![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন সহজ গল্পের ফেরিওয়ালা। গল্প বলাই আমার কাজ।
আমাদের জনজীবনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য গল্প। এই সব গল্প কখনো আমাদের আমোদিত করে, কখনো আমাদের ভাবায় আর কখনো আমাদের চিন্তার জগত ভেদ করে আমাদের একটা অযাচিত শিক্ষা দেয়। এই গল্পগুলো বিভিন্নজন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। কেউ গল্পের বিষয়কে দেখে আর কেউ গল্পের নিরীক্ষে থাকা গল্পকে দেখে। এইসব গল্প কখনো আমাদের কাছে এসে ধরা দেয়, কখনো আমরা গল্পের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
এইরকমই একজন গল্পের পিপাষু, এই গল্পের অন্যতম চরিত্র আলোকচিত্রী মোস্তাক নাসের দীপু। সবাই তাকে ‘মোনাদী’ বলে চিনে এবং জানে। মোনাদী তার ক্যারিয়ার জীবন শুরু করে একটি মফস্বল শহরের দৈনিক পত্রিকাতে। সেই থেকে একের পর এক বিভিন্ন চড়াই উৎড়াই পাড় করে মোনাদী এখন দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করছে।
মোনাদী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম স্থিরচিত্রের খোঁজে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াই। উদ্দেশ্য আলোচিত্রের মধ্যে একটি গল্প বলা। আর মোনাদী এই কাজে বেশ পারঙ্গম। এর আগে মোনাদী যেইসব কাজ করেছে তার প্রতিটিতেই গল্পের ছোঁয়া স্পষ্ট।
পত্রিকার সম্পাদক টিপু মনোয়ার মোনাদীকে ডেকে একটি বিশেষ কাজ দিলেন। কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং মজার। মোনাদীকে দেয়া হল ঢাকা শহরের গণিকালয়ে নিয়োজিত নারীদের জীবনযাপনের উপর স্থিরচিত্র তুলে আনার দায়িত্ব। এই রকম কাজ পেয়ে মোনাদী খুব খুশি। মোনাদী সবসময় তার আলোকচিত্রে ভিন্ন গল্পের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা করে। একটি সরল গল্প বলার চেষ্টা করে আর এই কাজটার মাধ্যমে মোনাদী তা খুব সহজে তুলে আনতে পারবে।
অফিস থেকে বের হয়েই মোনাদী আর বাসায় না ফিরে সরাসরি কাজের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল। সকাল থেকেই মোনাদী ঢাকাস্থ গণিকালয়ে গিয়ে হাজির। সারাদিন বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে মোনাদী খুব ভালো কোনো গল্প খুঁজে পেল না যা আলোকচিত্রের মাধ্যমে সবাইকে দেখানো যায়। দিনশেষে মোনাদী কিছুটা হতাশ মনে একটি পুরানো বাড়ির সামনে একা একা বসে সিগারেটের সাথে নিজের অলসতা ভাগাভাগি করছে ঠিক এমন সময় একটি মেয়ে মোনাদীর পাশে এসে বসল।
মোনাদী অজ্ঞানতাবশত মেয়েটির দিকে তাকানোর সাথে সাথে মেয়েটিও মোনাদী’র দিকে তাকাল। মেয়েটির মায়াকাড়া চোখে মোনাদী’র সমস্ত রিপু আটকে গেল। মোনাদী মেয়েটির দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকতে গিয়েও পারল না কারণ মেয়েটি তাতে বাঁধ সাধল।
মেয়েটি উঠে হাঁটা শুরু করল। মোনাদী তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ক্যামেরা নিয়ে যেই পিছনে ফিরে তাকাল আর কাউকেই খুঁজে পেল না। মোনাদী হতবম্ভ হয়ে গেল। আশেপাশে সব জায়গায় মোনাদী নিজের আলোকচিত্রের গল্পের জন্যে মেয়েটি খুঁজে বেড়াল কিন্তু খুঁজে পেল না। মোনাদী বাজারে এসে মেয়েটির রূপের বর্ণনা দিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগল কিন্তু কেউই মেয়েটির খোঁজ দিতে পারল না।
পুরো রাত মোনাদী পাড় করেছে মেয়েটির কথা চিন্তা করে। পরদিন কাকডাকা ভোরে মোনাদী উঠে আবার সেই পুরানো বাড়ির সামনে এসে বসে রইল। কিন্তু সেই মেয়েটির কোনো দেখা নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা কিন্তু মেয়েটির দেখা মোনাদীর কাছে মিলল না।
শেষমেষ ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মনে রাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে মোনাদীর সাথে দেখা মিলল একজন দালালের। মঈনুল হোসেন নামের এই দালাল মোনাদীর অবস্থা দেখে মোনাদীকে নিয়ে গেল সেই গণিকালয়ে। মঈনুল মোনাদীকে দামী খদ্দের মনে করে একটা রুমের মধ্যে খুব সুন্দরী একজন যুবতী গণিকার কাছে হস্তান্তর করল।
কিছুটা সময় পাড় হওয়ার পরে রুমের মধ্যে সেই যুবতী গণিকার প্রবেশ ঘটল। মোনাদী সেই যুবতী গণিকাকে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে রুম থেকে যেই বেরিয়ে পড়তে যাবে সাথে সাথে যুবতী গণিকা তার হাত চেপে ধরে তার পকেটে হাত দিল। মোনাদী ব্যাপারটি বুঝতে পেরে পকেটে হাত দিয়ে যত টাকা ছিল তার সবটাই দিয়ে দিল। প্রচন্ড কষ্ট আর হতাশা নিয়ে মোনাদী এই রাতের আঁধারে নদীর পাড়ে এসে চুপচাপ বসে রইল।
মোনাদী যখন আলোকচিত্রের গল্পের জন্যে পাগলপ্রায় ঠিক তখন আবার সেই মেয়েটির আগমন ঘটল। গতবারের চেয়ে মেয়েটিকে আজকে অনেক বেশি মাত্রায় সুন্দর লাগছে। মোনাদী সাথে সাথে নিজের ক্যামেরা বের করে মেয়েটির ছবি তুলল, কিন্তু ছবিতে মেয়েটির কোনো অবয়ব পাওয়া গেল না। মোনাদী এইটা দেখে খুব হতবাক হয়ে পড়ল। মেয়েটি সাথে সাথে লাস্যময়ী হাসিতে ফেটে পড়ল। মেয়েটি তখনো মোনাদীকে তার জীবনের গল্প শোনানোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করল। মোনাদীও মেয়েটির সম্পর্কে জানার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করল।
সুষমা নামের এই মেয়েটি তার জীবনের অদ্ভুত এক গল্প শুরু করে। সুষমা খুব অদ্ভুত চক্রাকারে এই গণিকালয়ে এসে মঈনুলের হাতে পড়ে। সেই থেকে সুষমা গণিকালয়েই জীবন কাটাতে থাকে। বিভিন্নরকম খদ্দেরদের ভিড় সুষমার রুমে লেগেই থাকতো। যাপিত জীবন যখন সুষমাকে নতুন কোনো ছন্দে আন্দোলিত করতে পারছে না ঠিক তখনই সুষমার রুমে এক বৃদ্ধের আগমন ঘটে।
এ এক অদ্ভুত পাগল বৃদ্ধ। তাঁর নাম ছিল বনমালী দাশ। বৃদ্ধ বনমালী গল্পের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। গল্পের খোঁজে হন্যে হয়ে ছোটাটা ছিল বৃদ্ধের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। বনমালী প্রতি রাতেই সুষমার কাছে আসতো আর সুষমাকে প্রতিটা রাতেই বনমালীর জন্যে সুন্দর সেজেগুজে বসে থাকতে হত। বনমালী সুষমাকে ‘শকুন্তলা’ নামে ডাকতো। বনমালীর ধারণা সুষমারূপী শকুন্তলা বনমালীকে অনেক গল্পের খোড়াক দেবে। আর তাই প্রতিরাতে মদ্যপ অবস্থায় সুষমার রুমে এসে পড়ে থাকতো ঠিকই কিন্তু সুষমাকে কখনোই স্পর্শ করতো না।
একদিন মদ্যপ অবস্থায় বনমালী সুষমার রুমের মধ্যে প্রবেশ করে বেশকিছুক্ষণ কবিতার ছন্দ আওড়াতে আওড়াতে নেশায় বুদ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। সুষমা বনমালীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে যখন নিজের বিছানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন হঠাৎ বৃদ্ধ বনমালীর ব্যাগ হাতড়ে দেখে তাতে অসংখ্য কবিতা আর চিঠি লেখা। সুষমা প্রতিটা কবিতা এবং চিঠির উপরে দেখল ‘শকুন্তলাকে উদ্দেশ্য করে’ এই কথাটি লেখা। সুষমা আরো অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো বনমালী তাঁর সব কবিতা এবং চিঠিতে সুষমাকে প্রেম নিবেদন করেছে।
সুষমা সারা রাত ধরে বনমালীর লেখা চিঠি এবং কবিতাগুলো পড়তে লাগল। একটি করে কবিতা আর চিঠি পড়তে লাগল আর সুষমা অঝোরে কাঁদতে লাগল। বনমালীর লেখা কবিতাগুলো পড়তে পড়তে সুষমা কখন যে তন্দ্রাচ্ছ্বলে পড়ে গিয়েছিল তা সে নিজেও জানে না। ভোরে যখন বনমালীর ঘুম ভাঙ্গল বনমালী নিজের ব্যাগ খুঁজতে গিয়ে দেখে ব্যাগ সুষমার কাছে।
এই দেখে বনমালী কাগজগুলো টান দিতেই সুষমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সুষমা বনমালীর কাছে নিজ প্রেমের কথা বলতে না পারার ব্যথার কথা জানতে চাইলে, বনমালী তখন নিজের জীবনের গল্প সুষমাকে বলা শুরু করে।
দীর্ঘদিন ধরে লিখতে না পারার কষ্ট বনমালীকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। অবশেষে বনমালী সুষমার কাছে এসে অসংখ্য গল্পের সন্ধান পেয়ে গেল। এই গল্পই বনমালীকে বাঁচিয়ে রেখেছে, বনমালীকে লিখতে না পারার কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে। এই গল্প পাওয়ার জন্যে বনমালী সব করতে পারে। এরপর থেকে বনমালীর আর কোনো সাক্ষাত সুষমা পেল না। সেই রাতেই সুষমার রুমে অন্য এক পুরুষের প্রবেশ ঘটল। আবারো সুষমার জীবন আগের মতো চলতে লাগল।
অনেকদিন পর। একদিন বনমালী সুষমার খোঁজে সেই গণিকালয়ে ছুটে এলো। বনমালী এসে দেখে সুষমাকে খাটিয়াতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দূরে কোথাও ভাসিয়ে দেওয়ার জন্যে। বনমালী জানতে পারলো কঠিন অসুখে সুষমার মৃত্যু হয়েছে। সুষমার লাশের উপর বনমালী হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠে। সেই থেকে বনমালী পাগলের মতো এই শহরে ঘুরে বেড়ায়। কারো সাথে কোনো কথাবার্তা বলে না। পাগলপ্রায় বনমালী সব সময় কি যেন আওড়াতে থাকে।
সুষমার কাছ থেকে এই গল্প শুনতে শুনতে মোনাদী খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। ভোরের সূর্য তখনো লালচে আভা দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিয়ে দিচ্ছে। মোনাদী পাশে ফিরতেই সুষমাকে আর দেখতে পায় না। যেই আলোকচিত্রের গল্পের জন্যে মোনাদী এইখানে আগমন সেই গল্পই মোনাদীর কাছে অসমাপ্ত থেকে গেল। বাজারে এসেই মোনাদীর সাথে সেই পাগল বনমালী দাশের সাথে সাক্ষাত হল। মোনাদী বিরস মনে বাজারের পথ ধরে হাঁটা শুরু করল। যেই গল্পের খোঁজে মোনাদীর এতোদূরে আসা সেই গল্পই মোনাদী আলোকচিত্রে ধরা পড়ল না।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬
বিনয় দত্ত (গল্পের ফেরিওয়ালা) বলেছেন: ধন্যবাদ। প্রামানিক
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৪
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: গল্পটি মোটামুটি লাগলো। বেশ কয়েকটা শব্দ দুর্বোধ্য ছিল - বাহুল্যতা মনে হয়েছে সরল এই গল্পের সাথে।
এটার জন্য কিছুটা হলেও সহজ ভাবে পড়াটায় ব্যাঘাত ঘটেছে।
প্রথমদিকের কথাগুলোর সাথে একমত। একেক দৃষ্টিকোণ থেকে একেকভাবে একটা ঘটনাকে দেখে সেটাকে গল্প বানায় সবাইই।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯
বিনয় দত্ত (গল্পের ফেরিওয়ালা) বলেছেন: শব্দের দুর্বোধ্য লাগাটা ইচ্ছাকৃত নয়, তা ধরা যাক গল্পের প্রয়োজনে। গল্পের ধরণটা এই রকমই।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ