সহজ সরল।
পড়লে বিরক্ত লাগে না।

২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৯

বেচারা বলেছেন: ধন্যবাদ নুর ভাই।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫

যবড়জং বলেছেন: তিন পর্বই পড়ে ফেল্লাম !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.