নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

অলিম্পিক গেমসের সেকাল-প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক গেমস (Olympic Games of Ancient Greece) ।

২৭ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯







মানব সভ্যতার উষালগ্নের প্রাচীন গ্রীস বিভক্ত ছিল অনেক গুলো স্বাধীন নগররাস্ট্রে। উল্লেখযোগ্য নগর রাস্ট্র গুলো ছিল স্পার্টা, এথেন্স, ডেলফি,করিন্থ, থিবিস, আরগোস প্রভৃতি । সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা ,ইতিহাস,- জ্ঞান বিজ্ঞানের সমস্ত শাখাতেই ছিল সে সময়ের গ্রীক মনীষিদের অপরিসীম অবদান। জ্ঞান বিজ্ঞানের মতই সূস্থ্য সবল শরীর তাদের কাছে ছিল সমান গুরুত্বপূর্ন। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ছিল আখড়া । সেখানে যেমন দর্শন আলোচিত হত তেমনি ছিল ব্যায়ামাগার, শরীর চর্চা ও খেলাধুলার ব্যবস্থা। সে সময়ে নগর রাস্ট্রগুলো একে অপরের সাথে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকত। যুদ্ধে জয়পরাজয় তখন নির্ভর করত শারীরিক শক্তির উপর, ফলে প্রতিটি সৈন্যকে হতে হত শক্তিশালী, বলবান। শরীরকে সূস্থ্য সবল রাখতে নিয়মিত খেলাধুলায় অংশ গ্রহন করতে হত প্রতিটি সক্ষম ব্যাক্তিকে।





গ্রীসের উত্তরে উচু পাহাড় নাম, মাউন্ট অলিম্পাস। পাহাড়ের উপর বাস করতেন অলিম্পিক দেবতারা। । অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে গ্রীসের দক্ষিন পশ্চিম অংশে জনবসতি থেকে দূরে সবুজ বনে আচ্ছাদিত এলাকার নাম এলিস। এলিসের অলিম্পিয়া গ্রামে সবুজ বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে পবিত্র নদী আলফ । এখানে অলিম্পিক দেবতাদের রাজা জিউসের উপাসনা হয়ে আসছিল অনেক শতাব্দী ধরে। ৪৩৫ খৃস্টপূর্বাব্দে হাতির দাত এবং সোনা দিয়েএখানে নির্মিত হয় সিংহাসনে উপবিস্ট দেবরাজ জিউসের মুর্তি, যা ছিল প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্য্যের অন্যতম। ধর্মীয় উৎসবের অঙ্গ হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা শুরু হয় গ্রীক মহাকবি হোমারের জন্মের বছর ৭৭৬ খৃস্টপূর্বাব্দ থেকে। প্রতি ৪ বছর পর পর অলিম্পিক ভিলেজে জুলাই মাসে বসত ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আসর বা অলিম্পিক গেমস। নগর রাস্ট্র গুলো প্রায়ই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকলেও অলিম্পিক শুরু হওয়ার এক মাসে আগে এলিস থেকে সমস্ত রাস্ট্রে দুত পাঠান হত খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রন জানিয়ে। নগর রাস্ট্রগুলোর মধ্যে চুক্তি ছিল যে অলিম্পিক গেমসের সময় কোন যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই অস্ত্রশস্ত্র ফেলে রেখে সবাই এসে জড় হতেন অলিম্পিক ভিলেজে। কারন হল অলিম্পিক গেমস ছিল ধর্মীয় উৎসব এবং সবাই যুদ্ধ জয়ের জন্য দেবরাজ জিউসের আশীর্বাদ চাইত এই গেমসের মধ্য দিয়ে। কে প্রচলন করেছিল অলিম্পিক গেমস তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও অধিকাংশের মত যে গ্রীক বীর হারকিউলিস বা হেরাক্লিস প্রচলন করেন এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসরের। সে যুগের অনেক মনীষী, যেমন সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, ডেমোস্থিনিস, হেরোডেটাস, পীথাগোরাস, হিপোক্রাটিস এসেছেন এই ক্রীড়া উৎসব অলিম্পিক গেমস দেখতে। এই মনীষিদের কেউ কেউ অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছেন । গ্রীক ভাষাভাষী বিভিন্ন নগর রাস্ট্র থেকে আসত প্রতিযোগীরা। কেবল মাত্র স্বাধীন পুরুষ গ্রীকরাই অংশ নিতে পারত সে প্রতিযোগিতায়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া , এমনকি প্রতিযোগিতা দেখার অনুমতিও ছিল না মহিলাদের। যদি কোন মহিলা সে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় উপস্থিত হতেন তাকে পাহাড়ের উপর থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করা হত। একবার বক্সিং এর এক চ্যাম্পিয়নের মা এসেছিলেন পুরুষের ছদ্মবেশে ছেলের খেলা দেখতে । ছেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে মা স্থির থাকতে না পেরে দৌড়ে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকে নিয়ে যাওয়া হল পাহাড়ের চুড়া থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। শেষ মুহুর্তে বিচারকদের হস্তক্ষেপে চ্যাম্পিয়নের মা হওয়াতে রক্ষা পান তিনি। তখন গ্রীক সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল পূর্ব ইউরোপ, ভূমধ্যসাগর অঞ্চল হয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশ গুলো পর্যন্ত। প্রতিযোগিতার শুরুতে দেবরাজ জিউসের উদ্দশ্যে জ্বালানো হত অলিম্পিক মশাল। নিয়ম ছিল যে, কোন কৃত্রিম উপায় নয়, সূর্য্যের আলো থেকে জ্বালাতে হবে সে মশাল। সেই ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে আজও অলিম্পিক শুরু হওয়ার আগে গ্রীসের অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে আতস কাঁচের উপর সূর্য্যরশ্মি ফেলে জ্বালানো হয়ে থাকে অলিম্পিক মশাল যা বিভিন্ন দেশ প্রদক্ষিন করে অলিম্পিক শুরু হওয়ার দিনে প্রবেশ করে থাকে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। আদিম কালের গ্রীক অলিম্পিকে প্রতিযোগীরা সম্পুর্ন বিবস্ত্র অবস্থায় অংশ নিতেন ।







অলিম্পিক ভিলেজে থাকত স্টেডিয়াম, ব্যায়ামাগার, হোটেল, ইত্যাদি। যে সমস্ত দর্শকেরা হোটেলে যায়গা পেতেন না তারা তাবু খাটিয়ে যায়গা করে নিতেন অলিম্পিকের দিনগুলিতে। প্রায় ৫০,০০০ দর্শকের বসার উপযোগী স্টেডিয়াম ছিল সেখানে। গেমস শেষ হওয়ার পর অনুষ্ঠীত হত অলিম্পিক ভোজ। সেখানে বারবিকিউতে আগুনের উপর ঝলসে নেওয়া গরু খাবার হিসেবে পরিবেশিত হত। গেমসের পাশাপাশি বসত মেলা। সে মেলায় জাগলার বা এক্রোব্যাটরা চিত্তবিনোদন করতেন দর্শকদের। ব্যবসায়ীরা পসার সাজিয়ে বসত, রাজনীতিবিদরা বক্তৃতা দিতেন দর্শকদের উদ্দেশ্যে।









অলিম্পিকে প্রথম খেলা ছিল দৌড়। দৌড়ে গিয়ে ২০০ গজ দূরে পুতে রাখা দন্ডকে ঘুরে প্রতিযোগীরা ফিরে আসতেন। এই দুরত্বকে বলা হত স্টাড যা থেকে আজকের স্টেডিয়াম শব্দের উৎপত্তি। এর পর ক্রমশঃ কুস্তি, ঘোড়দৌড়, লং জাম্প, রথদৌড়, বর্শা এবং চাকতি নিক্ষেপ, ইত্যাদি খেলা যোগ করা হয়। সবচে’ মারাত্মক খেলার নাম ছিল প্যানক্রিয়াতন। প্যানক্রিয়াতন খেলায় প্রতি যোগীদের একে অপরকে কিল,ঘুষি,লাথি থেকে শুরু করে গলা টিপে ধরার ও অনুমতি ছিল। কোন প্রতিযোগী হার স্বীকার করে নিলেই খেলা বন্ধ হত। হার স্বীকার করার পদ্ধতি ছিল হাত উচু করে তর্জনী আঙ্গুল দেখানো। এরপর ছিল পেন্টাথেলন যাতে দৌড়, লং জাম্প,কুস্তি, বর্শা এবং চাকতি নিক্ষেপ এই পাঁচটি খেলাতেই অংশ নিতে হত প্রতি প্রতিযোগীকে।









বিজয়ীর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হত জলপাই পাতার তৈরী মুকুট।গ্রীক অলিম্পিকের কুস্তিতে ২৪ বৎসরকাল যাবত ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন মিলো। প্রবাদ ছিল যে মিলো প্রতিদিন গরুর বাছুর কাধে তুলে ব্যায়াম করতেন। বাছুর যত বড় হত মিলোর মাংশপেশীও তত বেশী শক্তিশালী হত।



৭৭৬ খৃস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে প্রায় ১২ শ’ বছর ধরে চলেছিল এই খেলাধুলার আসর- প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক গেমস। রোমানরা গ্রীস দখল করার পরও চালু ছিল অলিম্পিক উৎসব।দেবতা জিউসকে উতসর্গ করা এই উৎসব পৌত্তলিকদের উৎসব হিসেবে বিবেচনা করে তা নিষিদ্ধ করা হয় । রোমের খৃস্টান রাজা থিওডেসিয়াস-১ , তার রাজত্বে অন্য সমস্ত ধর্মকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি গ্রীসের অলিম্পিক গেমসকেও বন্ধ করে দেন মূর্তিপূজার অভিযোগে ৩৯৩ খৃস্টাব্দে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১২ রাত ৮:২৮

আমি সুফিয়ান বলেছেন: +++

২| ২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১০:১৭

সিরাজ সাঁই বলেছেন: ওয়েল ডান, পোস্টে ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.